এলাকায় থমথমে অবস্থা, আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ
Published: 22nd, June 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধের জেরে দুজন নিহতের পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ আছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে বন্দর শাহী মসজিদ এলাকায় ও রাত সাড়ে ১১টায় হাফেজীবাগ এলাকায় দুজন নিহত হন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র্যাব।
নিহত দুজন হলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের হাফেজীবাগ এলাকার আবদুল কুদ্দুস (৭০) ও বন্দর শাহী মসজিদ এলাকার প্রয়াত আবদুল জলিলের ছেলে মেহেদী হাসান। আবদুল কুদ্দুস পেশায় রাজমিস্ত্রী ও মেহেদী হাসান বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি মাছ ব্যবসায়ী বলে স্বজনেরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো এলাকা থমথমে অবস্থা। আতঙ্কে এলাকার লোকজন দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এলাকায় বিপুলসংখ্যক র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের আতঙ্কে অধিকাংশ বাড়ির পুরুষ এলাকাছাড়া।
স্থানীয় ফল বিক্রেতা ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিএনপির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও অস্ত্রের মহড়ায় আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে তাঁর দোকানের আম ও কাঁঠাল পচে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। বিবদমান দুই পক্ষ আগে একসঙ্গে থাকত বলে তিনি জানান।
দুপুরে হাফেজীবাগ এলাকায় নিহত আবদুল কুদ্দুসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনেরা আহাজারি করছেন। নিহত আবদুল কুদ্দুসের স্ত্রী পারভীন বেগম বলেন, গত শুক্রবার রাতে তাঁর স্বামী পাখির খাবার কিনতে দোকানে গেলে সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকারের সমর্থক বাবু–মেহেদীসহ ৪০ থেকে ৫০ জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করেন। তিনি স্বামীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান।
অন্যদিকে বন্দর শাহী মসজিদ এলাকার মেহেদী হাসানের বাড়িতে মাতম চলছে। মেহেদী হাসান বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। মেহেদীর ভাই খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, তাঁর ভাই মেহেদীকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসী রনি–জাফরের লোকজন। তিনি তাঁর ভাইয়ের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের রেললাইন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষ বাবু–মেহেদী ও রনি–জাফর পক্ষের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়।
আরও পড়ুননারায়ণগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একজনকে কুপিয়ে হত্যা১১ ঘণ্টা আগেপুলিশ ও এলাকার বাসিন্দারা জানান, পূর্ববিরোধের জেরে শুক্রবার বিকেলে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার জেরে গতকাল রাতে জাফরের সমর্থক পারভেজের বাবা আবদুল কুদ্দুসকে কুপিয়ে হত্যা করেন প্রতিপক্ষ বাবু–মেহেদীর লোকজন। এ ঘটনার জেরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বন্দর সিরাজুদ্দৌলার ক্লাব মাঠের সামনে বাবু–মেহেদী পক্ষের মেহেদীকে আটকে গণপিটুনি ও কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন রনি–জাফর পক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনায় হাফেজীবাগ এলাকা থেকে শান্ত (২৫), রবিন (২৮) ও কবির হোসেনকে (৫০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে র্যাব।
সকালে পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মারামারির ঘটনায় করা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় জড়িত অন্য ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ ফ জ ব গ এল ক আবদ ল ক দ দ স র ল কজন ব এনপ র এল ক র এল ক য় ঘটন য় আতঙ ক
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে নারায়ণগঞ্জ-৪ খালি রাখলো বিএনপি
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সোমবার (৩ নভেম্বর) বিএনপি নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনসহ ২৩৭টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন সহ ৬৩টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি, এর একটা বড় অংশ মিত্র দল ও জোটগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা জানিয়েছেন, মিত্র দলগুলোর বাইরেও জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি এবং ইসলামপন্থী কিছু দলের সঙ্গে তাদের আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে আলোচনা চলছে। এসব দলের জন্য আসন ছেড়ে দিতে হতে পারে বিএনপিকে।
এছাড়াও অনেক আসনে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকজন করে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এবং এসব এলাকায় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও মীমাংসা করা যাচ্ছে না। এসব কারণেও ওই আসনগুলো খালি রাখা হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
তবে দলটি মিত্র বা অন্য দলগুলোর জন্য শেষ পর্যন্ত কতটা আসনের ছাড় দেবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
বিএনপির মিত্র একটি জোটের একাধিক নেতা বলেন, তাদের কারও কারও আসনে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু তা চূড়ান্ত হয়নি। এখন আসন সমঝোতার আলোচনা হবে বলে তারা আশা করছেন।
এদিকে আরেকটি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির জোট ছিল। ফলে ওই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি জোটের জন্য ছেড়ে দেয় বিএনপি। ফলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মনির হোসেন কাশেমী এই আসনে নির্বাচন করে। ২০২৬ সালের নির্বাচন ঘিরে জোটের পরিধি বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে। এরমধ্যে এনসিপি ও বিএনপির মধ্যে আলোচনা চলমান। ধারনা করো হচ্ছে জোটের জন্য বিএনপি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি শূন্য রেখেছে। ফলে আলোচনায় রয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মনির হোসেন কাসেমী এবং এনসিপির এনসিপির শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান আবদুল্লাহ আল আমিন। শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও এনসিপি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার ইচ্ছাপোষন করলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়ে যেতে পারেন মনির হোসেন কাসেমী অথবা আবদুল্লাহ আল আলামিন। এমনটাই মনে করছেন বিএনপির একাধিক সূত্র।