জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে কৃষিতে বৈরী পরিস্থিতি ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। অতিবৃষ্টি, খরাসহ আগাম বন্যা চাষাবাদে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতিক বৈরিতায় কৃষক বারবার লোকসানের মুখে পড়ছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা, বাড়ছে নিরাপত্তা ও পুষ্টির ঝুঁকি। এই প্রেক্ষাপটে এ খাতকে টিকিয়ে রাখা, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ও কৃষিকে লাভজনক পেশায় রূপান্তরের লক্ষ্যে বড় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সরকার।

‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফর্মেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার)’ প্রকল্পটি শুরু হয়েছে ২০২৩ ২৪ অর্থবছরে। এটি বাস্তবায়ন করছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাতটি সংস্থা। কৃষিকে আধুনিক, বাণিজ্যিক ও পরিবেশ সহনশীল ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোই প্রকল্পের লক্ষ্য।  

রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত প্রকল্পের এক কর্মশালায় কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের কৃষিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটবে। শুধু খাদ্য উৎপাদনই নয়, বরং কৃষি হবে লাভজনক ও রপ্তানিমুখী খাত। উৎপাদনে আসবে বৈচিত্র্য। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব ড.

মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, এই প্রকল্পে কৃষি উৎপাদন, রপ্তানি, উদ্যোক্তা তৈরি, মান নিয়ন্ত্রণ ও বাজার ব্যবস্থার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরের পথ প্রশস্ত হবে এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

প্রকল্পের কর্মসূচি সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, কৃষিতে বৈচিত্র্য আনা, উদ্যোক্তা তৈরি, জলবায়ু সহনশীলতা নিশ্চিত এবং খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখা। 

অতিরিক্ত কর্মসূচি পরিচালক ড. গৌর গোবিন্দ দাশ বলেন, এ প্রকল্প শুধু উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ নয়, কৃষক যাতে বাজারে ন্যায্যমূল্য পান, সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সব উপজেলার জন্য একটি কৃষক তথ্যভান্ডার তৈরি করা হচ্ছে। স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে কৃষকের সব তথ্য ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করা হবে, সেখান থেকে সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা যাবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের আটটি বিভাগের ১৪টি কৃষি সম্প্রসারণ অঞ্চলের ৪৯৫টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৯১ কোটি টাকা। কর্মশালায় দেশের সাতটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা, আটটি স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার এবং দাতা সংস্থা, কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক ও উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কর্মশালায় জানানো হয়, প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ফল ও ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সবজির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ প্রটোকল তৈরি করা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে– উৎপাদন, বাজারজাত ও রপ্তানির প্রতিটি ধাপ। ৩ লাখ হেক্টর জমিকে উত্তম কৃষি চর্চাভিত্তিক (গ্যাপ) চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত চাষে ২ লাখ হেক্টর জমি যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় ১০ লাখ কৃষককে গ্যাপ চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বীজ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে দেশের বীজ নেটওয়ার্ক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ সহনশীল ও উচ্চফলনশীল পাঁচটি ধানের জাত এবং অন্য ফসলের আরও ১৫টি জাত উদ্ভাবনের কাজ চলছে। পানি সাশ্রয়ী উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন করে ১ লাখ হেক্টর কৃষিজমিকে সেচের আওতায় আনা হচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলায় ২ কোটি ২৭ লাখ কৃষকের জন্য স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদন, জমির তথ্য ও সরকারি সহায়তার হিসাব থাকবে।

এ ছাড়া রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে ১০টি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অ্যাক্রিডিটেড ল্যাবরেটরি স্থাপনের কাজ শুরু হচ্ছে। একই সঙ্গে ধান ও অন্য ফসলের আবাদ সম্প্রসারণে কৃষকদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা তৈরির দিকেও জোর দেওয়া হচ্ছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র র আওত য় ব যবস থ সহনশ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশকে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশকে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ১৩০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের ঋণ দেবে, যা বর্তমান বাজারদরে দেশীয় মুদ্রায় ১৫ হাজার ৯০৯ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ১২২ টাকা করে)। এর মধ্যে ৯০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা রয়েছে। এই অর্থ ব্যাংক খাত সংস্কার ও জলবায়ু সহনশীলতা কার্যক্রমে খরচ করা হবে। আর অবকাঠামো উন্নয়নে থাকছে ৪০ কোটি ডলার। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে চারটি চুক্তি হয়েছে।  

৯০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা গতকাল বৃহস্পতিবার ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থিত এডিবির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বোর্ড বা পর্ষদ সভায় অনুমোদন করা হয়। এই অর্থ চলতি জুন মাসেই পাবে বাংলাদেশ। তারই ধারাবাহিকতায় আজ শুক্রবার ঢাকায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে এডিবির দুটি ঋণচুক্তি হয়েছে। পাশাপাশি ২০ কোটি ডলার করে আরও দুটি ঋণচুক্তি হয়।

ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং বাংলাদেশে এডিবির প্রধান হোয়ে ইউন জিয়ং চারটি চুক্তিতে সই করেন। এডিবির বাংলাদেশ কার্যালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এডিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৩০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার মধ্যে বড় অংশ অর্থাৎ, ৫০ কোটি ডলার দেওয়ার উদ্দেশ্যে হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা ও সংস্কার নিশ্চিত করা। এই চুক্তির আওতায় নিয়ন্ত্রক তদারকি, করপোরেট সুশাসন, সম্পদের গুণগত মান এবং স্থিতিশীলতা জোরদার করা হবে।

চুক্তি অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ও সংস্কার কর্মসূচি, উপ-প্রোগ্রাম–১ এর আওতায় নীতিগত সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে, যার লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক খাতকে স্থিতিশীল ও টেকসই করা। এটি ব্যাংকিং খাতে সুশাসন উন্নয়ন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা কাঠামোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতের বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ দ্রুত সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে অর্জন করা হবে।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং বলেন, বাংলাদেশ এখন ব্যাংকিং খাতে বড় পরিসরে সংস্কার বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এই কর্মসূচি বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়াবে, ব্যাংকগুলোর সুশাসন জোরদার করবে, সম্পদের মান বাড়াবে এবং আর্থিক খাতকে প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রস্তুত করবে।

এডিবি জলবায়ু সহনশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৪০ কোটি ডলার দেবে। এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো জলবায়ু অর্থায়ন সহজতর করা, বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারত্ব গঠন, দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়নের কৌশল প্রণয়ন ইত্যাদি।

এ বিষয়ে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং বলেন, এই কর্মসূচি জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা, অর্থায়ন, প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোতে সমন্বিত সংস্কার আনবে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ভিত্তি গড়ে তোলার পাশাপাশি বাংলাদেশকে জলবায়ু-স্মার্ট প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে রাখবে।

এ ছাড়া ২০ কোটি ৪০ লাখ ডলার দেওয়া হবে ঢাকা–উত্তর পশ্চিম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করিডর উন্নয়নে। এ প্রকল্পের আওতায় এলেঙ্গা থেকে হাটিকুমরুল হয়ে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। পাশাপাশি সড়ক নিরাপত্তা বাড়াতে নির্মিত হবে ফুট ওভারব্রিজ, ফুটপাত ও ধীরগতির যানবাহনের জন্য দুই লেনের সড়ক। বাকি ২০ কোটি ডলার বিদ্যুৎ সরবরাহের মান ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গতানুগতিক বাজেট–কাঠামোয় থেকে কৃষি খাতে গঠনমূলক পরিবর্তন সম্ভব নয়
  • বন্দর লিজ ও রাখাইনে করিডরের উদ্যোগ বাতিলের দাবিতে ২৭-২৮ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ
  • জলবায়ু সহনশীল কৃষিতে প্রযুক্তির ছোঁয়া: ২৭ উপজেলায় সম্ভাবনার বার্তা
  • বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন: বাস্তবতা, প্রভাব ও করণীয়
  • বাংলাদেশকে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি