যুক্তরাজ্যে আশ্রয় (অ্যাসাইলাম) ও অভিবাসন নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, যা অনেকটা ইউরোপের আরেক দেশ ডেনমার্কের অভিবাসন নীতর মতো। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ নিয়ে কাজ করছে। নতুন নীতির কারণে আশ্রয়প্রার্থীরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।

নতুন নীতির প্রধান উদ্দেশ্য—ছোট ছোট নৌকায় করে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো, হোটেলে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সরকারের যে ব্যয় হয়, তা কমানো এবং কমসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীকে স্থায়ী বসতির অনুমতি দেওয়া। আগামীকাল সোমবার যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ নতুন অভিবাসন নীতি হাউস অব কমন্সে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবেন।

যুক্তরাজ্যে গত দুই বছরে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদনের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত আগের এক বছরে দেশটিতে ১ লাখ ১১ হাজার ৮৪ জন আশ্রয়প্রার্থী আবেদন করেছেন। আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্ষমতাসীন লেবার সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। সরকার জানিয়েছে, তারা যুক্তরাজ্যকে আশ্রয়প্রার্থীদের ‘সহজ গন্তব্যে’ পরিণত করতে চায় না।

চাপের মুখে সরকার নিজেদের দেড় দশকের পুরোনো ইউরোপীয় আইন, সামাজিক সুবিধা (বেনিফিট-সাপোর্ট) এবং স্থায়ী বসতির নীতি পর্যালোচনার ঘোষণা দিয়েছে। সরকার মনে করছে, ‘শরণার্থীর’ মর্যাদা পরিবর্তন করা দরকার। এটাকে স্থায়ী নিশ্চয়তার পরিবর্তে অস্থায়ী ও শর্তসাপেক্ষ করা প্রয়োজন।

নতুন নীতির বিষয়ে এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দেশে বর্তমানে বিপুলসংখ্যক অবৈধ প্রবেশকারী রয়েছে। তার সঙ্গে ছোট ছোট নৌকাতে চড়ে নিয়মিতভাবে অনেক আশ্রয়প্রার্থী প্রবেশ করছেন। তাঁদের দেওয়া আবাসন, সাপ্তাহিক ভাতা এবং স্থায়ী বসবাসের অনুমতি বজায় থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, যেসব আশ্রয়প্রার্থী যুক্তরাজ্যে কাজ করতে পারেন এবং নিজেদের ভরণ-পোষণ বহনে সক্ষম, তাঁদের আবাসন বা ভাতা দেওয়া হবে না। যাঁদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের স্থায়ী বসতি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হবে না। বরং তাঁরা যেসব দেশ থেকে এসেছেন, তা নিরাপদ বলে মনে হলে তাঁদের সেখানে ফেরত পাঠানো হবে।

যুক্তরাজ্যে বর্তমানে যাঁরা শরণার্থীর মর্যাদা পান, তাঁদের স্থায়ী বসতির জন্য ৫ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তা বাড়িয়ে ২০ বছর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
নিজেদের পরিকল্পনাকে ‘আধুনিক যুগের আশ্রয়নীতির সবচেয়ে বড় সংস্কার’ হিসেবে উল্লেখ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

নিজেদের বর্তমান মডেল ডেনমার্কের অনুসরণে করা হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ডেনমার্কে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা কয়েক বছরে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। প্রত্যাখ্যাত আবেদনকারীর প্রায় ৯৫ শতাংশ সফলভাবে নিজ দেশে ফিরে গেছেন।

আরও পড়ুননীতিতে সংস্কার, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্য১৪ ঘণ্টা আগে

নতুন নীতির বিষয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সরকারি সুবিধাগুলো কঠোরভাবে সংকুচিত হতে পারে। আশ্রয়প্রার্থীরা শরণার্থীর মর্যাদা পেয়ে কাজ করতে পারলে তাঁরা আবাসন বা ভাতা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।

নতুন নীতি নিয়ে মানবাধিকার সংস্থা ও আশ্রয়-বিচারসংক্রান্ত সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, এই নীতি প্রকৃত শরণার্থী হিসেবে আসা ব্যক্তিদের জন্য কঠোর হতে পারে। বিশেষ করে যুদ্ধ, নির্যাতন বা প্রাণহানির ভয়ে আশ্রয়ে থাকা ব্যক্তিরা বিপদে পড়তে পারেন। তাদের দাবি, নতুন নীতি কতটা কার্যকর হবে, তা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের আলোকে বিচার করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর জ য নত ন ন ত র শরণ র থ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বর্জ্য ফেলা হচ্ছে পাহাড়ে, দূষিত হচ্ছে পানি

২ / ৯বর্জ্য ছড়িয়ে ছড়ার পানি মারাত্মক দূষিত হচ্ছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ