এ যুগের এক অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। এ রোগে রক্তের চর্বি বেড়ে গিয়ে লিভারে জমা হয়। আপাতদৃষ্টে খুব বড় সমস্যা নয়। তবে একে অবহেলা করলে বিপদ হতে পারে। জীবনধারার সঙ্গে এ রোগ সরাসরি সম্পর্কিত।

রোজকার খাদ্যাভ্যাসই এ রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। রান্নায় ব্যবহৃত তেলের ব্যাপারটাই যেমন। তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর তেলও নানা কারণেই লিভারের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। এ সম্পর্কে জানালেন ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ ডা.

মুসআব খলিল

সব তেল ভালো নয়

যে তেলের জমাট বেঁধে যাওয়ার প্রবণতা আছে, তা না খাওয়াই ভালো। এই তেল রক্তে খারাপ চর্বির পরিমাণ বাড়াবে। আর তাতেই বাড়বে ফ্যাটি লিভার ডিজিজের ঝুঁকি। এ কারণে নারকেল তেল, পাম তেল, ঘি, মাখন, ডালডা–জাতীয় উপকরণ খাবারে ব্যবহার করা উচিত নয়।

উচ্চ তাপেও সব তেল নয়

আমাদের দেশে রান্নায় বহুল ব্যবহৃত উপকরণ সয়াবিন তেল। এতে স্বাস্থ্যকর উপাদান তুলনামূলক কম। স্বাস্থ্যকর তেল হিসেবে বাজারে জায়গা করে নিয়েছে ক্যানোলা তেল, সূর্যমুখী তেল, রাইস ব্র্যান তেল, জলপাই তেল।

তিসির তেল আর তিলের তেলও স্বাস্থ্যকর। তবে সব তেল দিয়ে সব রান্না করা যাবে না। যে তাপমাত্রায় কোনো তেল থেকে ধোঁয়া উঠতে থাকে, সেই তাপমাত্রায় ওই তেলের গঠন ভেঙে যায়। তাতে তেলের উপকারিতা হারিয়ে যায়, আর তা থেকে বেরিয়ে আসে বিষাক্ত উপাদান। এসব উপাদান মিশে যায় খাবারে। এ কারণেও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

আরও পড়ুনখরচ বাঁচাতে ভাজা তেল আবার ব্যবহার করছেন?১২ মার্চ ২০২৫কোন তেলে কোন রান্না

সয়াবিন তেল দিয়ে উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা যায়। ক্যানোলা তেল, সূর্যমুখী তেল আর রাইস ব্র্যান তেলও বেশ উচ্চ তাপমাত্রায় ব্যবহার করা যায়।

জলপাই থেকে পাওয়া যেকোনো তেল, তিসির তেল বা তিলের তেল দিয়ে কিন্তু আমাদের দেশের প্রচলিত ধারার রান্না করার সুযোগ নেই। কারণ, অনেক কম তাপমাত্রাতেই এসব তেল থেকে ধোঁয়া ওঠে।

এসব বরং কাঁচা অবস্থায় সালাদ–জাতীয় পদে যোগ করতে পারেন কিংবা সেদ্ধ ধরনের পদ চুলা থেকে নামানোর ঠিক আগে। কোনো খাবার সতে করা বা সাঁতলানোর জন্যও এসব তেল কাজে লাগানো যায়।

তেল নিয়ে আরও যা

তেল যত স্বাস্থ্যকরই হোক, তা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলেই আপনি পাবেন বাড়তি ক্যালরি। রক্তে বাড়বে চর্বির মাত্রা, যা জমা হবে লিভারে।

কোনো তেলই রান্নায় পুনর্ব্যবহার করা উচিত নয়। একবার ব্যবহার করার পর পাত্রে রয়ে যাওয়া তেল অনেকেই সংরক্ষণ করেন আবার রান্নার জন্য। খরচ বাঁচাতে এটা দারুণ বুদ্ধি হলেও পদ্ধতিটি স্বাস্থ্যকর নয়। ব্যবহৃত তেল বড়জোর আর একটিবার রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন, যদি তার রং, ঘনত্ব ও ঘ্রাণ ঠিক থাকে। তেল ভালো আছে মনে হলেও কিন্তু এর বেশিবার ব্যবহার করবেন না। বারবার ব্যবহারে ট্রান্স ফ্যাট এবং লিভারের জন্য ক্ষতিকর অন্যান্য উপকরণ তৈরি হয়।

অধিকাংশ রেস্তোরাঁয় ডুবোতেলে ভাজা পদগুলো বহুবার ব্যবহৃত তেল দিয়েই করা হয়। তাই বাইরে খেলেও এমন পদ এড়িয়ে চলুন।

তেলের রান্না খাবার বাড়িতে বারবার গরম করে খেলেও একই ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।

কম তেলে রান্না করলে এবং এসব বিষয় খেয়াল রাখলে সয়াবিন তেলের রান্না খেয়েও সুস্থ থাকতে পারবেন।

আরও পড়ুনফ্যাটি লিভার ডিজিজ: উপসর্গ না থাকলেও এই সমস্যাকে অবহেলা করতে নেই২৬ জুন ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ব যবহ র কর স ব স থ যকর ব র ব যবহ র ব যবহ ত সব ত ল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিদিনের খাবার

বর্ষাকাল মানে আকাশ কালো করা মেঘ, কখনও আবার ঝরঝর বৃষ্টি। বৃষ্টি হলেই খিচুড়ি, মজাদার খাবার খেতে মন চায়। সঙ্গে যদি থাকে ইলিশ মাছ কিংবা মাংসের কোনো পদ তাহলে তো কথাই নেই। বৃষ্টি দিনের মজার কিছু খাবারের রেসিপি দিয়েছেন আফরোজা খানম মুক্তা

পোলাও দিয়ে নারকেল ইলিশ   
উপকরণ: পোলাও চাল ৫০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল আধা কাপ, আদা ও রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ টেবিল চামচ, লবণ ১ টেবিল চামচ, এলাচ ও দারচিনি ২ পিস, পানি পরিমাণ মতো, ঘি ২ টেবিল চামচ।
নারকেল ইলিশ–উপকরণ: ইলিশ মাছ ৪ পিস, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, আদা ও রসুন বাটা ২ চা চামচ, হলুদ, মরিচ, ধনিয়া গুঁড়া আধা চা চামচ, কাঁচামরিচ ৫-৬টি, লবণ স্বাদমতো, নারকেল কোরানো আধা কাপ, সয়াবিন তেল ৪ টেবিল চামচ। বানাবেন যেভাবে: ইলিশ মাছ রিং পিস করে কেটে ধুয়ে রাখুন। কড়াইতে সয়াবিন তেল গরম হলে পেঁয়াজ কুচি বাদামি করে ভেজে সামান্য পানি দিন। পরে আদা ও রসুন বাটা, হলুদ, মরিচ, ধনিয়া গুঁড়া, লবণ, নারকেল কোরানো দিয়ে কষিয়ে নিন। পরে কাঁচামরিচ ফালি, ইলিশ মাছ দিয়ে ঢাকনাসহ রান্না করুন ৬-৭ মিনিট। পরে নামিয়ে রান্না করা মাছ উঠিয়ে রাখুন অন্য বাটিতে। মসলা পোলাওয়ের সঙ্গে মিলিয়ে ওপরে মাছ দিয়ে ৫-৭ মিনিট দমে রান্না করুন। তৈরি হয়ে গেল পোলাও দিয়ে নারকেল ইলিশ।
প্রস্তুত প্রণালি: হাঁড়িতে সয়াবিন তেল গরম হলে এলাচ ও দারচিনি, আদা ও রসুন বাটা, পেঁয়াজ কুচি, লবণ দিয়ে ২/১ মিনিট রান্না করে পানি দিন। ফুটে উঠলে ধুয়ে রাখা চাল দিয়ে রান্না করুন। সেদ্ধ হলে তাপ কমিয়ে ঘি দিয়ে আবারও ১৫ মিনিট রান্না করুন। তৈরি হয়ে গেল সাদা পোলাও। 

বৃষ্টিবিলাসী খিচুড়ি   
উপকরণ: পোলাও চাল ১ কেজি, মুগ ডাল ৩০০ গ্রাম, মসুর ডাল ১০০ গ্রাম, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, এলাচ ও দারচিনি ২-৩ পিস, লবণ স্বাদমতো, সয়াবিন তেল ১ কাপ, ঘি ১/৪ কাপ, আদা ও রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, পানি আধা লিটার, তেজপাতা দুটি।
প্রস্তুত প্রণালি: মুগ ডাল লালচে করে ভেজে ধুয়ে ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করে নিন ৫ মিনিট। এবার ভালোভাবে ধুয়ে যে হাঁড়িতে রান্না করবেন সেই হাঁড়িতে মুগ ডাল সেদ্ধ, চাল, মসুর ডাল, আদা ও রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, পেঁয়াজ কুচি, এলাচ ও দারচিনি, লবণ এবং সয়াবিন তেল দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে পানি দিন। এবার চুলার তাপ বাড়িয়ে রান্না করুন ঢাকনাসহ। ফুটে উঠলে মিডিয়াম আঁচে রান্না করুন আরও ১০-১২ মিনিট। নামানোর আগে ঘি দিয়ে নেড়ে নিন। তারপর গরম গরম খাসির মাংসের সঙ্গে পরিবেশন করুন। তৈরি হয়ে গেল বৃষ্টিবিলাসী খিচুড়ি।

মাংস ভরা খিচুড়ি
উপকরণ: চাল ৫০০ গ্রাম, মুগ ডাল ২৫০ গ্রাম, পেঁয়াজ গোল করে কাটা আধা কাপ, তেজপাতা দুটি, আদা ও রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদ ও ধনিয়া গুঁড়া ১ চা চামচ, ভাজা মরিচ বাটা ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, ছাক বাটা ২ টেবিল চামচ, ঘি ৪ টেবিল চামচ, গরুর মাংস ভুনা আধা কেজি।
ছাক বাটা–উপকরণ: পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, তেজপাতা ৩টি, রসুন কুচি ১/৪ কাপ,  চাল ২ চামচ, সয়াবিন তেল ৪ টেবিল চামচ, আস্ত জিরা ২ চা চামচ। বানাবেন যেভাবে: কড়াইতে তেল গরম হলে পেঁয়াজ, রসুন, তেজপাতা দিয়ে সোনালি করে ভাজুন। পরে চাল ও জিরা দিয়ে সামান্য ভেজে নিন। পরে বেটে পেস্ট তৈরি করে নিন। রেডি ছাক বাটা। 
প্রস্তুত প্রণালি: মুগ ডাল ভেজে লালচে করে নিন। এবার লাল চাল ও ভাজা ডাল ধুয়ে হাঁড়িতে বেশি পানি দিয়ে রান্না করুন। ফুটে উঠলে তেজপাতা, ভাজা মরিচ বাটা, হলুদ, ধনিয়া এবং লবণ দিয়ে আবারও রান্না করুন। খিচুড়ির মতো হলে নাড়তে নাড়তে নরম করুন। এরপর গরুর মাংস ভুনা দিন। নামানোর আগে ঘি আর ছাক বাটা দিয়ে অনবরত নাড়তে থাকুন। তারপর লবণ দেখে নামিয়ে নিন। এবার চামচে করে ঘি ও গন্ধরাজ লেবু দিয়ে পরিবেশন করুন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৃষ্টিদিনের খাবার