পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে নরেন্দ্র মোদির ব্যর্থতা দেখছে কংগ্রেস
Published: 19th, September 2025 GMT
কূটনীতিতে ব্যক্তিগত রসায়নই যে শেষ কথা নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তা ফের নতুন করে মনে করিয়ে দিল কংগ্রেস। সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তির পর সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে কংগ্রেস বলেছে, কূটনৈতিক দিক থেকে ওই চুক্তি আরও এক বড় ধাক্কা।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বৃহস্পতিবার ওই চুক্তি প্রসঙ্গে বুঝিয়ে দেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার ব্যক্তিগত রসায়নের যে উল্লেখ করেন, কূটনীতিতে তা অর্থহীন। ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে এক পোস্টে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, পেহেলগামে যেদিন হামলা হয়, প্রধানমন্ত্রী সেদিন সৌদি আরবে ছিলেন। পাকিস্তানের সঙ্গে সেই সৌদি আরব প্রতিরক্ষা চুক্তি সেরে ফেলল।
পোস্টে জয়রাম আরও উল্লেখ করেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’–এর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়ন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি ঘটা করে চীন সফর করলেন। তার পরপরই চীনা প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং বেইজিংয়ের গোপন সামরিক ভবনের দরজা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির জন্য খুলে দিলেন।
কংগ্রেস নেতা উল্লেখ করেন, প্রতিটি ঘটনাই ভারতের নিরাপত্তার জন্য গভীর উদ্বেগের। এসব ঘটনা প্রমাণ করে, প্রধানমন্ত্রী মোদির তথাকথিত ব্যক্তিগত রসায়নের কূটনীতি কতটা ব্যর্থ।
বস্তুত, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে গত বুধবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে যে কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি সই হয়, তা ভারতের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। কারণ, চুক্তিতে বলা হয়েছে, দুই দেশের কেউ আক্রান্ত হলে তা দুই দেশের ওপর ‘আগ্রাসন’ হিসেবে বিবেচিত হবে।
তবে ওই চুক্তি নিয়ে ভারত খুবই সতর্কভাবে পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিক্রিয়াও যথেষ্ট সংযত। আগ বাড়িয়ে কোনো বিরূপ মন্তব্য না করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জাতীয় নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর এই চুক্তির কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, ভারত তা খতিয়ে দেখছে। সরকার দেশের নিরাপত্তা ও স্বার্থরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্ক বহু পুরোনো। ১৯৬০–এর দশক থেকেই সৌদি সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাকিস্তানি বাহিনী সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। ভারত–সৌদি সম্পর্কও মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দৃঢ় হতে শুরু করেছে। ২০০৬ সালে সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল্লাহ ভারত সফরে এসেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সৌদি আরব সফর করেন ২০১০ সালে। ২০১৬ সালে রিয়াদে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিন বছর পর ২০১৯ সালে পাল্টা ভারতে আসেন যুবরাজ মহম্মদ বিন সালমান। মোদিও সেই বছর দ্বিতীয়বার সৌদি সফরে যান। যুবরাজও শেষবার ভারত সফরে আসেন ২০২৩ সালে। পেহেলগামে হামলার সময়েও মোদি ছিলেন সৌদি আরবে।
দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক যখন জোরদার এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ বাতিল না করে ভারত যখন তা স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে, তখন চুক্তির জন্য এই সময়টা বেছে নেওয়া ভারতকে ভাবাচ্ছে। চুক্তি সইয়ের সময় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরও উপস্থিত ছিলেন।
ভারত মনে করছে, এই সময়ে এমন চুক্তি সইয়ের একটা সম্ভাব্য কারণ হয়তো ইসরায়েলের আগ্রাসী মনোভাব। মাত্র কয়েক দিন আগে ৯ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের প্রতিবেশী কাতারের রাজধানী দোহায় আকাশপথে আক্রমণ চালিয়েছিল ইসরায়েল। যদিও ইসরায়েলের দাবি, সেই হানার লক্ষ্য ছিল হামাস নেতৃত্ব।
আরও পড়ুনসৌদি আরব-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে কী বলছে ভারত২২ ঘণ্টা আগেইসরায়েলের ওই হামলাকে আরব দেশগুলো ভালোভাবে নেয়নি। আরব লিগ ও ওআইসির বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল। তারপরেই এই চুক্তি। সৌদি দৃষ্টিতে চুক্তির মুল লক্ষ্য ইসরায়েল মনে করা হলেও পাকিস্তানের দিক থেকে ওই চুক্তি ভারতের ভবিষ্যৎ আক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ মনে করা হচ্ছে। সেটাই ভারতের চিন্তার কারণ।
ভারতের কূটনৈতিক সূত্র অনুযায়ী, চিন্তা বা দুশ্চিন্তা যা–ই হোক না কেন, এমন কোনো মন্তব্য করা হবে না, যাতে সৌদি–ভারত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে চিড় ধরে।
ভারত ও সৌদি আরবের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ গত অর্থবছরে ছিল প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। সৌদি আরবে ২৫ লাখ ভারতীয় কাজ করেন। ২০২২–২৩ অর্থবছরে সৌদি আরবে কর্মরত ভারতীয়রা ৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) পাঠিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনসৌদি আরব-পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা চুক্তি আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে৮ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ওই চ ক ত ইসর য় ল ক টন ত আরব র
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ রাজনীতিতে অনৈক্য ও বিভক্তি বাড়িয়েছে: রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর
এত দিন ধরে আলোচনা ও দলগুলোর স্বাক্ষরের পরেও কেন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য অপ্রয়োজনীয় প্রস্তাব এল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উপস্থাপিত বিষয়গুলোর বেশ কটির বিষয়ে ন্যূনতম ঐকমত্য হয়নি। তারা সেগুলোর প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাও হাজির করেন না। তাদের সুপারিশ রাজনীতিতে অনৈক্য ও বিভক্তি বাড়িয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি মিলনায়তনে ‘প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫: নাগরিক প্রত্যাশা ও জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এ কথা বলেন। গোলটেবিলের আয়োজন করে ‘নাগরিক কোয়ালিশন’ নামের একটি সংগঠন। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, রাজনীতিতে অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নিজেরা কতটা সংস্কারপন্থী সেটা জাহির করছে। সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে, নিজেদের মধ্যে আলাপ–আলোচনা করে একমত হতে আহ্বান জানিয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে। অর্থাৎ রাজনৈতিক বিষয় রাজনীতিগতভাবে মীমাংসা না করে, অন্যভাবে মীমাংসা করার একটা বিষয়ও এর মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, কমিশন দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু এই যে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নেই। এটি গণতন্ত্রের প্রতি অবজ্ঞা। গণভোট বিষয়ে তিনি বলেন, প্রস্তাব এতটাই জটিল যে সাধারণ ভোটারের পক্ষে এগুলো বোঝা কঠিন হবে।
‘চাপিয়ে দেওয়াটা গণতান্ত্রিক হবে না’
বৈঠকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার ও ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর ‘কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে’ জটিলতা সৃষ্টি করেছে। এতে এমনটি প্রমাণ করার চেষ্টা হচ্ছে যে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হতে পারে না। তিনি মনে করেন, যাঁরা দেশ চালাবেন, সেই রাজনৈতিক দলগুলোরই উদ্যোগ নিয়ে একটি সমাধানের জায়গায় পৌঁছানো দরকার।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ঐকমত্য কমিশন কেন ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ রাখল, তা এখনো বোধগম্য নয়। ব্যাখ্যা না দিয়ে কিছু চাপিয়ে দেওয়াটা গণতান্ত্রিক হবে না।
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর