প্রতিবছর পৃথিবীর নানা প্রান্তে হাজারো তরুণ-তরুণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে জীবনের নতুন অধ্যায়ে পা রাখেন। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ৪৭ লাখ ৫৬ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় যুক্ত আছেন।

বৈশ্বিক পটভূমিতে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬ কোটি ৪০ লাখের বেশি, যার মধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীর অংশ প্রায় ১ দশমিক ৮০ শতাংশ।

এ সংখ্যা শুধু পরিসংখ্যান নয়; বরং আমাদের তরুণ প্রজন্মের উচ্চশিক্ষার প্রতি বাড়তে থাকা আগ্রহ ও সম্ভাবনার প্রতিফলন। যদিও সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন বলছে যে দেশের প্রায় ৮ লাখ ৮৫ হাজার স্নাতকোত্তর করা তরুণ বেকারত্বের সমস্যায় ভুগছেন।

তবে এটা ঠিক যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব জীবনের পথে হাঁটা সহজ নয়। কর্মজীবনের প্রতিযোগিতামূলক বাস্তবতায় টিকে থাকতে চাই স্পষ্ট পরিকল্পনা, সঠিক দক্ষতা আর মানসিক দৃঢ়তা।

বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীরা যে বিষয়গুলোতে মনোযোগী হচ্ছে, বাংলাদেশি তরুণদেরও সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি। পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো—

আরও পড়ুনবিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির কেমন সংস্কার প্রয়োজন১৪ আগস্ট ২০২৫ক্যারিয়ার পরিকল্পনা ও পেশাজীবনে প্রবেশ

গ্র্যাজুয়েশন শেষে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সঠিক ক্যারিয়ার বেছে নেওয়া। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো দেশে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ও ইন্টার্নশিপের সুযোগ পায়। এতে বাস্তব জীবনে প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হয়।

বাংলাদেশেও এ ধারা শুরু হয়েছে, তবে এটি হতে হবে আরও কাঠামোবদ্ধ ও কার্যকর।
শিক্ষার্থীরা যদি শুরুতেই নিজের আগ্রহ, দক্ষতা ও বাজারের চাহিদা মিলিয়ে স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে, তবে বিভ্রান্তি কমবে।

এর জন্য দরকার—শ্রমবাজারের বাস্তবতা বোঝা, ইন্টার্নশিপ ও চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া, হালনাগাদ জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করা, লিংকডইনের মতো প্রফেশনাল সাইটে প্রোফাইল সাজানো এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকের পরামর্শ নেওয়া।

আরও পড়ুনবিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষার যৌক্তিকতা কতটুকু০১ আগস্ট ২০২৫শেখার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা

ডিগ্রি মানেই শেখার ইতি নয়; বরং নতুন যাত্রার সূচনা। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরও অনলাইন কোর্স ও সার্টিফিকেটের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা বাড়ায়। বাংলাদেশের তরুণদেরও এ অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।

তারা প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ডেটা অ্যানালাইসিসের মতো আধুনিক দক্ষতা অর্জন করতে পারে, অনলাইন কর্মশালা ও কোর্সে অংশ নিতে পারে, ইংরেজি দক্ষতা বাড়াতে পারে—সঙ্গে চাই নতুন ভাষা শেখার উদ্যোগ।

চীনা, জাপানি বা জার্মান ভাষা ভবিষ্যতে বাড়তি সুবিধা এনে দিতে পারে। পাশাপাশি নিয়মিত পড়াশোনার অভ্যাসও খুব জরুরি।

আরও পড়ুনবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হলে আর শেষ হতে চায় না কেন১২ মার্চ ২০২৫নেটওয়ার্ক ও সামাজিক দায়িত্ব

বিশ্ববিদ্যালয় শেষে সম্পর্ক ও নেটওয়ার্ক তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জার্মানিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনে বড় ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশেও কিছু প্রতিষ্ঠান সক্রিয় অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক চালু করেছে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা কার্যকর নয়।

তরুণদের উচিত, সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, পেশাজীবীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত থাকা। এতে শুধু ব্যক্তিগত নয়, সামাজিক উন্নয়নেও অবদান রাখা সম্ভব। একই সঙ্গে ইতিবাচক ভাবমূর্তি ও আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে।

বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষ মানেই শেখা বা বেড়ে ওঠা শেষ নয়। বরং এখান থেকেই শুরু হয় জীবনের প্রকৃত যাত্রা। সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষতা উন্নয়ন, সামাজিক নেটওয়ার্ক, আর্থিক সচেতনতা এবং মানসিক বিকাশ—এই পাঁচটি দিককে গুরুত্ব দিলে তরুণ প্রজন্ম কেবল নিজেদের ভবিষ্যৎই নয়, সমাজ ও দেশকেও এগিয়ে নিতে পারবে। বিশ্বের নানা দেশের তরুণদের উদাহরণ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—বিশ্ববিদ্যালয়ের পরের জীবন আসলে সম্ভাবনায় ভরা এক নতুন অধ্যায়, যা কাজে লাগানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।আর্থিক সচেতনতা ও আত্মনির্ভরশীলতা

কর্মজীবনের শুরুতেই অর্থ ব্যবস্থাপনা শেখা খুব জরুরি। জাপান ও সিঙ্গাপুরের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়জীবনেই সঞ্চয় ও বিনিয়োগের অভ্যাস গড়ে তোলেন, যা তাঁদের পরবর্তী জীবনে আর্থিক স্বাধীনতা দেয়।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদেরও এখন থেকেই আর্থিক শিক্ষায় মনোযোগী হতে হবে। আয়ের সঙ্গে সঞ্চয়ের অভ্যাস করা, বিনিয়োগের কৌশল শেখা, ঋণ ও ক্রেডিট ব্যবহারে সতর্ক থাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক লক্ষ্য ঠিক করা—এসব অভ্যাস ভবিষ্যতের মজবুত ভিত্তি তৈরি করবে।

ব্যক্তিগত জীবন ও মানসিক উন্নয়ন

শুধু ক্যারিয়ার নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও ভারসাম্য রাখা দরকার। ফিনল্যান্ডের তরুণেরা পড়াশোনা শেষে ভ্রমণ, শখ, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের মাধ্যমে নিজেদের মানসিক উন্নয়ন ঘটান।

বাংলাদেশি তরুণদেরও এই জীবনদর্শন অনুসরণ করা প্রয়োজন। সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, শখ ও সৃজনশীল কাজে সময় দেওয়া, সময় ব্যবস্থাপনা রপ্ত করা এবং ইতিবাচক চিন্তা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ধরে রাখা—এসব অভ্যাস মানসিক প্রশান্তি ও ব্যক্তিগত উন্নয়নে সহায়তা করে।

বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষ মানেই শেখা বা বেড়ে ওঠা শেষ নয়। বরং এখান থেকেই শুরু হয় জীবনের প্রকৃত যাত্রা। সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষতা উন্নয়ন, সামাজিক নেটওয়ার্ক, আর্থিক সচেতনতা এবং মানসিক বিকাশ—এই পাঁচটি দিককে গুরুত্ব দিলে তরুণ প্রজন্ম কেবল নিজেদের ভবিষ্যৎই নয়, সমাজ ও দেশকেও এগিয়ে নিতে পারবে।

বিশ্বের নানা দেশের তরুণদের উদাহরণ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—বিশ্ববিদ্যালয়ের পরের জীবন আসলে সম্ভাবনায় ভরা এক নতুন অধ্যায়, যা কাজে লাগানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

এম এম মাহবুব হাসান, ব্যাংকার, উন্নয়ন গবেষক ও লেখক।
ই-মেইল: [email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন টওয় র ক আর থ ক স জ বন র প য় র পর র তর ণ

এছাড়াও পড়ুন:

টেকনাফে পাহাড় থেকে নারী-শিশুসহ ৩৮ জনকে উদ্ধার, আটক ২ 

কক্সবাজারের টেকনাফে যৌথ অভিযান চালিয়ে মানবপাচারকারী চক্রের কবল থেকে নারী ও শিশুসহ ৩৮ জনকে উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। এ সময় আটক করা হয় দুইজনকে। 

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

আরো পড়ুন:

প্রতিমা বিসর্জনে নৌকাডুবি, নিখোঁজ এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার

টেকনাফে যৌথ অভিযানে নারী-শিশুসহ ২১ জন উদ্ধার

আরো পড়ুন: টেকনাফে যৌথ অভিযানে নারী-শিশুসহ ২১ জন উদ্ধার

তিনি জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টায় টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন গহীন পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এসময় পাচারকারীদের গোপন আস্তানা থেকে ১৮ জন নারী, ১২ জন পুরুষ ও আটজন শিশুসহ মোট ৩৮ জনকে উদ্ধার করা হয়।

আরো পড়ুন: টেকনাফের পাহাড় থেকে নারী-শিশুসহ উদ্ধার ৮

লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, পাচারকারীরা মুক্তিপণ আদায় এবং বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে তাদের বন্দি রেখে নির্যাতন করছিল। উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের এবং আটককৃত পাচারকারীদের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ