আড়াইহাজারে ৭০ বছর ধরে বেদখল হওয়া ২৩ একর জমি উদ্ধার করলেন ডিসি
Published: 20th, September 2025 GMT
আড়াইহাজারে ৭০ বছর ধরে বেদখল হওয়া ৬০ কোটি টাকা মূল্যমানের ২৩ একর জমি জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার হস্তক্ষেপে উদ্ধার হয়েছে। জমি দখলকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রানহানীর আশঙ্কা দেখা দিলে জেলা প্রশাসক এ জমি উদ্ধার ও অনাকাঙ্খিত সৃষ্ট পরিস্থিত শান্ত করতে নানা উদ্যোগ নেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার, কানুনগো ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর প্রতিবেদন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সুপারিশ যাচাইয়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ অনুযায়ী জমিটি খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করেছেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম। জমি উদ্ধারের পর সেখানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃষ্টিনন্দন ইকোপার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে বেদখলদারদের কাছ থেকে জমি উদ্ধার ও ওই জমিতে দৃষ্টিনন্দন ইকোপার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়ায় পুরো এলাকায় ফিরে আসে স্বস্তি। জেলা প্রশাসকের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানাগেছে, আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দী ফেরিঘাট সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের পাশে প্রায় ২৩ একর জমি ৭০ বছর ধরে বেদখল অবস্থায় ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের মালিকরা ভারতে চলে গেলে এ জমি অব্যবস্থাপনার সুযোগে স্থানীয় শতাধিক পরিবার চাষাবাদ শুরু করে।
২০২০ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর লোকজন কৃষকদের কাছ থেকে জমি দখলে নিয়ে অবৈধ বালুর ব্যবসা শুরু করে। পরে ৫ আগস্ট বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও জমি দখলে যায়, ফলে এলাকায় ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রানহানীর আশঙ্কা দেখা দেয়।
এমন খবর পাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা কঠোর নির্দেশ দেন আড়াইহাজার উপজেলা প্রশাসনকে, যেন এক ইঞ্চি জমিও আর বেদখল না হয়। জমিটি মালিকবিহীন হিসেবে খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেন তিনি।
আড়াইহাজার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নঈম উদ্দীন বলেন, সব দাবিদারকে কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল। গণবিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরে শুনানিতে যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, সবাই ভুয়া মালিক। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রতিবেদন আকারে দাখিল করেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস কে মো: মামুনুর রশীদ দ্রুত এ সংক্রান্ত ফাইল জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান। পরে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মঙ্গলবার (সেপ্টেম্বর ১৬) নথিতে স্বাক্ষর করে জমিটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার আদেশ দেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিয়া বলেন, এই জমিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি দৃষ্টিনন্দন ইকোপার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে ভবিষ্যতে জমিটি আর বেদখল হবে না। পাশাপাশি স্থানীয়রা পর্যটন সুবিধা থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।
স্থানীয় বিশনন্দী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো.
কিন্তু ২০২০ সালে সাবেক এমপি নজরুল ইসলামের লোকজন আমাদের কাছ থেকে জমি বেদখল করে নেয়। সরকার যদি ইকোপার্ক করে, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। শুধু চাই, আর যেন প্রভাবশালীরা দখল করতে না পারে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ জ হ দ ল ইসল ম ম উদ ধ র উপজ ল ব দখল
এছাড়াও পড়ুন:
“শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, ইন্ধন থাকতে পারে তৃতীয় পক্ষের”
নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের চাষাড়া ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সড়কে আজ বুধবার ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে যা ঘটেছে তা উদ্বেগজনক। স্বেচ্ছায় সড়কে শৃংখলার দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটো-ইজিবাইক চালকদের সংঘবদ্ধ হিংস্র হামলা প্রমান করে এটা পূর্ব পরিকল্পিত।
কিছু কিছু অটো চালক তাদের গাড়ির সিটের নিচে করে লাঠি ও লোহার রড নিয়ে এসেছে। হামলার পরও প্রকাশ্যে একাধিক শিক্ষার্থীকে গণধোলাই দিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে অটো চালকরা। প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রী ও পথচারীদের তথ্যমতে, অনেক অটো চালককে মনে হয়েছে কিশোরগ্যাং সন্ত্রাসী, নেশাখোরের মতো। তারা অন্যদের চেয়ে বেশি মারমুখী ছিল।
অটো চালকদের কেউ কেউ থামানোর চেষ্টা করলেও আরেকটি পক্ষের হিংস্রতা দেখে মনে হচ্ছিল তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন থাকতে পারে এই ঘটনায়।
হামলার পর উল্টো অটো চালকরা নিজেদের উপর হামলার অভিযোগ তুলে দীর্ঘ দুই ঘন্টা নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোড ব্লক করে রাখে। এতে করে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে হাজার হাজার যাত্রী সাধারণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপর হামলা হলো, সড়ক বন্ধ করা হলো, রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ ডানপন্থী-বামপন্থী রাজনৈতিকরা। নিশ্চুপ অতি বিপ্লবীরাও।
মজার বিষয় হলো-স্বেচ্ছাশ্রমে রৌদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে সড়কে শৃংখলা ফেরাতে শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব পালন হয়তো কারো কারো কাছে পছন্দ হচ্ছিলো না। কারণ, চাষাড়ায় অটো ঢুকতে দেয়াটাই ছিল অটো চালকদের দাবি। সেখান পর্যন্ত গেলে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া ও আয় বেশী হয়। এটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাঁদাবাজরাও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।
এই চাঁদাবাজ ও অটো বাণিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছে কতিপয় অসাধু ট্রাফিক পুলিশ, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, কথিত সাংবাদিক ও মাস্তানদের সমন্বয়ে একটি চক্র। এই চক্রের কারণে কখনোই অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটো রিকসা, ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করা যায়নি। হয়তো যাবেও না।
শিক্ষার্থীদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
লেখক -
বিল্লাল হোসেন রবিন
সহসভাপতি
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব