শিরোপা হাতছাড়া বাংলাদেশের যেকোনো দলের জন‌্য নতুন কোনো ঘটনা নয়। জাতীয় দল থেকে যুব দল কিংবা ‘এ’ দল বা হাই পারফরম‌্যান্স দল শিরোপার খুব কাছে গিয়েও শূন‌্যহাতে ফিরতে হয়েছে অগণিতবার। কখনো শিরোপা সাফল‌্যে ভেসেছে ঠিকই। কিন্তু প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ব‌্যবধান বিরাট।

এবার তেমনই এক শিরোপার খোঁজে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। দ্বিতীয়বারের মতো ‘টপ এন্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজ’ খেলতে অস্ট্রেলিয়া যাবে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। যে দলটিকে নেতৃত্ব দেবেন কাজী নুরুল হাসান সোহান। গত আসরে বাংলাদেশ ‘এ’ দল রানার্সআপ হয়েছিল। অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের একাডেমি দলের কাছে ম্যাচ হেরেছিল।

এই সিরিজে বাংলাদেশ বাদেও অংশ নেবে পাকিস্তান শাহীনস (এ দল) ও নেপালের এ দল এবং অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় একাধিক দল। অ‌্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স গতবার ৩২ রানে বাংলাদেশকে ফাইনালে হারিয়েছিল। হারানো সেই শিরোপা পেতেই এবার বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ শিবির। অধিনায়ক বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললেন, ‘‘মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত, একটা টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছি, ফাইনাল খেলবো। এবং প্রতিটা খেলোয়াড়, যারা আমাদের সঙ্গে টিম ম্যানেজম্যান্ট আছে— তাঁদের লক্ষ্য ট্রফি জেতার।’’ 

আরো পড়ুন:

ছয় বছর পর আবার সভাপতি হচ্ছেন সৌরভ

এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা

৯ আগস্ট বাংলাদেশ দল ডারউইনে পৌঁছবে। ১৪ আগস্ট বাংলাদেশের প্রথম ম‌্যাচ পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে। এরপর ১৬ আগস্ট খেলবে নেপালের বিপক্ষে। ১৭, ১৯, ২১, ২৩ আগস্ট বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ পার্থ স্কচার্স, নর্দান টেরিটরি স্ট্রাইক, মেলবোর্ন স্টার্স ও অ‌্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স। প্রতিটি ম‌্যাচ হবে ডারউইনে।

প্রতিপক্ষকে নিয়ে সোহানের মূল‌্যায়ন, ‘‘অনেকগুলো ভালো দল আছে। পাকিস্তান এ দল আছে, নেপাল জাতীয় দল আছে। ওখানে যে দলগুলো আছে, যাওয়ার পর মূল‌্যায়ন করার সুযোগ পাবো। আমার কাছে মনে হয় সব দলগুলোই ভালো, প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট হবে। ওই কন্ডিশনে ভালো করার এটা একটা সুযোগ।’’

টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতার পর বাংলাদেশ ‘এ’ দল একটি চারদিনের ম‌্যাচ খেলবে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ২৮ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ম‌্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। টেস্ট ম‌্যাচের প্রস্তুতিও সারতে চান সোহান, ‘‘যেহেতু সামনের বছর টেস্ট আছে, এটা আমাদের জন্য ভালো সুযোগ যারা টেস্ট খেলবে। চারদিনের দল এখনও দেয়নি। যারাই খেলবে, তাদের জন্য বড় সুযোগ।’’

সোহানের সঙ্গে এই সফরে যাচ্ছেন মোহাম্মদ নাঈম, হাসান মাহমুদ। সবশেষ জাতীয় দলের স্কোয়াডে ছিলেন দুই ক্রিকেটার। এছাড়া তরুণ ক্রিকেটারদের মধ‌্যে জিসান আলম, তোফায়েল আহমেদ, রাকিবুল হাসান, মাহফুজুর রহমান রাব্বী, মুশফিক হাসান ও রিপন মন্ডলকেও রাখা হয়েছে। ৭ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে রওনা দেবেন তারা। 

বাংলাদেশ ‘এ’ স্কোয়াড:
কাজী নুরুল হাসান সোহান, সাইফ হাসান, মোহাম্মদ নাঈম, জিসান আলম, মাহিদুল ইসলাম ভূইয়া, ইয়াসির আলী চৌধুরী, আফিফ হোসেন ধ্রুব, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, রাকিবুল হাসান, মাহফুজুর রহমান রাব্বী, নাঈম হাসান, মুশফিক হাসান, রিপন মন্ডল ও হাসান মাহমুদ।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে ঢাকার আদালতের আদেশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনে (আরসিবিসি) থাকা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্ত করে ফেরত আনার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত এ আদেশ দেন।

গতকাল রোববার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, প্রায় ৯ বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার (৮ কোটি ১০ হাজার ডলার) বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ। ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক পাচারে জড়িত ছিল বলে সিআইডির আবেদনের ভিত্তিতে আদালত এ নির্দেশ দেন।

ছিবগাত উল্লাহ বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনার মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে দুই কোটি ডলার ফেরত আসে। আর আরসিবিসির মাধ্যমে ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৬৮ হাজার ডলার ফেরত পায় বাংলাদেশ। প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার অন্য উদ্যোগে ফেরত আসে। এখন আরসিবিসির কাছে পুরো ৮১ মিলিয়ন ডলারই ফেরত চাওয়া হচ্ছে, যেটা আদালত বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন।

আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে করা মামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, এর সঙ্গে সিআইডির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সিআইডির কাছে যে মামলা আছে, সে ব্যাপারে কাজ চলছে। সমাপ্তির পথে, খুব দ্রুতই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

আদালতের আদেশে বলা হয়, তদন্তে সংগৃহীত তথ্যপ্রমাণ এবং ফিলিপাইন সরকারের পাঠানো মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পর্যালোচনা করে প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে হ্যাকাররা অবৈধভাবে ৮১ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করেছিল।

সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী বলেন, আদালতের আদেশ কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশের কপি (অনুলিপি) পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে টাকা দেশে ফেরত আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির তথ্য ১ দিন পর জানতে পারলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা ২৪ দিন গোপন রাখে। ৩৩তম দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়।

সিআইডির ভাষ্য, জাতিসংঘের কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম (ইউএনটিওসি), ফিলিপাইনের আইন এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) নির্দেশনার আলোকে এবং সর্বশেষ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার এখন ফিলিপাইনের সরকারের কাছ থেকে এই অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করবে।

সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা (মেসেজ) পাঠিয়ে ফেডে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপাইনের মাকাতি শহরে রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে।

অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়, ফিলরেম মানি রেমিট্যান্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি হচ্ছিল না। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস মিলছিল না।

২০২০ সালের ২৭ মে ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা ওই মামলায় অর্থ রূপান্তর, চুরি, আত্মসাতের অভিযোগে রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওই মামলা চালিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেন নিউইয়র্কের আদালত। তবে ব্যক্তিগত এখতিয়ার না থাকায় চারজন বিবাদীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এদিকে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১ কোটি ৯১ লাখ ডলার জরিমানা করে আরসিবিসিকে। ওই সময় করা এক মামলায় ফিলিপাইনের আদালত ২০১৯ সালে আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগিতোকে মুদ্রা পাচারের আট দফা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলায়ও তাঁকে আসামি করা হয়।

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশেও একটি মামলা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা ওই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিটির সময় গত ৮ জুলাই আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী চলতি সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ দেওয়ার কথা।

এর আগে গত ১১ মার্চ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে ছয় সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি করে সরকার। এ কমিটিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্তকাজের অগ্রগতি, এ-সংক্রান্ত সরকারি অন্যান্য পদক্ষেপের পর্যালোচনা, এ ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এ জন্য ওই কমিটিকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় পরে আরও তিন মাস সময় বাড়ানো হয়।

পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা হলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের পরিচালক আলী আশফাক ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল হুদা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ