সামর্থ্য নেই, তারপরও বাধ্য হয়ে কিনতে হয় গাইড বই
Published: 5th, August 2025 GMT
হযরত আলী ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। পড়ে ভোলা সদরের কন্দর্পপুর গ্রামের ওবায়দুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ২০২২ সালে মাছ ধরতে গিয়ে তার বাবা কামাল হোসেন মেঘনা নদীতে মারা যান। নদীগর্ভে বিলীন হয় তাদের ঘরবাড়ি। মায়ের সঙ্গে সে আশ্রয় নেয় মামার বাড়িতে। এই দারিদ্র্যের মধ্যেও মা শাহিনুর বেগমকে ছেলের জন্য ১ হাজার ৯৫০ টাকা দিয়ে এক সেট গাইড ও গ্রামার বই কিনতে হয়েছে।
শাহিনুর বেগম প্রথম আলোকে বলেন, এত টাকা খরচ করা তাঁর পক্ষে কঠিন। কিন্তু শিক্ষকদের চাপাচাপির কারণে তিনি কিনতে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়া টাকার অভাবে ছেলেকে প্রাইভেট পড়াতে না পারার কষ্ট আছে তাঁর।
আরেক অভিভাবক ভোলার ধনিয়া ইউনিয়নের নবীপুর এলাকার হাসিনা বানু (৩০)। সংসারের কাজের পাশাপাশি বাসায় তিনি হোগলাপাতার রশি বুনে কিছু আয় করেন। এতে তাঁর দিনমজুর স্বামী মনিরুল ইসলামের একটু উপকার হয়। তাঁদের মেয়ে লিমা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ের জন্য বাধ্যতামূলক গাইড বই কিনতে হবে। কিন্তু ঘরে টাকা না থাকায় বাধ্য হয়ে বিয়েতে পাওয়া নাকফুল তিন হাজার টাকায় বিক্রি করে মেয়ের জন্য গাইড বই কিনেছেন। তাঁর ইচ্ছা, মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করবেন। তাই এত লড়াই।
শিক্ষার্থীদের জন্য গাইড বই কেনা এতটাই জরুরি কি না—জানতে চাইলে ভোলা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক এবং মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষক শরমিন জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের গাইড বই কিনতে নিরুৎসাহিত করে আসছি। গাইড থেকে উত্তর দিলে নম্বর কমিয়ে দিই। আমরা যে প্রশ্ন করি, তাতে গাইড বইয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। পাঠ্যবই পড়লে, শ্রেণিশিক্ষক পড়ানোর সময় নিজস্ব জ্ঞান যোগ করলে সেটাই যথেষ্ট। ইচ্ছা করলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের পক্ষে পাঠ্যবই ও সিলেবাস এক-দুই মাসে শেষ করা সম্ভব। প্রাইভেটও পড়তে হয় না।’
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র হযরত আলীকে এক হাজার ৯০০ টাকা দিয়ে গাইড বই কিনে দিয়েছে তার মা। পড়ার টেবিলে হযরত আলী। সম্প্রতি ভোলা সদএর রাজাপুর কন্দর্পপুরে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সূর্য কি সত্যিই জেগে উঠছে
সৌরজগতে উষ্ণতা থেকে শুরু করে ভর আর সব গ্রহের কক্ষপথের স্থিতিশীলতা দিচ্ছে সূর্য। আমাদের পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজনীয় অবস্থা তৈরির জন্য সূর্যের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। তবে নাসার বিজ্ঞানীদের ধারণা, শক্তিশালী সূর্য জেগে উঠেছে। আমাদের সূর্য অপ্রত্যাশিতভাবে তার কার্যকলাপ বৃদ্ধি করতে শুরু করেছে। এতে আরও তীব্র সৌরঝড় দেখা দিতে পারে। সৌরঝড়ের কারণে নানা ভাবে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ব্যাহত হয়।
নাসার তথ্যমতে, আমাদের সৌরজগতের মধ্যমণি সূর্য প্রায় ২০ বছর ধরে শান্ত ও দুর্বল অবস্থায় ছিল। ২০০৮ সালে সূর্যের প্রকৃতিতে আশ্চর্যজনকভাবে পরিবর্তন আসে। বিজ্ঞানীরা সেই পরিবর্তনের কারণে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৮ সাল থেকে সূর্যের সৌরবায়ু বা চার্জ হওয়া কণার স্রোতের গতি, ঘনত্ব, তাপমাত্রা ও চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি বাড়ছে। এতে শক্তিশালী সৌরঝড় তৈরির সুযোগ বাড়ছে। এসব ঝড় নিয়মিতভাবে পৃথিবীতে আঘাত করে। ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের কারণে পাওয়ার গ্রিড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ঝড় উপগ্রহের স্বাভাবিক কাজে হস্তক্ষেপ করে বলে জিপিএসের মতো যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাহত হয়।
সৌরঝড় কখন তৈরি হবে, তার সঠিক সময় ও ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ২০২৫ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে সূর্যের বর্তমান ১১ বছরের চক্র সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে ঝড় আরও ঘন ঘন হতে পারে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির প্রধান গবেষণা লেখক জেমি জ্যাসিনস্কি বলেন, সূর্য ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। সৌর কণার বর্ধিত সংস্পর্শ মহাকাশচারীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এ সপ্তাহে একটি শক্তিশালী ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের কারণে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবায় ব্যাপক সমস্যা দেখা যায়।
অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্সে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, সৌর কার্যকলাপের বৃদ্ধি দীর্ঘ ২২ বছরের চক্রের অংশ হতে পারে। সূর্য এখন তার রহস্যময় দুই দশকের শান্ত অবস্থা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮ সাল থেকে সৌরবায়ুর গতি ৬ শতাংশ ও ঘনত্ব ২৬ শতাংশ বেড়েছে।
সূত্র: ডেইলি মেইল