চুয়াডাঙ্গায় আবাসিক হোটেল থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার
Published: 20th, September 2025 GMT
চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি আবাসিক হোটেল থেকে মাহবুবুর রহমান ওরফে মাসুম (৩৯) নামের একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে ‘চুয়াডাঙ্গা আবাসিক হোটেল’ থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মাহবুবুর রহমান শহরের পলাশপাড়ার মজিবর রহমানের ছেলে। তিনি ঢাকার অদূরে সাভারের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। বন্ধুদের সঙ্গে অতিরিক্ত মদ পান করে অসুস্থ হওয়ার পর তিনি মারা যান বলে পুলিশের ভাষ্য।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
নিহতের চাচা লাবলু রহমান বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে মাহবুবুর বিবাহিত। তাঁর আট ও ছয় বছর বয়সী দুটি ছেলে আছে। ঢাকার সাভারে একটি কারখানায় চাকরির সুবাদে বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সেখানে বসবাস করেন। চুয়াডাঙ্গা শহরের পলাশপাড়ায় নিজস্ব বাড়িটি তালাবদ্ধ। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গায় এলেও আমাদের জানা ছিল না। সকালে খবর পেয়ে হোটেলে গিয়ে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কারাগারে ও বিদেশে ছিলেন আসামিরা, তবু ‘মোবাইলের আলোতে চিনতে’ পেরেছেন বাদী এনসিপি নেতা
রংপুরের পীরগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক উইংয়ের এক কেন্দ্রীয় সংগঠকের করা হত্যাচেষ্টার মামলাকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
মামলার কয়েকজন আসামি ঘটনার দিন কারাগারে ছিলেন, একজন ছিলেন বিদেশে। তাঁদের অভিযোগ, হয়রানি ও মামলা বাণিজ্যের জন্যই তাঁদের আসামি করা হয়েছে। আর পুলিশ বলছে, বাদীর তথ্যের ভিত্তিতেই এজাহার হয়েছে।
পুলিশ, আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ আগস্ট পীরগঞ্জ থানায় মামলা করেন মিঠিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা হাফিজুর সরকার। তিনি এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় সংগঠক এবং রংপুর বিভাগীয় সার্চ কমিটির প্রধান বলে এজাহারে উল্লেখ করেন। মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতার নাম এসেছে।
এজাহারে বলা হয়, গত ৬ জুলাই রাত ১১টার দিকে শহর থেকে ভ্যানে বাড়ি ফেরার পথে কুতুবপুর মৌজার পাল্লার পাতা এলাকায় হামলার শিকার হন হাফিজুর। তিনি উল্লেখ করেন, আগে থেকে ওত পেতে থাকা আসামিরা ভ্যান থামিয়ে গালিগালাজ করেন। তখন ভ্যান থেকে নেমে আসামিদের ‘মোবাইল ফোনের আলোতে চিনতে পারিয়া’ তাঁদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করেন। এরপর ১ নম্বর আসামি তাজিমুল ইসলামের নির্দেশে আসামিরা লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে তাঁকে গুরুতর জখম করেন।
হাফিজুর আরও দাবি করেন, এর আগের বছর ৪ আগস্ট মহাসড়কে অনুষ্ঠিত এক দফার আন্দোলনকালে একই আসামিরা তাঁর ওপর হামলা চালায়, যাতে ২০ থেকে ৩০ জন আহত হন।
কারাগারে ছিলেন দুই আসামিমামলায় উল্লেখিত ১ নম্বর আসামি তাজিমুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র। ৬ নম্বর আসামি শহিদুল ইসলাম ওরফে পিন্টু জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ২৭ নম্বর আসামি সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মণ্ডল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলায় উল্লেখিত ঘটনার সময় নূর মোহাম্মদ মণ্ডল ও শহিদুল ইসলাম কারাগারে ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন ও জেলা পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম।
মো. মোকাম্মেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শহিদুল ইসলাম ১৬ জুন থেকে কারাগারে আছেন। নূর মোহাম্মদ মণ্ডল দুর্নীতি দমন আইনের মামলায় ১৯ জুন কারাগারে যান। ১৩ জুলাই তিনি জামিন পান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী হাফিজুর সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ৬ জুলাই তাঁর ওপর হত্যাচেষ্টা হয়েছে। তবে তিনি মামলার ঘটনায় গত বছরের ৪ আগস্টের ঘটনাও তুলে ধরেছেন। তাঁর ভাষ্য, তখন কেউ জেলে ছিলেন না। হুকুমদাতা হিসেবে যেকোনো জায়গা থেকে হুকুম দিতে পারেন।
বিদেশে থেকেও আসামিমামলার ৫ নম্বর আসামি সিরাজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ব্যবসায়ী। তিনি মামলায় উল্লেখিত ঘটনার সময় থাইল্যান্ডে ছিলেন। সিরাজুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ৪ জুলাই দিবাগত রাত তিনটার সময় থাইল্যান্ডে যাই, দেশে ফিরি ২০ জুলাই। তাহলে আমাকে “মোবাইলের আলোতে” দেখল কীভাবে? মামলা দিয়ে বাণিজ্য করতেই আমার নাম দিয়েছে।’ তিনি জানান, থানায় লিখিতভাবে তাঁর বিদেশে থাকার প্রমাণ দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এই মামলায় স্থানীয় কওমি মাদ্রাসার দুজন হাফেজকে আসামি করা হয়েছে, যাঁরা ওই দিন (৬ জুলাই) পবিত্র ওমরাহ পালনে যেতে ঢাকায় এজেন্সির কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। মামলায় আসামি হিসেবে তৈরি পোশাকশিল্পের একজন ব্যবসায়ী ও একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে থাকছেন।
এ বিষয়ে হাফিজুর বলেন, ‘আমি শুনতে পারছি, আরও একজন (আসামি) নাকি হজে ছিল। এটার ব্যাখ্যা এ মুহূর্তে আমি বলতে পারব না। যে উকিলের কাছ থেকে এজাহার করেছি, ওনার কাছ থেকে শুনে আপনাকে ব্যাখ্যা দিতে পারব।’
বড় দরগাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাফিয়া আক্তার অভিযোগ করেন, মামলায় চার ইউপি চেয়ারম্যানকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচগাছি ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু মিয়াকে মামলার দিনই গ্রেপ্তার করা হয়। মাফিয়া আক্তারের দাবি, মামলা থেকে নাম বাদ দিতে টাকা দাবি করেছে বাদীপক্ষের লোকজন, তবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। অবশ্য হাফিজুরের দাবি, তিনি কোনো মামলা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নন।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় দুটি ঘটনার উল্লেখ আছে। তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন। তদন্ত শেষ হলে আসামিদের বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে।