পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফেরত পাওয়া নিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের শাসক দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের (এনসি) সঙ্গে বিরোধী দল বিজেপি ও উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহার কাজিয়া তীব্রতর হচ্ছে। দুই পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি দাবির মধ্য দিয়ে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও বিজেপি নেতৃত্ব এখনই পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি আদৌ ভাবনাচিন্তার মধ্যে আনছে না।

কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ হতাশ হয়ে বলেছিলেন, রাজ্যের মর্যাদা পাওয়ার শর্ত হিসেবে যদি তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়, তাহলে তিনি তা–ও করতে প্রস্তুত। উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা মন্তব্য করেছিলেন, নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। সেই ব্যর্থতার দায় এড়াতে তারা রাজ্যের মর্যাদা না পাওয়াকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করতে পারে না।

ওই বিতর্কের পর নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা বিজেপির সুনীল শর্মা। গত রোববার তিনি বলেন, ওমর আবদুল্লাহ ২০১৪ সালেও বিজেপির হাত ধরতে প্রস্তুত ছিলেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পরও দিল্লিতে গিয়ে তিনি বিজেপির শীর্ষ নেতাদের বলেছিলেন, পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা ফেরত দেওয়া হলে তিনি বিজেপির সঙ্গে সরকার গড়তে প্রস্তুত।

সুনীল শর্মা বলেন, ‘ওমর আবদুল্লাহ কোরআনের শপথ নিয়ে এ অভিযোগ অস্বীকার করতে পারবেন না। কিন্তু আমি বিষয়টি শপথ নিয়ে বলতে পারি।’

সুনীলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ গতকাল রোববার বলেন, ‘পবিত্র কোরআনের শপথ নিয়ে বলছি, রাজ্যের মর্যাদা অথবা অন্য কোনো কারণে বিজেপির সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব কখনো দিইনি।’ ‘এক্স’ হ্যান্ডলে এই পোস্টের সঙ্গে সুনীলের দাবিসংক্রান্ত ভিডিও জুড়ে দিয়ে ওমর বলেন, ‘বেঁচে থাকার জন্য সুনীলের মতো মিথ্যার আশ্রয় আমায় নিতে হয় না।’

মোদি সরকার ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ দ্বিখণ্ডিত করেছিল। সেই থেকে বিজেপি জানিয়ে আসছে, ঠিক সময়ে জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সংসদের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টকেও বিজেপি সরকার এ প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছে।

তবে ঘটনা হলো, ২০২৪ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পরও কেন্দ্রীয় সরকার সেই প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। এরপর পুলওয়ামা–কাণ্ড ঘটে গেছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ হয়েছে। তার পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার আজ পর্যন্ত ওই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। হতাশ ওমরকে তাই বলতে হয়েছিল, বিজেপি কথা রাখলে তিনি পদত্যাগ পর্যন্ত করতে প্রস্তুত।

বিজেপির বিরোধিতা করেই এনসি গত নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে ক্ষমতায় আসে। সম্প্রতি ওমর আবদুল্লাহ এমন কথাও বলেন, জম্মু-কাশ্মীরে একমাত্র তাঁদের দলই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে উপরাজ্যপাল পদে পদে নির্বাচিত সরকারকে বাধা দিচ্ছেন।

ওমর এ কথাও বলেন, পুলওয়ামা–কাণ্ডের দায় পুরোপুরি কেন্দ্রের। কেন্দ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে কাশ্মীরি জনগণকে। ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে গেছে। কর আদায় কমে গেছে। হোটেলগুলো খাঁ খাঁ করছে। হাউসবোট অচল। তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকারকে কাজ করতে দিলে এসব হতো না।

বিজেপি নেতা সুনীল শর্মা বলেছিলেন, ওমরের প্রস্তাব তাঁর দল প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাঁকে বলা হয়েছিল, বিজেপি নেতৃত্ব কোনো রকম সুবিধাবাদী পদক্ষেপ নেয় না। তারা নীতির সঙ্গে আপস করে না।

অবশ্য রাজ্য দ্বিখণ্ডিত করার আগে মেহবুবা মুফতির দল পিডিপির সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপি জম্মু-কাশ্মীরে সরকার গড়েছিল। পরে জোট ভেঙে বেরিয়ে এসে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করে। এরপর বিধানসভা জিইয়ে রেখে রাজ্যটাই ভেঙে দেওয়া হয়। গড়া হয় দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ওমর আবদ ল ল হ প রস ত ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

লাইনচ্যুত বগি রেখে চলে গেল ট্রেন, ১১ ঘণ্টা পর উদ্ধার

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ঢাকামুখী লেনে একটি লাইনচ্যুত বগিসহ মোট তিনটি বগি রেখে চলে গেছে একটি মালবাহী ট্রেন। এই দুর্ঘটনার ১১ ঘণ্টা পর বগি তিনটি উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে সীতাকুণ্ড রেলস্টেশন থেকে এক কিলোমিটার উত্তরে শেখপাড়া এলাকায়। এতে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন না ঘটলেও গন্তব্যে পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হতে পারে বলে জানায় রেলওয়ে সূত্র।

গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লাইনচ্যুত হওয়ার পর ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত বগিটিকে অন্তত ১০০ মিটার পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়। ফলে বগিটি ছাড়াও রেলের স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রেলসূত্র জানিয়েছে, ঘটনার খবর পেয়ে আজ শনিবার সকালে উদ্ধারকাজ শুরু করে উদ্ধারকারীরা। এরপর ঘটনার ১১ ঘণ্টা পর বেলা দুইটার দিকে লাইনচ্যুত বগিটি উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনে চলাচলকারী ট্রেনগুলো ডাউন লাইন (চট্টগ্রামমুখী লেন) দিয়ে চলাচল করেছে। এতে গন্তব্যে কিছুটা দেরিতে পৌঁছেছে ট্রেনগুলো। দুর্ঘটনাকবলিত তিনটি বগিতে গার্মেন্টস পণ্য ও জুতা রয়েছে।

রেল পুলিশের সীতাকুণ্ড ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ ছিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাকামুখী একটি মালবাহী ট্রেন সীতাকুণ্ড রেলস্টেশন থেকে এক কিলোমিটার দূরে শেখপাড়া এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ফলে দুর্ঘটনাকবলিত বগিটির একপাশের চাকা রেললাইনের বাইরে অপর পাশের চাকা দুই রেললাইনের মাঝে ছিল। এতে সামনের দিকের আরও দুটি বগি আটকা পড়ে। দুর্ঘটনাকবলিত তিনটি বগি রেখে ট্রেনটি পরে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। খবর পেয়ে উদ্ধারকারী ট্রেন এসে লাইনচ্যুত বগিটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে। আজ বেলা দুইটার দিকে লাইনচ্যুত বগিটি রেললাইনের ওপরে তুলতে সক্ষম হয়।

রেলওয়ে পূর্বঞ্চলের উপসহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনটির একটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পর অন্তত ১০০ মিটার টেনে নিয়ে যায় ইঞ্জিন। ফলে রেলের চাকার সঙ্গে সিমেন্টের স্লিপার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বগিটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এসে বগিটি উদ্ধার করে লাইনের ওপর তোলেন। যে সব স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোকে তুলে তাৎক্ষণিক কাঠের স্লিপার দিয়ে রেললাইন সচল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

দুর্ঘটনায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা যাচাই করা হচ্ছে বলে জানান রেলওয়ের প্রকৌশলী আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বগিটিকে ওয়ার্কশপে নেওয়া হবে। ঢাকামুখী রেললাইন ঠিক করার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে। এরপর ওই পথ দিয়ে ট্রেন চালানো হবে। ততক্ষণ সময় পর্যন্ত চট্টগ্রামমুখী লাইন দিয়ে উভয় দিকে রেল চলাচল করবে। এতে যাত্রাপথে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর কিছুটা সময় বিলম্ব হচ্ছে। তবে ট্রেন চলাচল বন্ধ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পার্বতীপুর-সৈয়দপুর ৩৩ হাজার ভোল্টেজ সঞ্চালন লাইনের ১৭ কিলোমিটারের তার চুরি
  • আকুর বিল পরিশোধের পর কমল রিজার্ভ
  • ‘জেমস বন্ড’ সিরিজের পরিচালক মারা গেছেন
  • গলায় ছুরিকাঘাত নিয়ে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন অটোরিকশাচালক, পরে মৃত্যু
  • কাটা গলা নিয়ে রিকশাচালিয়ে ৩ কিলোমিটার, হাসপাতালে মৃত্যু
  • শরীয়তপুরে জাতীয় যুবশক্তির কমিটি ঘোষণার ২০ মিনিট পরই সদস্যসচিবের পদত্যাগ
  • ৩৭ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের কাছে সিরিজ হারল দ. আফ্রিকা
  • ‘দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’ লিখে রেখে যাওয়া নবজাতকের অভিভাবক হতে কয়েক শ ফোনকল
  • লাইনচ্যুত বগি রেখে চলে গেল ট্রেন, ১১ ঘণ্টা পর উদ্ধার