ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নিয়ে বিশ্বনেতারা কী বলছেন
Published: 22nd, June 2025 GMT
শত্রু-মিত্র উভয় পক্ষকে হতবাক করে গতকাল শনিবার মধ্যরাতের পর ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে বসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের এ সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে ফেললেন।
ট্রাম্পের এ পদক্ষেপে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংঘাত আরও বিপজ্জনক রূপ নেওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। বিশ্বনেতা ও কূটনীতিকদের কেউ কেউ এর নিন্দা জানিয়েছেন। অন্যরা উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি এ হামলাকে উত্তেজনাপূর্ণ একটি অঞ্চলে বিপজ্জনক মাত্রায় উত্তেজনা বৃদ্ধির ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছিল ওমান। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে অবৈধ আগ্রাসন বলে উল্লেখ করে এ কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে দেশটি। সেই সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে তারা।গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, ‘এই সংঘাত দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে; যা বেসামরিক মানুষ, এতদঞ্চল ও সারা বিশ্বের জন্যই ভয়ানক পরিণতি ঢেকে আনতে পারে।’
যুক্তরাজ্য: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সেই হুমকি কমাতে পদক্ষেপ নিয়েছে।’ তিনি ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরার ও এ সংকটের একটি কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছার আহ্বান জানান।
অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়া সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি।’
নিউজিল্যান্ড: নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সামরিক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ উত্তেজনা যাতে আর না বাড়ে, তা নিশ্চিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সামরিক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ উত্তেজনা যাতে আর না বাড়ে, তা নিশ্চিত করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।উইনস্টন পিটার্স, নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীমেক্সিকো: মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলোর প্রতি কূটনৈতিক সংলাপ শুরু করা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে।
চিলি: প্রেসিডেন্ট গাব্রিয়েল বোরিক বলেন, আন্তর্জাতিক আইনে এ হামলা অবৈধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘আমরা শান্তি চাই এবং শান্তি প্রয়োজন।’
ভেনেজুয়েলা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে অবৈধ, অযৌক্তিক ও ভীষণ বিপজ্জনক আগ্রাসন বলে বর্ণনা করেছেন।
সৌদি আরব: বিবিসি জানায়, সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, রিয়াদ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, বিশেষ করে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিষয়টি।
বিবৃতিতে উত্তেজনা কমাতে সংযম প্রদর্শন এবং সংঘাত এড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এ সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছার প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বানও জানিয়েছে সৌদি আরব।
আরও পড়ুনসংঘাতের গতিপথ বদলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এখন কী করবে১ ঘণ্টা আগেওমান: আল–জাজিরা জানায়, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছিল ওমান। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে অবৈধ আগ্রাসন বলে উল্লেখ করে এ কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে দেশটি। ওমান তাৎক্ষণিকভাবে ও সর্বাত্মক উত্তেজনা প্রশমনেরও আহ্বান জানিয়েছে।
ওমান নিউজ এজেন্সিকে ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, দেশটি এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং সতর্ক করে বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ সংঘাত আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদেরও স্পষ্ট লঙ্ঘন।
কাতার: যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এ অঞ্চলে যে বিপজ্জনক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে, তা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে কাতার।
ইরাক: ইরাক প্রতিবেশী ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। এ হামলায় যে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে বলেও উল্লেখ করেছে দেশটি।
আরও পড়ুনইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা: ট্রাম্পের ‘দুই সপ্তাহ’ সময় কি তবে ফাঁকি দেওয়ার ছল ছিল৪ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আহ ব ন জ ন য় ছ র আহ ব ন জ ন য় র পরর ষ ট র ক টন ত ক পদক ষ প র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামগঞ্জে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হওয়ার প্রতিবাদ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ পৌর শহরে পৃথক এই কর্মসূচি পালিত হয়।
গতকাল বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের পাশে যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে ভর্তি হয়ে বাড়ি ফেরার পথে শিক্ষার্থী স্নেহা চক্রবর্তী, সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা জাহান ওরফে খুশি ও সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আলীপাড়া এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (৫৫) নিহত হন।
আজ সকালে সুনামগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদর মোড়ে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে অবস্থা নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এখানে ‘কথায় কথায় অবরোধ, এখন তোমার কোথায় বোধ’, ‘আর কত খুশি মরলে, প্রশাসনের টনক নড়বে’, ‘আমার বোন কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়। কর্মসূচি চলাকালে সড়কে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা ফিটনেসবিহীন যান চলাচলে বাধা না দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে সড়কে অবস্থান নিয়ে বেলা একটা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাকবিল হোসেন, জাকারিয়া নাইম, রাহাত আহমেদ, আশরাফ হোসেন; টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী হুমায়ুন আহমদ, শান্ত রায়, সুমাইয়া আক্তার, আমিন উদ্দিন, পূর্বা তালুকদার, তাহমিদা জাহান, বুশরা আক্তার প্রমুখ।
আরও পড়ুনবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শেষে মেয়েকে তুলে দেন অটোরিকশায়, ১০ মিনিট পর পেলেন মৃত্যুর খবর১৮ ঘণ্টা আগেবক্তারা বলেন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে এখন প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। অথচ প্রশাসন, পুলিশ উদাসীন। এই সড়কে ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি চলে। অদক্ষ চালকেরা গাড়ি চালান। কিন্ত তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অথচ তুচ্ছ কোনো কিছু অজুহাত পেলেই পরিবহনশ্রমিকেরা ধর্মঘট ডেকে মানুষকে ভোহান্তিতে ফেলেন। সড়কে এসব হত্যা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থী স্নেহা, আফসানার মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে, বেলা সাড়ে ১১টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আলফাত স্কয়ারে একই দাবিতে মানববন্ধন করে বিশ্বজন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এরপর একই স্থানে মানববন্ধন করে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা শাখা। এসব কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার, নিহত শিক্ষার্থী আফসানা জাহানের মামা সাইফুল ইসলাম (ছদরুল), সাংবাদিক লতিফুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান পীর, শিক্ষক শাহিনা চৌধুরী, হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতা ওবায়দুল হক, উন্নয়নকর্মী সালেহিন চৌধুরী, বিশ্বজন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উপদেষ্টা নুরুল হাসান আতাহের, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কর্ণ বাবু দাস প্রমুখ।
আরও পড়ুনজন্মদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, ব্যাগে ছিল সহপাঠীদের দেওয়া উপহার৪ ঘণ্টা আগেসুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজনের মৃত্যুর প্রতিবাদ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধন। আজ দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের আলফাত স্কয়ারে