কৃষিকে বাণিজ্যিক ও জলবায়ু সহনশীল করে তুলতে কর্মসূচি
Published: 22nd, June 2025 GMT
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে কৃষিতে বৈরী পরিস্থিতি ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। অতিবৃষ্টি, খরাসহ আগাম বন্যা চাষাবাদে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতিক বৈরিতায় কৃষক বারবার লোকসানের মুখে পড়ছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা, বাড়ছে নিরাপত্তা ও পুষ্টির ঝুঁকি। এই প্রেক্ষাপটে এ খাতকে টিকিয়ে রাখা, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ও কৃষিকে লাভজনক পেশায় রূপান্তরের লক্ষ্যে বড় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সরকার।
‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফর্মেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার)’ প্রকল্পটি শুরু হয়েছে ২০২৩ ২৪ অর্থবছরে। এটি বাস্তবায়ন করছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাতটি সংস্থা। কৃষিকে আধুনিক, বাণিজ্যিক ও পরিবেশ সহনশীল ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোই প্রকল্পের লক্ষ্য।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত প্রকল্পের এক কর্মশালায় কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের কৃষিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটবে। শুধু খাদ্য উৎপাদনই নয়, বরং কৃষি হবে লাভজনক ও রপ্তানিমুখী খাত। উৎপাদনে আসবে বৈচিত্র্য।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব ড.
প্রকল্পের কর্মসূচি সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, কৃষিতে বৈচিত্র্য আনা, উদ্যোক্তা তৈরি, জলবায়ু সহনশীলতা নিশ্চিত এবং খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখা।
অতিরিক্ত কর্মসূচি পরিচালক ড. গৌর গোবিন্দ দাশ বলেন, এ প্রকল্প শুধু উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ নয়, কৃষক যাতে বাজারে ন্যায্যমূল্য পান, সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সব উপজেলার জন্য একটি কৃষক তথ্যভান্ডার তৈরি করা হচ্ছে। স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে কৃষকের সব তথ্য ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করা হবে, সেখান থেকে সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা যাবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের আটটি বিভাগের ১৪টি কৃষি সম্প্রসারণ অঞ্চলের ৪৯৫টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৯১ কোটি টাকা। কর্মশালায় দেশের সাতটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা, আটটি স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার এবং দাতা সংস্থা, কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক ও উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ফল ও ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সবজির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ প্রটোকল তৈরি করা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে– উৎপাদন, বাজারজাত ও রপ্তানির প্রতিটি ধাপ। ৩ লাখ হেক্টর জমিকে উত্তম কৃষি চর্চাভিত্তিক (গ্যাপ) চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত চাষে ২ লাখ হেক্টর জমি যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ১০ লাখ কৃষককে গ্যাপ চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বীজ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে দেশের বীজ নেটওয়ার্ক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ সহনশীল ও উচ্চফলনশীল পাঁচটি ধানের জাত এবং অন্য ফসলের আরও ১৫টি জাত উদ্ভাবনের কাজ চলছে। পানি সাশ্রয়ী উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন করে ১ লাখ হেক্টর কৃষিজমিকে সেচের আওতায় আনা হচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলায় ২ কোটি ২৭ লাখ কৃষকের জন্য স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদন, জমির তথ্য ও সরকারি সহায়তার হিসাব থাকবে।
এ ছাড়া রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে ১০টি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অ্যাক্রিডিটেড ল্যাবরেটরি স্থাপনের কাজ শুরু হচ্ছে। একই সঙ্গে ধান ও অন্য ফসলের আবাদ সম্প্রসারণে কৃষকদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা তৈরির দিকেও জোর দেওয়া হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র র আওত য় ব যবস থ সহনশ ল
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য বিশ্বব্যাংকের ৭০ কোটি ডলারের প্রকল্প চালু
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চালু হলো ‘ইনক্লুসিভ সার্ভিসেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস ফর হোস্ট কমিউনিটি অ্যান্ড ডিসপ্লেসড রোহিঙ্গা পপুলেশন (আইএসও)’ এবং ‘হোস্ট অ্যান্ড রোহিঙ্গা এনহ্যান্সমেন্ট অব লাইভস (হেল্প)’ প্রকল্প। ৭০ কোটি ডলারের এই প্রকল্প দুটি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার।
এ উপলক্ষে আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে যৌথভাবে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক। এতে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশপাশে বসবাস করা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মৌলিক সেবা ও সুযোগ নিশ্চিতে পূর্বের অভিজ্ঞতা, বর্তমান চ্যালেঞ্জ, সমাধান এবং লক্ষ্য নিয়ে বক্তারা আলোচনা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে অনেক প্রকল্পই দেশে চালু আছে। প্রতিবছর দুই–তিন শ কোটি ডলারের সহায়তার ব্যাপারে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সবগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে জটিল প্রকল্প ছিল। কিন্তু আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অর্থই হলো সব চ্যালেঞ্জ ইতিমধ্যে মোকাবিলা করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করা এবং উদ্দেশ্য অর্জন করা এখন নতুন চ্যালেঞ্জ।
১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের নতুন ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যঁ পেম। তিনি বলেন, এই দীর্ঘ আট বছরের সংকটে রোহিঙ্গা জনগণ যেমন সহনশীলতা দেখিয়েছে, তেমনি স্থানীয় জনগণও অসাধারণ সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে। তবে এই সংকট সেবা, অবকাঠামো এবং সামাজিক জীবনে বড় চাপ সৃষ্টি করেছে। এতে বিশ্বব্যাংক শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে আছে।
স্বল্পমেয়াদি জরুরি সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন নিশ্চিত করাই বিশ্বব্যাংকের লক্ষ্য জানিয়ে জ্যঁ পেম বলেন, এই প্রচেষ্টায় সরকারের নেতৃত্ব, জাতিসংঘ সংস্থা, এনজিও এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের ঘনিষ্ঠ সমন্বয় অপরিহার্য। জাতীয় ও স্থানীয় কাঠামোর সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে বিশ্বব্যাংক কাজ করছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, তাঁরা অনেক দিন ধরে এ দুটি প্রকল্প এবং স্বাস্থ্য প্রকল্পের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কারণ, গত বছর থেকেই অর্থসংকট দেখা দিয়েছে। সামনে কী হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংকের এই প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান