ইসরায়েল মূলত ইহুদি রাষ্ট্র। কিন্তু এই দেশে ইহুদিদের পরেই মুসলিমরা সংখ্যা গরিষ্ঠ। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়নি। অর্থাৎ রাষ্ট্র হিসেবেই মানে না। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের অনেক দেশই ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের চেয়েও আয়তনে ছোট দেশ ইসরায়েল। এই ছোট দেশটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম দেশ ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এদিকে আয়তনের দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ইরান। ইসরায়েল এমন একটি দেশ যে দেশের মানুষের রয়েছে দীর্ঘ দুর্ভোগ পোহানোর ইতিহাস। যারা বিভিন্ন দেশ থেকে একত্রিত হয়ে নিজেদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গড়ে—এখন পৃথিবীর শক্তিধর দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। অটোমান সম্রাজ্যের পতন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব আর ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের কারণে ইসরায়েল ধীরে ধীরে রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তারপরেও এই দেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি অনেক দেশ। এমনকি এই দেশের রাজধানীও পুরোপুরি রাজধানী হয়ে উঠতে পারেনি কোনোদিন। চলুন বিস্তারিত জানা যাক এই দেশটি সম্পর্কে। 

ইসরায়েল যেভাবে গঠিত হয়েছে: বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্যালেস্টাইন বা ফিলিস্তিন ছিল তুর্কী অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে। সে সময় ইউরোপে বসবাসকারী ইহুদিরা ব্যাপক বিদ্বেষ-নির্যাতনের শিকার হয়ে ‘জাওনিজম’ বা ইহুদিবাদী আন্দোলন শুরু করে। তাদের লক্ষ্য ছিল ইউরোপের বাইরে নিজেদের জন্য একটি রাষ্ট্র গড়ে তোলা। এর আন্দোলনের পরে ইহুদিরা দলে দলে প্যালেস্টাইনে গিয়ে বসত গাড়তে শুরু করে।কিন্তু তাদের এই অভিবাসন স্থানীয় আরব এবং মুসলিমদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে। সেসময় আরব এবং মুসলিমরাই ছিল সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হলে আরব জাতীয়তাবাদী এবং ইহুদীবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত শুরু হয়। সে সময় ইহুদি এবং আরব মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লাখ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয় (হলোকাস্ট)। তারপর ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চাপ বাড়তে থাকে। তুর্কী অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়ার পর যে ‘লিগ অব নেশনস’ গঠিত হয়। তাদের পক্ষ থেকে ব্রিটেনকে ‘ম্যান্ডেট’ দেওয়া হয় প্যালেস্টাইন শাসন করার।

ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকা এই অঞ্চলটি তখন ফিলিস্তিনি আর ইহুদীদের মধ্যে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরায়েল।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যেই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো ইরান

ইরান-ইসরায়েল ছেড়ে পালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা

কিন্তু পরদিনই মিশর, জর্দান, সিরিয়া এবং ইরাক মিলে অভিযান চালায় ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকা অঞ্চলে। সেটাই ছিল প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ।ইহুদিদের কাছে এটি স্বাধীনতার যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। জাতিসংঘ প্যালেস্টাইনে আরবদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যে অঞ্চলটি বরাদ্দ করেছিল, এই যুদ্ধের পর তার অর্ধেকটাই চলে যায় ইসরায়েল বা ইহুদিদের দখলে। ফিলিস্তিনের জাতীয় বিপর্যয়ের শুরু সেখান থেকে।

এটিকেই তারা বলে ‘নাকবা’ বা বিপর্যয়। প্রায় সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিতে হয়। ইহুদি বাহিনী তাদেরকে বাড়ি-ঘর থেকে উচ্ছেদ করে।

ওই যুদ্ধ ছিল ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের সূচনা মাত্র। মাঝে অনেকগুলো বছর কেটে গিয়ে এলো ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইসরায়েল। এর পশ্চিম দিকে ভূমধ্যসাগর এবং পাশে রয়েছে লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, মিশর এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড। দেশটির উত্তরে লেবানন, উত্তর-পূর্বে সিরিয়া, পূর্বে জর্ডান ও দক্ষিণ-পশ্চিমে মিশর। এই দেশের সঙ্গে গাজা উপত্যকার পূর্ব ও উত্তর দিকের সংযোগ থাকলেও সেখানে কঠোর চেকপোস্ট রয়েছে। ইসরায়েলের দক্ষিণ দিকে মিশরের সাথে গাজার সীমান্ত রয়েছে, যেখানে রাফাহ ক্রসিং অবস্থিত। এটিই গাজা ভূখণ্ডের জন্য একমাত্র সীমান্ত পথ।

ইসরায়েলের পূর্বদিকে আবার ডেড সি বা মৃত সাগর অবস্থিত। মৃত সাগরের অবস্থান ইসরায়েল, পশ্চিম তীর ও জর্ডানের সীমান্তবর্তী এলাকায়। দেশটির মোট আয়তনের ২১ হাজার ৬৭১ কিলোমিটারই ভূমি। দৈর্ঘ্যে এটি প্রায় ৪২৯ কিলোমিটার এবং প্রস্থে মাত্র ১১ কিলোমিটার।

ইসরায়েলের দাবি করা এই আয়তনের মধ্যে রয়েছে মূল ভূখণ্ড, গোলান মালভূমি, জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজার মতো আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত অঞ্চলগুলোও রয়েছে।

দেশটিতে সমুদ্র যেমন আছে, তেমন-ই এখানে পাহাড়, উর্বর ভূমি, মরুভূমিও রয়েছে। যেমন— ইসরায়েলের পশ্চিমে থাকা ভূমধ্যসাগর থেকে পূর্বের ডেড সি পর্যন্ত যেতে গাড়িতে মাত্র ৯০ মিনিট সময় লাগে। আর গাড়িতে ইসরায়েলের একদম উত্তরের শহর মেটুল্লা থেকে দক্ষিণের এইলাত পর্যন্ত যাত্রায় সময় লাগে প্রায় নয় ঘণ্টা।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যা ৯৫ লক্ষ ১২ হাজার ৩৯৪ জন। এই দেশের প্রতি বর্গকিলোমিটারে সাড়ে চারশোরও কম মানুষ থাকে।ইসরায়েল একটি ইহুদি রাষ্ট্র হলেও সেখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অন্যান্য ধর্মের অনুসারীও বসবাস করেন। জনসংখ্যার বিচারে দেশটিতে ইহুদীদের পরেই রয়েছে ইসলাম ধর্মালম্বীরা। এছাড়া, সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খ্রিষ্টান ও দ্রুজ ধর্মেরও মানুষ বসবাস করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার বলছে, বিশ্বের মোট ইহুদীদের অর্ধেকের কিছুটা কম সংখ্যক মানুষ ইসরায়েলে বসবাস করে। বাকি প্রায় অর্ধেক বাস করে যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, ফ্রান্সের মতো দেশেও কিছু সংখ্যক ইহুদী আছে।

তবে ইসরায়েলের মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের অধিকাংশই ফিলিস্তিনি আরব বংশোদ্ভূত। তারা বর্তমানে ইসরায়েলের নাগরিক হিসেবেই বসবাস করে।

কাগজে-কলমে ইসরায়েলের রাজধানী জেরুজালেম এবং ইসরায়েল দাবি করে জেরুজালেমের ওপর তাদের সার্বভৌম অধিকার আছে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে তারা পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। এরপর থেকে তারা জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী বলে গণ্য করে। এ নিয়ে ১৯৮০ সালে ইসরায়েলে একটি আইনও পাস করে। ওই আইনে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের ‘অভিন্ন ও অখণ্ড রাজধানী’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু যদিও অনেক দেশ জেরুজালেমকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে ইসরায়েল তার প্রশাসনিক, রাজনৈতিক এবং বিচারিক কার্যক্রম জেরুজালেম থেকেই পরিচালনা করে থাকে। সেখানে ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর অবস্থিত।

বেশ কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নিয়েছে।এই বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি ফিলিস্তিন। কারণ তারাও পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী হিসেবে চায়।

এদিকে ফিলিস্তিনকে দেশ হিসাবে সবাই স্বীকার করে না, জাতিসংঘও এটিকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু জাতিসংঘের স্বীকৃতি না মিললেও এই বিশ্ব সংস্থার ৭০ ভাগ সদস্য রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। ২০১৫ সালের সেপেম্বরে জাতিসংঘ সদর দফরের বাইরে ফিলিস্তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলনেরও স্বীকৃতি মিলে।

২০২২ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, সেখানে প্রায় নয় লাখ ৭০ হাজার লোকের বসবাস। তবে সবচেয়ে বেশি মানুষ থাকে মাত্র ইসরায়েলের ১৬টি বড় শহরে। সাধারণত কোনও এলাকায় বিশ হাজার জনের মানুষ বসবাস করলে সেটিকে সেখানে বড় শহর বলা হয়।

ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত কেন্দ্র হলো এই তেল আবিব। বিশ্বের অনেক দেশ জেরুজালেমে না, এখানেই তাদের দূতাবাস রাখে।

জেরুজালেম ও তেল আবিব ছাড়াও হাইফা, রিশোন লে জিয়ন, পেতাহ টিকভা, বিয়ার শেভা, নাজারেথ, এলাটও দেশটির বেশ গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে বিবেচিত। হাইফাকে ইসরায়েলের বন্দরনগরী ও শিল্পকেন্দ্র হিসাবে ধরা হয়।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল প য ল স ট ইন য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র দ র জন য এই দ শ র অন ক দ শ ব স কর অবস থ ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েল সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানেন?

ইসরায়েল মূলত ইহুদি রাষ্ট্র। কিন্তু এই দেশে ইহুদিদের পরেই মুসলিমরা সংখ্যা গরিষ্ঠ। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়নি। অর্থাৎ রাষ্ট্র হিসেবেই মানে না। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের অনেক দেশই ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের চেয়েও আয়তনে ছোট দেশ ইসরায়েল। এই ছোট দেশটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম দেশ ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এদিকে আয়তনের দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ইরান। ইসরায়েল এমন একটি দেশ যে দেশের মানুষের রয়েছে দীর্ঘ দুর্ভোগ পোহানোর ইতিহাস। যারা বিভিন্ন দেশ থেকে একত্রিত হয়ে নিজেদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গড়ে—এখন পৃথিবীর শক্তিধর দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। অটোমান সম্রাজ্যের পতন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব আর ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের কারণে ইসরায়েল ধীরে ধীরে রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তারপরেও এই দেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি অনেক দেশ। এমনকি এই দেশের রাজধানীও পুরোপুরি রাজধানী হয়ে উঠতে পারেনি কোনোদিন। চলুন বিস্তারিত জানা যাক এই দেশটি সম্পর্কে। 

ইসরায়েল যেভাবে গঠিত হয়েছে: বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্যালেস্টাইন বা ফিলিস্তিন ছিল তুর্কী অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে। সে সময় ইউরোপে বসবাসকারী ইহুদিরা ব্যাপক বিদ্বেষ-নির্যাতনের শিকার হয়ে ‘জাওনিজম’ বা ইহুদিবাদী আন্দোলন শুরু করে। তাদের লক্ষ্য ছিল ইউরোপের বাইরে নিজেদের জন্য একটি রাষ্ট্র গড়ে তোলা। এর আন্দোলনের পরে ইহুদিরা দলে দলে প্যালেস্টাইনে গিয়ে বসত গাড়তে শুরু করে।কিন্তু তাদের এই অভিবাসন স্থানীয় আরব এবং মুসলিমদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে। সেসময় আরব এবং মুসলিমরাই ছিল সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হলে আরব জাতীয়তাবাদী এবং ইহুদীবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত শুরু হয়। সে সময় ইহুদি এবং আরব মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লাখ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয় (হলোকাস্ট)। তারপর ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চাপ বাড়তে থাকে। তুর্কী অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়ার পর যে ‘লিগ অব নেশনস’ গঠিত হয়। তাদের পক্ষ থেকে ব্রিটেনকে ‘ম্যান্ডেট’ দেওয়া হয় প্যালেস্টাইন শাসন করার।

ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকা এই অঞ্চলটি তখন ফিলিস্তিনি আর ইহুদীদের মধ্যে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরায়েল।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যেই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো ইরান

ইরান-ইসরায়েল ছেড়ে পালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা

কিন্তু পরদিনই মিশর, জর্দান, সিরিয়া এবং ইরাক মিলে অভিযান চালায় ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকা অঞ্চলে। সেটাই ছিল প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ।ইহুদিদের কাছে এটি স্বাধীনতার যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। জাতিসংঘ প্যালেস্টাইনে আরবদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যে অঞ্চলটি বরাদ্দ করেছিল, এই যুদ্ধের পর তার অর্ধেকটাই চলে যায় ইসরায়েল বা ইহুদিদের দখলে। ফিলিস্তিনের জাতীয় বিপর্যয়ের শুরু সেখান থেকে।

এটিকেই তারা বলে ‘নাকবা’ বা বিপর্যয়। প্রায় সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিতে হয়। ইহুদি বাহিনী তাদেরকে বাড়ি-ঘর থেকে উচ্ছেদ করে।

ওই যুদ্ধ ছিল ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের সূচনা মাত্র। মাঝে অনেকগুলো বছর কেটে গিয়ে এলো ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইসরায়েল। এর পশ্চিম দিকে ভূমধ্যসাগর এবং পাশে রয়েছে লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, মিশর এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড। দেশটির উত্তরে লেবানন, উত্তর-পূর্বে সিরিয়া, পূর্বে জর্ডান ও দক্ষিণ-পশ্চিমে মিশর। এই দেশের সঙ্গে গাজা উপত্যকার পূর্ব ও উত্তর দিকের সংযোগ থাকলেও সেখানে কঠোর চেকপোস্ট রয়েছে। ইসরায়েলের দক্ষিণ দিকে মিশরের সাথে গাজার সীমান্ত রয়েছে, যেখানে রাফাহ ক্রসিং অবস্থিত। এটিই গাজা ভূখণ্ডের জন্য একমাত্র সীমান্ত পথ।

ইসরায়েলের পূর্বদিকে আবার ডেড সি বা মৃত সাগর অবস্থিত। মৃত সাগরের অবস্থান ইসরায়েল, পশ্চিম তীর ও জর্ডানের সীমান্তবর্তী এলাকায়। দেশটির মোট আয়তনের ২১ হাজার ৬৭১ কিলোমিটারই ভূমি। দৈর্ঘ্যে এটি প্রায় ৪২৯ কিলোমিটার এবং প্রস্থে মাত্র ১১ কিলোমিটার।

ইসরায়েলের দাবি করা এই আয়তনের মধ্যে রয়েছে মূল ভূখণ্ড, গোলান মালভূমি, জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজার মতো আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত অঞ্চলগুলোও রয়েছে।

দেশটিতে সমুদ্র যেমন আছে, তেমন-ই এখানে পাহাড়, উর্বর ভূমি, মরুভূমিও রয়েছে। যেমন— ইসরায়েলের পশ্চিমে থাকা ভূমধ্যসাগর থেকে পূর্বের ডেড সি পর্যন্ত যেতে গাড়িতে মাত্র ৯০ মিনিট সময় লাগে। আর গাড়িতে ইসরায়েলের একদম উত্তরের শহর মেটুল্লা থেকে দক্ষিণের এইলাত পর্যন্ত যাত্রায় সময় লাগে প্রায় নয় ঘণ্টা।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যা ৯৫ লক্ষ ১২ হাজার ৩৯৪ জন। এই দেশের প্রতি বর্গকিলোমিটারে সাড়ে চারশোরও কম মানুষ থাকে।ইসরায়েল একটি ইহুদি রাষ্ট্র হলেও সেখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অন্যান্য ধর্মের অনুসারীও বসবাস করেন। জনসংখ্যার বিচারে দেশটিতে ইহুদীদের পরেই রয়েছে ইসলাম ধর্মালম্বীরা। এছাড়া, সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খ্রিষ্টান ও দ্রুজ ধর্মেরও মানুষ বসবাস করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার বলছে, বিশ্বের মোট ইহুদীদের অর্ধেকের কিছুটা কম সংখ্যক মানুষ ইসরায়েলে বসবাস করে। বাকি প্রায় অর্ধেক বাস করে যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, ফ্রান্সের মতো দেশেও কিছু সংখ্যক ইহুদী আছে।

তবে ইসরায়েলের মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের অধিকাংশই ফিলিস্তিনি আরব বংশোদ্ভূত। তারা বর্তমানে ইসরায়েলের নাগরিক হিসেবেই বসবাস করে।

কাগজে-কলমে ইসরায়েলের রাজধানী জেরুজালেম এবং ইসরায়েল দাবি করে জেরুজালেমের ওপর তাদের সার্বভৌম অধিকার আছে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে তারা পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। এরপর থেকে তারা জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী বলে গণ্য করে। এ নিয়ে ১৯৮০ সালে ইসরায়েলে একটি আইনও পাস করে। ওই আইনে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের ‘অভিন্ন ও অখণ্ড রাজধানী’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু যদিও অনেক দেশ জেরুজালেমকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে ইসরায়েল তার প্রশাসনিক, রাজনৈতিক এবং বিচারিক কার্যক্রম জেরুজালেম থেকেই পরিচালনা করে থাকে। সেখানে ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর অবস্থিত।

বেশ কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নিয়েছে।এই বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি ফিলিস্তিন। কারণ তারাও পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী হিসেবে চায়।

এদিকে ফিলিস্তিনকে দেশ হিসাবে সবাই স্বীকার করে না, জাতিসংঘও এটিকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু জাতিসংঘের স্বীকৃতি না মিললেও এই বিশ্ব সংস্থার ৭০ ভাগ সদস্য রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। ২০১৫ সালের সেপেম্বরে জাতিসংঘ সদর দফরের বাইরে ফিলিস্তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলনেরও স্বীকৃতি মিলে।

২০২২ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, সেখানে প্রায় নয় লাখ ৭০ হাজার লোকের বসবাস। তবে সবচেয়ে বেশি মানুষ থাকে মাত্র ইসরায়েলের ১৬টি বড় শহরে। সাধারণত কোনও এলাকায় বিশ হাজার জনের মানুষ বসবাস করলে সেটিকে সেখানে বড় শহর বলা হয়।

ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত কেন্দ্র হলো এই তেল আবিব। বিশ্বের অনেক দেশ জেরুজালেমে না, এখানেই তাদের দূতাবাস রাখে।

জেরুজালেম ও তেল আবিব ছাড়াও হাইফা, রিশোন লে জিয়ন, পেতাহ টিকভা, বিয়ার শেভা, নাজারেথ, এলাটও দেশটির বেশ গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে বিবেচিত। হাইফাকে ইসরায়েলের বন্দরনগরী ও শিল্পকেন্দ্র হিসাবে ধরা হয়।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ