শিরোনাম দেখে চমকে গেলেন? বাংলা পঞ্জিকা বলছে, গ্রীষ্মকাল শেষে এখন চলছে বর্ষাকাল। আষাঢ়ের বৃষ্টির দেখা মিলেছে এরই মধ্যে। সত্যিকার অর্থে, পৃথিবীর গ্রীষ্মকাল শুরু হয় ২১ জুন। আকাশের দিকে তাকালে আমরা ঋতু পরিবর্তনের এক অবিচ্ছিন্ন ধারা দেখতে পাই। গ্রীষ্মের উষ্ণতা আর শীতের হিমেল স্পর্শ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। এই ঋতু পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে এক গভীর মহাজাগতিক প্রক্রিয়া। পৃথিবীর অক্ষের হেলানো অবস্থান ও সূর্যের চারপাশে পরিক্রমণের সঙ্গে ঋতুচক্রের সমীকরণ জড়িত। জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল কেবল তাপমাত্রার পরিবর্তন নয়; বরং সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবীর নির্দিষ্ট অবস্থানের ফল।

অনেকে মনে করেন, পৃথিবী যখন সূর্যের কাছাকাছি আসে, তখন গ্রীষ্মকাল হয় আর দূরে গেলে শীতকাল। পৃথিবী তার কক্ষপথে পরিক্রমণের সময় সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসে জানুয়ারিতে। একে অনুসূর বা পেরিহেলিয়ন বলে। সবচেয়ে দূরে থাকে জুলাইয়ে। একে অপসূর বা এফেলিয়ন বলে। এই সামান্য দূরত্বের পরিবর্তন আসলে ঋতু পরিবর্তনে তেমন কোনো ভূমিকা রাখে না।

পৃথিবীর ঋতু পরিবর্তনের প্রধান কারণ পৃথিবীর ঘূর্ণন অক্ষের ওপরে হেলে থাকার অবস্থান। পৃথিবীর অক্ষ তার কক্ষপথের সমতলের সঙ্গে প্রায় ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি কোণে হেলে আছে। এই হেলানো অক্ষের কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের আলোর দিকে বেশি বা কম হেলে থাকে। যখন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে, তখন উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল হয়। সূর্যের আলো সেখানে সরাসরি ও বেশি সময় ধরে পড়ে। একই সময়ে দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্য থেকে দূরে হেলে থাকে। সেখানে সূর্যের আলো তির্যকভাবে ও কম সময় ধরে পড়ে বলে শীতকাল হয়। ছয় মাস পর যখন দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে, তখন সেখানে গ্রীষ্মকাল ও উত্তর গোলার্ধে শীতকাল হয়।

মহাজাগতিক গ্রীষ্মকাল শুরু হয় গ্রীষ্মকালীন অয়নান্ত দিবসে ও শেষ হয় শরৎকালীন বিষুব দিবসে। গ্রীষ্মকালীন অয়নান্ত দিবস উত্তর গোলার্ধের জন্য সাধারণত ২১ বা ২২ জুন তারিখে ঘটে। এই দিনে সূর্যের সর্বোচ্চ উত্তরায়ণ হয় অর্থাৎ সূর্য নিরক্ষরেখার সবচেয়ে উত্তরে কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর অবস্থান করে। এই দিন উত্তর গোলার্ধে দিনের আলো সবচেয়ে বেশি সময় ধরে থাকে ও রাত হয় সবচেয়ে ছোট। এই দিনেই উত্তর গোলার্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রীষ্মকাল শুরু হয়। সূর্যের রশ্মি পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে সরাসরি প্রায় ৯০ ডিগ্রি কোণে পড়ে, ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

গ্রীষ্মকালে সূর্য আকাশে সবচেয়ে উঁচুতে থাকে। সূর্যের আলো একটি ছোট এলাকায় কেন্দ্রীভূত হয়। এতে প্রতি বর্গমিটারে বেশি শক্তি পড়ে এবং তাপমাত্রা বাড়ে। দিনের আলো দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় দিনের বেলায় পৃথিবী বেশি পরিমাণে সৌরশক্তি শোষণ করে বলে ভূপৃষ্ঠ উষ্ণ থাকে। এই মহাজাগতিক গ্রীষ্মকালে পৃথিবী তার কক্ষপথে তুলনামূলকভাবে ধীরগতিতে চলে। এটি পরিক্রমণের একটি অংশ।

উত্তর গোলার্ধে মহাজাগতিক গ্রীষ্মকাল জুনের অয়নান্ত দিবসে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বরের বিষুব দিবস পর্যন্ত প্রায় তিন মাস স্থায়ী হয়। এই সময়ে উষ্ণ আবহাওয়া দেখা যায়। দীর্ঘ দিন ও সংক্ষিপ্ত রাত দেখা যায়। দক্ষিণ গোলার্ধের জন্য এই সময় থাকে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত।

একই হিসেবে, মহাজাগতিক শীতকাল শুরু হয় শীতকালীন অয়নান্ত দিবসে ও শেষ হয় বসন্তকালীন বিষুব দিবসে। শীতকালীন অয়নান্ত দিবস উত্তর গোলার্ধে হয় ২১ বা ২২ ডিসেম্বর তারিখে। এই দিনে সূর্যের সর্বনিম্ন উত্তরায়ণ হয়। সূর্য নিরক্ষরেখার সবচেয়ে দক্ষিণে মকরক্রান্তি রেখার ওপর অবস্থান করে। এই দিন উত্তর গোলার্ধে দিনের আলো সবচেয়ে কম সময় ধরে থাকে ও রাত হয় সবচেয়ে দীর্ঘ। এই দিনেই উত্তর গোলার্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে শীতকাল শুরু হয়।

সূত্র: স্পেস ডটকম

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স র য র আল অবস থ ন এই দ ন সবচ য

এছাড়াও পড়ুন:

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ রাজনীতিতে অনৈক্য ও বিভক্তি বাড়িয়েছে: রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর

এত দিন ধরে আলোচনা ও দলগুলোর স্বাক্ষরের পরেও কেন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য অপ্রয়োজনীয় প্রস্তাব এল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উপস্থাপিত বিষয়গুলোর বেশ কটির বিষয়ে ন্যূনতম ঐকমত্য হয়নি। তারা সেগুলোর প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাও হাজির করেন না। তাদের সুপারিশ রাজনীতিতে অনৈক্য ও বিভক্তি বাড়িয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি মিলনায়তনে ‘প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫: নাগরিক প্রত্যাশা ও জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এ কথা বলেন। গোলটেবিলের আয়োজন করে ‘নাগরিক কোয়ালিশন’ নামের একটি সংগঠন। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, রাজনীতিতে অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নিজেরা কতটা সংস্কারপন্থী সেটা জাহির করছে। সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে, নিজেদের মধ্যে আলাপ–আলোচনা করে একমত হতে আহ্বান জানিয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে। অর্থাৎ রাজনৈতিক বিষয় রাজনীতিগতভাবে মীমাংসা না করে, অন্যভাবে মীমাংসা করার একটা বিষয়ও এর মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, কমিশন দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু এই যে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নেই। এটি গণতন্ত্রের প্রতি অবজ্ঞা। গণভোট বিষয়ে তিনি বলেন, প্রস্তাব এতটাই জটিল যে সাধারণ ভোটারের পক্ষে এগুলো বোঝা কঠিন হবে।

‘চাপিয়ে দেওয়াটা গণতান্ত্রিক হবে না’

বৈঠকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার ও ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর ‘কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে’ জটিলতা সৃষ্টি করেছে। এতে এমনটি প্রমাণ করার চেষ্টা হচ্ছে যে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হতে পারে না। তিনি মনে করেন, যাঁরা দেশ চালাবেন, সেই রাজনৈতিক দলগুলোরই উদ্যোগ নিয়ে একটি সমাধানের জায়গায় পৌঁছানো দরকার।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ঐকমত্য কমিশন কেন ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ রাখল, তা এখনো বোধগম্য নয়। ব্যাখ্যা না দিয়ে কিছু চাপিয়ে দেওয়াটা গণতান্ত্রিক হবে না।

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর

সম্পর্কিত নিবন্ধ