ইসরায়েল মূলত ইহুদি রাষ্ট্র। কিন্তু এই দেশে ইহুদিদের পরেই মুসলিমরা সংখ্যা গরিষ্ঠ। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়নি। অর্থাৎ রাষ্ট্র হিসেবেই মানে না। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের অনেক দেশই ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের চেয়েও আয়তনে ছোট দেশ ইসরায়েল। এই ছোট দেশটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম দেশ ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এদিকে আয়তনের দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ইরান। ইসরায়েল এমন একটি দেশ যে দেশের মানুষের রয়েছে দীর্ঘ দুর্ভোগ পোহানোর ইতিহাস। যারা বিভিন্ন দেশ থেকে একত্রিত হয়ে নিজেদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গড়ে—এখন পৃথিবীর শক্তিধর দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। অটোমান সম্রাজ্যের পতন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব আর ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের কারণে ইসরায়েল ধীরে ধীরে রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তারপরেও এই দেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি অনেক দেশ। এমনকি এই দেশের রাজধানীও পুরোপুরি রাজধানী হয়ে উঠতে পারেনি কোনোদিন। চলুন বিস্তারিত জানা যাক এই দেশটি সম্পর্কে। 

ইসরায়েল যেভাবে গঠিত হয়েছে: বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্যালেস্টাইন বা ফিলিস্তিন ছিল তুর্কী অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে। সে সময় ইউরোপে বসবাসকারী ইহুদিরা ব্যাপক বিদ্বেষ-নির্যাতনের শিকার হয়ে ‘জাওনিজম’ বা ইহুদিবাদী আন্দোলন শুরু করে। তাদের লক্ষ্য ছিল ইউরোপের বাইরে নিজেদের জন্য একটি রাষ্ট্র গড়ে তোলা। এর আন্দোলনের পরে ইহুদিরা দলে দলে প্যালেস্টাইনে গিয়ে বসত গাড়তে শুরু করে।কিন্তু তাদের এই অভিবাসন স্থানীয় আরব এবং মুসলিমদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে। সেসময় আরব এবং মুসলিমরাই ছিল সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হলে আরব জাতীয়তাবাদী এবং ইহুদীবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত শুরু হয়। সে সময় ইহুদি এবং আরব মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লাখ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয় (হলোকাস্ট)। তারপর ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চাপ বাড়তে থাকে। তুর্কী অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়ার পর যে ‘লিগ অব নেশনস’ গঠিত হয়। তাদের পক্ষ থেকে ব্রিটেনকে ‘ম্যান্ডেট’ দেওয়া হয় প্যালেস্টাইন শাসন করার।

ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকা এই অঞ্চলটি তখন ফিলিস্তিনি আর ইহুদীদের মধ্যে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরায়েল।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যেই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো ইরান

ইরান-ইসরায়েল ছেড়ে পালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা

কিন্তু পরদিনই মিশর, জর্দান, সিরিয়া এবং ইরাক মিলে অভিযান চালায় ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকা অঞ্চলে। সেটাই ছিল প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ।ইহুদিদের কাছে এটি স্বাধীনতার যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। জাতিসংঘ প্যালেস্টাইনে আরবদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যে অঞ্চলটি বরাদ্দ করেছিল, এই যুদ্ধের পর তার অর্ধেকটাই চলে যায় ইসরায়েল বা ইহুদিদের দখলে। ফিলিস্তিনের জাতীয় বিপর্যয়ের শুরু সেখান থেকে।

এটিকেই তারা বলে ‘নাকবা’ বা বিপর্যয়। প্রায় সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিতে হয়। ইহুদি বাহিনী তাদেরকে বাড়ি-ঘর থেকে উচ্ছেদ করে।

ওই যুদ্ধ ছিল ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের সূচনা মাত্র। মাঝে অনেকগুলো বছর কেটে গিয়ে এলো ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইসরায়েল। এর পশ্চিম দিকে ভূমধ্যসাগর এবং পাশে রয়েছে লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, মিশর এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড। দেশটির উত্তরে লেবানন, উত্তর-পূর্বে সিরিয়া, পূর্বে জর্ডান ও দক্ষিণ-পশ্চিমে মিশর। এই দেশের সঙ্গে গাজা উপত্যকার পূর্ব ও উত্তর দিকের সংযোগ থাকলেও সেখানে কঠোর চেকপোস্ট রয়েছে। ইসরায়েলের দক্ষিণ দিকে মিশরের সাথে গাজার সীমান্ত রয়েছে, যেখানে রাফাহ ক্রসিং অবস্থিত। এটিই গাজা ভূখণ্ডের জন্য একমাত্র সীমান্ত পথ।

ইসরায়েলের পূর্বদিকে আবার ডেড সি বা মৃত সাগর অবস্থিত। মৃত সাগরের অবস্থান ইসরায়েল, পশ্চিম তীর ও জর্ডানের সীমান্তবর্তী এলাকায়। দেশটির মোট আয়তনের ২১ হাজার ৬৭১ কিলোমিটারই ভূমি। দৈর্ঘ্যে এটি প্রায় ৪২৯ কিলোমিটার এবং প্রস্থে মাত্র ১১ কিলোমিটার।

ইসরায়েলের দাবি করা এই আয়তনের মধ্যে রয়েছে মূল ভূখণ্ড, গোলান মালভূমি, জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজার মতো আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত অঞ্চলগুলোও রয়েছে।

দেশটিতে সমুদ্র যেমন আছে, তেমন-ই এখানে পাহাড়, উর্বর ভূমি, মরুভূমিও রয়েছে। যেমন— ইসরায়েলের পশ্চিমে থাকা ভূমধ্যসাগর থেকে পূর্বের ডেড সি পর্যন্ত যেতে গাড়িতে মাত্র ৯০ মিনিট সময় লাগে। আর গাড়িতে ইসরায়েলের একদম উত্তরের শহর মেটুল্লা থেকে দক্ষিণের এইলাত পর্যন্ত যাত্রায় সময় লাগে প্রায় নয় ঘণ্টা।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যা ৯৫ লক্ষ ১২ হাজার ৩৯৪ জন। এই দেশের প্রতি বর্গকিলোমিটারে সাড়ে চারশোরও কম মানুষ থাকে।ইসরায়েল একটি ইহুদি রাষ্ট্র হলেও সেখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অন্যান্য ধর্মের অনুসারীও বসবাস করেন। জনসংখ্যার বিচারে দেশটিতে ইহুদীদের পরেই রয়েছে ইসলাম ধর্মালম্বীরা। এছাড়া, সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খ্রিষ্টান ও দ্রুজ ধর্মেরও মানুষ বসবাস করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার বলছে, বিশ্বের মোট ইহুদীদের অর্ধেকের কিছুটা কম সংখ্যক মানুষ ইসরায়েলে বসবাস করে। বাকি প্রায় অর্ধেক বাস করে যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, ফ্রান্সের মতো দেশেও কিছু সংখ্যক ইহুদী আছে।

তবে ইসরায়েলের মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের অধিকাংশই ফিলিস্তিনি আরব বংশোদ্ভূত। তারা বর্তমানে ইসরায়েলের নাগরিক হিসেবেই বসবাস করে।

কাগজে-কলমে ইসরায়েলের রাজধানী জেরুজালেম এবং ইসরায়েল দাবি করে জেরুজালেমের ওপর তাদের সার্বভৌম অধিকার আছে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে তারা পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। এরপর থেকে তারা জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী বলে গণ্য করে। এ নিয়ে ১৯৮০ সালে ইসরায়েলে একটি আইনও পাস করে। ওই আইনে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের ‘অভিন্ন ও অখণ্ড রাজধানী’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু যদিও অনেক দেশ জেরুজালেমকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে ইসরায়েল তার প্রশাসনিক, রাজনৈতিক এবং বিচারিক কার্যক্রম জেরুজালেম থেকেই পরিচালনা করে থাকে। সেখানে ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর অবস্থিত।

বেশ কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নিয়েছে।এই বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি ফিলিস্তিন। কারণ তারাও পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী হিসেবে চায়।

এদিকে ফিলিস্তিনকে দেশ হিসাবে সবাই স্বীকার করে না, জাতিসংঘও এটিকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু জাতিসংঘের স্বীকৃতি না মিললেও এই বিশ্ব সংস্থার ৭০ ভাগ সদস্য রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। ২০১৫ সালের সেপেম্বরে জাতিসংঘ সদর দফরের বাইরে ফিলিস্তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলনেরও স্বীকৃতি মিলে।

২০২২ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, সেখানে প্রায় নয় লাখ ৭০ হাজার লোকের বসবাস। তবে সবচেয়ে বেশি মানুষ থাকে মাত্র ইসরায়েলের ১৬টি বড় শহরে। সাধারণত কোনও এলাকায় বিশ হাজার জনের মানুষ বসবাস করলে সেটিকে সেখানে বড় শহর বলা হয়।

ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত কেন্দ্র হলো এই তেল আবিব। বিশ্বের অনেক দেশ জেরুজালেমে না, এখানেই তাদের দূতাবাস রাখে।

জেরুজালেম ও তেল আবিব ছাড়াও হাইফা, রিশোন লে জিয়ন, পেতাহ টিকভা, বিয়ার শেভা, নাজারেথ, এলাটও দেশটির বেশ গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে বিবেচিত। হাইফাকে ইসরায়েলের বন্দরনগরী ও শিল্পকেন্দ্র হিসাবে ধরা হয়।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল প য ল স ট ইন য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র দ র জন য এই দ শ র অন ক দ শ ব স কর অবস থ ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন আজ, যা জানা দরকার

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের নাগরিকেরা আজ মঙ্গলবার তাঁদের মেয়র নির্বাচনে ভোট দেবেন। নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি, নিউইয়র্ক রাজ্যের ডেমোক্র্যাট সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার মধ্যে লড়াই হবে। এই নির্বাচন ইতিমধ্যেই পুরো বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

নিউইয়র্কে চার বছর পরপর মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এ বছরের নির্বাচন বিশেষভাবে নজর কেড়েছে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে। পৃথিবীর অন্যতম বড় এই নগরের নেতৃত্বের লড়াইয়ে মুখোমুখি হবেন প্রগতিশীল, ক্ষমতাসীন ও রক্ষণশীলরা।

নিউইয়র্ক নগর ও মেয়র নির্বাচন সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া যাক—

নিউইয়র্ক কত বড়

নিউইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল শহর। ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত এ শহরের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৮৫ লাখ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করেন ১১ হাজার ৩১৪ জন করে। সে হিসাবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরও বটে। দেশটির পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই নগর পাঁচটি বরো বা প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত। এগুলো হলো ব্রঙ্কস, ব্রুকলিন, ম্যানহাটান, কুইন্স ও স্টেটেন আইল্যান্ড। এগুলো কাউন্টির সমতুল্য প্রশাসনিক বিভাগ হিসেবে কাজ করে।

ব্রঙ্কস

হিপ-হপ সংগীতের জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস বরো। বিখ্যাত ইয়াঙ্কি স্টেডিয়ামও এখানেই অবস্থিত। এই ১১০ বর্গকিলোমিটার (৪২ বর্গমাইল) আয়তনের এই প্রশাসনিক অঞ্চলে ১৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। এখানকার পরিবারগুলোর বার্ষিক গড় আয় ২৮ হাজার ৬৬৪ ডলার। এখানে এক বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া গড়ে ২ হাজার ১০০ ডলার।

ব্রুকলিন

শিল্প, বৈচিত্র্যময় পাড়া-মহল্লা এবং বিখ্যাত ব্রুকলিন ব্রিজের জন্য পরিচিত ব্রুকলিন। এখানে প্রায় ২৫ লাখ ৬০ হাজার মানুষের বসবাস। এটির আয়তন ১৮০ বর্গকিলোমিটার। পাঁচটি বরোর মধ্যে ব্রুকলিনের বার্ষিক গড় পারিবারিক আয় তৃতীয় সর্বোচ্চ—৪১ হাজার ১৭১ ডলার। এখানে এক বেডরুমের ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া গড়ে ২ হাজার ৮০০ ডলার।

নিউইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল শহর। ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত এ শহরের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৮৫ লাখ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করেন ১১ হাজার ৩১৪ জন করে। সে হিসাবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরও বটে। দেশটির পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এ শহর পাঁচটি বরো বা প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত।

ম্যানহাটান

নিউইয়র্কের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ম্যানহাটান। এখানে রয়েছে বিখ্যাত ওয়াল স্ট্রিট, ব্রডওয়ে ও সেন্ট্রাল পার্ক। এখানে প্রায় ১৫ লাখ ৯০ হাজার মানুষের বসবাস। অঞ্চলটির আয়তন ৫৯ বর্গকিলোমিটার। নিউইয়র্কে ম্যানহাটানের বার্ষিক গড় পারিবারিক আয় সর্বোচ্চ—৬১ হাজার ৪৩৯ ডলার। তবে এখানকার বাড়িভাড়াও অন্যান্য এলাকায় তুলনায় সবচেয়ে বেশি। এক বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটের জন্য প্রতি মাসে গড়ে ৪ হাজার ২০০ ডলার ব্যয় করতে হয়।

কুইন্স

পাঁচটি বরোর মধ্যে সবচেয়ে বড় কুইন্স। এখানে নিউইয়র্কের প্রধান দুটি বিমানবন্দর জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং লাগোর্ডিয়া বিমানবন্দর অবস্থিত। ২৮০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বরোতে প্রায় ২৫ লাখ ৬০ হাজার মানুষ বসবাস করে। এখানে বার্ষিক গড় পারিবারিক আয় ৪০ হাজার ৫৪৯ ডলার। এক বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটের ভাড়া মাসে প্রায় ২ হাজার ৭০০ ডলার।

স্টেটেন আইল্যান্ড

বিভিন্ন পার্ক ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার জন্য পরিচিত স্টেটেন আইল্যান্ড। ১৫২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বরোতে প্রায় ৫ লাখ মানুষ বসবাস করে। এখানকার বার্ষিক গড় পারিবারিক আয় ৪৭ হাজার ২১৮ ডলার। এক বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটের ভাড়া মাসে প্রায় ২ হাজার ডলার।

এই পাঁচটি বরোর মোট আয়তন প্রায় ৭৭৮ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটার, যা যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিস, জার্মানির বার্লিন কিংবা সিঙ্গাপুরের আয়তনের সমান।

নিউইয়র্কের বাসিন্দা কারা

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে ৩৯ দশমিক ২ বছর বয়সীদের মধ্যবয়স্ক ধরা হয়। নিউইয়র্কের ক্ষেত্রে মধ্যবয়স্ক ধরা হয় ৩৮ দশমিক ৮ বছর বয়সীদের। এর থেকে বোঝা যায়, এই শহরের জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে তরুণ।

নিউইয়র্কে ৩০-৩৪ বছর বয়সী মানুষ সবচেয়ে বেশি, যাঁরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ২ শতাংশ ২৫-২৯ বছর বয়সী এবং ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ ৩৫-৩৯ বছর বয়সী।

নিউইয়র্কে নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে কিছুটা বেশি। এখানে ৪২ লাখ ৯০ হাজার নারী এবং ৩৯ লাখ ৬০ হাজার পুরুষ বসবাস করে।

নিউইয়র্কে ডেমোক্রেটিক পার্টির বাইরে সর্বশেষ মেয়র ছিলেন রিপাবলিকান পার্টির রুডি জুলিয়ানি (১৯৯৩-২০০১)। এর পর থেকে শহরটি ধারাবাহিকভাবে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে মেয়র বেছে নিয়েছে। ২০০২-১৩ মেয়াদে মাইকেল ব্লুমবার্গ, ২০১৪-২১ মেয়াদে বিল দে ব্লাসিও এবং ২০২২ থেকে এখন পর্যন্ত এরিক অ্যাডামস এই দল থেকে মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

নিউইয়র্ক বিশ্বের অন্যতম বহুজাতিক ও বহুভাষিক শহর হিসেবে পরিচিত। এখানকার বাসিন্দারা ২০০টির বেশি ভাষায় কথা বলেন। শহরের ৩৭ শতাংশ বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং প্রায় ৪৯ শতাংশ বাসিন্দা ঘরে ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলেন। এ ছাড়া শহরের প্রায় অর্ধেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অভিবাসীদের মালিকানাধীন।

বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় শহরগুলোর একটি নিউইয়র্ক। ২০২০ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, এই শহরের ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ শ্বেতাঙ্গ, ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ হিসপানিক, ২০ দশমিক ২ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ এবং ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ এশীয়।

মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী কারা

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনের ভোট আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বর্তমান মেয়র ডেমোক্রেটিক পার্টির এরিক অ্যাডামস ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে দায়িত্বে আছেন। তবে এ বছর তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ফেডারেল মামলার কারণে তিনি চাপের মুখে পড়েন। যদিও এপ্রিল মাসে আদালত সেই মামলা খারিজ করে দেয়।

নিউইয়র্কে ডেমোক্রেটিক পার্টির বাইরে সর্বশেষ মেয়র ছিলেন রিপাবলিকান পার্টির রুডি জুলিয়ানি (১৯৯৩-২০০১)। এর পর থেকে শহরটি ধারাবাহিকভাবে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে মেয়র বেছে নিয়েছে। ২০০২-১৩ মেয়াদে মাইকেল ব্লুমবার্গ, ২০১৪-২১ মেয়াদে বিল ডি ব্লাসিও ও ২০২২ থেকে এখন পর্যন্ত এরিক অ্যাডামস এই দল থেকে মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

এবার নির্বাচনী লড়াইয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন তিনজন প্রার্থী—জোহরান মামদানি (৩৪), অ্যান্ড্রু কুমো (৬৭) ও কার্টিস স্লিওয়া (৭১)।

জোহরান মামদানি

জোহরান মামদানি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী। তিনি প্রগতিশীল, ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টিও তাঁকে সমর্থন দিয়েছে। তরুণ ভোটারদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয়।

জোহরান একজন মুসলিম অভিবাসী। ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট হিসেবে তাঁর নির্বাচনী প্রচারের মূল লক্ষ্য হলো নিউইয়র্ককে আরও সাশ্রয়ী করা। তাঁর ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে বাসাভাড়া স্থগিত করা, সবার জন্য বিনা মূল্যে শিশু পরিচর্যাসেবা এবং কম খরচের গণপরিবহন সেবা চালু করা।

জোহরান ২০২১ সাল থেকে অঙ্গরাজ্যের আইনসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনী প্রচার এবং আগাম ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

জোহরান মামদানি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী। তিনি প্রগতিশীল ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টিও তাঁকে সমর্থন দিয়েছে। তরুণ ভোটারদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয়।

অ্যান্ড্রু কুমো

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন অ্যান্ড্রু কুমো। তিনি ২০১১-২১ পর্যন্ত নিউইয়র্ক রাজ্যের ডেমোক্র্যাট গভর্নর ছিলেন। এর আগে তিনি ২০০৭-১০ সালে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল, ১৯৯৭-২০০১ সালে মার্কিন হাউজিং অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্টের সেক্রেটারি এবং ১৯৯৩-৯৭ সালে সহকারী সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছেন।

কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্য সরকারে কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা রয়েছে অ্যান্ড্রু কুমোর। তবে শেষবার নিউইয়র্কের গভর্নর থাকাকালে ১৩ জন নারী তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এর ফলে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়।

শুরুতে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন কুমো। কিন্তু দলের ভেতর প্রার্থী নির্বাচনের প্রাইমারিতে জোহরান মামদানির কাছে তিনি হেরে যান। পরে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নেন।

রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কারণে কুমোর বয়স্ক ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা থাকতে পারে। কিন্তু সব জরিপে জোহরান মামদানি তাঁর চেয়ে কমপক্ষে ১০ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন।

ভোটকেন্দ্র কখন খোলা ও বন্ধ হবে

নিউইয়র্কে আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র খোলা থাকবে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় সময়সূচি ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণত সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে ভোটকেন্দ্র খোলা হয় এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে বন্ধ হবে।

মেয়র নির্বাচনের আগাম ভোট গ্রহণ ২৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ২ নভেম্বর শেষ হয়েছে। প্রায় ৭ লাখ ৩৫ হাজার ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন আজ, যা জানা দরকার