ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর তালিকায় যুক্ত হলো শিল্পোন্নত দুই দেশ যুক্তরাজ্য ও কানাডা। শিগগিরই এ তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে আরেক প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশ ফ্রান্স। এটা হলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যদেশের মধ্যে চারটি দেশেরই স্বীকৃতি পাবে ফিলিস্তিন। এর আগে ১৯৮৮ সালে অন্য দুই স্থায়ী সদস্য রাশিয়া ও চীন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।

আজ যুক্তরাজ্য ও কানাডার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্যদেশের প্রায় ৭৫ শতাংশের স্বীকৃতি পেল ফিলিস্তিন। এখন প্রশ্ন হলো, এ স্বীকৃতির অর্থ কী বা এটি কি বাস্তবে ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য কোনো পরিবর্তন বয়ে আনতে পারে?

আসলে ফিলিস্তিন এমন একটি রাষ্ট্র, যার বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনের কূটনৈতিক মিশন রয়েছে। অলিম্পিকের মতো ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়ও অংশ নেয় ফিলিস্তিন। জাতিসংঘের স্থায়ী পর্যবেক্ষক সদস্যও তারা। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান দীর্ঘ সংঘাতের কারণে ফিলিস্তিনের কোনো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা, রাজধানী বা সেনাবাহিনী নেই।

ইসরায়েলি দখলদারির মুখে নব্বইয়ের দশকে পশ্চিম তীর শাসনের জন্য ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ (পিএ) গঠন করা হয়েছিল। তবে তাদের পুরো ভূখণ্ডটির ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই। ফিলিস্তিনের গাজা অংশেও প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি প্রতীকী ছাড়া কিছু নয়। এর মাধ্যমে শক্তিশালী নৈতিক বার্তা দেওয়া গেলেও বাস্তবে খুব একটা পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার এই স্বীকৃতি প্রদান ফিলিস্তিনিদের প্রতি ঐক্য ও সংহতির ক্ষেত্রে একটি বড় বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই তিন দেশই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের মধ্য দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার আশাকে পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলেছে।

তা ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনে মুখ্য ভূমিকা ছিল যুক্তরাজ্যের। এরপর দীর্ঘকাল ইসরায়েলের মিত্রদেশ হিসেবে ভূমিকা রেখে আসছে লন্ডন। সে কারণে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্যের এই স্বীকৃতির বড় ধরনের প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে।

গত জুলাইয়ে জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছিলেন, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতি সমর্থন জানানোর এক বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে যুক্তরাজ্যের। তিনি ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণার কথা উল্লেখ করেন। এ ঘোষণায় সই করেছিলেন তাঁরই পূর্বসূরি আর্থার বেলফোর।

বেলফোর ঘোষণায় ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য একটি আবাস গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছিল। ডেভিড ল্যামি বলেন, ঘোষণায় এই প্রতিশ্রুতিও ছিল যে ইহুদি বাদে এই ভূখণ্ডে অন্য সম্প্রদায়ের যেসব লোকজন বসবাস করেন, তাঁদের নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়—এমন কিছু করা হবে না। যদিও ইসরায়েলের সমর্থকেরা বলে থাকেন, ঘোষণায় ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে কিছু বলা হয়নি।

এমন সব জটিলতার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের সমস্যার সমাধান সামনে এগোয়নি। দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৬৭ সালে আরব–ইসরায়েল যুদ্ধের আগে পশ্চিম তীর ও গাজার যে সীমানা ছিল, তা নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা ছিল। রাজধানী হওয়ার কথা ছিল পূর্ব জেরুজালেম। তবে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হলেও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়নি।

এখন যদি যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ফ্রান্সও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়, তাহলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনের অবস্থান আরও শক্ত হবে। স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র থাকবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি না দেওয়া দেশ। যুক্তরাষ্ট্রই ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র।

যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন প্রেসিডেন্ট একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন। তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যতিক্রম। তাঁর প্রশাসন ইসরায়েলের প্রতি এককাট্টা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুনফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া৩ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য ক তর জ য র ইসর য় ল র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে চালাতে হবে সাইকেল

সাইকেল চালানো শরীরের জন্য ভালো। পকেটের ওপরও চাপ কমায়। সম্প্রতি করা এক গবেষণায় সাইকেল চালানোর উপকারিতার তালিকা আরও দীর্ঘ হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, চলাচলের জন্য কেউ যদি গাড়ির বদলে সাইকেল বেছে নেন, তবে তা মস্তিষ্কের বিভিন্ন জটিলতা কমানোর ক্ষেত্রেও বেশ কাজে আসে।

এই গবেষণা করেছে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য গবেষণাবিষয়ক তথ্যের সবচেয়ে বড় ভান্ডার ‘ইউকে বায়োব্যাংক’। সম্প্রতি গবেষণাটি জেএএমএ নেটওয়ার্ক ওপেন সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রাইভেট কার, বাস, ট্রেনে ভ্রমণের চেয়ে সাইকেল ব্যবহার করলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ১৯ শতাংশ এবং আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমে।

ডিমেনশিয়া বলতে মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তি, স্মৃতিশক্তি ও কাজ করার ক্ষমতা হ্রাসকে বোঝায়। বিভিন্ন রোগের কারণে ডিমেনশিয়া হতে পারে। এমন একটি রোগ হলো আলঝেইমার। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার (এনএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, মস্তিষ্কের কোষের ভেতরে ও আশপাশে অস্বাভাবিকভাবে প্রোটিন জমলে আলঝেইমার হতে পারে।

এই গবেষণায় ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ অংশ নেন। তাঁদের গড় বয়স ছিল সাড়ে ৫৬ বছর। গবেষণায় যাতায়াতের চারটি বিকল্প তুলে ধরা হয়। অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়—বিগত চার সপ্তাহে যাতায়াতের জন্য তাঁরা কোন বিকল্পটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন।

যাতায়াতের ওই বিকল্পগুলোর মধ্যে ছিল—একেবারেই সক্রিয় না থাকা, অর্থাৎ বাস বা ট্রেনে করে যাতায়াত করা। আরেকটি ছিল হেঁটে যাতায়াত। তৃতীয় বিকল্পটি ছিল হাঁটা ও সক্রিয় থাকা লাগে না—এমন সব মাধ্যম ব্যবহার করে যাতায়াত। আর শেষ ধরনটি ছিল সাইকেল চালিয়ে এবং অন্য ধরনগুলো ব্যবহার করে যাতায়াত।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের যাতায়াতের ধরনগুলো নির্বাচন করার ১৩ বছরের বেশি সময় পর দেখা যায়, ৮ হাজার ৮৪৫ জনের মস্তিষ্কে ডিমেনশিয়া দেখা দিয়েছে। আর ৩ হাজার ৯৫৬ জন আলঝেইমারে আক্রান্ত। এ ছাড়া যাঁরা যাতায়াতের ক্ষেত্রে হাঁটাহাঁটির ওপর ভরসা করেন, তাঁদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ৬ শতাংশ কম।

গবেষণায় সাইকেল চালানোর ফলে ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমারের ঝুঁকি কমার প্রমাণও পাওয়া গেছে। এ–ও দেখা গেছে যে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস নামক অংশের তুলনামূলক বড় আয়তনের সঙ্গে সাইকেল চালানোর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মস্তিষ্কের এই অংশে স্মৃতি সংরক্ষণ থাকে এবং কোনো কিছু শেখার সঙ্গে জড়িত।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটির স্নায়ুবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জো ভারগেস বলেন, দশকের পর দশক ধরে চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়াম মস্তিষ্কের জন্য ভালো। সাইকেল চালানো হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে এবং মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ও পরিপাকের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে করে হয়তো ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমে। তবে কেউ যদি সাইকেল চালানো শুরু করতে চান, তাহলে আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। দেখে নিতে হবে তিনি এখনই সাইকেল চালানো শুরু করার জন্য যথেষ্ট সুস্থ কি না। নাকি এর জন্য আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ