চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা এখন দুর্ভোগের আরেক নাম। এলাকার প্রায় প্রতিটি সড়কেই চলছে ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের খোঁড়াখুঁড়ি। কিছু সড়ক আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ, কোথাও বিশাল খননযন্ত্র দাঁড়িয়ে আছে আর কোথাও ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করা হলেও পিচঢালাই নেই। ফলে বাসিন্দা ও পথচারীদের জন্য চলাচল হয়ে উঠেছে কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ।

জানা গেছে, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের আওতায় সড়কে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলছে। তবে ধীরগতির কাজ ও বারবার সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে কষ্টে আছেন এলাকাবাসী। এ আবাসিক এলাকায় বিদ্যালয়, সরকারি অফিস ও হাসপাতাল রয়েছে। বর্তমানে এ এলাকায় অন্তত ৫০ হাজার মানুষ বসবাস ও যাতায়াত করেন।

বড় গর্ত নেই, এটি সত্য। তবে ভাঙা আছে অনেক স্থানে। পিচঢালাই না থাকায় যান চলাচলে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা মোটরসাইকেল চালান, তাঁরা কোমর ও পিঠের সমস্যায় ভুগছেন। রিকশাচালকেরাও এলাকায় আসতে বাড়তি ভাড়া চান।মো.

আলাউদ্দিন, স্থানীয় বাসিন্দা

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, আবাসিক এলাকাটির সব সড়কই খানাখন্দে ভরা। ওয়াসার প্রকল্পের কাজের জন্য অন্তত তিনটি সড়ক পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আরও চারটি সড়কের একাংশ বন্ধ। আবাসিক এলাকায় প্রবেশের সড়কও বেহাল।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২৩ সালের মার্চ মাসের দিকে এ এলাকায় পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের কাজ শুরু করে ওয়াসা। এর আগেও এখানে প্রায়ই পানি উঠত। তবে সড়কের খোঁড়াখুঁড়ির পর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বাড়তি দুর্ভোগ। পানি কম উঠলেও ভাঙা রাস্তায় চলা মুশকিল। দূর থেকে শিক্ষার্থীদেরও হেঁটে আসতে হয়। বিকল্প পথ দিয়ে ঘুরে আসতে সময় বেশি লাগে।

২০১৮ সালে ‘চট্টগ্রাম মহানগরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রথম প্রকল্প অনুমোদন পায় একনেক সভায়। এরপর আরও পাঁচটি প্রকল্প নিয়েছে ওয়াসা। পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পুরো শহরকে ছয়টি অঞ্চল বা ক্যাচমেন্টে ভাগ করেছে সংস্থাটি। ক্যাচমেন্টগুলো হলো হালিশহর, কালুরঘাট, ফতেয়াবাদ, পূর্ব বাকলিয়া, উত্তর কাট্টলি ও পতেঙ্গা। এর মধ্যে হালিশহর ক্যাচমেন্টের আওতায় আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা।

সড়কের প্রায় পুরোটা বন্ধ করে চলছে ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের কাজ। এতে যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

নানা আয়োজনে মোংলা বন্দরের প্লাটিনাম জয়ন্তী উদ্‌যাপন

প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্ণ করল দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা। এ উপলক্ষে প্লাটিনাম জয়ন্তী উদ্‌যাপন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বন্দরের প্রধান ফটকের সামনে বেলুন উড়িয়ে এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান।

এর আগে মোংলা বন্দর দিবস উপলক্ষে বন্দর ভবনের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে বন্দরের জেটির অভ্যন্তরে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, গীতা ও বাইবেল পাঠের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা শুরু হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অবদান ও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বন্দর ব্যবহারকারী ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সেরা কর্মীদেরও সম্মানিত করা হয়।

১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর খুলনা জেলার চালনা এলাকায় যাত্রা শুরু হলেও ভৌগোলিক কারণে মাত্র তিন বছরের মাথায় বন্দরটির কার্যক্রম সরানো হয় বাগেরহাটের মোংলায়। মূলত ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর ‘দ্য সিটি অব লিয়নস’ নামের ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজের আগমনের মধ্য দিয়ে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। ‍সুন্দরবনের পশুর নদের জয়মনির ঘোল এলাকায় নোঙর করেছিল ওই জাহাজ।

৭৫ বছরের দীর্ঘ যাত্রায় নানা সংকটের মাঝেও দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ভূমিকা রেখে চলেছে মোংলা বন্দর। নৌ, সড়ক ও রেলপথ অবকাঠামো তৈরি থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহজে পণ্য পাঠানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও ভুটানের জন্যও এই বন্দর ব্যবহার দারুণ সম্ভাবনাময়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোংলা বন্দরকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন উপব্যবস্থাপক মো. মাকরুজ্জামান বলেন, এটি প্রথমে একটি সরকারি অধিদপ্তর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৭৭ সালের মে মাসে ‘চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এই বন্দর। ১৯৮৭ সালের মার্চে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ’।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। অর্থবছর শেষে ১ কোটি ৪ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ১৫ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন বা ১৭.২৫ শতাংশ বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ (টোয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিটস)। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়েও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ বা ৭.২৮ শতাংশ বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে। ৩৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের মধ্য দিয়ে গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২.৮৩ শতাংশ বেশি আয় করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে বন্দরের নিট মুনাফা হয় ৬২ কোটি ১০ লখ টাকা।

অনুষ্ঠানে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বন্দরে জাহাজ এসেছে ৩৫৬টি। কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৪ টিইইউজ এবং গাড়ি আমদানি ৪ হাজার ১৩৯টি। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে ৪৪ লাখ টন। আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের ফলে প্রথমবারের মতো প্রতি ঘণ্টায় ২৪টির বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশে ট্রানজিট পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মোংলা বন্দর ব্যবহার করে স্থল, নৌ ও রেলপথের মাধ্যমে রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের পণ্য পরিবহন সহজ ও দ্রুততর হয়েছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাণপ্রবাহ এ বন্দর কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে দেশের চলমান অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে। মোংলা বন্দরকে আরও আধুনিক ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চলমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ