ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ট্রাম্পের প্রস্তাবে কি রাজি হবেন সৌদি যুবরাজ
Published: 10th, November 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্ভাবনার কথা বললেও এই মাসের শেষে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) হোয়াইট হাউস সফরের সময় সেটা হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম।
কয়েক দশকের শত্রুতার পর ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে বদলে দিতে পারে। আর যদি তা হয়, তাহলে এই অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
ট্রাম্প গত মাসে বলেছিলেন, তিনি আশা করেন সৌদি আরব ‘খুব শিগগিরই’ অন্যান্য মুসলিম দেশের সঙ্গে যোগ দেবে, যারা ২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে।
তবে, দুটি উপসাগরীয় সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, রিয়াদ কূটনৈতিক চ্যানেলে ওয়াশিংটনকে ইঙ্গিত দিয়েছে, তাদের অবস্থান পরিবর্তিত হয়নি। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য একটি রোডম্যাপে (পথনকশা) সম্মতি থাকলেই কেবল তারা চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে।
রিয়াদ বলেছে, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কূটনৈতিক ভুল এড়ানো এবং প্রকাশ্যে যেকোনো বিবৃতি দেওয়ার আগে সৌদি আরব ও মার্কিন অবস্থানের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা। সূত্র জানিয়েছে, মূল লক্ষ্য হলো ১৮ নভেম্বরের হোয়াইট হাউসের আলোচনা বা তারপরে যেকোনো ধরনের বিভ্রান্তি এড়ানো।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক ডেপুটি জোনাথন পানিকফ বলেছেন, এমবিএস নামে পরিচিত যুবরাজ ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একটি বিশ্বাসযোগ্য পথনকশা ছাড়া অদূর ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবেন না।’
বর্তমানে ওয়াশিংটনের চিন্তক প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলে থাকা পানিকফ বলেন, এমবিএস সম্ভবত ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর প্রভাব ব্যবহার করে ‘সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আরও সুস্পষ্ট এবং জোরালো সমর্থন’ চাইবেন।
আব্রাহাম চুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের আশাবাদী মন্তব্য
ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক সৌদি নাগরিক জামাল খাসোগিকে ২০১৮ সালে হত্যার পর আগামী সপ্তাহে যুবরাজ বিন সালমান প্রথমবারের মতো ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন। এমবিএসের সমালোচক হিসেবে খাসোগিকে ইস্তাম্বুলের সৌদি আরবের কনস্যুলেটে হত্যার পর বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তবে ওই হত্যাকাণ্ডে এমবিএস সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো ইতিমধ্যেই আব্রাহাম চুক্তির অধীনে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি শিগগিরই এই চুক্তির সম্প্রসারণের আশা করছেন।
ট্রাম্প ৫ নভেম্বর সময়সীমা না দিয়েই বলেছিলেন, ‘এখন অনেক দেশ আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দিচ্ছে। আশা করি, আমরা খুব শিগগির সৌদি আরবকেও পাব।’
গত ১৭ অক্টোবর টেলিভিশনে সম্প্রচারিত সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি, সৌদি আরব যোগ দেবে এবং আমি আশা করি অন্যরাও যোগ দেবে। আমি মনে করি, সৌদি আরব যোগ দিলে সবাই যোগ দেবে।’
ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক সৌদি নাগরিক জামাল খাসোগিকে ২০১৮ সালে হত্যার পর আগামী সপ্তাহে যুবরাজ বিন সালমান প্রথমবারের মতো ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন। এমবিএসের সমালোচক হিসেবে খাসোগিকে ইস্তাম্বুলের সৌদি আরবের কনস্যুলেটে হত্যার পর বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মরক্কো কর্তৃক স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল।
উপসাগরীয় সূত্র দুটি জানিয়েছে, রিয়াদ ওয়াশিংটনকে ইঙ্গিত দিয়েছে, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার যেকোনো পদক্ষেপকে নতুন কাঠামোর অংশ হতে হবে। শুধু কোনো চুক্তির সম্প্রসারণ হলে চলবে না।
ইসলাম ধর্মের জন্মস্থান এবং এর দুটি পবিত্রতম স্থান মক্কা ও মদিনার রক্ষক সৌদি আরবের জন্য ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া কেবল একটি কূটনৈতিক মাইলফলক নয়। এটি এই অঞ্চলের প্রাচীনতম ও সবচেয়ে জটিল সংঘাতের সমাধানের সঙ্গে জড়িত গভীরভাবে সংবেদনশীল জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর স্বাধীনতাকামী হামাসের যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালায়। এরপরই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইতিমধ্যে ইসরায়েলের নৃশংস ও নির্বিচার হামলায় গাজায় প্রায় ৬৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতির মধ্যেও নানা অজুহাত দেখিয়ে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এসব কারণে ইসরায়েলের প্রতি আরব জনগণের অবিশ্বাস রয়েছে। ফলে সৌদি আরবের পক্ষে এমন একটি পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হবে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মানাল রাদওয়ান গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট সময়সীমা প্রকাশ, আন্তর্জাতিক সুরক্ষা বাহিনী মোতায়েন এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনে গাজায় প্রত্যাবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন।
এমবিএস নামে পরিচিত যুবরাজ ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একটি বিশ্বাসযোগ্য পথনকশা ছাড়া অদূর ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবেন নাজোনাথন পানিকফ, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক কর্মকর্তারাদওয়ান বলেন, এসব পদক্ষেপ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য, যা আঞ্চলিক সংহতি এবং দ্বি–রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত।
সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোরবিরোধী হওয়ায় সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে ট্রাম্পের দাবি মেনে নেওয়ার তাৎক্ষণিক কোনো সম্ভাবনা দেখছে না।
সৌদি কর্মকর্তারা বলছেন, সেই দিকে অগ্রগতি এমন ছাড়ের ওপর নির্ভর করছে, যা ওয়াশিংটন বা ইসরায়েল কেউই বর্তমানে দিতে প্রস্তুত নয়।
ট্রাম্প ও যুবরাজ প্রতিরক্ষা চুক্তি চূড়ান্ত করতে প্রস্তুত
সৌদি কর্মকর্তারা ট্রাম্প-বিন সালমান বৈঠককে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং বিনিয়োগের দিকে টেনে নিতে আগ্রহী। কারণ, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল ইস্যুটি যেন আলোচনার সূচিকে ম্লান না করে দেয়।
ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠকে বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশটির শাসকের জন্য মার্কিন সামরিক সুরক্ষার পরিধি নির্ধারণকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি চূড়ান্ত হবে এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি দৃঢ় হবে।
তবে, প্রস্তাবিত এই চুক্তির পরিধি কমিয়ে আনা হয়েছে।
অন্য দুটি উপসাগরীয় সূত্র এবং তিনজন পশ্চিমা কূটনীতিক বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দীর্ঘ-প্রতিশ্রুত চুক্তির বিনিময়ে রিয়াদ একসময় যে পূর্ণ, কংগ্রেস-অনুমোদিত প্রতিরক্ষা চুক্তি চেয়েছিল, সেটার চেয়ে অনেকটা কম হবে।
দুই উপসাগরীয় সূত্র অনুসারে, রিয়াদ চুক্তিটিকে ভবিষ্যতে মার্কিন প্রশাসনের মাধ্যশে পূর্ণমাত্রার চুক্তিতে উন্নীত করার বিধান রাখার ওপর জোর দিয়েছিল। না হলে ভবিষ্যতে যেকোনো প্রেসিডেন্ট চাইলে এই চুক্তি বাতিল করে দিতে পারেন।
আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক নিয়ে একটি প্রকল্পের নেতৃত্বে থাকা ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের ফেলো ডেভিড মাকোভস্কি তিনি বলেন, এটি তাদের চাওয়া চুক্তি নয়, তারা হয়তো এটিকে নিখুঁত মনে নাও করতে পারে। তবে এটি (পূর্ণ চুক্তির দিকে যাওয়ার) একটি ধাপ।
উপসাগরীয় সূত্র ও পশ্চিমা কূটনীতিকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রত্বের মধ্যে যোগসূত্র আলোচনার এক জটিল সমীকরণ তৈরি করেছে। অন্য দুটি ক্ষেত্রে অগ্রগতির অভাবে রিয়াদ ও ওয়াশিংটন সীমিত একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে।
সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোরবিরোধী হওয়ায় সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে ট্রাম্পের দাবি মেনে নেওয়ার তাৎক্ষণিক কোনো সম্ভাবনা দেখছে না।তাঁরা বলছেন, স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া অগ্রসর হলে এই সমঝোতা একটি পূর্ণ চুক্তিতে পরিণত হতে পারে।
সৌদি আরবভিত্তিক চিন্তক প্রতিষ্ঠান গাল্ফ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান আবদুল আজিজ বলছেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর গাজায় উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সৌদি-মার্কিন আলোচনার পরিবেশ ও প্রেক্ষাপটে মৌলিক একটি পরিবর্তন এসেছে।
আবদুল আজিজ বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র এখনো রয়েছে। তবে রিয়াদ এখন সৌদি আরবের জাতীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তাকে আলাদাভাবে সমাধান করতে চায়।
ইরানের হুমকি কমে আসছে
ন্যাটোর পদ্ধতিতে প্রতিরক্ষা চুক্তি করা অনেক দূরের সম্ভাবনা বলে মনে হচ্ছে। কারণ, আঞ্চলিক সমীকরণ পরিবর্তিত হচ্ছে এবং ওয়াশিংটনে রাজনৈতিক বাধা রয়েছে।
একসময় রিয়াদের বাধ্যতামূলক মার্কিন গ্যারান্টি চাওয়ার প্রধান কারণ ছিল ইরান। গত এক বছরে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক অবকাঠামোর যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে তারা কৌশলগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
তেহরানের প্রক্সি বাহিনী, লেবাননের হেজবুল্লাহ আন্দোলন, গাজার হামাস এবং ইয়েমেনের হুতিরাও বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছে।
ইরানের চাপ কমে আসায় কংগ্রেসের দুই-তৃতীয়াংশের অনুমোদন সাপেক্ষে চুক্তি করার জন্য সৌদি আরবের আগ্রহ কমে গেছে।
দুই উপসাগরীয় সূত্র জানিয়েছে, এই ধরনের একটি চুক্তি সম্ভবত শর্তসাপেক্ষে আসবে। এর মধ্যে চীনের সঙ্গে সৌদি আরবের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সম্পর্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তার সঙ্গে চীনের সঙ্গে কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা করা রিয়াদের জন্য জটিল হয়ে উঠবে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী যৌথ সামরিক মহড়া বৃদ্ধি করা হবে, মার্কিন ও সৌদি প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা আরও গভীর করা হবে এবং চীনের সঙ্গে রিয়াদের সামরিক-শিল্প সম্পর্ক সীমিত করার জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
এটি সৌদি আরবে উন্নত মার্কিন অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রেও গতি আনবে। এর মাধ্যমে আগের চুক্তিগুলোতে যে বিলম্ব ও রাজনৈতিক বাধা সৃষ্টি হয়েছিল, তা দূর করা যাবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র কর মকর ত র জন ত ক ক টন ত ক প রস ত য বর জ র র জন র জন য আরব র বলছ ন ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় ক্রয়কৃত জমির দখল পেতে খোলা আকাশের নিচে একটি পরিবার
জীবনের শেষ সম্বল ১৬ লাখ টাকা দিয়ে নগরীতে মাত্র ২ শতক জমি কিনেছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. নিজাম উদ্দিন (কালু)। সেখানে একটি ছোট্র দোকান করে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু জমি বিক্রেতা সেলিম ও শামীম- এ দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বের বলি হন তিনি।
বিক্রেতা সেলিম টাকা নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমালেও খুলনায় থাকা শামীম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর কাউন্সিলর ডনকে দিয়ে ব্যবসায়ী কালু ও তার পরিবারকে কাউন্সিলর অফিসে নিয়ে আটকে দোকান-ঘর ভাঙচুর করে রাতারাতি ক্রয়কৃত জমি থেকে তাকে উচ্ছেদ করে।
আরো পড়ুন:
খুবির ভর্তি পরীক্ষা শুরু ১৮ ডিসেম্বর
খাবার ও পানি সমস্যায় খুবির ছাত্রী হলে ভোগান্তি চরমে
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর নানা দেনদরবার করেও নিজের জমির দখল না পেয়ে গত ৫ নভেম্বর থেকে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী কালু ও তার স্ত্রী ক্রয়কৃত জমিতে উঠেছেন। কিন্তু সেখানে কোনো ঘর না থাকায় পরিবারটির রাত-দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে। দিনে প্রখর রোদ এবং রাতের ঠান্ডায় তারা ঝুঁকির মধ্যে সেখানে অবস্থান করছেন।
এমনকি প্রতিনিয়ত জমি বিক্রেতা সেলিমের ভাই শামীম আহমেদ ও স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীর হুমকি-ধামকির কারণেও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। এ ঘটনায় রবিবার (৯ নভেম্বর) খুলনা থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, পরিচিত কেউ এ বিষয়ে কালুর সঙ্গে কথা বলতে গেলেও শামীমের লোকজন তাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ছবি তুলে এবং ভিডিও করে রাখছে। এমনকি দেশিয় অস্ত্র নিয়ে কালু ও তার পরিবারকে সেখান থেকে তুলে দিতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। নিজের ক্রয়কৃত সম্পত্তির দখল বুঝে পেতে এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী নিজাম উদ্দিন কালু খুলনা মহানগরীর দোলখোলার ৪৫/১ ইসলামপুর রোড এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে। বর্তমানে তিনি কাঁচামালের ব্যবসা করেন। তার স্ত্রী মেরি বেগম ও দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। আর ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত।
ভুক্তভোগী কালু অভিযোগ করে জানান, ২০১৭ সালে নগরীর দোলখোলা শীতলাবাড়ি সংলগ্ন মসজিদের পাশে শেখ মো. সেলিমের কাছ থেকে ৩ বছরের চুক্তি করে দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে গ্যাসের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু চুক্তির ২ বছর হতে না হতেই সেলিম তার দোকানের জায়গা বিক্রির জন্য কালুকে প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে সেলিমের কাছ থেকে ২০২০ সালের ১ নভেম্বর ২ শতক জমি ১৬ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করে কবলা দলিল করে নেন (দলিল নং-৪২৯৫), যা পরবর্তীতে নিজের নামে রেকর্ডও করেন তিনি। যথারীতি তিনি খাজনাও পরিশোধ করেছেন।
তিনি জানান, তিনি জমি কেনার পর বিক্রেতা সেলিমের ভাই শামিম থানায় তার বিরুদ্ধে জিডি করেন। পরে পুলিশ এসে কালুর কাগজ সঠিক দেখে সেখান থেকে চলে যায়। ২০২১ সালে সেলিমের ভাই শামিম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর কেসিসির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর জেডএ মাহমুদ ডনকে দিয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে কালুর দোকানঘর ভাঙচুর করে বিপুল অংকের অর্থের মালামাল লুট করে এবং বাইরে ফেলে দেয়।
তিনি আরো জানান, ওইদিন শামিমের কথামতো ডনের সন্ত্রাসী বাহিনী ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের তুলে তার কাউন্সিলর অফিসে তুলে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে কালুকে ডন প্রশ্ন করে ‘কেন তুমি এ জমি কিনেছো’ এ কথা বলে তাকে হুমকি-ধামকি দেন। এভাবে তাদের জোরপূর্বক নিজস্ব জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়।
এদিকে, জমির দখল বুঝে পেতে গত ৫ নভেম্বর থেকে অসহায় কালুর পরিবারটি ওই জমিতে উঠে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। খবর পেয়ে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা তথ্য জানতে গেলে অসহায় কালুর প্রতিপক্ষরা বাধা সৃষ্টি করে। এমনকি সাংবাদিকরা সেখান থেকে আসার কিছুক্ষণ পর প্রতিবেশী শামিম তার ছেলে ছানিম, ভাগ্নে সেতু ও মিজানসহ ৬-৭ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল চাপাতি হাতে নিয়ে গেটে তালা মেরে কালুর ওপর হামলার চেষ্টা করে। ওই সময় তাদের বসবাসের তাবুও কেটে ফেলে দেয় এবং ওই জমি থেকে সবকিছু নিয়ে বের হয়ে যেতে বলে।
ভুক্তভোগী নিজাম উদ্দীন কালুর স্ত্রী মেরি বেগম বলেন, “সাংবাদিকরা আমাদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর শামিম, তার ছেলে ছানিম, ভাগ্নে সেতু ও মিজান সহ ৬-৭ জন একত্রিত হয়ে দা হাতে নিয়ে গেটে তালা দিয়ে হামলার চেষ্টা করে এবং আমাদের মালামাল সবকিছু নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে বলে। আমাদের এখন নিরাপত্তা দেবে কে?” তিনি তাদের জমি বুঝে পেতে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জমি বিক্রেতা শেখ মো. সেলিমের ভাই মো. শামিম আহমেদ বলেন, “নিজাম উদ্দিন কালু যে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি আদালতে মামলা করেছি। আদালতের মাধ্যমে ঘটনার বিষয়ে জবাব দেওয়া হবে।”
চাপাতি হাতে গেটে তালা দিয়ে হামলার চেষ্টার বিষয়ে জানতে চাইলে শামিম সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে বলেন, “ওদের অত্যাচারে আমরাই নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।”
লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা সদর থানার এসআই মো. আশরাফ হোসেন বলেন, “নিজাম উদ্দিন কালু থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা/নুরুজ্জামান/মেহেদী