বিকাশ অ্যাপে এখন পাওয়া যাচ্ছে রেমিট্যান্স স্টেটমেন্ট
Published: 6th, August 2025 GMT
প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ব্যবস্থাপনা আরও সহজ ও স্বচ্ছ করতে বিকাশ অ্যাপে যুক্ত হয়েছে নতুন ‘রেমিট্যান্স স্টেটমেন্ট’ সেবা। এই সুবিধার মাধ্যমে গ্রাহকেরা যেকোনো সময় তাঁদের অ্যাকাউন্ট বা হিসাবে গ্রহণ করা রেমিট্যান্সের বিস্তারিত বিবরণ বা স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করতে পারবেন। এতে তাঁদের আর্থিক হিসাব রাখা সহজ, দ্রুত ও সুশৃঙ্খল হবে।
এই স্টেটমেন্ট তথা রেমিট্যান্স হিসাবের বিস্তারিত বিবরণ শুধু ব্যয় পরিকল্পনার জন্যই নয়, আয়কর পরিশোধের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজ করবে। প্রবাসীদের প্রিয়জনদের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে বিকাশ এই সেবা চালু করেছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ। এতে বলা হয়, গ্রাহকবান্ধব এই নতুন ফিচারটি বিকাশ অ্যাপের ‘রেমিট্যান্স’ আইকনের অধীন পাওয়া যাবে, যেখানে তিনটি আলাদা ট্যাব রয়েছে—দেশ অনুযায়ী অপারেটর, রেমিট্যান্স স্টেটমেন্ট ও রিসিট। এর মধ্যে রেমিট্যান্স স্টেটমেন্ট ট্যাবে ট্যাপ (ক্লিক) করে গ্রাহকেরা খুব সহজেই রেমিট্যান্সের বিস্তারিত বিবরণ (স্টেটমেন্ট) জানতে পারবেন।
স্টেটমেন্টের সময়সীমা নির্বাচনেও রয়েছে নমনীয়তা। ব্যবহারকারী চাইলে সর্বশেষ ৩০ দিন, ১৮০ দিন এবং সম্পূর্ণ কর-বছর অথবা নিজের পছন্দ অনুযায়ী দেওয়া তারিখের ভিত্তিতে রেমিট্যান্স স্টেটমেন্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। একজন গ্রাহক দিনে সর্বোচ্চ দুবার এবং মাসে সর্বোচ্চ পাঁচবার স্টেটমেন্ট রিকোয়েস্ট করতে পারবেন। রিকোয়েস্ট করার পর সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অ্যাপে নোটিফিকেশন চলে আসবে। তখন স্টেটমেন্টটি ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যাবে। গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্টেটমেন্টটি পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে। আর এই পুরো সেবাটি গ্রাহকেরা একেবারেই বিনামূল্যে পাবেন।
স্টেটমেন্টের ওপরের অংশে থাকবে গ্রহীতার নাম, বিকাশ নম্বর, গ্রহীতার ধরন, স্টেটমেন্টের সময়সীমা ও ইস্যুর তারিখ। নিচের অংশে দেখা যাবে মোট কতটি রেমিট্যান্স লেনদেন হয়েছে এবং সে অনুযায়ী মোট কত ডলার গ্রহণ করা হয়েছে।
এই স্টেটমেন্টে শুধু রেমিট্যান্সের মোট পরিমাণ ছাড়াও প্রতিটি লেনদেনের বিস্তারিত তথ্যও অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে থাকছে। অর্থাৎ অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের মতো রেমিট্যান্স গ্রহণের তারিখ ও সময়, পাঠানোর দেশ, সংশ্লিষ্ট সেটেলমেন্ট ব্যাংকের নাম, মানি ট্রান্সফার অপারেটরের (এমটিও) নাম এবং পাঠানো রেমিট্যান্সের বাংলাদেশি টাকায় সমপরিমাণ মূল্য স্পষ্টভাবে দেখানো হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসা সব রেমিট্যান্সেরই বিস্তারিত তারিখ অনুসারে স্টেটমেন্টে যুক্ত থাকবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিকাশ জানায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সকে সহজ, সুরক্ষিত ও কার্যকরভাবে প্রিয়জনের হাতে পৌঁছে দিতে বিকাশ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। প্রবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্স সবচেয়ে সহজে তাঁর প্রিয়জনের কাছে পৌঁছে দিতে ধারাবাহিকভাবে নানা সুবিধা যুক্ত করে চলেছে বিকাশ। দেশে থাকা পরিবারের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো এই রেমিট্যান্স বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করে দেশের অর্থনীতিকেও গতিশীল করছে।
বিকাশ জানায়, এখন পর্যন্ত দেশে থাকা প্রিয়জনদের ৪০ লাখের বেশি বিকাশ অ্যাকাউন্টে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বর্তমানে বিশ্বের ১৪০টির বেশি দেশ থেকে ১১০টি আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরের (এমটিও) মাধ্যমে বাংলাদেশের ২৫টি শীর্ষ বাণিজ্যিক ব্যাংকে রেমিট্যান্স সেটেলমেন্ট হয়ে দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে প্রাপকের বিকাশ অ্যাকাউন্টে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ম ট য ন স স ট টম ন ট প রব স দ র প স ট টম ন ট র গ র হক র প রব ন
এছাড়াও পড়ুন:
মেট্রোরেল চলাচলের সময় বাড়ছে, ট্রেন আসবে আরও ঘন ঘন
যাত্রীচাহিদা মেটাতে মেট্রোরেল রাত ১০টার পরও চলবে। সকালে চালু হবে আরও আগে; অর্থাৎ সকালে চালু ও রাতে বন্ধের সময় আধঘণ্টা করে বাড়বে। এ ছাড়া এখন দুই ট্রেনের মধ্যে বিরতি আরও দুই মিনিট কমে যাবে। এর অর্থ, ব্যস্ত সময়ে (পিক আওয়ারে) ৪ মিনিট ১৫ মিনিট পরপর ট্রেন পাওয়া যাবে। বর্তমানে ব্যস্ত সময়ে সর্বনিম্ন ছয় মিনিট পরপর ট্রেন চলাচল করে।
নতুন এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে সপ্তাহ দুই পর। নতুন ব্যবস্থা আয়ত্ত করতে শুক্রবার থেকে পরীক্ষামূলক চলাচল করা হবে। দুই সপ্তাহ পরীক্ষার পর আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন সময়সূচি মেনে মেট্রোরেল চলাচল করবে। তবে পরীক্ষামূলকভাবে চলার সময়ও সকাল ও রাতের বাড়তি সময়ে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে যাত্রী পরিবহন করা হবে; অর্থাৎ খালি ট্রেন চালানো হবে না।
ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। কোম্পানির সূত্র জানায়, নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হলে মেট্রোরেলের সক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহারের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। বর্তমানে মেট্রোরেলে দৈনিক যাত্রী যাতায়াত করে গড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার। এর মধ্যে গত ৬ আগস্ট সর্বোচ্চ যাত্রী পরিবহন হয়, ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭৪৬। নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হলে যাত্রীসংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়াবে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছে।
মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়ার সময় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দৈনিক পাঁচ লাখ যাত্রী পরিবহন করার কথা বলা হয়েছিল। মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত চালু হলে দৈনিক যাত্রীসংখ্যা ৬ লাখ ৭৭ হাজারে উন্নীত হওয়ার কথা।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীচাহিদা মেটাতে ট্রেনের সংখ্যা ও সময় বাড়ানোর চিন্তা অনেক দিন ধরেই ছিল, কিন্তু লোকবলের কারণে করা যাচ্ছিল না। এখন তারা প্রস্তুত। নতুন সূচিতে শিগগিরই যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল চলাচল করবে। এতে যাত্রীর সংখ্যা ও আয়—দুটিই বাড়বে। সাধারণ মানুষের ট্রেনের জন্য বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না। সড়কের ওপরও চাপ কমবে।
সম্ভাব্য নতুন সময়সূচিবর্তমানে সপ্তাহে (শনি থেকে বৃহস্পতিবার) উত্তরা থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়ে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে। দুই সপ্তাহ পর নতুন সূচিতে চলাচল শুরু হলে উত্তরা থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে। বর্তমানে উত্তরা থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টায়। নতুন সূচি অনুযায়ী, উত্তরা থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়বে রাত সাড়ে ৯টায়।
অন্যদিকে মতিঝিল থেকে সকালে প্রথম ট্রেন ছাড়ে সকাল সাড়ে ৭টায়। নতুন সূচিতে মতিঝিল থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে সকাল ৭টায়। এ ছাড়া রাতে মতিঝিল থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে। নতুন সূচি অনুসারে, মতিঝিল থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়বে রাত ১০টা ১০ মিনিটে। মতিঝিল থেকে ছাড়া সর্বশেষ ট্রেনটি এখন উত্তরা উত্তর স্টেশনে পৌঁছায় রাত ১০টার পর। এখন শেষ যাত্রী নামবে পৌনে ১১টার দিকে।
এ ছাড়া শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে মেট্রোরেলের চলাচল শুরু হয়। নতুন সূচিতে শুক্রবার বেলা আড়াইটায় মেট্রোরেল চলাচল শুরু হবে। রাতেও আধা ঘণ্টা চলাচলের সময় বাড়বে।
মেট্রোরেলের সময়সূচিতে ব্যস্ত সময় (পিক আওয়ার) এবং কম ব্যস্ত সময় (অফ পিক আওয়ার) কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এ ছাড়া শনিবার এবং অন্যান্য সরকারি বন্ধের দিনও পিক ও অফ পিক আওয়ারের সময়ের হেরফের আছে। তবে এখন সর্বনিম্ন ছয় মিনিট পর ট্রেন চলাচল করে। নতুন সূচি চালু হলে পিক আওয়ারে সর্বনিম্ন ৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ড পরপর ট্রেন চলাচল করবে। এর বাইরে ৮ ও ১০ মিনিটের ব্যবধানে যে সময় ট্রেন চলাচল করত, সেই সময়গুলোতেও দুই মিনিট করে কমে আসবে।
মেট্রোরেলের প্রকল্প নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, পিক আওয়ারে সর্বনিম্ন সাড়ে ৩ মিনিট পরপর মেট্রোরেল চলবে।
ট্রেনের সদ্ব্যবহার ও যাত্রীসুবিধা বাড়বেডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, মেট্রোরেলের লাইন-৬; অর্থাৎ উত্তরা থেকে মতিঝিল পথের জন্য ২৪ সেট ট্রেন রয়েছে। তবে সার্বক্ষণিক লাইনে চলাচল করে ১৩ সেট ট্রেন। তিন সেট ট্রেন বিশেষ প্রয়োজনে লাগতে পারে, এই বিবেচনায় প্রস্তুত রাখা হয়। লাইন ও সংকেত ব্যবস্থা পুরোপুরি ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করার জন্য সকালে একটি ট্রেন যাত্রী ছাড়াই চলে। বাকি সাত সেট ট্রেন অব্যবহৃত থাকে। নতুন সময়সূচি কার্যকর হলে ২০ সেট ট্রেন ব্যবহৃত হবে, এতে ট্রেন অলস পড়ে থাকা কমবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে দিনে ২৩৭ বার ট্রেন চলাচল (ট্রিপ) করে। নতুন সূচিতে প্রতিটি ট্রেনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান গড়ে দুই মিনিট করে কমে যাবে। এতে ট্রেন চলাচলের সংখ্যা আরও বাড়বে।
অব্যবহৃত মেট্রোরেলের সেটের ব্যবহার কীভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছিল ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। প্রথমে অব্যবহৃত ট্রেনের সেট থেকে দুটি কোচ এনে জোড়া দিয়ে চালানোর পরিকল্পনা করা হয়। বর্তমানে প্রতিটি সেটে ছয়টি কোচ রয়েছে। প্রকল্প নেওয়ার সময় দুই কোচ বাড়ানো যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কারিগরিভাবে দুরূহ এবং নতুন করে বাড়তি বিনিয়োগ করতে হবে। ফলে এই চিন্তা থেকে সরে আসে কর্তৃপক্ষ। এর বদলে ট্রেন চলাচলের সময় এবং দুই ট্রেনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য বাড়তি লোকবলের দরকার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে লোকবল নিয়োগ এবং তাঁদের প্রশিক্ষণও দিয়েছে।
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়। শুরুতে চলাচল করত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। পর্যায়ক্রমে স্টেশনের সংখ্যা বেড়েছে। মতিঝিল পর্যন্ত সব স্টেশনে যাত্রী ওঠা-নামা শুরু হয় ২০২৩ সালের শেষ দিনে। এখন কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণের কাজ চলছে।
২০১২ সালে অনুমোদনের সময় মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার কাছ থেকে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে।