জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার থেকে সরে এসেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার ইসির ওয়েবসাইটে দেওয়া ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’-এর গেজেট থেকে এই তথ্য জানা গেছে। 

গত ২৬ জুন নির্বাচন কমিশনের উপসচিব দেওয়ান মো.

সারওয়ার জাহান স্বাক্ষরিত এই গেজেট জারি করা হয়েছে। গেজেট অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র স্থাপনেও জেলা প্রশাসক  ও পুলিশ সুপার নিয়ে গঠিত কমিটি বাদ দিয়ে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের ক্ষমতা দিয়েছে কমিশন। 

২০১০ সালের জুনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ভোটে বুয়েটের সহযোগিতায় একটি ওয়ার্ডে ইভিএমে ভোট শুরু করে তৎকালীন ইসি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ইসির নিজস্ব ইভিএমে স্বল্প পরিসরে ভোট নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনেও ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে দেড় লাখ ইভিএম কিনেছিল ইসি। পাঁচ বছর না যেতেই ১ লাখ ২০ হাজারের মতো মেশিন ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে ইসি সেগুলো মেরামতের জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে চাইলে তৎকালীন সরকার তা নাকচ করে দেয়। চলতি বছর ইভিএম প্রকল্পটি বাতিল করেছে ইসি। ইভিএম-সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান করছে। ইসির তিন কর্মকর্তাকে তলব করে বক্তব্যও শুনেছে দুদক।

এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই সম্প্রতি সংসদ নির্বাচনের আইনি কাঠামো থেকে ইভিএম বাদ দেয় নির্বাচন কমিশন। এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও একই সিদ্ধান্তে এলো ইসি। ২০২৩ সালের করা নীতিমালায় ইভিএমে ভোটদানের জন্য আলাদা ভোটকক্ষ স্থাপনের বিধান ছিল, যা এবারের নীতিমালা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। 
 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন অগ্রাধিকারের দাব

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে অগ্রাধিকার হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’।

পার্বত্য চুক্তির ২৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান প্ল্যাটফর্মটির নেতারা। এ সময় তারা চুক্তি বাস্তবায়নে সম্মিলিত বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বানও জানিয়েছেন।

অন্যান্য দাবিগুলো হলো-চুক্তি বাস্তবায়নে জাতীয় সংলাপ আয়োজন করা এবং কার্যকর রোডম্যাপ ঘোষণা ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন।

তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর সংবিধানে পরিচয় অস্বীকারের মধ্য দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের জুম্ম আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন রাজনৈতিক অধিকার ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে সশস্ত্র সংঘাতের অবসানে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক চুক্তি আদিবাসী জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ, ভূমি অধিকার ও স্থানীয় শাসনব্যবস্থার পুনর্গঠনের পথ খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও ২৮ বছর পরও চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো কার্যত বাস্তবায়ন হয়নি।”

তিনি বলেন, “চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির পুনর্গঠন আশা জাগালেও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিতকরণ এবং টাস্কফোর্সের কার্যক্রম থমকে যাওয়া গভীর উদ্বেগের। এর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরোক্ষভাবে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগে জটিলতাকেও চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার ফল বলে উল্লেখ করা হয়।”

সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, “২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান দেশের জন্য গৌরবের, যা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ার শপথ তৈরি করেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ সত্ত্বেও সংস্কার কমিশনগুলোতে আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের প্রশ্ন উপেক্ষিত হয়েছে। ভূমি, কৃষি ও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন না করা সরকারের বড় ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা কাটাতে এখনো সময় আছে। এ কারণেই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।”

এ সময় তিনি সেনাবাহিনীর গঠনমূলক ভূমিকা, জাতীয় সংলাপ এবং সবার অংশগ্রহণে একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরি হলে পাহাড়ে শান্তি ও গণতন্ত্রের পথ সুদৃঢ় হবে আশা প্রকাশ করেন।

সমাপনী বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রশ্নটি কখনোই দেশের মূলধারার গণতান্ত্রিক আলোচনায় যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। বরং দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত থেকেছে।”

তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা কোনো অঞ্চলের নয়। এটি সমগ্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।”

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নকে জাতীয় ইস্যু হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ, জাতীয় সংলাপ এবং নতুন গণতান্ত্রিক বন্দোবস্তের অংশ হিসেবে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ