পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি লিবরা ইনফিউশন লিমিটেডের ব্যবসায়িক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এরই ধরাবাহিকতায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে সাতটি নির্দেশনা সাপেক্ষে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি আরএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য দিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান, বেড়েছে লেনদেন

হস্তান্তর হবে ঢাকা ব্যাংকের প্রয়াত উদ্যোক্তা পরিচালকের শেয়ার 

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির উপ- পরিচালক মো.

বনি ইয়ামিন খান, সহকারী পরিচালক মো. সাকিল আহমেদ ও ডিএসইর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. মাসুদ খান।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গঠিত তদন্ত কমিটি কোম্পানিটির কারখানা, অফিস, আর্থিক হিসাব এবং ব্যবসায়িক অন্যান্য কার্যক্রম তদন্ত করা হবে। এছাড়া সঠিক নথির মাধ্যমে কমিশনের বিধান অনুসারে আয় ও ব্যয় নিশ্চিত করা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি ২০২০ ও ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনের সম্পদ, দায় এবং নগদ অর্থের পরিমাণের সত্য যাচাই করা হবে। এছাড়া আর্থিক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিবেদন মান এবং আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা মান পালন হয়েছে কিনা তা যাচাই করবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংক ও অর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া ঋণের দায়বদ্ধতা যাচাই করবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ মর্মে অভিমত দিয়েছে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে লিবরা ইনফিউশনের ১০টি বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তিনজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ প্রদান করা হলো। তদন্ত কর্মকর্তাদের ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে কমিশনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি

কোম্পানিটির ২০২০ ও ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লিখিত সম্পদ, দায়, ইক্যুইটি, মুনাফা এবং নগদ অর্থের পরিমাণের সত্য এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য উল্লেখ করেছে কি-না তা যাচাই করা। এছাড়া আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশে আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিবেদন মান এবং আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা মান পালন হয়েছে কিনা তা যাচাই করবে তদন্ত কমিটি।

কোম্পানিটির বিক্রয়, গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত নগদ, বকেয়ার পরিমাণ, ব্যয়, ইনভেন্টরি (মজুদ পণ্য), কাঁচামাল ক্রয় এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়গুলোর সত্যতা যাচাই করা।

কোম্পানিটির ইউনিট-২-এ স্থায়ী সম্পদের কোনো অবচয় হয়েছে কি-না, তা বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা। ইউনিট-২ এর ভবন নির্মাণ ও পুনর্মূল্যায়নের জন্য ডেফার্ড কর দেখানো হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করা।  

সেই সঙ্গে আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেডের কাছে বকেয়া ঋণের দায়বদ্ধতা ও অবস্থান যাচাই করা। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে ঋণের দায়বদ্ধতার তথ্য যাচাই করা। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ প্রদান করেনি লিবরা ইনফিউশন। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ার হোল্ডারদের জন্য ৮০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ বোনাস ও ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ রয়েছে। এরপর থেকে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে আর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। ফলে বিগত ৪ বছর ধরে কোম্পানিটি পরিচালনা পর্ষদ শেয়ার হোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের পর প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক কোনো তথ্য নেই।

শেয়ার ধারণ পরিস্থিতি

লিবরা ইনফিউশন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৯৪ সালে। বর্তমানে কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। এ কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধন ২ কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২২ লাখ ৫২ হাজার ৮৮০টি। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩৪.৪২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪.২৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬১.৩৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৭৯৭.১০ টাকায়।

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ল র ৩০ জ ন ২০২১ স ল র ব এসইস র ইনফ উশন য চ ই কর র আর থ ক র জন য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ঘুষে চলে যায় বরাদ্দের অর্ধেক

সড়ক পাকাকরণের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। ঠিকাদার মোট বিলের ৮০ শতাংশ তুলে নিয়ে তিন বছর ধরে লাপাত্তা। এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কাজ থমকে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। 
এ চিত্র দেখা গেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে নওগাঁ মাজার থেকে রংমহল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের। ইতোমধ্যে সড়কে বিছানো খোয়া উঠে গেছে। ধুলাবালি জমে সামান্য বৃষ্টিতে কাদাপানিতে একাকার সড়ক। 
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলম হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে কল রিসিভ করলেও তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন জানান, কার্যাদেশ পাওয়ার মোট বরাদ্দের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রকৌশলী,  অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন জনকে দিতে হয়। কাজ চলাকালে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী সাইটে যান, তাদের ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা হাজিরা হিসাবে দিতে হয়। এভাবে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা চলে যায় ঘুষের পেছনে। যে টাকা থাকে, তা দিয়ে মানসম্মত কাজ করা সম্ভব হয় না। এ কারণে অনেক ঠিকাদার কিছুদিন কাজ করার পর বরাদ্দের টাকা তুলে লাপাত্তা হয়ে যান। কর্তারা তাদের কীভাবে বিল ছাড় করেন, তারাই বলতে পারবেন। অবৈধ আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশল অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বীকার করেননি।
২০২১-২২ অর্থবছরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ৩-এর আওতায় নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ মাজার থেকে রংমহল পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৬৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৪ টাকা। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ৬৬ লাখ ১১ হাজার ৮৯৯ টাকায় কার্যাদেশ পায় মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজ। ২০২২ সালের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। এর পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তা শেষ হয়নি।
২০২১ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালিন সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ সড়ক পাকাকরণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর পর ঠিকাদার সড়কের উভয় পাশে মাটি খুঁড়ে বালু ফেলে খোয়া বিছিয়ে দেন। এর মধ্যে সড়কের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। কিন্তু ঠিকাদার ৮০ শতাংশ কাজের বিল তুলে লাপাত্তা। তিন বছর ধরে সড়কটি বেহাল পড়ে আছে। 
সড়কের কাজ শেষ করতে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিলেও 
সাড়া মেলেনি। নিরুপায় হয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কার্যাদেশ বাতিল করেছে। এখন চলছে পুনঃদরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া। 
সড়কটি দিয়ে নওগাঁয় হজরত শাহ শরিফ জিন্দানী (র.)-এর মাজার, নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজ, নওগাঁ ফাজিল মাদ্রাসা, নওগাঁ হাটবাজার, নওগাঁ সোনালী ব্যাংক, নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ অফিসে যাতায়াত করতে হয়। 
উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, ‘প্রকল্প পরিচালক সড়কটি পরিদর্শন করেছেন। ঠিকাদার প্যালাসাইডিং, সাববেজ, সেন্ট ফিলিং ও ডব্লিউবিএম করেছে। সে অনুযায়ী বিল পাঠিয়েছি। বাকি কাজ না করায় বেশ কয়েকবার তাগাদা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাড়া না পাওয়ায় ঠিকাদারের চুক্তিপত্র বাতিল করা হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুঁজিবাজারে সংস্কারের মাধ্যমে ফুটপ্রিন্ট রেখে যেতে চাই: বিএসইসি চেয়ারম্যান
  • রুয়েটে সিএমই বিভাগের তিন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নতুন পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির দাবি
  • শিক্ষাঙ্গনে করোনা মোকাবিলায় অব্যবস্থাপনার পুনরাবৃত্তি নয়
  • আরএসআরএমের অর্থপাচারসহ ব্যবসায়িক কার্যক্রম যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি
  • শ্রেণিকক্ষকে শয়নকক্ষ বানালেন উপাধ্যক্ষ
  • শাস্ত্রী না সিধু—ধারাভাষ্য থেকে কার আয় বেশি
  • ঘুষে চলে যায় বরাদ্দের অর্ধেক
  • সেন্ট্রাল ফার্মার ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নিরীক্ষকের শঙ্কা, পরিদর্শনের নির্দেশ