ফিলিস্তিনিদের ওপর নজরদারির জন্য মাইক্রোসফটকে ব্যবহার করেছে ইসরায়েল
Published: 6th, August 2025 GMT
২০২১ সালের শেষের দিকে এক বিকেলে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা ইসরায়েলের সামরিক নজরদারি সংস্থা ইউনিট ৮২০০-এর কমান্ডারের সাথে দেখা করেন। গুপ্তচর প্রধানের এজেন্ডা ছিল মার্কিন কোম্পানিটির ক্লাউডে বিপুল পরিমাণে গোপন গোয়েন্দা তথ্য স্থানান্তর।
স্পাইমাস্টার ইয়োসি সারিয়েল সিয়াটলের কাছে মাইক্রোসফটের সদর দপ্তরে নাদেলার সমর্থন অর্জন করেন এমন একটি পরিকল্পনার জন্য যা ইউনিট ৮২০০-কে মাইক্রোসফটের অ্যাজুর ক্লাউড প্ল্যাটফর্মের মধ্যে একটি কাস্টমাইজড এবং বিচ্ছিন্ন এলাকায় প্রবেশের সুযোগ দেবে।
অ্যাজুরের প্রায় সীমাহীন স্টোরেজ ক্ষমতা দিয়ে সজ্জিত ইউনিট ৮২০০ একটি শক্তিশালী নতুন গণ নজরদারি সরঞ্জাম তৈরি শুরু করে। এটি একটি সুস্পষ্ট এবং অনুপ্রবেশকারী সিস্টেম যা গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের করা প্রতিদিন লাখ লাখ মোবাইল ফোন কলের রেকর্ডিং সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে।
ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি প্রকাশনা +972 ম্যাগাজিন এবং হিব্রু ভাষার আউটলেট লোকাল কলের সাথে গার্ডিয়ানের তদন্তে প্রথমবারের মতো এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, ক্লাউডভিত্তিক সিস্টেম ইউনিট ৮২০০ কে দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রতিদিন প্রচুর কল সংরক্ষণ করতে সক্ষম করে।
মাইক্রোসফ্ট দাবি করেছে, নাদেলা ইউনিট ৮২০০ আজুরে কী ধরণের ডেটা সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা করেছিল তা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। কিন্তু ফাঁস হওয়া মাইক্রোসফট নথি এবং কোম্পানি ও ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার ১১টি সূত্রের সাক্ষাৎকার থেকে জানা গেছে , কীভাবে ইউনিট ৮২০০ প্রতিদিনের ফিলিস্তিনি যোগাযোগের এই বিশাল সংরক্ষণাগার রক্ষার জন্য আজুর ব্যবহার করেছে।
ইউনিট ৮২০০ এর তিনটি সূত্র অনুসারে, এই নির্বিচার নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ফিলিস্তিনিদের করা মোবাইল ফোন কলের বিষয়বস্তু রেকর্ড করেছেন। ক্লাউডভিত্তিক স্টোরেজ প্ল্যাটফর্মটি গাজায় মারাত্মক বিমান হামলার প্রস্তুতিতে এবং গাজা ও পশ্চিম তীরে সামরিক অভিযান পরিচালনায় সহায়তা করেছে।
প্রকল্প সম্পর্কে জানেন এমন গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ইউনিট ৮২০০-এর নেতৃত্ব মাইক্রোসফটের দিকে তখন ঝুঁকে পড়েছিল যখন তারা দেখতে পান যে, তাদের সেনাবাহিনীর সার্ভারে পর্যাপ্ত স্টোরেজ স্পেস বা কম্পিউটিং ক্ষমতা নেই যা পুরো জনসংখ্যার ফোন কলের ভার বহন করতে পারে। ইউনিটের বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা প্রতি ঘন্টায় দশ লাখ ফোন কল রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন।
ইউনিট ৮২০০-এর নির্দেশাবলীর মাধ্যমে কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে উন্নত সুরক্ষা স্তরসহ মাইক্রোসফটের সার্ভারে বসানোর জন্য সিস্টেমটি তৈরি করা হয়েছিল। ফাঁস হওয়া মাইক্রোসফট ফাইলগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, ইউনিটের সংবেদনশীল ডেটার একটি বড় অংশ এখন নেদারল্যান্ডস ও আয়ারল্যান্ডে কোম্পানির ডেটা সেন্টারে থাকতে পারে।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ ন কল র স রক ষ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন
আজ মহালয়া। সনাতন ধর্মের ভাষ্যমতে, দিনটি পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের সূচনার প্রতীক। মহালয়ায় হিন্দু সম্প্রদায় তাঁদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করেন, তাঁদের শান্তি কামনা করেন এবং একই সঙ্গে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানান।
মহালয়াকে কেবল আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান নয়; বরং সনাতনী সমাজের সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং সামাজিক সংহতির এক গভীর প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। ভোরের আলো আর শিশিরসিক্ত প্রভাতে এ মহালয়ার আচার আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রত্যেক প্রজন্মকে অতীতের শিক্ষার আলো ধরে সমাজের নৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা প্রতিবছরের মতো এবারও ভক্তি, সংস্কৃতি ও সামাজিক সম্প্রীতির মিলনক্ষেত্র হিসেবে উদ্যাপিত হবে। এ উৎসবের মর্যাদা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র, সম্প্রদায় ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব।
দুঃখজনক হলেও সত্য, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অশুভ চক্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে প্রতিমা ভাঙচুরের মাধ্যমে অনৈতিক প্ররোচনা সৃষ্টি করছে। গত কয়েক দিনে কুষ্টিয়া, গাজীপুরসহ কয়েকটি জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে, যেটি উদ্বেগজনক। এ কর্মকাণ্ড শুধু ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করে না; বরং সমাজের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংহতিতেও ক্ষতি করে। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের ৫টি জেলাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ও ২৪টি জেলাকে মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ নামের একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। তাই দুর্গাপূজায় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়াই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তৎপরতা এ প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। কমিশনারের নেতৃত্বে ডিএমপি ইতিমধ্যে ২৫৮টি মণ্ডপে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত আছে মণ্ডপভিত্তিক পাহারা, পৃথক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, প্রতিমা বিসর্জনের দিন সার্বিক তৎপরতা, সিসিটিভি স্থাপন, অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রতিরোধে নজরদারি। এটি প্রমাণ করে, সামাজিক ন্যায় ও আইনশৃঙ্খলার অটল ভিত্তি রক্ষায় রাষ্ট্র সচেতন ও সংবেদনশীল ভূমিকা গ্রহণ করছে।
একইভাবে সারা দেশে প্রায় ৩০ হাজার মণ্ডপে নিরাপত্তার আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি মণ্ডপে পর্যাপ্ত পুলিশি পাহারা, সিসিটিভি নজরদারি, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা, জরুরি সেবা সংযোগ ও দর্শনার্থীদের সুশৃঙ্খল চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। তবে সরকারের একক তৎপরতা যথেষ্ট নয়, স্থানীয় কমিউনিটি, পূজা উদ্যাপন পরিষদ এবং সাধারণ নাগরিকদের সচেতন অংশগ্রহণ সমানভাবে অপরিহার্য। প্রতিটি মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।
দার্শনিকভাবে ভাবলে দুর্গাপূজা কেবল দেবীর আরাধনা নয়, এটি মানবসমাজের নৈতিক সংহতি ও সাম্প্রদায়িক ঐক্যের এক জীবন্ত প্রতীক। প্রতিমা ভাঙচুর বা অশুভ প্ররোচনার বিরুদ্ধে সক্রিয় তৎপরতা মানে কেবল আইন রক্ষা নয়; বরং সমাজের নৈতিক ক্ষেত্রও রক্ষা করা। নাগরিকের সচেতনতা ও রাষ্ট্রের সংহত তত্ত্বাবধানের সমন্বয় নিশ্চিত করলে উৎসবের মর্যাদা ও সামাজিক সম্প্রীতি অটুট থাকবে।
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রত্যেকের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব সুস্পষ্ট। সেটি হলো কেউ যেন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পবিত্রতা বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সূক্ষ্ম সূত্রকে বিপন্ন করতে না পারে। রাষ্ট্রের নীতি ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত কার্যক্রম যদি জনগণের সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার সঙ্গে মিলিত হয়, তবেই আমরা দেখতে পাব উৎসবমুখর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজার চিত্র। তখন এটি কেবল ধর্মীয় উৎসবের মহিমা বহন করবে না; বরং মানবসমাজের নৈতিক সংহতি, সাংস্কৃতিক ঐক্য ও সামাজিক সুষমতার স্থায়ী প্রতীক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হবে।