অসংগঠিত জনতার প্রজ্ঞা এবং উচ্ছৃঙ্খল জনতার উন্মত্ততা
Published: 24th, November 2025 GMT
আদিতে ছিল উচ্ছৃঙ্খল জনতার ভিড় (মব), আর এই ভিড় ছিল মন্দ। এডওয়ার্ড গিবনের ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে রচিত বই ‘ডিক্লাইন অ্যান্ড ফল অব দ্য রোমান এম্পায়ার’-এ হরহামেশাই রোমক ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতার ভিড়’ দেখা যায়; এবং প্রায়ই তারা কোনো না কোনো আপসহীন কর্তৃত্ববাদী গলাবাজ নেতার প্ররোচনায় শোরগোল তুলে মুফতে খাবারদাবার আর বিনোদনের (রুটি ও সার্কাস) দাবি জানায়। যদিও শাসনক্ষমতা তাদের হাতে যায় না, কিন্তু শাসন কে করবে না করবে সেটা তারা কখনো-সখনো ঠিক করে দেয়।
গিবন ছিলেন, যাকে বলে, একধরনের রক্ষণশীল র্যাডিক্যাল; খ্রিষ্টধর্ম সম্পর্কে ভীষণ অবজ্ঞা পোষণ করতেন, আর তাঁর গা ঘেঁষাঘেঁষি ছিল মুক্ত চিন্তার অধিকারী এপিকিউরিয়ানিজমের সঙ্গে, অর্থাৎ চতুর্থ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এথেন্সে বাস করা সেই দার্শনিক এপিকিউরিয়াসের ‘আনন্দ বা সুখই পরম মঙ্গল, এবং সুখ আসে সংযম, সরলতা, বন্ধুত্ব এবং সম্প্রদায় থেকে’, এই মতবাদের অনুসারী ছিলেন তিনি। কিন্তু গিবন আবার সামাজিক অব্যবস্থাকে ভয় পেতেন। উচ্ছৃঙ্খল জনতার ভিড় বলতে তিনি বুঝতেন তাঁর নিজের শহর লন্ডন বা রোমের মতো কোনো বড় শহরের লুম্পেনপ্রলেতারিয়েত তথা শ্রেণিচেতনাহীন নিম্নবর্গীয় লোকজনকে (উল্লেখ্য, ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দে গিবন রোম সফর করেন এবং সে বছরেরই ১৫ অক্টোবর রোমের বিখ্যাত সাতটি পাহাড়ের একটি ক্যাপিটিলাইন বা ক্যাপিটলের ধ্বংসাবশেষ দেখে তিনি এমনই অভিভূত হয়ে পড়েন যে সেই অভিজ্ঞতাই তাঁকে ’ডিক্লাইন অ্যান্ড ফল অব দ্য রোমান এম্পায়ার’ লেখার অনুপ্রেরণা জোগায়)।
ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকের পটভূমিতে রচিত চার্লস ডিকেন্সের প্রথম উপন্যাস ‘পিকউইক পেপার্স’-এর নামচরিত্র পিকউইক সাহেবকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে একটা সাধারণ নির্বাচনের সময় উচ্ছৃঙ্খল জনতার দুটো ভিড় পরস্পরকে লক্ষ করে স্লোগান দিতে থাকলে কী করা উচিত। তখন পিকউইক মহাশয় তাঁর স্বভাবসুলভ প্ররোচনামূলক উত্তরে বলেন, ‘যে দলটা বড় সেটার সঙ্গে গলা মেলানো।’ ধীরে ধীরে উচ্ছৃঙ্খল জনতার ভিড় সম্পর্কে এই আতঙ্কজনক ধারণা বদলে যায়। সে জায়গায় আসে ‘অসংগঠিত জনতার ভিড়’-এর একটা প্রতিচ্ছবি, যে জনতা অধিকাংশ সময়েই ভালো, আর যখন খারাপ তখন তা যেকোনো কিছুর চাইতে কমিক বা মজাদার।
ছবি: সংগৃহীত.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অসংগঠিত জনতার প্রজ্ঞা এবং উচ্ছৃঙ্খল জনতার উন্মত্ততা
আদিতে ছিল উচ্ছৃঙ্খল জনতার ভিড় (মব), আর এই ভিড় ছিল মন্দ। এডওয়ার্ড গিবনের ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে রচিত বই ‘ডিক্লাইন অ্যান্ড ফল অব দ্য রোমান এম্পায়ার’-এ হরহামেশাই রোমক ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতার ভিড়’ দেখা যায়; এবং প্রায়ই তারা কোনো না কোনো আপসহীন কর্তৃত্ববাদী গলাবাজ নেতার প্ররোচনায় শোরগোল তুলে মুফতে খাবারদাবার আর বিনোদনের (রুটি ও সার্কাস) দাবি জানায়। যদিও শাসনক্ষমতা তাদের হাতে যায় না, কিন্তু শাসন কে করবে না করবে সেটা তারা কখনো-সখনো ঠিক করে দেয়।
গিবন ছিলেন, যাকে বলে, একধরনের রক্ষণশীল র্যাডিক্যাল; খ্রিষ্টধর্ম সম্পর্কে ভীষণ অবজ্ঞা পোষণ করতেন, আর তাঁর গা ঘেঁষাঘেঁষি ছিল মুক্ত চিন্তার অধিকারী এপিকিউরিয়ানিজমের সঙ্গে, অর্থাৎ চতুর্থ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এথেন্সে বাস করা সেই দার্শনিক এপিকিউরিয়াসের ‘আনন্দ বা সুখই পরম মঙ্গল, এবং সুখ আসে সংযম, সরলতা, বন্ধুত্ব এবং সম্প্রদায় থেকে’, এই মতবাদের অনুসারী ছিলেন তিনি। কিন্তু গিবন আবার সামাজিক অব্যবস্থাকে ভয় পেতেন। উচ্ছৃঙ্খল জনতার ভিড় বলতে তিনি বুঝতেন তাঁর নিজের শহর লন্ডন বা রোমের মতো কোনো বড় শহরের লুম্পেনপ্রলেতারিয়েত তথা শ্রেণিচেতনাহীন নিম্নবর্গীয় লোকজনকে (উল্লেখ্য, ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দে গিবন রোম সফর করেন এবং সে বছরেরই ১৫ অক্টোবর রোমের বিখ্যাত সাতটি পাহাড়ের একটি ক্যাপিটিলাইন বা ক্যাপিটলের ধ্বংসাবশেষ দেখে তিনি এমনই অভিভূত হয়ে পড়েন যে সেই অভিজ্ঞতাই তাঁকে ’ডিক্লাইন অ্যান্ড ফল অব দ্য রোমান এম্পায়ার’ লেখার অনুপ্রেরণা জোগায়)।
ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকের পটভূমিতে রচিত চার্লস ডিকেন্সের প্রথম উপন্যাস ‘পিকউইক পেপার্স’-এর নামচরিত্র পিকউইক সাহেবকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে একটা সাধারণ নির্বাচনের সময় উচ্ছৃঙ্খল জনতার দুটো ভিড় পরস্পরকে লক্ষ করে স্লোগান দিতে থাকলে কী করা উচিত। তখন পিকউইক মহাশয় তাঁর স্বভাবসুলভ প্ররোচনামূলক উত্তরে বলেন, ‘যে দলটা বড় সেটার সঙ্গে গলা মেলানো।’ ধীরে ধীরে উচ্ছৃঙ্খল জনতার ভিড় সম্পর্কে এই আতঙ্কজনক ধারণা বদলে যায়। সে জায়গায় আসে ‘অসংগঠিত জনতার ভিড়’-এর একটা প্রতিচ্ছবি, যে জনতা অধিকাংশ সময়েই ভালো, আর যখন খারাপ তখন তা যেকোনো কিছুর চাইতে কমিক বা মজাদার।
ছবি: সংগৃহীত