কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরের কাছে গত এপ্রিলে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত তিনজনের সবাই পাকিস্তানি নাগরিক বলে দাবি করেছেন ভারতীয় তদন্তকারীরা। তাঁরা আরও বলেছেন, তিনজনই জাতিসংঘের নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার সদস্য।

হামলাকারীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে দুজন স্থানীয় ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এমন দাবি করেছে।

এর আগে পুলিশ তিনজন সন্দেহভাজনের স্কেচ প্রকাশ করেছিল। তখন তারা বলেছিল, তিন সন্দেহভাজনের দুজন পাকিস্তানি নাগরিক এবং একজন স্থানীয় বাসিন্দা।

হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের তিনজনই পাকিস্তানি নাগরিক বলে ভারত যে দাবি করেছে, তা নিয়ে পাকিস্তান এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এর আগে পাকিস্তান পেহেলগামে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। বৈসারান নামের একটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকায় এই হামলা হয়েছিল। এ হামলার ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছিল, যা দুই দেশকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিয়েছিল।

দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এখন পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধে জড়িয়েছে। দুই দেশই পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করলেও অঞ্চলটিকে ভাগাভাগি করে নিয়ন্ত্রণ করে তারা।

গত ২২ এপ্রিলের এই হামলার ঘটনা গোটা ভারতকে নাড়া দিয়েছিল। মামলাটি তদন্তের জন্য দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএর কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নিরাপত্তা বাহিনী ওই এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালায়। এ সময় কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে কয়েক হাজার মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।
তবে তিন হামলাকারীর কেউই এখনো ধরা পড়েনি।

গত রোববার এক বিবৃতিতে এনআইএ বলেছে, হামলাকারীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা গত ২২ এপ্রিলের হামলার আগে জেনেশুনেই তিন সশস্ত্র ‘সন্ত্রাসীকে’ একটি ঝুপড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তবে কখন তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা জানানো হয়নি। আটক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

লস্কর-ই-তাইয়েবার সঙ্গে জড়িত স্বল্পপরিচিত সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট শুরুতে হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তা প্রত্যাখ্যান করে।

হামলার কয়েক দিনের মধ্যে ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে। এটি হলো পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিন ধরে চলা পানিবণ্টন চুক্তি। এর জবাবে ইসলামাবাদ ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি থেকে সরে যায়। দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে মতবিরোধ সমাধানের লক্ষ্যে চুক্তিটি হয়েছিল।

এরপর গত ৭ মে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। তাদের দাবি, পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’কে হামলার নিশানা করে হামলা চালিয়েছে তারা।

পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে। তাদের দাবি, এসব জায়গা জঙ্গি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার হতো না।

পাকিস্তান ভারতীয় সীমান্তে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ও ড্রোন মোতায়েন করে।
১০ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘাত চলতে থাকে।

আরও পড়ুনপেহেলগাম হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার টিআরএফের, আগের দাবির জন্য দায়ী করল ভারতীয় গোয়েন্দাদের২৬ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনকাশ্মীরে হামলা: কারা এই ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’২৪ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

আবারও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চাইলেন জেলেনস্কি

রাশিয়ার হামলায় কিয়েভে সাতজন নিহত হওয়ার এক দিন পর আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আবারও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার আবেদন জানালেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

গত শুক্রবার কিয়েভের কয়েকটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। এতে এক নারীসহ মোট সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৯৮৬ সালের দুর্ঘটনায় নিহত অপারেটর ভিক্তরের স্ত্রী নাতালিয়া খোদিনমচুকও রয়েছেন। ওই দুর্ঘটনার সময় ইউক্রেন তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাই প্রায় চার দশক পর রাশিয়ার কারণে ভিক্তরের স্ত্রীর মৃত্যু হওয়ায় বিশেষভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি।

শনিবার দক্ষিণ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় অন্তত চারজন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। প্রায় চার বছর ধরে ইউক্রেনে এভাবে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন শীত মৌসুমকে সামনে রেখে দেশটির জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘ইউক্রেনের জীবন বাঁচানোর মতো সহায়তা দরকার। আমাদের আরও বেশি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, আরও সুরক্ষা এবং অংশীদারদের দৃঢ় অবস্থান প্রয়োজন।’

শনিবার ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা মস্কোর কাছে রিয়াজান অঞ্চলে রাশিয়ার একটি তেল শোধনাগারে হামলা চালিয়েছে। শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা হামলার সক্ষমতা কমাতে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী।

রিয়াজানের গভর্নর পাভেল মালকভ জানিয়েছেন, সারা রাতে ইউক্রেনের ২৫টি ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছে। ড্রোনের একটি ধ্বংসাবশেষ পড়ে একটি প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ