ইরানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। গতকাল শনিবার ইস্তাম্বুলে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) বৈঠকে তিনি ইরানের প্রতি সমর্থন জানান। একই সঙ্গে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে আঞ্চলিক শান্তির সবচেয়ে বড় বাধা বলে উল্লেখ করেন।

ওআইসির বৈঠকে এরদোয়ান বলেন, ‘হাজার বছরের সংহতি ও সহনশীলতার শক্তিতে ইরান নিঃসন্দেহে এই কঠিন সময় পার করতে সক্ষম হবে।’ এ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচিও যোগ দেন।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ইরানের অনুরোধে ওআইসির সব সদস্যদেশের অংশগ্রহণে একটি বিশেষ বৈঠক গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হয়। চলমান ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক ওআইসির ৫১তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশনের অংশ হিসেবে ইস্তাম্বুলে আয়োজন করা হচ্ছে।

এবারের সম্মেলনের লক্ষ্য ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে চলমান সংঘাতের বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রতিক্রিয়া গড়ে তোলা। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ার এই সংকটময় সময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সদস্যদেশগুলো ইসরায়েলের হামলা মোকাবিলা এবং বিস্তৃত আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছে।

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এবারের বৈঠক হচ্ছে রুদ্ধদ্বার। তাসনিম নিউজের বরাতে বলা হয়েছে, বৈঠকে ৪০ কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন। বৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস বলেন, বৈঠকে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর হামলার বিষয়টি আলোচনা করা হবে।

এর আগে গত শুক্রবার জেনেভায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন আরাগচি। তবে ইউরোপের নেতাদের সঙ্গে ওই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। তবে যুদ্ধ বন্ধে তারা আলোচনা চালিয়ে যেতে চেয়েছেন। ইরান বলেছে, ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হলেই কেবল তারা কূটনীতির পথে হাঁটবে। জেনেভা বৈঠকের শেষে আরাগচি বলেন, ‘আক্রমণ বন্ধ হলেই ইরান আবারও কূটনৈতিক আলোচনার বিষয়টি বিবেচনা করতে প্রস্তুত। আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি, ইরানের প্রতিরক্ষাগত সক্ষমতা কোনোভাবেই আলোচনার বিষয় নয়।’

বৈঠকের কিছুক্ষণ পরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে খাটো করে দেখান। তিনি বলেন, ‘আমরা ইরানের সঙ্গে কথা বলছি, দেখছি কী হয়।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি মনে করি জেনেভায় হওয়া আলোচনাগুলো সফল হয়নি।’ এদিকে ওআইসির সম্মেলন শুরুর আগে এরদোয়ান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন পরমাণু আলোচনা শুরুর ঠিক আগে ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র র পরর ষ ট র ইসর য় ল ওআইস র ক টন ত

এছাড়াও পড়ুন:

আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর আকাশপথ অবরোধে ভয়াবহ ক্ষতিতে পড়বে ইসরায়েল

আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো যদি সমন্বিতভাবে ইসরায়েলের জন্য আকাশপথ অবরোধ করে, তবে তার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত প্রভাব কী হতে পারে—সে বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মালিকানাধীন একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান।

গত বুধবার আল হাবতুর রিসার্চ সেন্টার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ৯ সেপ্টেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের হামলাই এমন সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রেরণা বা অনুঘটক হতে পারে।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের নেতাদের লক্ষ্য করে চালানো ওই হামলায় ছয়জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন কাতারের নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তবে হামাসের কোনো শীর্ষ নেতা নিহত হননি।

গত সোমবার কাতারের রাজধানীতে জরুরি বৈঠকে বসে ৫৭ সদস্যের ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও আরব লীগ। বৈঠকে ইসরায়েলের হামলার জবাবে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আল হাবতুর রিসার্চ সেন্টারের বিশ্লেষণে বলা হয়, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের জন্য দেশটির বিরুদ্ধে আকাশপথে অবরোধ আরোপ করা হলে তেল আবিবের অর্থনীতির নানা খাতে ভয়াবহ ক্ষতি হবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর ফলে ইসরায়েলের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৪ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এতে দেশটি মন্দার মুখে পড়বে।

গবেষণাকেন্দ্রটির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সমন্বিত আকাশপথ অবরোধে নতুন আঞ্চলিক নিরাপত্তাকাঠামো তৈরি হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র একটি কূটনৈতিক সংকটে পড়বে। দেশটিকে ইসরায়েলকে বাঁচানো আর আরব দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব—দুটির একটি বেছে নিতে হবে।

ওআইসির বড় বড় সদস্য যেমন তুরস্ক, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া যদি এ অবরোধে যোগ দেয়, তবে ইসরায়েল এশিয়া ও আফ্রিকার প্রবৃদ্ধিশীল বাজারগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হারাবে। এতে পূর্ব ও দক্ষিণমুখী ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাবে।

প্রতিবেদন বলছে, বিকল্প রুটে যেতে হলে প্রতিটি ফ্লাইটের সময় চার থেকে ছয় ঘণ্টা বাড়বে। এতে প্রতি ফ্লাইটে ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ বাড়তে পারে। ইসরায়েলের বিমান সংস্থা এল-আলের আয়ের ৬০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আর এটা ‘রক্ষণশীল অনুমান’।

আকাশপথ অবরোধে ইসরায়েলের পর্যটনশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হীরার মতো উচ্চ মূল্যের ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো সময়-সংবেদনশীল পণ্যের রপ্তানিও ব্যাহত হবে।

এমন পরিস্থিতিতে অনেক আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল হতে পারে এবং ইসরায়েলভিত্তিক গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম অন্যত্র চলে যেতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনীতির বাইরে এ ধরনের পদক্ষেপ পুরো অঞ্চলের ভূরাজনীতির চিত্র মৌলিকভাবে পাল্টে দেবে।

২০২০ সালের ৩১ আগস্ট তোলা ছবিতে তেল আবিবের কাছে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ইসরায়েলি বিমান সংস্থা এল-আলের একটি উড়োজাহাজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর আকাশপথ অবরোধে ভয়াবহ ক্ষতিতে পড়বে ইসরায়েল