জারেড কুশনারের নাম আসলেই জামাই (ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাই) পরিচয়টা সামনে চলে আসে। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা পেয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক জ্ঞান অপরিপক্ব। ইতিহাস সম্পর্কেও তাঁর জ্ঞান সীমিত।

কুশনার ‘কিছুই জানেন না’ এমনটা ভেবে তাঁকে হালকাভাবে নেওয়াটা ভুল হবে। কারণ, তাঁর কাজের মধ্যে একটি বড় বিপদ লুকিয়ে আছে। ফিলিস্তিন ও আরব বিশ্বে মার্কিন ও ইসরায়েলি নীতি প্রণয়নে কুশনারের ভূমিকা আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়।

এটি সম্রাজ্যবাদের নতুন চেহারাকে প্রতিফলিত করে। এখানে ব্যক্তিস্বার্থ এবং অনির্বাচিত ও শক্তিশালী ব্যক্তির ওপর ভর করে কোনো কিছু অর্জন করা হয়। কুশনার আসলে স্বতন্ত্র কোনো ব্যক্তি নন; বরং তিনি এমন একটি ব্যবস্থার প্রতিনিধি, যে ব্যবস্থাটি কিনা বহুজাতিক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ও রাষ্ট্রশক্তি মিলে জমি দখল, জনগণকে দমন এবং অঞ্চলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্মাণ করে।

কুশনারের তথাকথিত ‘শতাব্দীর চুক্তি’ একটি আশ্চর্যজনক উন-পরিকল্পনা। তাঁর পরিকল্পনা হলো গাজার কিছু অংশকে ‘ভূমধ্যসাগরীয় সিঙ্গাপুর’ বা ‘গাজা রিভিয়েরা’ বানানো। প্রথম দৃষ্টিতে এটিকে দরিদ্র্য থেকে মুক্তির পরিকল্পনা বলে মনে হলেও বাস্তবে এটি ফিলিস্তিনিদের জমি ও অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রকল্প। ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজের জমিতে কম বেতনের সেবাকর্মী হিসেবে নিয়োজিত হবে আর বিনিয়োগকারী ও বিদেশি সরকার সেখান থেকে লাভ করবে।

এটি ডেভিড হার্ভের ‘সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে পুঁজি’ বানানোর ধ্রুপদি উদাহরণ। মানুষের কষ্টকে লাভে পরিণত করা। কুশনারের স্লোগানটি হলো ‘গাজা রিভিয়েরা: খোলা আকাশের কারাগার থেকে পর্যটকদের খেলার মাঠ’।

উপনিবেশিত আফ্রিকার ‘মডেল গ্রাম’ বা দখলকৃত কাশ্মীরের ‘উন্নয়ন করিডরের’ মতো, ‘গাজা রিভিয়েরা’ও দখলের নান্দনিক রূপের প্রদর্শন। এটি আধুনিকতার আড়ালে সার্বভৌমত্ব চুরি করা। এটি কোনো বাস্তব অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নয়; বরং সভ্যতার জন্য অপমান।

এটি পবিত্র শহর থেকে শরণার্থীশিবির পর্যন্ত সবকিছুকে ব্যবসার পণ্য হিসেবে দেখো। যুক্তরাষ্ট্র দেশটি আদিবাসীদের থেকে চুরি করা জমির ওপর গড়ে উঠেছে। দেশটি ২২৫টি যুদ্ধে জড়িত হয়েছে। কিন্তু কখনো সত্যিকার অর্থে ন্যায়যুদ্ধে বিজয়ী হতে পারেনি; বরং দেশটি দক্ষ হয়ে উঠেছে ধ্বংস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে।

কুশনার আব্রাহাম চুক্তিকে ‘শান্তি’ অর্জন হিসেবে উপস্থাপন করেছেন; কিন্তু বাস্তবে এই চুক্তি হলো আরব প্রতিরোধকে দুর্বল করার, ফিলিস্তিনকে পাশ কাটিয়ে ইসরায়েলের দখলদারি স্বাভাবিক করার একটি পরিকল্পনা। রাজনৈতিক তত্ত্বের ভাষায়, এটি হলো অভিজাত শাসক ও বিদেশি শক্তির মধ্যকার একটি চুক্তি।

এখানে অভিজাত শাসকেরা দেশের মধ্যে বৈধতা হারানো সত্ত্বেও বিদেশি শক্তির কাছ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পায়। সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো ও সুদানকে এমন চুক্তিতে টেনে আনা হয়েছে। এতে ফিলিস্তিনিদের কোনো লাভই হয়নি। বরং আরব লীগ ও ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগ দুর্বল হয়ে গেছে।

এটি সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার একুশ শতকের সংস্করণ। এখানে সরাসরি সামরিক শক্তির সাহায্যে কোনো দেশে দখলের বদলে, যুক্তরাষ্ট্র এমন চুক্তি চাপিয়ে দেয় যেখানে অভিজাত শাসকেরা জনগণের রাজনীতিকে দমন করে বাজার, জমি ও অন্যান্য সুবিধা বিদেশি শক্তির কাছে তুলে দেয়। তবে এ ধরনের চুক্তি সব সময়ই নড়বড়ে হয়। কারণ, স্বৈরশাসকেরা চিরকাল জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না।

কুশনারের দল শুধু জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তর করেনি; তারা মানচিত্রও বদলিয়েছে। গোলান মালভূমিকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর সেটিকে ‘ট্রাম্প মালভূমি’ নাম দেওয়া হয়। কুশনারের নীতি হলো ফিলিস্তিনকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা এবং বসতি স্থাপনকে স্বাভাবিক করা। আইন ব্যবহার করে মানুষের জমির অধিকার কেড়ে নেওয়া। এই নীতি গোটা মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।

আরব সার্বভৌমত্বের ওপর দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা যুদ্ধের একদিন অবসান হবে। এটা অবশ্যই হবে। ১৯৫০-এর দশকে সিআইএর প্ররোচনায় অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধ পর্যন্ত মার্কিন নীতি সব সময়ই ছিল স্বাধীন ও ঐক্যবদ্ধ আরব শক্তি তৈরি হওয়া রোধ করা। কুশনারের পরিকল্পনা সেই একই ধারাবাহিকতার অংশ।

বিনিয়োগ অঞ্চল, প্রযুক্তি হাব এবং আধুনিকীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আরব অভিজাতদের একটি শ্রেণি তৈরি করছে, যারা পশ্চিমি মূলধনের সঙ্গে যুক্ত। এর বিপরীতে সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ কারণেই এই চুক্তিগুলো নড়বড়ে। এই চুক্তিগুলো ওপরের দিক থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিচ থেকে আলোচনার মাধ্যমে এগুলো সম্পাদিত হয়নি।

যে আরব তরুণেরা গাজা ধ্বংস এবং জেরুজালেম অবরুদ্ধ হতে দেখেছেন, তাঁরা ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্যে’র গল্পে বিশ্বাস করছেন না। আমরা আরব বসন্ত দেখেছি। এটাই জেনারেশন জেডের কাজের ধরন। হয়তো সময় লাগবে; কিন্তু একদিন তাঁরা ঠিকই আশ্চর্যজনক কিছু ঘটাবে। আরব শাসকেরা বাস্তবতার সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে জেন-জিরা ডিজিটাল প্রজন্ম। অন্যায্যতার গভীর স্মৃতি তারা বহন করছে। ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন কমানোর ব্যাপারেও তাঁরা সচেতনতা অর্জন করেছেন।

তাঁরা ফিলিস্তিনকে বিচ্ছিন্ন সমস্যা হিসেবে দেখছেন না; বরং এটিকে তাঁরা নিজেদের বঞ্চনার প্রতিফলন হিসেবে দেখেন। বিংশ শতাব্দীর মধে৵র সময়টার উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের মতো করে এই প্রজন্মও একটি নতুন রাজনীতির জন্ম দিচ্ছে।

কুশনারের প্রকল্প শুধু জমি ও তেলের জন্য নয়। তাঁর প্রকল্পের মূল বিষয় হলো—একটি করপোরেট ও উপনিবেশবাদী সভ্যতা। এটি পবিত্র শহর থেকে শরণার্থীশিবির পর্যন্ত সবকিছুকে ব্যবসার পণ্য হিসেবে দেখো। যুক্তরাষ্ট্র দেশটি আদিবাসীদের থেকে চুরি করা জমির ওপর গড়ে উঠেছে। দেশটি ২২৫টি যুদ্ধে জড়িত হয়েছে। কিন্তু কখনো সত্যিকার অর্থে ন্যায়যুদ্ধে বিজয়ী হতে পারেনি; বরং দেশটি দক্ষ হয়ে উঠেছে ধ্বংস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে। প্রান্তবর্তী অঞ্চলগুলোকে বিশৃঙ্খলার ময়দানে পরিণত করে যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রীয় অঞ্চলকে সম্পদের দুর্গে রূপান্তর করে চলেছে। এ জন্য মার্কিন সাম্রাজ্য নৈতিকভাবে দুর্বল। তাত্ত্বিকরা বলেন, এমন শাসনব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর রাজনীতি চালায়। এখানে সভ্যতার ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে।

এর সবটাই বিভ্রম। এই বিভ্রম একদিন ভেঙে যাবে। ট্র্যাজেডি হলো, এই ব্যবস্থা পতনের আগে ফিলিস্তিনি এবং অন্য আরবদের প্রচণ্ড কষ্ট ভোগ করতে হবে; কিন্তু পতন আসবেই। কারণ, কোনো ‘চুক্তি’ যতই চমকপ্রদ হোক না কেন, সেটি সেই বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে না যে জনগণকে তাদের ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায় না। কুশনারের পরিকল্পনা শান্তির ছদ্মবেশে এক বড় চুরির অংশ। মানুষ এটিকে চুরি হিসেবেই মনে রাখবে ও প্রতিরোধ করবে।

রঞ্জন সলোমন, ভারতীয় রাজনৈতিক ভাষ্যকার
মিডলইস্ট মনিটর থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র জন ত র জন ত ক ব যবস থ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের জামাই কুশনারের ধোঁকা, শান্তির আড়ালে দেশ চুরির গল্প

জারেড কুশনারের নাম আসলেই জামাই (ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাই) পরিচয়টা সামনে চলে আসে। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা পেয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক জ্ঞান অপরিপক্ব। ইতিহাস সম্পর্কেও তাঁর জ্ঞান সীমিত।

কুশনার ‘কিছুই জানেন না’ এমনটা ভেবে তাঁকে হালকাভাবে নেওয়াটা ভুল হবে। কারণ, তাঁর কাজের মধ্যে একটি বড় বিপদ লুকিয়ে আছে। ফিলিস্তিন ও আরব বিশ্বে মার্কিন ও ইসরায়েলি নীতি প্রণয়নে কুশনারের ভূমিকা আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়।

এটি সম্রাজ্যবাদের নতুন চেহারাকে প্রতিফলিত করে। এখানে ব্যক্তিস্বার্থ এবং অনির্বাচিত ও শক্তিশালী ব্যক্তির ওপর ভর করে কোনো কিছু অর্জন করা হয়। কুশনার আসলে স্বতন্ত্র কোনো ব্যক্তি নন; বরং তিনি এমন একটি ব্যবস্থার প্রতিনিধি, যে ব্যবস্থাটি কিনা বহুজাতিক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ও রাষ্ট্রশক্তি মিলে জমি দখল, জনগণকে দমন এবং অঞ্চলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্মাণ করে।

কুশনারের তথাকথিত ‘শতাব্দীর চুক্তি’ একটি আশ্চর্যজনক উন-পরিকল্পনা। তাঁর পরিকল্পনা হলো গাজার কিছু অংশকে ‘ভূমধ্যসাগরীয় সিঙ্গাপুর’ বা ‘গাজা রিভিয়েরা’ বানানো। প্রথম দৃষ্টিতে এটিকে দরিদ্র্য থেকে মুক্তির পরিকল্পনা বলে মনে হলেও বাস্তবে এটি ফিলিস্তিনিদের জমি ও অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রকল্প। ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজের জমিতে কম বেতনের সেবাকর্মী হিসেবে নিয়োজিত হবে আর বিনিয়োগকারী ও বিদেশি সরকার সেখান থেকে লাভ করবে।

এটি ডেভিড হার্ভের ‘সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে পুঁজি’ বানানোর ধ্রুপদি উদাহরণ। মানুষের কষ্টকে লাভে পরিণত করা। কুশনারের স্লোগানটি হলো ‘গাজা রিভিয়েরা: খোলা আকাশের কারাগার থেকে পর্যটকদের খেলার মাঠ’।

উপনিবেশিত আফ্রিকার ‘মডেল গ্রাম’ বা দখলকৃত কাশ্মীরের ‘উন্নয়ন করিডরের’ মতো, ‘গাজা রিভিয়েরা’ও দখলের নান্দনিক রূপের প্রদর্শন। এটি আধুনিকতার আড়ালে সার্বভৌমত্ব চুরি করা। এটি কোনো বাস্তব অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নয়; বরং সভ্যতার জন্য অপমান।

এটি পবিত্র শহর থেকে শরণার্থীশিবির পর্যন্ত সবকিছুকে ব্যবসার পণ্য হিসেবে দেখো। যুক্তরাষ্ট্র দেশটি আদিবাসীদের থেকে চুরি করা জমির ওপর গড়ে উঠেছে। দেশটি ২২৫টি যুদ্ধে জড়িত হয়েছে। কিন্তু কখনো সত্যিকার অর্থে ন্যায়যুদ্ধে বিজয়ী হতে পারেনি; বরং দেশটি দক্ষ হয়ে উঠেছে ধ্বংস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে।

কুশনার আব্রাহাম চুক্তিকে ‘শান্তি’ অর্জন হিসেবে উপস্থাপন করেছেন; কিন্তু বাস্তবে এই চুক্তি হলো আরব প্রতিরোধকে দুর্বল করার, ফিলিস্তিনকে পাশ কাটিয়ে ইসরায়েলের দখলদারি স্বাভাবিক করার একটি পরিকল্পনা। রাজনৈতিক তত্ত্বের ভাষায়, এটি হলো অভিজাত শাসক ও বিদেশি শক্তির মধ্যকার একটি চুক্তি।

এখানে অভিজাত শাসকেরা দেশের মধ্যে বৈধতা হারানো সত্ত্বেও বিদেশি শক্তির কাছ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পায়। সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো ও সুদানকে এমন চুক্তিতে টেনে আনা হয়েছে। এতে ফিলিস্তিনিদের কোনো লাভই হয়নি। বরং আরব লীগ ও ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগ দুর্বল হয়ে গেছে।

এটি সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার একুশ শতকের সংস্করণ। এখানে সরাসরি সামরিক শক্তির সাহায্যে কোনো দেশে দখলের বদলে, যুক্তরাষ্ট্র এমন চুক্তি চাপিয়ে দেয় যেখানে অভিজাত শাসকেরা জনগণের রাজনীতিকে দমন করে বাজার, জমি ও অন্যান্য সুবিধা বিদেশি শক্তির কাছে তুলে দেয়। তবে এ ধরনের চুক্তি সব সময়ই নড়বড়ে হয়। কারণ, স্বৈরশাসকেরা চিরকাল জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না।

কুশনারের দল শুধু জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তর করেনি; তারা মানচিত্রও বদলিয়েছে। গোলান মালভূমিকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর সেটিকে ‘ট্রাম্প মালভূমি’ নাম দেওয়া হয়। কুশনারের নীতি হলো ফিলিস্তিনকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা এবং বসতি স্থাপনকে স্বাভাবিক করা। আইন ব্যবহার করে মানুষের জমির অধিকার কেড়ে নেওয়া। এই নীতি গোটা মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।

আরব সার্বভৌমত্বের ওপর দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা যুদ্ধের একদিন অবসান হবে। এটা অবশ্যই হবে। ১৯৫০-এর দশকে সিআইএর প্ররোচনায় অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধ পর্যন্ত মার্কিন নীতি সব সময়ই ছিল স্বাধীন ও ঐক্যবদ্ধ আরব শক্তি তৈরি হওয়া রোধ করা। কুশনারের পরিকল্পনা সেই একই ধারাবাহিকতার অংশ।

বিনিয়োগ অঞ্চল, প্রযুক্তি হাব এবং আধুনিকীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আরব অভিজাতদের একটি শ্রেণি তৈরি করছে, যারা পশ্চিমি মূলধনের সঙ্গে যুক্ত। এর বিপরীতে সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ কারণেই এই চুক্তিগুলো নড়বড়ে। এই চুক্তিগুলো ওপরের দিক থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিচ থেকে আলোচনার মাধ্যমে এগুলো সম্পাদিত হয়নি।

যে আরব তরুণেরা গাজা ধ্বংস এবং জেরুজালেম অবরুদ্ধ হতে দেখেছেন, তাঁরা ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্যে’র গল্পে বিশ্বাস করছেন না। আমরা আরব বসন্ত দেখেছি। এটাই জেনারেশন জেডের কাজের ধরন। হয়তো সময় লাগবে; কিন্তু একদিন তাঁরা ঠিকই আশ্চর্যজনক কিছু ঘটাবে। আরব শাসকেরা বাস্তবতার সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে জেন-জিরা ডিজিটাল প্রজন্ম। অন্যায্যতার গভীর স্মৃতি তারা বহন করছে। ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন কমানোর ব্যাপারেও তাঁরা সচেতনতা অর্জন করেছেন।

তাঁরা ফিলিস্তিনকে বিচ্ছিন্ন সমস্যা হিসেবে দেখছেন না; বরং এটিকে তাঁরা নিজেদের বঞ্চনার প্রতিফলন হিসেবে দেখেন। বিংশ শতাব্দীর মধে৵র সময়টার উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের মতো করে এই প্রজন্মও একটি নতুন রাজনীতির জন্ম দিচ্ছে।

কুশনারের প্রকল্প শুধু জমি ও তেলের জন্য নয়। তাঁর প্রকল্পের মূল বিষয় হলো—একটি করপোরেট ও উপনিবেশবাদী সভ্যতা। এটি পবিত্র শহর থেকে শরণার্থীশিবির পর্যন্ত সবকিছুকে ব্যবসার পণ্য হিসেবে দেখো। যুক্তরাষ্ট্র দেশটি আদিবাসীদের থেকে চুরি করা জমির ওপর গড়ে উঠেছে। দেশটি ২২৫টি যুদ্ধে জড়িত হয়েছে। কিন্তু কখনো সত্যিকার অর্থে ন্যায়যুদ্ধে বিজয়ী হতে পারেনি; বরং দেশটি দক্ষ হয়ে উঠেছে ধ্বংস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে। প্রান্তবর্তী অঞ্চলগুলোকে বিশৃঙ্খলার ময়দানে পরিণত করে যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রীয় অঞ্চলকে সম্পদের দুর্গে রূপান্তর করে চলেছে। এ জন্য মার্কিন সাম্রাজ্য নৈতিকভাবে দুর্বল। তাত্ত্বিকরা বলেন, এমন শাসনব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর রাজনীতি চালায়। এখানে সভ্যতার ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে।

এর সবটাই বিভ্রম। এই বিভ্রম একদিন ভেঙে যাবে। ট্র্যাজেডি হলো, এই ব্যবস্থা পতনের আগে ফিলিস্তিনি এবং অন্য আরবদের প্রচণ্ড কষ্ট ভোগ করতে হবে; কিন্তু পতন আসবেই। কারণ, কোনো ‘চুক্তি’ যতই চমকপ্রদ হোক না কেন, সেটি সেই বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে না যে জনগণকে তাদের ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায় না। কুশনারের পরিকল্পনা শান্তির ছদ্মবেশে এক বড় চুরির অংশ। মানুষ এটিকে চুরি হিসেবেই মনে রাখবে ও প্রতিরোধ করবে।

রঞ্জন সলোমন, ভারতীয় রাজনৈতিক ভাষ্যকার
মিডলইস্ট মনিটর থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ