ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ‘ফিলিস্তিনের পেলে’ নিহত
Published: 7th, August 2025 GMT
গাজা উপত্যকার রাফাহ অঞ্চলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারালেন ফিলিস্তিনের জাতীয় দলের সাবেক ফরোয়ার্ড ও কিংবদন্তি ফুটবলার সুলেইমান আল-ওবেইদ। ফুটবল মাঠে অসাধারণ নৈপুণ্যের জন্য যিনি ‘ফিলিস্তিনের পেলে’ নামে পরিচিত ছিলেন। সেই ৪১ বছর বয়সী এই তারকা বুধবার (৬ আগস্ট) মানবিক সহায়তার আশায় দাঁড়িয়ে থাকার সময় সরাসরি গুলির শিকার হন।
ফিলিস্তিনি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন নিশ্চিত করেছে এই দুঃসংবাদ। স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কা জানায়, আল-ওবেইদ ছিলেন পাঁচ সন্তানের জনক। তিনি গাজা অঞ্চলের অন্যতম প্রতিভাবান ফুটবলার হিসেবে দীর্ঘদিন খেলে গেছেন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে। শুরু করেছিলেন খাদামাত আল-শাতি ক্লাব থেকে, পরে খেলেছেন আল-আমারি ইয়ুথ সেন্টার ও গাজা স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে।
২০১৬ ও ২০১৭ সালে গাজার সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেন তিনি। ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মাঠে সক্রিয় ছিলেন এবং তার ক্যারিয়ারে গোল সংখ্যা ১০০-এরও বেশি। জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করেছিলেন ২০১০ সালে, ইয়েমেনের বিপক্ষে। এছাড়া ২০১২ এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ ও ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বেও জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
ডি পল-সুয়ারেজে কোয়ার্টার ফাইনালে মেসিহীন মায়ামি
এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে জয়ে শুরু বাংলাদেশের
ফিলিস্তিনি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলমান আগ্রাসনে এ পর্যন্ত অন্তত ৩২১ জন ক্রীড়াঙ্গনের সদস্য নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি, প্রশাসক ও বোর্ড কর্মকর্তারাও রয়েছেন।
আল-ওবেইদের নির্মম মৃত্যু বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ফুটবল কিংবদন্তি এরিক ক্যান্টনা সামাজিক মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, “আর কত দূর এই গণহত্যা চলতে থাকবে?” একইসঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে তার সমর্থনও জানিয়েছেন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় প্রতিদিনের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের মধ্যেও যারা এক সময় খেলার মাঠে জাতিকে গর্বিত করতেন, আজ তারাও অবরুদ্ধ মৃত্যুফাঁদে। বিশ্ব বিবেকের কাছে এই মৃত্যুগুলো যেন আর কোনো সংখ্যা না হয়ে ওঠে—এমনটাই প্রত্যাশা ফিলিস্তিনিদের।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলিম সভ্যতায় রসায়নের সোনালি যুগ
গোলাপজলের মিষ্টি সুবাস থেকে শুরু করে কেরোসিনের জ্বালানি শক্তি—মুসলিম সভ্যতার রসায়নবিদরা একটি সমৃদ্ধ রসায়নের জগত উপহার দিয়েছেন। নবম শতাব্দী থেকে তারা পাতন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবনকে আরও সুন্দর ও কার্যকর করেছেন। তাদের আবিষ্কার আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপন করেছে, যা আজও আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়।
এই নিবন্ধে জাবির ইবন হাইয়ান, আল-রাজি ও আল-কিন্দির মতো পথপ্রদর্শকদের হাত ধরে মুসলিম সভ্যতার রসায়নের সোনালি যুগের সন্ধান করা হয়েছে।
পাতনের প্রথম ফল ছিল গোলাপজল, যা ছিল খাবার, পানীয়, সুগন্ধি ও প্রসাধনীতে অপরিহার্য। আল-কিন্দি সুগন্ধির রসায়ন বিষয়ে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন, যাতে ছিল ১০৭টি ভিন্ন সুগন্ধির রেসিপি।পাতন প্রক্রিয়া: রসায়নের হৃৎপিণ্ডনবম শতকের মাঝামাঝি মুসলিম রসায়নবিদরা স্ফটিকায়ন, জারণ, বাষ্পীভবন, পরিশোধন ও ফিল্টারেশনের মতো প্রক্রিয়া সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। (১০০১ ইনভেনশনস: দি এন্ডিউরিং লিগ্যাসি অব মুসলিম সিভিলাইজেশন, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ৯০)
তাদের পরীক্ষাকে নির্ভুল করতে তারা সূক্ষ্ম দাঁড়িপাল্লা আবিষ্কার করেন, যা রাসায়নিক নমুনা ওজনের জন্য ব্যবহৃত হতো। এই পরীক্ষাগুলোর পাশাপাশি তারা নতুন তাত্ত্বিক ধারণা ও রাসায়নিক ধারণা প্রবর্তন করেন, যার কিছু কিছু টিকে ছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী। পাতন প্রক্রিয়া ছিল তাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান, যা তরল পদার্থকে ফুটিয়ে তার বিশুদ্ধ উপাদান আলাদা করার একটি শিল্প ছিল।
পাতনের প্রথম ফল ছিল গোলাপজল, যা ছিল খাবার, পানীয়, সুগন্ধি ও প্রসাধনীতে অপরিহার্য। আল-কিন্দি সুগন্ধির রসায়ন বিষয়ে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন, যাতে ছিল ১০৭টি ভিন্ন সুগন্ধির রেসিপি। (১০০১ ইনভেনশনস: দি এন্ডিউরিং লিগ্যাসি অব মুসলিম সিভিলাইজেশন, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ৯১)
এই প্রক্রিয়া আধুনিক সুগন্ধি শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
আরও পড়ুনমুসলিম সমাজকে বিজ্ঞানমুখী করার উপায়০২ আগস্ট ২০২৫জাবির ইবন হাইয়ান: রসায়নের পথিকৃৎজাবির ইবন হাইয়ান (৭২২-৮১৫), পশ্চিমে গেবার নামে পরিচিত, ছিলেন রসায়নের জনক। কুফায় একজন ওষুধ ব্যবসায়ীর পুত্র হিসেবে তিনি পরিশোধন, স্ফটিকায়ন, পাতন, জারণ ও ফিল্টারেশনের মতো প্রক্রিয়াগুলো উন্নত করেন। (আর. আরনালদেজ-এল. ম্যাসিগনন, ইন অ্যানসিয়েন্ট অ্যান্ড মেডিয়েভাল সায়েন্স, লন্ডন: থেমস অ্যান্ড হাডসন: ১৯৬৩, পৃ. ৪১৩)
তিনি এমন কাগজ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন যা পুড়ত না এবং এমন কালি যা অন্ধকারে পড়া যায়।তিনি অ্যালেম্বিক স্টিল ব্যবহার করে পাতন প্রক্রিয়া পরিচালনা করতেন, যা তরলকে ফুটিয়ে বিশুদ্ধ উপাদান সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হতো। তিনি এমন কাগজ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন যা পুড়ত না এবং এমন কালি যা অন্ধকারে পড়া যায়।
জাবির পদার্থের শ্রেণিবিভাগ ও রাসায়নিক জ্ঞান সংগঠনের নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো পরবর্তী শতাব্দীতে ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয় এবং ১৭শ শতাব্দী পর্যন্ত পুনঃপ্রকাশিত হয়। (১০০১ ইনভেনশনস: দি এন্ডিউরিং লিগ্যাসি অব মুসলিম সিভিলাইজেশন, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ৯৩)
তাঁর কাজ আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মদ পাতন করে বিশুদ্ধ অ্যালকোহল তৈরি