‘মাজারের অপরাধডা কী, তাঁরায় মাজারে হামলা করলো ক্যারে’
Published: 20th, September 2025 GMT
কুমিল্লা নগর থেকে হোমনা উপজেলার আসাদপুর গ্রামটির দূরত্ব প্রায় ৭৩ কিলোমিটার। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামটিতে ঢুকতেই চোখে পড়ল থমথমে অবস্থা। চারদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা। পুলিশের পাশাপাশি একটু পরপরই সেনাবাহিনীর টহল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.
মাজারগুলোর ভক্তদের ভাষ্য, মহানবী (সা.)-কে নিয়ে মহসিন (৩৫) নামের যে যুবক কটূক্তিমূলক পোস্ট করেছেন, এরই মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। মামলা হওয়ার পর মহসিন এখন কারাগারে আছেন। এরপরও একই সঙ্গে চারটি মাজারে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় হতভম্ব তাঁরা।
গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে হামলার শিকার ওই মাজার চারটি হলো—আসাদপুর গ্রামের আলেক শাহের বাড়িতে অবস্থিত তাঁর বাবা কফিল উদ্দিন শাহের মাজার, একই গ্রামের আবদু শাহের মাজার, কালাই (কালু) শাহের মাজার ও হাওয়ালি শাহের মাজার। এর মধ্যে হাওয়া বেগম নামে এক নারী ‘হাওয়ালি শাহ’ মাজার পরিচালনা করেন। তবে সেখানে কোনো ব্যক্তি সমাহিত নেই, ওই বাড়িতে মাজারসদৃশ স্থাপনা ও ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে।
কফিল উদ্দিন শাহের মাজারে হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মনির হোসেন নামের এক ভক্ত। তিনি উপজেলার ফতেরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘১৫ বছর ধইরা এই মাজারের মুরিদ আমি। এইখানে খারাপ কিছু হয় না। আমরা জানতাম চাই, মাজারের অপরাধডা কী? তাঁরায় মাজারে হামলা করলো ক্যারে?’
১৫ বছর ধইরা এই মাজারের মুরিদ আমি। এইখানে খারাপ কিছু হয় না। আমরা জানতাম চাই, মাজারের অপরাধডা কী? তাঁরায় মাজারে হামলা করলো ক্যারে?মনির হোসেন, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কফিল উদ্দিন শাহের মাজারের ভক্তপুলিশ ও স্থানীয় লোকজন বলেন, মহসিনকে গত বুধবার দুপুরে গ্রেপ্তারের পর গত বৃহস্পতিবার সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমেই মহসিনদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে কফিল উদ্দিন শাহের মাজার ভাঙচুর করা হয়। পরে তাঁদের একটি টিনশেড ও দুটি টিনের বসতঘরে ভাঙচুর শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ঘরে থাকা সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে বাকি তিনটি মাজারে হামলা করা হয়।
সরেজমিনে যা দেখা গেলগতকাল শুক্রবার দুপুরে কফিল উদ্দিন শাহের মাজারের সামনে যেতেই চোখে পড়ল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা। মাজার ও বাড়ির সামনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থান। একটু পরপরই সামনের সড়কে টহল দিচ্ছেন পুলিশ, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা।
কফিল উদ্দিন শাহের মাজার ভাঙচুরের পাশাপাশি তাঁর ছেলে, নাতি ও ভক্তদের থাকার তিনটি ঘর হামলার সময় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে মাজারটিতে ঢোকার আগে দূর থেকে ভেসে আসছিল পোড়া গন্ধ। একটু কাছে যেতেই দেখা গেল, পোড়া টিনশেড ঘরটি থেকে তখনো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ভক্তরা ভাঙচুর হওয়া মাজার ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া ঘরগুলো দেখে হতভম্ব।
ঘটনার পর থেকেই কফিল উদ্দিন শাহের ছেলে আলেক শাহসহ পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতির কারণে বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন ভক্তরা। বাড়িতে খোলা আকাশের নিচে রান্না বসিয়েছিলেন আলেক শাহের একমাত্র মেয়ে কানন বেগম। মাজারের নারী ভক্তরা তাঁকে সহায়তা করছিলেন।
কফিল উদ্দিন শাহের মাজার ভাঙচুরের পাশাপাশি তাঁর ছেলে, নাতি ও ভক্তদের থাকার তিনটি ঘর হামলার সময় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লার হোমনা উপজেলার আসাদপুর গ্রামেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মহস ন
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকাসহ সারা দেশে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২৯
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ৮ দিনে ২৯ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, ম্যাগাজিন, দেশীয় অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ১১ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদাতিক ডিভিশন ও স্বতন্ত্র ব্রিগেডের অধীন ইউনিটগুলো ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অবৈধ অস্ত্রধারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোর, প্রতারক, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, মাদকাসক্তসহ ২৯ জনকে আটক করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, আটক হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৫টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ১টি ম্যাগাজিন, ১০টি গুলি, দেশীয় অস্ত্র, মাদক, জাল পরিচয়পত্র, সামরিক বাহিনীর ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার পরিচয়পত্র, জাল ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, রুপা, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন চোরাই মালামাল ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
আটক ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ ও পরবর্তী আইনি কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, দেশব্যাপী জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত টহল ও নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত রয়েছে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সাধারণ মানুষকে যেকোনো সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কাছের সেনা ক্যাম্পে তথ্য দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।