‘বাচ্চা প্রশ্ন করছে—আমার বাবার কী অপরাধ, আমি কী বলব তাকে’
Published: 20th, June 2025 GMT
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হকের গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাঁরা গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে বলেন, একটি গোষ্ঠীর পরিকল্পনায় জুলাই অভ্যুত্থানের পর তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের পূর্বপরিকল্পিত ছকে এই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ কথা বলেন।
সমাবেশে মাহমুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান বলেন, ‘আমি আজ ভুক্তভোগী। আমার দুটো বাচ্চা আছে। একটি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। অন্যটির বয়স ছয় বছর। সেই বাচ্চা আজকে বাবার সঙ্গে দেখা করে এসে আমাকে প্রশ্ন করছে, “আমার বাবার কী অপরাধ।” আমি কী বলব তাকে।’
প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় একটি মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলায় সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করে হাজিরহাট থানা-পুলিশ। গত আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে ৩ জুন হাজিরহাট থানায় হত্যা মামলা করেন নগরের রাধাকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা আমেনা বেগম (৬০)। মামলার ৫৪ নম্বর আসামি মাহমুদুল হক।
তবে ছমেস উদ্দিন নামের ওই ব্যক্তির কবরে টাঙানো সাইনবোর্ডের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। সেখানে ছমেস উদ্দিনকে ‘জাতীয় বীর’ উল্লেখ করে লেখা আছে, ‘২ আগস্ট ২০২৪ পুলিশ বিভাগের একটি দল তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করলে তিনি পুলিশ দেখে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে যান। তিনি সেখানে স্ট্রোক করে মারা যান—তা নিশ্চিত করেন প্রাইম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক।’
আজকের সমাবেশে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো.
সহকারী অধ্যাপক মো. ইউসুফ বলেন, যেসব শিক্ষক ও ছাত্র আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নেওয়ার পর তাঁরা এখন বিপদে আছেন। এই গ্রেপ্তারের ঘটনায় রংপুর নগরের হাজিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আল মামুন শাহর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সমাবেশে মাহমুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান অভিযোগ করেন, একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিল। আগেও রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অটোচালক মানিক হত্যা মামলায় মাহমুদুল হককে আসামি করা হয়। আরেকটি মামলায় আসামি না হলেও হঠাৎ করে অভিযোগপত্রে তাঁর নাম দেওয়া হয়েছে। অথচ জুলাই অভ্যুত্থানের শুরু থেকে তিনি ফেসবুকে ছাত্রদের পক্ষে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। আবু সাঈদ হত্যার দিনে প্রচণ্ড ইমোশনাল (আবেগতাড়িত) হয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি যদি কোনোভাবে বন্দুকের নলটাকে আটকাতে পারতাম পুলিশের।’
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। দাবিগুলো হলো ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মাহমুদুল হককে সসম্মানে ও নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে হবে; একই সময়ে এই ‘মিথ্যা’ মামলার পরিকল্পনায় যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন ও প্রতিবেদন দাখিল এবং প্রতিবেদন দেওয়ার আগপর্যন্ত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন।
জানতে চাইলে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শওকাত আলী প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্ত ছাড়া মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর পরিবার বলেছে, একটি গোষ্ঠী তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসব করাচ্ছে। তারা পুলিশের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলেছে। মাহমুদুল হক জামিনে মুক্ত হয়ে এলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
আরও পড়ুন‘স্ট্রোক করে মৃত্যুর’ ১০ মাস পর হত্যা মামলা, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কারাগারে৮ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র কর
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা অব্যাহত, শুক্রবারের হামলায় আরও ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত
ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যেও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েল। স্থানীয় সময় শুক্রবার উপত্যকাটিতে আরও ৮২ জন নিহত হয়েছেন।
এরমধ্যে মধ্য গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৭ জন। তাদের ২৩ জন ত্রাণ আনতে গিয়ে দখলদারদের হাতে নিহত হয়েছেন। গাজা সিটিতে নিহত হয়েছেন আরও ২৩ জন। আর দক্ষিণ গাজায় প্রাণ গেছে ২২ জনের। এদের মধ্যে ১১ জন ত্রাণ আনতে গিয়েছিলেন।
এদিকে গাজা যুদ্ধ চলমান থাকায় টানা দ্বিতীয় বছরের মতো শিশুদের বিরুদ্ধে গুরুতর সহিংসতার কারণে ইসরায়েলকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করেছে জাতিসংঘ। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে যুদ্ধপীড়িত অঞ্চলে শিশুদের ওপর সহিংসতা ‘চরম মাত্রায়’ পৌঁছেছে। এর মধ্যে গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
‘সশস্ত্র সংঘাতে শিশু’বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর বিশ্বব্যাপী শিশুদের বিরুদ্ধে গুরুতর সহিংসতার ঘটনা ২৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৪ সালে মোট ৪১ হাজার ৩৭০টি গুরুতর সহিংসতা যাচাই করে দেখা গেছে, এর মধ্যে শিশুদের হত্যা, শারীরিকভাবে আহত করা, যৌন সহিংসতা এবং স্কুল-হাসপাতালে হামলার মতো ঘটনা রয়েছে।
এর মধ্যে শুধু ফিলিস্তিন ভূখণ্ড ও ইসরায়েলে ২ হাজার ৯৫৯ শিশুর বিরুদ্ধে ৮ হাজার ৫৫৪টি গুরুতর সহিংসতার ঘটনা নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ। এই সংখ্যা অনুযায়ী, গাজায় গত এক বছরে ১ হাজার ২৫৯ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে এবং ৯৪১ জন আহত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, নিহত শিশুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০২৪ সালে গাজায় আরও ৪ হাজার ৪৭০ শিশু নিহতের তথ্য যাচাই চলছে। অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ৯৭ ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যুর তথ্যও নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ। সেখানে ৩ হাজার ৬৮৮টি শিশু অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।
সূত্র: আলজাজিরা