গরুর দুধ সঙ্কট, চাঁদপুরে ব্যাহত মিষ্টান্ন উৎপাদন
Published: 20th, June 2025 GMT
গরুর দুধ সঙ্কটে চাঁদপুরে মিষ্টিজাত বিভিন্ন দুদ্ধজাত খাবার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দুধ সঙ্কটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম থাকায় খাবার পণ্যের দামও বাড়ছে। তবে দুধ সঙ্কটের বিষয়ে দ্বীমত প্রকাশ করেছেন জেলার প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা।
চাঁদপুরের সুপ্রাচীন মিষ্টির দোকান ‘কৃষ্ট ক্যাফে’র পরিচালক সুমন রায় বলেন, “আমাদের দোকানে দিনে কমপক্ষে চার মণ গরুর দুধ লাগে। যা দিয়ে সাত জন কর্মচারীসহ আমরা দধি, মিষ্টি, রসমলাই, মালাইকারী, চমচম তৈরি করি। খাবার গুণগত মান ভালো রাখলেও এখন দুধ সঙ্কটে অনেক অর্ডার পেলেও সরবরাহ দিতে পারছি না। তাই কেজি প্রতি মালাইকারী ৫৫০ টাকা, চমচম ৩২০ টাকা, রসগোল্লা ২৮০, রসমালাই ৪০০, ঘি ১৮০০ টাকা দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দুধের সরবরাহ বাড়লে দাম কিছুটা কমতে পারে।”
জেলা শহরের অপর সুপরিচিত মিষ্টির দোকান ‘ওয়ান মিনিট’-এর মালিক সম্পদ সাহা বলেন, “আমাদের দোকানে দিনে গরুর দুধের প্রয়োজন অন্তত ২৫ মণ। চর থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে ৩২০০ টাকা মণ হিসেবে দুধ সংগ্রহ করি। কিন্তু মৌসুমি সমস্যায় এখন দুধ আসে কম। আবার শহরাঞ্চলের গরুর দুধ কিনে পোষানো যায় না। তাই গরুর দুধ সঙ্কটে ক্ষীর ও রসমালাই উৎপাদন এখন বন্ধ রেখেছি। তবে মিষ্টি ও দই সীমিত পরিসরে উৎপাদন করছি। সব মিলিয়ে চাহিদানুযায়ী উৎপাদন সীমিত হলেও পণ্যের দাম সামঞ্জস্যতা রাখতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
এদিকে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য মতে, তিনটি গাভী হিসেবে একটি খামার ধরা হলে জেলায় মোট দুদ্ধ খামার ৩৭২৩টি। যেখানে ১ লাখ ৫ হাজার গাভী রয়েছে। এগুলোর পেছনে শ্রম দিচ্ছেন প্রায় ৪২ হাজার দুদ্ধ খামারি। এর ভিত্তিতে জেলায় গরুর দুধের চাহিদা ২.
চাঁদপুর শহরের গবাদীপশু খামারি মহসীন গাজী বলেন, “মিষ্টি ব্যবসায়ীরা আমাদের থেকে দুধ না নিয়ে চর এলাকার খামারিদের থেকে দুধ সংগ্রহ করেন। কারণ আমাদের গরু লালন পালনে ঘাস সঙ্কটে বেশি দাম দিয়ে হলেও খড়, ভূষি কিনে খাওয়াতে হচ্ছে। কাজেই গোখাদ্যের খরচ পোষাতে আমাদেরকে গরুর দুধের দাম কিছুটা বেশি রাখতে হয়। কিন্তু চরে প্রচুর চারণভূমি থাকায় এবং ঘাস সঙ্কট না থাকায় গরু লালন পালন সহজ ও খরচও অনেকটা কম। তাই চরাঞ্চলের মানুষ গরুর দুধের দাম আমাদের থেকে কিছুটা কম রাখায় মিষ্টির দোকানিরা ওখান থেকেই দুধ সংগ্রহ করেন। এখন বর্ষার মৌসুম হওয়ায় দুধ উৎপাদন কিছুটা কম তবে সামনে দুধের সঙ্কট কেটে যাবে আশা করছি।”
ভোজন রসিক মিজানুর রহমান বলেন, “মিষ্টির দাম আকাশচুম্বী। অথচ মিষ্টির মানের দিকে অনেকেরই নজরদারি কম। অধিকাংশ মিষ্টির দোকানের তৈরিকৃত মিষ্টির ভিতরে আটা, ময়দার শক্ত গোল্লা পাওয়া যায়। আবার তারা গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে পাউডার দুধও ব্যবহার করছে। অথচ দাম নিচ্ছে গরুর দুধের বানানো মিষ্টির দামই। এগুলো মনিটরিং জরুরি।”
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, “একজন সুস্থ্য মানুষের জন্য দিনে যতটুকু দুধের প্রয়োজন তা এ জেলায় উৎপাদন হচ্ছে। এক্ষেত্রে দুধের সঙ্কট নেই। হয়তো মানুষের গড় হিসেবে দুধ কিছুটা সঙ্কট দেখা দিলেও মিষ্টি উৎপাদনে দুধ সঙ্কট এই তথ্য ঠিক নয়। কেননা প্রতিটি মিষ্টির দোকানিই নির্দিষ্ট খামারিদের সাথে সংযুক্ত থাকেন। আর তারাই সারাবছর দোকানের চাহিদানুযায়ী গরুর দুধ সরবরাহ করে থাকেন। বরং মিষ্টিজাত পণ্যের দাম বাড়াতে তারাই কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়। অথচ মিষ্টির মানের কোন বালাই নেই।”
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা ভোক্তা অধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, “আমরা নিয়মিত মিষ্টির দোকানসহ বাজার তদারকি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। কোথাও কোন অসঙ্গতি নজরে এলেই আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত সরবর হ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
৭০ শতাংশ নির্বাচন সামগ্রী কেনাকাটা সম্পন্ন
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, “আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্বাচন সামগ্রীর ৭০ শতাংশ কেনাকাটা এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
সিনিয়র সচিব জানান, মার্কিং সিল, গালা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লক, হেসিয়ান ব্যাগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন সামগ্রী এরইমধ্যে ইসির গুদামে পৌঁছেছে। চলতি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই অবশিষ্ট সামগ্রী সরবরাহ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।”
তিনি বলেন, “প্রায় ৭০ শতাংশ কেনাকাটার কাজ শেষ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে অবশিষ্ট কেনাকাটাও শেষ হবে। চাহিদা অনুযায়ী সব সামগ্রী সময়মতো পৌঁছে যাবে।”
তিনি জানান, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী— স্ট্যাম্প প্যাড ও অমোচনীয় কালি সরবরাহ করা হবে। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এই সামগ্রী হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইউএনডিপি। এর একটি অংশ চলতি মাসেই আসবে এবং বাকিটা আগামী মাসে।
তিনি বলেন, “স্থানীয় বাজার থেকে আট ধরনের সামগ্রী সংগ্রহ করা হচ্ছে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে- গালা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লক, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, হেসিয়ান বড় ব্যাগ, হেসিয়ান ছোট ব্যাগ ও গানি ব্যাগ।
সচিব আশ্বস্ত করে বলেন, “নির্বাচন সামগ্রী নিয়ে আমাদের কোনো সংশয় নেই। আমরা যে সময়সীমা নির্ধারণ করেছিলাম, সেই সময়ের মধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারব। নির্বাচনের আগে মাঠ পর্যায়ে সব নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে যাবে।”
ইসির ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন সামগ্রী বিতরণ সম্পন্ন হবে। এর মধ্যে থাকবে- ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, সিল, কালি ও ভোট গ্রহণের প্রয়োজনীয় সব উপকরণ।
সচিব বলেন, “সময়মতো সামগ্রী পৌঁছানো গেলে নির্বাচন পরিচালনায় কোনো ধরনের বাধা তৈরি হবে না। এতে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”
ঢাকা/এএএম/এস