নির্বাচনে নিবন্ধিত একাধিক দল জোটভুক্ত হলেও ভোট করতে হবে নিজ নিজ দলের প্রতীকে—শেষ পর্যন্ত এমন বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। এটি ছাড়াও আরপিওতে পলাতক আসামিকে নির্বাচনে অযোগ্য করা; সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞাভুক্ত করাসহ কিছু নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। গত সোমবার আইন মন্ত্রণালয় এ অধ্যাদেশ জারি করে।

আগে কোনো দল জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে তারা জোটের শরিক যেকোনো দলের প্রতীক নেওয়ার সুযোগ পেত। এর আগে গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

জোট করলেও দলীয় প্রতীকেই নির্বাচন করার বিধান নিয়ে তখন আপত্তি জানিয়েছিল বিএনপি। দলটি নির্বাচন কমিশন ও আইন মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে তাদের আপত্তির কথা জানায়। জোটভুক্ত হতে আগ্রহী কিছু ছোট দলের মধ্যেও সরকারের এই সিদ্ধান্তে অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল।

এরপর সরকার বিষয়টি বাদ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমন খবর জানতে পেরেছে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামী এটি নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখায়। শেষ পর্যন্ত ওই বিধান রেখেই অধ্যাদেশ জারি করা হলো।

সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো আদালত–ঘোষিত পলাতক আসামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। আরপিওতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকেও যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের মতো ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তিন বাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না।

আরপিওতে আংশিক ‘না’ ভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে পারবেন না। সেখানে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা থাকবে।

আগে প্রার্থীদের ২০ হাজার টাকা জামানত দিতে হতো। এবার সেটা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। অনিয়মের কারণে কোনো আসনের যেকোনো ভোটকেন্দ্র বা প্রয়োজনে পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সংক্রান্ত সব বিধান আরপিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পোস্টাল ব্যালটে ভোটের কিছু নতুন বিধান আরপিওতে যুক্ত করা হয়েছে। আগে নির্বাচনে রঙিন পোস্টার ছাপানো নিষিদ্ধ ছিল। এবার অধ্যাদেশে যেকোনো পোস্টার ছাপানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসবের বাইরে আরও কিছু সংশোধনীও আনা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক ত কর আরপ ও

এছাড়াও পড়ুন:

ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় ঢাবিতে মানবেন্দ্র লারমাকে স্মরণ

সাবেক আইনপ্রণেতা ও বিপ্লবী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় এক স্মরণসভায় তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

স্মরণসভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এম এন লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।

মানবেন্দ্র লারমা গরিব মেহনতি মানুষের নেতা উল্লেখ করে স্মরণসভায় সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘তিনি কেবল পাহাড়ি মানুষের নেতা ছিলেন না। বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সমগ্র নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। তিনি বাহাত্তরের সংবিধানে আদিবাসী, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সে সময় সংসদে দাড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন যে তিনি একজন চাকমা, একজন চাকমা কোনো দিন বাঙালি হতে পারেন না।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘জুলাই সনদে আজকে আদিবাসী মানুষের কথা বলা নেই। অথচ কেবল মুখে বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে। বিগত সময়ের দলীয় সরকার নাহয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি। কিন্তু গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পাহাড়ি আদিবাসীরা কমপক্ষে দুটি সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিভাবে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো উচ্চারণ করেনি।’

ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান যে চেতনা নিয়ে শুরু হয়েছিল, আজ সেই চেতনা মৌলবাদী শক্তির কাছে লুট হয়ে গেছে। সত্তরের দশকে নতুন বাংলাদেশে মহান নেতা মানবেন্দ্র লারমা সেই স্বপ্ন দেখছিলেন, যে স্বপ্ন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার, গরিব মেহনতি তথা নিপীড়িত পাহাড়ি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বুনেছিলেন।’

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে নিপীড়িত মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়নি, নারী-পুরুষের বৈষম্য বিলোপ এবং মেহনতি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়নি। সে সময় শোষিত মানুষের বন্ধু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাঁদের হয়ে কথা বলেছেন। তিনি সংবিধান প্রণয়নের সময় শ্রমিক, গরিব ও আদিবাসী নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছিলেন।

সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের যত রাজনৈতিক দল আছে, তারা অন্য জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো মানসিকতা এখনো তৈরি করতে পারেনি। ভোটের আগে মুখে বললেও তা বাস্তবে বাস্তবায়ন করে না।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জাতির জন্য ছাত্রজীবন থেকে অধিকারের কথা বলেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সংবিধান যখন বাঙালি বলে আদিবাসী মানুষের পরিচয় করে দিতে চেয়েছিল, সেই সময় গণপরিষদে এম এন লারমা প্রতিবাদ করেছিলেন।’

স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন লেখক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, সাংবাদিক সাইফুর রহমান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ও নারীনেত্রী শিরিন হক। স্মরণসভা শেষে গান, কবিতা পাঠ ও প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ