রাবিতে পোষ্য কোটা পুনর্বহাল: জোহায় অনশন, জুবেরীতে অবস্থান শিক্ষার
Published: 20th, September 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শর্তসাপেক্ষে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আমরণ অনশন করছে কয়েকজন শিক্ষার্থী।
অপরদিকে, পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে শিক্ষকদের হাতাহাতির ঘটনায় জুবেরী ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীদের অপর একটি অংশ।
আরো পড়ুন:
সুনামগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষ, নিহত ১
গোপালগঞ্জে সালিশে ২ গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ২০
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জোহা চত্বরে শুরু হওয়া এ অনশন এখনো অব্যহত আছে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাদের অনশন করতে দেখা যায়। এর মধ্যে অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পরেন দুজন শিক্ষার্থী। তারা হলেন সমাজকর্ম বিভাগের ২৪-২৫ সেশনের ইস্পাহানি ও আরবি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রমজানুল মোবারক।
এর আগে, শুক্রবার বিকেল ৫টায় প্রথম এককভাবে অনশনে বসেন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুল ইসলাম। এরপর তার সাথে একত্বতা পোষণ করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী সজিবুর রহমান বলেন, “আমরা গতকাল রাত থেকে বসে আছি, রোদে পুড়ছি, বৃষ্টিতে ভিজছি, মশার কামড় খাচ্ছি। আমাদের শরীরের অবস্থা কি? তাও কেও আমাদের দেখতে আসেনি। অনেকে স্লোগান দিয়েছিল রক্ত লাগলে রক্ত নে, পোষ্য কোটার কবর দে। তাদের রক্ত দেওয়া শেষ। আমাদের এখনো রক্ত দেওয়া শেষ হয়নি, আমরা আছি। যতক্ষণ নাকে সমাধান হবে আমরা আছি। আমাদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না, এখনো নেই। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এখানে আছি এবং থাকব।”
সমাজকর্ম বিভাগের ২৪-২৫ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা বলেন, “আমার ভাইয়েরা গতকাল থেকে বৃষ্টিতে ঘুরছে, রোদে পুড়ছে, মশার কামড় খাচ্ছে তাদেরকে দেখার মত কেউ নাই। আমি বলতে চাই প্রশাসনের নামেই প্রহসন আর কতদিন? আমরা যেখানে ৬০-৬৫ পেয়ে ভর্তি হতে পারি না সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকতা কর্মচারীদের সন্তানেরা নাম মাত্র পাশ নাম্বার পেয়ে কিভাবে ভর্তি হয়?”
তিনি আরো বলেন, “তারা তাদের সন্তানদের কেন এতটা ইনসিকিউর? তাদের কি তাদের সন্তানদের প্রতি আত্মবিশ্বাস নাই যে তারা যোগ্যতায় ভর্তি হবে। এভাবে ভিক্ষাবৃত্তি আর কতদিন? এখানে যারা আছে সবাই তার মায়েদের কলিজার টুকরা। তারা যে এভাবে নির্যাতিত হচ্ছে এগুলো দেখার কি কেউ নেই?”
বেলা একটার দিকে অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনককে।
কনক বলেন, “আমি মূলত ছাত্রদের খোঁজখবর নিতে এখানে এসেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, তারা খুব কষ্টের মধ্যে আছে। তাই আমি নিজেও তাদের সঙ্গে অনশনে যোগ দিয়েছি। ইতোমধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে, আমরা তাদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে পাঠিয়েছি।”
এদিকে, দুপুরে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে উপ-উপাচার্যদ্বয়ের বাসভবনে তালা দেন শিক্ষার্থীরা। এজন্য বাসভবনের ভেতরে ঢুকতে না পেরে ফিরে আসেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন খান, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান। একপর্যায়ে তারা জুবেরী ভবনের দিকে আসতে থাকলে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে দিতে তাদের পেছনে আসেন।
একপর্যায়ে জুবেরী ভবনের বারান্দায় এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক এবং ছাপাখানার এক কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের আটকানোর চেষ্টা করলে কথা কাটাকাটি এক পর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন খানকে চারপাশ থেকে আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে হাতাহাতির একপর্যায়ে উপ উপাচার্য জুবেরী ভবনের দ্বিতীয় তলায় চলে গেলে শিক্ষার্থীরা তাকে সেখানে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এরই মধ্যে সেখানে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদসহ কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত হলের তাদেরও অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে তারা জুবেরী ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
শিক্ষকরা পোষ্য কোটা নিয়ে রাবির সিনেট ভবনে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিলে রাত সাড়ে ৮টার দিকে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থী সেখান থেকে সিনেট ভবনের দিকে যেতে দেখা গেছে।
তবে ক্যাম্পাসে হাতাহাতির ঘটনায় উত্তেজনা বিরাজ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী মুখোমুখি অবস্থান করায় কোনো শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এজন্য সিনেটে কি বিষয়ে আলোচনা করবেন তা জানা সম্ভব হয়নি। হাতাহাতির ঘটনায় শিক্ষকরা কর্মবিরতির ডাক দিতে পারেন বলেও চাউর হয়েছে।
এ বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, “আমরা কারো সঙ্গে বসতে রাজি নই। উনারা কি করবেন উনারা জানেন। আমরা ২৫ তারিখেই রাকসু চাই এবং পোষ্য কোটাও বাতিল চাই। ওনারা মিটিং করুক, আমরা বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবো। আমরা কোনো মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করব না। সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা যাব না।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ অনশন জন শ ক ষ র থ উপ উপ চ র য অবস থ ন কর ব শ বব দ য পর য য় উদ দ ন আম দ র ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন না হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা হবে: আপ বাংলাদেশ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন ২৭ নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত না হলে তা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। এ সময় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচন চায় ছাত্রশিবির
জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর
দাবিগুলো হলো— আসন্ন জকসু নির্বাচন ২৭ নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত করতে হবে; নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে; সব সংগঠনকে সমান সুযোগ দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে; অরাজনৈতিক, নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য ও জবির প্রধান সংগঠক মাসুদ রানা বলেন, “আমরা যখন জকসুর দাবিতে অনশন করছিলাম, তখন প্রশাসন ২৭ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের অনশন ভাঙিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, একটি মহল নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা করছে।”
তিনি বলেন, “ডিসেম্বর মাসে ভর্তি পরীক্ষা ও বিভিন্ন বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় ওই মাসে নির্বাচন অসম্ভব। তাই ২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচনের উপযুক্ত সময়।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা জানতে চাই, নির্বাচন পেছানোর মধ্য দিয়ে জকসু নির্বাচন ভণ্ডুল করার কোনো প্রক্রিয়া চলছে কিনা। পুরান ঢাকাকে অস্থিতিশীল করে একটি মহল নির্বাচন পণ্ড করতে চায়। শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রথম ভোট হবে জকসু নির্বাচন—তা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী