রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হকের গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাঁরা গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে বলেন, একটি গোষ্ঠীর পরিকল্পনায় জুলাই অভ্যুত্থানের পর তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের পূর্বপরিকল্পিত ছকে এই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ কথা বলেন।

সমাবেশে মাহমুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান বলেন, ‘আমি আজ ভুক্তভোগী। আমার দুটো বাচ্চা আছে। একটি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। অন্যটির বয়স ছয় বছর। সেই বাচ্চা আজকে বাবার সঙ্গে দেখা করে এসে আমাকে প্রশ্ন করছে, “আমার বাবার কী অপরাধ।” আমি কী বলব তাকে।’

প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় একটি মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলায় সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করে হাজিরহাট থানা-পুলিশ। গত আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে ৩ জুন হাজিরহাট থানায় হত্যা মামলা করেন নগরের রাধাকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা আমেনা বেগম (৬০)। মামলার ৫৪ নম্বর আসামি মাহমুদুল হক।

তবে ছমেস উদ্দিন নামের ওই ব্যক্তির কবরে টাঙানো সাইনবোর্ডের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। সেখানে ছমেস উদ্দিনকে ‘জাতীয় বীর’ উল্লেখ করে লেখা আছে, ‘২ আগস্ট ২০২৪ পুলিশ বিভাগের একটি দল তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করলে তিনি পুলিশ দেখে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে যান। তিনি সেখানে স্ট্রোক করে মারা যান—তা নিশ্চিত করেন প্রাইম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক।’

আজকের সমাবেশে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো.

ইউসুফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির সদস্যসচিব রহমত আলী, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক শাহরিয়ার সোহাস, সাবেক শিক্ষার্থী শাহিন আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সহকারী অধ্যাপক মো. ইউসুফ বলেন, যেসব শিক্ষক ও ছাত্র আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নেওয়ার পর তাঁরা এখন বিপদে আছেন। এই গ্রেপ্তারের ঘটনায় রংপুর নগরের হাজিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আল মামুন শাহর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সমাবেশে মাহমুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান অভিযোগ করেন, একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিল। আগেও রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অটোচালক মানিক হত্যা মামলায় মাহমুদুল হককে আসামি করা হয়। আরেকটি মামলায় আসামি না হলেও হঠাৎ করে অভিযোগপত্রে তাঁর নাম দেওয়া হয়েছে। অথচ জুলাই অভ্যুত্থানের শুরু থেকে তিনি ফেসবুকে ছাত্রদের পক্ষে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। আবু সাঈদ হত্যার দিনে প্রচণ্ড ইমোশনাল (আবেগতাড়িত) হয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি যদি কোনোভাবে বন্দুকের নলটাকে আটকাতে পারতাম পুলিশের।’

বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। দাবিগুলো হলো ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মাহমুদুল হককে সসম্মানে ও নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে হবে; একই সময়ে এই ‘মিথ্যা’ মামলার পরিকল্পনায় যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন ও প্রতিবেদন দাখিল এবং প্রতিবেদন দেওয়ার আগপর্যন্ত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন।

জানতে চাইলে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শওকাত আলী প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্ত ছাড়া মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর পরিবার বলেছে, একটি গোষ্ঠী তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসব করাচ্ছে। তারা পুলিশের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলেছে। মাহমুদুল হক জামিনে মুক্ত হয়ে এলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

আরও পড়ুন‘স্ট্রোক করে মৃত্যুর’ ১০ মাস পর হত্যা মামলা, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কারাগারে৮ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘বৌদি’ শব্দটাকে এখন কুরুচিকর ইঙ্গিতে ব্যবহার করা হয়: স্বস্তিকা

‘দুপুর ঠাকুরপো’ সিরিজে বৌদি রূপে পর্দায় হাজির রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় বাংলা সিনেমার অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি। এবার ‘প্রোমোটার বৌদি’ রূপে পর্দায় হাজির হতে যাচ্ছেন বিতর্কিত এই অভিনেত্রী। সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন শৌর্য দেব।  

কয়েক দিন আগে সিনেমাটির একটি পোস্টার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন স্বস্তিকা মুখার্জি। তারপর থেকে আলোচনায় রয়েছেন এই অভিনেত্রী। ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে স্বস্তিকা মুখার্জি বলেন, “মূল ধারার বাণিজ্যিক সিনেমা থেকেই তো আমার শুরু। এখনো শহরতলিতে গেলে ‘প্রিয়তমা’, ‘সাথীহারা’ সিনেমা নিয়ে আলোচনা করেন দর্শক। সেই স্বাদই এই সিনেমায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমরা। দুর্দান্ত ভাসান নাচও আছে। প্রোমোটার ভিলেনও রয়েছে এখানে।” 

আরো পড়ুন:

‘জেঠু মার্কা লোকজন এসে আমাকে বুড়ি বলবে’

আমি আফরান নিশোর ফ্যান: স্বস্তিকা

‘প্রোমোটার বৌদি’ সিনেমার গল্পে দুই সন্তানের জননী স্বস্তিকা। স্বামী-সন্তানদের নিয়ে তার সংসার। ফলে পাড়ার সবাই তাকে ‘বৌদি’ বলেই ডাকেন। এ স্বস্তিকা বলেন, “আমার পাড়াতেও দেখেছি, মাকে সবাই বৌদি বলেই ডাকত। এখন সমাজমাধ্যমের দৌলতে ‘বৌদি’ শব্দটা কুরুচিকর ইঙ্গিতে ব্যবহার করা হয়। আদপে তো এটা তা নয়! বৌদি শব্দটার মধ্যে পারিবারিক, মিষ্টি, আপন ব্যাপার আছে। এখানেও আমার চরিত্রটা ও রকমই। পেশায় প্রোমোটার, তাই নাম প্রোমোটার বৌদি।” 

সিনেমাটিতে বাণিজ্যিক সব উপাদান রয়েছে। এ তথ্য উল্লেখ করে স্বস্তিকা মুখার্জি বলেন, “নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারেরও অনেক সমস্যা থাকে। এই শহরে নিম্নবিত্তের সংখ্যাই বেশি। তাদের জীবনে অনেক সমস্যা আছে। তবে এই কাহিনিতে বাণিজ্যিক ঘরানার গল্পের যা যা উপাদান প্রয়োজন সব আছে।” 

কলকাতার বিভিন্ন স্থানে সিনেমাটির শুটিং হয়েছে। পরিচালক শৌর্যও ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন। তার এটি প্রথম কাজ। ২০২৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাবে স্বস্তিকার সিনেমাটি। নায়িকা বলেন, “২৭ ফেব্রুয়ারি এমন একটা তারিখ পাওয়া গিয়েছে, যেদিন বড় বাংলা, বড় হিন্দি সিনেমা মুক্তি পাবে না। অনেকেই এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করেন। আমাকে এসে বলেন, বড় সংস্থার সিনেমা মুক্তি পাবে। তখন ভাবি, আর কবে বড় হব? কলকাতা এবং বাইরে সমান তালে কাজ করছি। এখনো যদি ভাবতে হয়, তা হলে সারাক্ষণ পাপারাজ্জি নিয়ে ঘুরতে হবে। আমি নিজের কাজটা মন দিয়ে করতে চাই।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ