রাশিয়ার পুতিনবিরোধীরা কেন ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে
Published: 17th, November 2025 GMT
উজবেকিস্তানে জন্মানো রুশভাষী ইসরায়েলি লেখক দিনা রুবিনা রাশিয়া সরকারের বিরোধী গ্রুপগুলোর পরিচালনা করা চ্যানেল রেইন টিভিকে গত জুলাইয়ে একটি সাক্ষাৎকার দেন।
ওই সাক্ষাৎকার রুশভাষী বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
দেড় ঘণ্টার অনুষ্ঠানে রুবিনা বলেন, গাজায় কোনো ‘শান্তিপ্রিয় বাসিন্দা’ নেই। তিনি বলেন, ‘গাজাকে সাফ করে পার্কিং লটে পরিণত করার’ অধিকার ইসরায়েলের আছে’। তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনিদের ‘হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডে গলিয়ে ফেলতে হবে।’
রাশিয়া থেকে পালিয়ে নির্বাসিত জীবন বেছে নেওয়া সাংবাদিক ও অনুষ্ঠান প্রযোজক মিখাইল কোজিরেভ রুবিনার সাক্ষাৎকারটি নেন।
কোজিরেভ রুবিনার বক্তব্যের অংশগুলো বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং এটিকে ‘সাক্ষাৎকারের সবচেয়ে জটিল অংশ’ বলে উল্লেখ করেন।
তিনি যদিও রুবিনার ‘গাজায় কোনো শান্তিপ্রিয় বাসিন্দা নেই’ দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এবং এটিকে তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধে রুশদের সম্মিলিত দায়ের সঙ্গে তুলনাও করেছিলেন; কিন্তু তিনি রুবিনার দাবিকে একেবারে প্রত্যাখ্যান করেননি।
সাক্ষাৎকারের পুরো সময়জুড়ে কোজিরেভ স্পষ্টভাবে ইসরায়েলের পক্ষেই ছিলেন।
আরও পড়ুনরাশিয়া-ইসরায়েল তিক্ত সম্পর্ক দুর্ভোগ ডেকে আনবে মধ্যপ্রাচ্যে০১ সেপ্টেম্বর ২০২২যদিও অনেক রুশভাষী ব্যক্তি রুবিনার বক্তব্যে নিন্দা জানিয়েছেন। বিশেষ করে মধ্য এশিয়ায় তাঁর বইয়ের আলোচনা সভা বাতিল করা হয়েছে। তবে রাশিয়ার রাজনৈতিক নির্বাসিতদের মধ্যে অনেকেই তাঁকে সমর্থন করেছেন।
এটি নতুন কিছু না। রাশিয়ার উদারবাদী বিরোধীরা (যাঁরা এখন প্রধানত নির্বাসনে বসে পুতিনবিরোধী কার্যক্রম চালান) সাধারণভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করেন।
রাশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদকে তাঁরা যে সমর্থন দিয়ে এসেছেন এবং শ্বেতাঙ্গ পশ্চিমা বিশ্বের শ্রেষ্ঠত্বকে তাঁরা যে স্বীকৃতি দিয়ে যাচ্ছেন, তারই স্বাভাবিক ফল হলো তাঁদের এই ফিলিস্তিনবিরোধী অবস্থান।
রাশিয়ার বিরোধীদের তীব্র ফিলিস্তিনবিরোধিতার উদাহরণ প্রচুর আছে। নির্বাসিত অবস্থায় থাকা বিশিষ্ট কলাম লেখক ইউলিয়া লাতিনিনা ফিলিস্তিনিদের ‘বর্বরদের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা ‘বিকশিত সভ্যতাকে ধ্বংস করছে’।
গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত শিক্ষার্থীদের তিনি ‘অকর্মা ও মূর্খ’ বলেছেন।
অধুনালুপ্ত ‘গণতন্ত্রপন্থী’ সংগঠন ওপেন রাশিয়ার সাবেক পরিচালক আন্দ্রে পিভোভারভ গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘একদম ঠিক আছে’ বলে রায় দিয়েছেন।
তিনি রাশিয়ায় কারাগারে ছিলেন এবং গত বছর পশ্চিমের সঙ্গে বন্দিবিনিময়ের সুবাদে তিনি মুক্তি পান।
দেড় ঘণ্টার অনুষ্ঠানে দিনা রুবিনা বলেন, গাজায় কোনো ‘শান্তিপ্রিয় বাসিন্দা’ নেই। তিনি বলেন, ‘গাজাকে সাফ করে পার্কিং লটে পরিণত করার’ অধিকার ইসরায়েলের আছে’।.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আজ মাওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী
মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার (১৭ নভেম্বর)। এ উপলক্ষে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মরহুমের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে ভোর থেকে ঢল নেমেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের। প্রয়াত এই নেতার মাজারে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, তার পরিবার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে।
ইতোমধ্যে সন্তোষে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মাজার প্রাঙ্গণে সপ্তাহব্যাপী মেলা বসেছে। বিভিন্ন সংগঠন-প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা, সেমিনার চলছে। মাজার প্রাঙ্গণে ভক্ত, অনুসারী ও মুরিদরা ‘যুগ যুগ জিও তুমি, মওলানা ভাসানী’ স্লোগানে ক্ষণে ক্ষণে স্লোগান দিচ্ছেন।
এদিকে, সংরক্ষণের অভাবে এবং অযত্ম-অবহেলায় থাকা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর স্মৃতিচিহ্ন গুলো হারিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তার চিন্তা ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র গঠন করা যেতে পারে। নতুন সরকারের কাছে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে যথাযথ সম্মান জানানোর দাবি তাদের।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, বিগত দিনে যারাই সরকার ছিলেন, তাদের দায়বদ্ধতার ঘাটতি ছিল বলেই মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর হাতে গড়া অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যমুনা সেতু ও টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ ভাসানীর নামে করার দাবি তাদের।
জাতীয় নেতার মর্যাদার পাশাপাশি, মাওলানা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি সচেতন মহলের। দেশের মানুষের স্বার্থে তাকে নিয়ে আরো গবেষণা করা প্রয়োজন বলে মনে করে ভাসানী ফাউন্ডেশন।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর হাতে লেখা চিঠি
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে সমাহিত করা হয়।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম ছিল চেগা মিয়া। তবে, তিনি লাল মওলানা হিসেবেও সমধিক পরিচিত। মক্তবে শিক্ষকতার সুবাদে ১৯০৯ সালে টাঙ্গাইলের কাগমারীতে চলে আসেন। সিরাজগঞ্জে জন্ম হলেও তার জীবনের সিংহভাগই টাঙ্গাইলের সন্তোষে কাটিয়েছেন। সন্তোষের মাটিতেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী কৈশোর-যৌবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি তৎকালীন বাংলা-আসাম প্রদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। লাইন-প্রথা উচ্ছেদ, জমিদারদের নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনসহ সারাজীবনই তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। তার উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন তৎকালীন রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সর্বদলীয় ওয়ার কাউন্সিলের উপদেষ্টা ছিলেন। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর পাক জান্তাদের ‘ওয়া আলাইকুম আসসালাম’ বলে বিদায় জানিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর তার সর্বশেষ কীর্তি ছিল- ফারাক্কা লং মার্চ।
১৯৬৭ সালে চীনের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে উপহার পাওয়া ট্রাক্টর, ওভার কোর্ট, তার ব্যবহৃত টাইপিং মেশিন, লাঠি, ট্রানজিস্টারসহ বিভিন্ন আলোকচিত্রসহ অনেক স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মওলানা ভাসানী রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোগে জাদুঘরে এগুলো সংরক্ষণের চেষ্টা করা হলেও তার ওপরে ধুলা বালুর আস্তর পড়েছে।
আক্তারুজ্জামান সাজু নামে এক শিক্ষার্থী জানান, ভারত, এশিয়া, আফ্রিকা, লেটিনসহ নানা দেশে ভাসানীকে নিয়ে চর্চা ও গবেষণা করা হয়। তার চিন্তা ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র গঠন করা যেতে পারে। নতুন সরকারের কাছে ভাসানীকে যথাযথ সম্মান দিতে এবং তার চেতনাকে বাস্তবায়ন করার দাবি জানান তিনি।
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাতি হাসরত খান ভাসানী ও আজাদ খান ভাসানী জানান, তাদের নানা দেশ ও জাতির জন্য জীবনকে উৎসর্গ করলেও ইতিপূর্বে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কেউ জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মৃত্যুর পর তার শেষ স্বপ্ন ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় মুখ থুবড়ে পড়ে ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। ভাসানীর হাতে গড়া অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, “ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাসানী সম্পর্কে জানাতে ভাসানী স্টাডিজ পাঠ্য বই পড়ানো হয়। সংগ্রামী মজলুম মানুষের পক্ষে কাজ করা ভাসানীর ওফাত বার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। আলোচনা সভা, সেমিনারসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। ভাসানীর উপহার পাওয়া ট্রাক্টর, বিভিন্ন আলোকচিত্রীগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে। তার হাতের স্মৃতি বিজরিত জিনিসপত্র রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিজ্ঞান মনস্ক ভাসানী স্বপ্ন দেখতে এদেশে কেরোসিন ও লবণ ছাড়া সব কিছুই তৈরি হবে। সততা, ন্যায় ও সংগ্রামী চেতনা নিয়ে নতুন প্রজন্ম এমন এক দেশ উপহার দিবে যা মাওলানা ভাসানী স্বপ্ন দেখতেন।”
ঢাকা/কাওছার/মাসুদ