পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ধর্ষণের শিকার এক শিশুর স্বজনদের সঙ্গে এক চিকিৎসকের অশোভন আচরণের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ওই চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছেন পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান। আগামীকাল শনিবারের মধ্যে তাঁকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁকে দায়িত্ব থেকে মৌখিকভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান।

অভিযুক্ত আবুল কাশেম পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও)। গতকাল বেলা পৌনে একটার দিকে হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ওই ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

ছড়িয়ে পড়া ৩ মিনিট ২২ সেকেন্ডের ভিডিওতে চিকিৎসককে ভুক্তভোগী শিশুটির স্বজনদের বলতে শোনা যায়, ‘হাসপাতালডাক তোমরা চিড়িয়াখানা পাইছ, চিড়িয়াখানার মতো ভর্তি হবার আইসো, কোনঠে সাংবাদিক আইসো, দেউনিয়া-মদ্দিনা আইসো, এলাকাবাসী আইসো, পুরুষ-মহিলা আইসো, ছোট-বড় আইসো, এইটা হরিবোল, হরিবোল দেওয়ার জায়গা নাকি? এই ছুটি বাড়ি যাও, আইজকে বিস্তিবার (বৃহস্পতিবার) আর কোথায় রাখব? তোমরা মামলা করলে করো, না করলে…(অশ্লীল ভাষায় কিছু বলেন)।’

নিচু স্বরে কথা বলায় শিশুটির বাবাকে একপর্যায়ে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘নাকের তলোত কথা কহেচিত, একদম নাক ফাটায় দিম। চুরি করিস নাকি রে, নাকের তলোত কথা কহেছিত।’ এ সময় চিকিৎসক ডান হাত দেখিয়ে বলেন, ‘নাকের তল ফাটায় দিম, থতমা উল্টায় দিম। মুই চিকিৎসাও করু, মাইরও দিবার পারু। বুঝো নাই, কিছু কথা ইশারায় বুঝে নিতে হয়। বায়োস্কোপ দেখানোর জন্য আইসছে আর জনগণ বায়োস্কোপ দেখতেছে। মানসম্মান তোমাদের কিচ্ছু নাইরে।’

এ সময় ওই চিকিৎসককে বলতে শোনা যায়, ‘আসার দিনে সাথে সাথে বলছি না রে, এই বলছি না? মানুষের সহ্য ক্ষমতা, ধৈর্য ক্ষমতা সবকিছুর একটা মাত্রা থাকে। মাত্রা পার হয়ে গেলে আর কিছু করার আছে? মোর মাত্রা পার। ছুটির কাগজ লেখে দিম, কাগজটা লে বাড়িত যাব যায়, থানাত যায় পড়ে রহিব।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সোমবার দেবীগঞ্জ উপজেলায় ধর্ষণের শিকার পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে রোগী দেখতে যান আরএমও আবুল কাশেম। তখন তিনি ভুক্তভোগী শিশুটিকে দেখে মামলা করতে বলা হয়েছিল, সেটা করা হয়েছে কি না শিশুটির বাবার কাছে জানতে চান। মামলা হয়েছে জানার পর তিনি মামলার এজাহার দেখতে চান। তখন শিশুটির বাবা কাগজ আনা হয়নি জানালে ওই চিকিৎসক রেগে যান। তখন উত্তেজিত হয়ে তিনি শিশুটির বাবা ও স্বজনদের গালাগাল করেন। পরে তিনি শিশুটিকে ছাড়পত্র দিয়ে দেন।

শিশুটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওয়ার্ডে এসে ডাক্তার বলেন, “তোমাদের যে মামলা করতে বলেছিলাম, করোনি কেন?” মামলা করেছি জানালে তিনি এজাহার দেখতে চান। পরে আমি বলি যে এজাহারের নকল তো থানা থেকে এখনো দেয়নি, আজ দেবে। এরপরেই তিনি রেগে গিয়ে গালিগালাজ শুরু করেন।’

এ বিষয়ে কথা বলতে আরএমও আবুল কাশেমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি খুবই বিব্রতকর, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত। গতকাল রাতে ভিডিওটি দেখার পরপরই আরএমও আবুল কাশেমকে শোকজ নোটিশ করা হয়েছে। শনিবারের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে আরএমওর দায়িত্ব থেকে মৌখিকভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব পেলেই এ বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিত প্রতিবেদন পাঠানো হবে। তিনি আশা করছেন, পঞ্চগড়বাসী ন্যায়বিচার পাবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বজনদ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘মোটরসাইকেল আমার ছেলেটার জীবন নিল’

কয়েক মাস আগে একটি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে হোম ডেলিভারির কাজ নেন তরুণ প্রিয়ন্ত দাস (২২)। প্রতিষ্ঠানের শর্ত ছিল, এ কাজের জন্য তাঁর একটি মোটরসাইকেল লাগবে। ওই সময় ছেলেকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেন বাবা। সেই মোটরসাইকেলে করে এক সহকর্মীর বাড়িতে বেড়ানো শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।

গতকাল বুধবার রাতে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের দক্ষিণ সাগরনাল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রিয়ন্ত দাস পাশের বড়লেখা উপজেলার পানিসাওয়া গ্রামের প্রদীপ দাসের ছেলে। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা সদরে একটি কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করতেন তিনি

পুলিশ ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার প্রিয়ন্তের ছুটি ছিল। এ সুযোগে বন্ধু শোভন দাসকে নিয়ে নিজের মোটরসাইকেলে জুড়ীর ফুলতলা চা-বাগানে এক সহকর্মীর বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখান থেকে ফেরার সময় রাত আটটার দিকে ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেলটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে দুই আরোহী আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে প্রিয়ন্ত মারা যান। অবস্থার অবনতি ঘটায় শোভনকে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রিয়ন্তর বাবা প্রদীপ দাস কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলেটা (প্রিয়ন্ত) কলেজে লেখাপড়া করত। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার আগে পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে চাকরি খুঁজছিল। আড়াই-তিন মাস আগে বলল, একটা চাকরি মিলেছে, মোটরসাইকেল লাগব। কিনি দিলাম। এই মোটরসাইকেল আমার ছেলেটার জীবন নিল।’

জুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) উস্তার মিয়া বলেন, স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রাতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই প্রিয়ন্তের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘মোটরসাইকেল আমার ছেলেটার জীবন নিল’
  • মাদারীপুরে পুকুরে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
  • সিলেটে রোগীর মৃত্যুর জেরে হাসপাতালে হামলা-ভাঙচুর, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া