বাংলাদেশ: ৪৯৫ ও ৮৭ ওভারে ২৮৫/৬ (ডি.)। শ্রীলঙ্কা: ৪৮৫ ও ৩২ ওভারে ৭২/৪। ফল: টেস্ট ড্র

সেঞ্চুরি করার আগে ৩৬ বলে কোনো বাউন্ডারি নেই। অথচ সেঞ্চুরি করার পরের দুই ওভারেই তিন ছক্কা! ১৯০ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছানোর পর পরের ২৫ রান মাত্র ৯ বলে। আফসোস লাগল—এই ব্যাটিংটা আরও আগে থেকে কেন করলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন!

আউট হওয়ার আগে মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকেও দীর্ঘ সময় কোনো বাউন্ডারি আসেনি। আউট হয়েছেন ৭৬তম ওভারে, তার আগে সর্বশেষ বাউন্ডারি ৬৩তম ওভারে। ১০২ বলে ৪৯ রানের ইনিংসে চার মাত্র ৪টি! উইকেট তো পঞ্চম দিনেও তেমন বাঁক খাওয়ানো ছিল না। তবে কেন মুশফিক আস্তিন খুলে খেললেন না?

টেস্ট ইনিংসে এমনিতে কেউ বল আর বাউন্ডারির হিসাব করে না। তবু আজ করতে হচ্ছে। কারণ, গতকাল চতুর্থ দিন শেষেও যেখানে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ গল টেস্টটা জেতার জন্যই খেলছে, আজ তাদের খোলসে ঢুকে যাওয়া ব্যাটিং সেই মনে হওয়া পুরোপুরি ভুলিয়ে দিল। জয়ের চেষ্টাই যে করেনি বাংলাদেশ!

অথচ প্রত্যাশা ছিল পঞ্চম দিনে শ্রীলঙ্কার সামনে দ্রুত বড় লক্ষ্য দিয়ে জয়ের জন্য যাবে বাংলাদেশ। দিন শেষে অধিনায়ক নাজমুল যদিও বলেছেন, গল টেস্টের পুরোটা সময় তাঁরা জয়ের জন্যই খেলেছেন, শেষ দিনের ব্যাটিংয়ে সেই ছাপ দেখা যায়নি।

দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ২৮৫ রান করে শ্রীলঙ্কার সামনে ২৯৬ রানের লক্ষ্য দিয়ে উইকেটে থাকা নাজমুল যখন ইনিংস ঘোষণা করলেন, তখন এ ম্যাচের ফলাফলে পরিষ্কার ড্রই দেখা যাচ্ছিল। দিনের খেলা তখন বাকি ছিল আর সর্বোচ্চ ৩৭ ওভার। ও রকম পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কাও ঝুঁকি নিয়ে জয়ের চেষ্টা করেনি। তবু তার মধ্যেই ড্রয়ে দিন শেষ হওয়ার আগে ৩২ ওভার ব্যাটিং করে ৪ উইকেট হারিয়ে ৭২ রান করেছে তারা। তাইজুল ইসলাম একাই নিয়েছেন ২৩ রানে ৩ উইকেট। অন্যটি প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া নাঈম হাসানের।

শেষ দিনে শুরুর ৩০-৪০ মিনিট পর থেকেই বাংলাদেশের ব্যাটিং গতি হারাতে থাকে। সঙ্গে যেন হারিয়ে যাচ্ছিল শ্রীলঙ্কার সামনে দ্রুত বড় লক্ষ্য দিয়ে ইনিংস ঘোষণার সাহসও। জয়ের চেষ্টার চেয়ে টেস্টটাকে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যাওয়াতে বেশি সচেষ্ট হলেন নাজমুল ও মুশফিক। সঙ্গে ব্যক্তিগত অর্জনের আলো খোঁজার চেষ্টা তো ছিলই।

আর তাতেই যেন মুশফিকের ফিফটি আর নাজমুলের আরেকটি সেঞ্চুরিতে স্থির হয়ে গেল গল টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের লক্ষ্য। প্রথমটি হয়নি লাঞ্চের প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে আসা বৃষ্টির ঠিক আগের বলে মুশফিক রান আউট হয়ে যাওয়ায়। তবে পরেরটি হয়েছে। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি করে প্রায় একই রকম শূন্যে ভেসে উদ্‌যাপন করলেন অধিনায়ক নাজমুল।

এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি পাওয়ার উদ্‌যাপনে বাড়তি উচ্ছ্বাস থাকা দোষের কিছু নয়। তার ওপর টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৪৮ রান করা নাজমুল দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি করে টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে এক ম্যাচের দুই ইনিংসে তিন অঙ্ক দেখা ১৬তম ক্রিকেটার হয়ে গেছেন। যদিও শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে এমন কীর্তি তিনি আগেই গড়েছেন। ২০২৩ সালের জুনে আফগানিস্তানকে ৫৪৬ রানে হারানো মিরপুর টেস্টেও নাজমুল সেঞ্চুরি করেছিলেন (১৪৬ ও ১২৪) দুই ইনিংসেই।

তবে আজ বেশি ভালো লাগত যদি তিনি সেঞ্চুরির চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিতেন দ্রুত দলের রান বাড়ানোর চেষ্টাটাকে, যদি আরও আগে ইনিংস ঘোষণা কর টেস্ট জয়ের চ্যালেঞ্জ নিতেন। শেষ দিনের অনেকটা সময় অবশ্য বৃষ্টিতেও ভেসে গেছে। যেটা তাদের পরিকল্পনায় বদল আনতে বাধ্য করেছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

সকালে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট খেলা হওয়ার পর বৃষ্টি আসে। খেলা আবার শুরু হয়েছে বেলা ২টা ১০ মিনিটে। তখনই জানিয়ে দেওয়া হয়, আলো থাকা সাপেক্ষে খেলা হবে আর ৩৭ ওভার; চলবে সর্বোচ্চ বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। যদিও ফলাফল নিশ্চিত ড্র দেখে দুই অধিনায়কের সম্মতিতে শেষ দিনের খেলা শেষ হয়েছে তার আগেই।

বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার সময় বাংলাদেশের স্কোর ৭৬ ওভারে ২৩৭/৪, তখনই ২৪৭ রানের লিড। থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে মুশফিক রান আউট হওয়ার আগে চতুর্থ উইকেটে নাজমুলের সঙ্গে তাঁর জুটি ১০৯ রানের। নাজমুলের ১৯৯ বলে অপরাজিত ১২৫ রানের ইনিংসে অবশ্য দুটি নতুন জীবন ছিল। ব্যক্তিগত ৬৬ ও ৯০ রানে দুবার বেঁচে যান রিভার্স সুইপে ক্যাচের সুযোগ দিয়ে।

তখনো পর্যন্ত নাজমুল–মুশফিকের ব্যাটে জয়ের ক্ষুধাটা দেখা যাচ্ছিল। দিনের শুরুটাই তাঁরা করেছিলেন ইতিবাচক মানসিকতা দেখিয়ে। প্রথম ওভারে থারিন্দু রত্নায়েকেকে বাউন্ডারি মারেন মুশফিক। পরের ওভারে মিলান রত্নায়েকের প্রথম বলে চার মারেন নাজমুলও। পঞ্চম দিনের শুরুতেও গলের উইকেটে ব্যাটসম্যানদের প্রতিই বন্ধুত্ব দেখা গেছে। আগের দিন ৫৭ ওভারে করা ৩ উইকেটে ১৭৭ রান নিয়ে শেষ দিন শুরু করে বাংলাদেশ ২০০–এর দেখা পেয়ে যায় ৬৪তম ওভারেই।

তবে বৃষ্টি শেষে খেলা শুরু হলে ছোটখাটো বিপর্যয়েই পড়তে হয়। থারিন্দুর করা প্রথম ওভারের শেষ বলটা লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে ছিল। সেটাকে নিজে আরও বাইরে গিয়ে সামনে এগিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান লিটন। ৭৭তম ওভারে লিটন ফেরার পর থারিন্দুর পরের ওভারের (৭৯তম) শেষ বলে স্টাম্পড জাকের আলী। হাওয়ায় ভাসানো এই বলও ছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে। বৃষ্টির পর তিন ওভারের মধ্যে পড়ে যায় বাংলাদেশের ২ উইকেট।

শ্রীলঙ্কা ২৯৬ তাড়া করে জিততে যায়নি। তবু ৪৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে একটু ধাক্কাই খেতে হয়েছে তাদের, যেটা আফসোস বাড়িয়ে থাকতে পারে বাংলাদেশ দলেরও। ইশ্, যদি আরেকটু সময় পাওয়া যেত শ্রীলঙ্কাকে বোলিং করার…!

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ব ত য় ইন ব উন ড র লক ষ য জয় র চ প রথম হওয় র উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ব সংগীত দিবস উদযাপনে দুই আয়োজন

একটাই দিন। একটি বিশেষ উপলক্ষ। কিন্তু দুইটি ভিন্ন ভেন্যুতে আয়োজনের ভাবনা ছিল একই- ‘সুরের ছোঁয়ায় শান্তি ও সুস্থতা’। ২১ জুন ছিল বিশ্ব সংগীত দিবস। সংগীতের মাধ্যমে বিশ্বজনীন সংহতি, সাম্য ও মানবতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ায় ছিল দিবসের লক্ষ্য।

জাতীয় নাট্যশালায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যানারে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, অন্যদিকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সৃষ্টি বিশ্বময়’-এর নিবেদনে এক মরমি পরিবেশনা। দুই মঞ্চে দুই রকম সুর, তবে চেতনায় অভিন্ন।

বিশ্ব সংগীত দিবস উপলক্ষে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে শুক্রবার বিকেলে এক আন্তরিক আয়োজন করে ‘সৃষ্টি বিশ্বময়’। যার শিরোনাম ছিল ‘সুরের ছোঁয়ায় শান্তি’। মূল উদ্দেশ্য, সংগীতকে মানুষের কাছে একটি নিরাময় শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা, যাকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে যুদ্ধহীন এক মানবিক সমাজ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ। তিনি বলেন, ‘সংগীতের শক্তি এমনই যে, তা হৃদয়ের অন্ধকার দূর করে মননে আলোক ছড়াতে পারে। সংগীতই পারে হানাহানিমুক্ত পৃথিবীর পথে মানুষকে নিয়ে যেতে।’

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক বাসুদেব ধর ও সদস্যসচিব অলক দাশগুপ্ত। আয়োজনের সূচনায় চর্যাপদের পদ, আবৃত্তি ও আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের এক ব্যতিক্রমধর্মী কম্পোজিশন পরিবেশন করেন লাইসা বিনতে কামাল, রত্না দত্ত, সন্দীপা বিশ্বাসসহ একঝাঁক তরুণ শিল্পী। নৃত্য পরিবেশন করেন অংকিতা অথৈ। এছাড়া একক সংগীত, দলীয় পরিবেশনা ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন বর্ষা রাহা, রজত শুভ্র, ফয়সাল আহমেদ, সানোয়ারা জাহান নিতু, ব্যান্ডদল ‘ব্রেথলেস’সহ অনেকেই। 

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত হয় আরেক আয়োজন-‘সুরের সম্মিলন’। সন্ধ্যায় নাট্যশালার সম্মুখে জাতীয় সংগীতের সুর ও বেলুন উড়িয়ে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন। সঙ্গে ছিলেন একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান ও বিশিষ্ট সংগীতশিল্পীরা।

সভাপতির বক্তব্যে ওয়ারেছ হোসেন বলেন, ‘যে দেশে যত বেশি সাংস্কৃতিক চর্চা হয়, সে দেশে যুদ্ধ ও সহিংসতা টিকে থাকতে পারে না। সংগীত মানুষের হৃদয়ের কালো দাগ মুছে দিতে পারে।’

শোভাযাত্রার পর মূল মিলনায়তনে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। প্রথমে ছিল যন্ত্রসঙ্গীত ও কণ্ঠসংগীতের কোলাজ পরিবেশনা। এরপর মঞ্চে আসে আদিবাসী ব্যান্ড ‘চিম্বুক’ ও ‘বম শিল্পীগোষ্ঠী’। পরে জনপ্রিয় তারকা শিল্পীদের সমবেত পরিবেশনায় মুখর হয় মিলনায়তন। শেষ পর্বে কোলাজ ব্যান্ডের পরিবেশনায় জমে ওঠে সমাপ্তি অনুষ্ঠান।

উল্লেখ্য, বিশ্ব সংগীত দিবসের সূচনা হয় ১৯৮২ সালে ফ্রান্সে, তৎকালীন সংস্কৃতি মন্ত্রী জ্যাক ল্যাং ও সংগীত পরিচালক মরিস ফ্লেয়োরে’র উদ্যোগে। ২১ জুন, গ্রীষ্মের দীর্ঘতম দিনে, সংগীতকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করতে এই দিবস উদযাপন শুরু হয়, যা এখন বিশ্বব্যাপী পালিত হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ