আবারও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চাইলেন জেলেনস্কি
Published: 16th, November 2025 GMT
রাশিয়ার হামলায় কিয়েভে সাতজন নিহত হওয়ার এক দিন পর আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আবারও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার আবেদন জানালেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
গত শুক্রবার কিয়েভের কয়েকটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। এতে এক নারীসহ মোট সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৯৮৬ সালের দুর্ঘটনায় নিহত অপারেটর ভিক্তরের স্ত্রী নাতালিয়া খোদিনমচুকও রয়েছেন। ওই দুর্ঘটনার সময় ইউক্রেন তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাই প্রায় চার দশক পর রাশিয়ার কারণে ভিক্তরের স্ত্রীর মৃত্যু হওয়ায় বিশেষভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি।
শনিবার দক্ষিণ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় অন্তত চারজন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। প্রায় চার বছর ধরে ইউক্রেনে এভাবে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন শীত মৌসুমকে সামনে রেখে দেশটির জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘ইউক্রেনের জীবন বাঁচানোর মতো সহায়তা দরকার। আমাদের আরও বেশি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, আরও সুরক্ষা এবং অংশীদারদের দৃঢ় অবস্থান প্রয়োজন।’
শনিবার ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা মস্কোর কাছে রিয়াজান অঞ্চলে রাশিয়ার একটি তেল শোধনাগারে হামলা চালিয়েছে। শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা হামলার সক্ষমতা কমাতে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী।
রিয়াজানের গভর্নর পাভেল মালকভ জানিয়েছেন, সারা রাতে ইউক্রেনের ২৫টি ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছে। ড্রোনের একটি ধ্বংসাবশেষ পড়ে একটি প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র
এছাড়াও পড়ুন:
শমসের মুবিন চৌধুরী: বীর বিক্রম কূটনীতিকের ‘দলছুট’ রাজনীতি
শমসের মুবিন চৌধুরী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদে ছিলেন। যুদ্ধের পর মেজর পদে থাকা অবস্থায় তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। শুরু হয় তার কূটনৈতিক ক্যারিয়ার। চাকরি থেকে অবসরের পর যোগ দেন রাজনীতিতে, তবে এখানে এসে নামের চেয়ে বদনাম বেশি কুড়িয়েছেন।
রাজনীতিক হিসেবে কোনো আলোচনায় না থাকা শমসের মুবিন হঠাৎ রবিবার (১৬ নভেম্বর) মধ্যরাতে গণমাধ্যমের বড় খবর হয়ে এলেন। তবে এই আসা রাজনীতি থেকে চলে যাওয়ার ঘোষণা দিতেই আসা। তিনি আর রাজনীতি করবেন না বলে তার দল তৃণমূল বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছেন, যা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন তিনি নিজে এবং তার দলের মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার।
আরো পড়ুন:
নীরবতা ভেঙে হঠাৎ রাজনীতিকে ‘না’ বলে দিলেন শমসের মুবিন চৌধুরী
‘আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে’
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় বীর বিক্রম খেতাব অর্জন করে শমসের মুবিন চৌধুরী। খেতাব, সম্মান ও সফল কূটনীতিকের তকমা পেলেও রাজনীতিতে তিনি ধরাশয়ী। তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নানামাত্রা পাওয়া যায়।
১৯৭১ সালে শমসের মবিন চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রতিরোধ যুদ্ধকালে চট্টগ্রামের কালুরঘাটের যুদ্ধে তিনি আহত হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে বন্দি করে। তার কোর্ট মার্শাল হওয়ার কথা ছিল। তবে দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় তিনিও মুক্ত হয়ে যান। রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীর বিক্রম খেতাব অর্জন করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি ন্যস্ত হওয়ায় কূটনীতিক হিসেবে দীর্ঘদিন চাকরি করেন শমসের মুবিন চৌধুরী। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে শমসের মবিন পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। দুই বছর সেই দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৭ সালে চাকরি থেকে অবসরে যান তিনি।
২০০৮ সালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বিএনপিতে যোগ দেন সমশের মবিন চৌধুরী। ওই সময় চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পান তিনি। সেই সময় রাজনীতিক হিসেবে তার পরিচিত ছড়িয়ে পড়ে। ওয়ান-ইলেভেনের সরকার এবং তখন বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগে বিএনপির পক্ষে গণমাধ্যমে ঘন ঘন দেখা যেত তার মুখ।
২০০৯ সালে বিএনপির কাউন্সিলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয় এই শমসের মুবিনকে।
২০১৫ সালের শুরুর দিকে বিএনপি ও শরিকদের টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হন শমসের মবিন। ওই বছরের মে মাসে জামিনে মুক্তি পেলেও এরপর আর রাজনীতিতে সক্রিয় হননি তিনি।
অবসর ভেঙে ২০১৮ সালে একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা বাংলাদেশে যোগ দেন শমসের মুবিন। ওই বছর তিনি সিলেট-৬ আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন।
বিকল্পধারায় সুবিধা করতে পারেনি শমসের মুবিন। ওই দল থেকে পদত্যাগ করে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার গড়া দল তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব নেন শমসের মুবিন।
২০২৪ সালের সালের একতরফা নির্বাচনে তার নেতৃত্বে তৃণমূল বিএনপি অংশ নিয়েছিল। তবে কেউ জয়ী হতে পারেনি।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপবির্তনের পর ওই বছরের ১৭ অক্টোবর রাজধানীর বনানীর ডিওএইচএসের বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন শমসের মুবিন চৌধুরী। দুটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে ৫ মাস কারাগারে ছিলেন তিনি।
২০২৫ সালের ১৬ মার্চ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। তার আট মাস পর এসে ঘোষণা দিলেন আর রাজনীতি করবেন না; যখন মাত্র তিন মাসের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো।
ঢাকা/রায়হান/রাসেল