ফেনীতে আট বছর বয়সী এক শিশুকে গলা টিপে হত্যার মামলায় একমাত্র আসামিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। 

সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এন এম মোর্শেদ খান আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।

আরো পড়ুন:

আদালত প্রাঙ্গণে সাবেক স্বামীর ছুরিকাঘাতে তরুণী খুন 

ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলছিল মালয়েশিয়া প্রবাসী

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম ওমর আলী হায়দার। হত্যাকাণ্ডের সময় তার বয়স ছিল ১৫ বছর। তিনি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর মজলিশপুর ইউনিয়নের চান্দলা গ্রামের মোমিনুল হকের ছেলে।

আদালত ও মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর বিকেলে বাড়ির পাশে বক ধরাকে কেন্দ্র করে একই গ্রামের কামলাবাড়ির রিপন মিয়ার ছেলে মো.

রিফাত হোসেনের (৮) সঙ্গে ওমর আলী হায়দারের ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রিফাতকে গলা টিপে হত্যা করেন ওমর আলী। রাত পর্যন্ত রিফাতের খোঁজ না পেয়ে পরিবার ও এলাকাবাসী বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওমর আলীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পাশের একটি জমি থেকে রিফাতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরদিন নিহত শিশুর চাচা আনোয়ার হোসেন শিপন বাদী হয়ে ওমর আলী হায়দারকে একমাত্র আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই দিনেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।

পরে ওমর আলী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) এ কে এম ছায়েদুর রহমান ২০১৯ সালের ৩০ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট সাহাব উদ্দিন। মামলায় ১৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন হাজারী বলেছেন, “সাক্ষ্য ও স্বীকারোক্তিতে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আদালত ন্যায়বিচার করেছেন।”

ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে ‘মব’ সৃষ্টি করে বালুবোঝাই ট্রাক নিয়ে গেলেন পরিবহনশ্রমিক নেতা

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের তল্লাশচৌকিতে আটক হওয়া একটি বালুবোঝাই ট্রাক ‘মব’ সৃষ্টি করে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে পরিবহনশ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে। দুটি বাসে করে লোকজন নিয়ে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে মব সৃষ্টি করে ওই পরিবহনশ্রমিক নেতা ট্রাকটি নিয়ে যান। এ সময় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা অচল করে দেওয়ার হুমকি দেন মব সৃষ্টিকারীরা।

আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কের উপজেলা পরিষদের প্রবেশ ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একাধিক ভিডিও প্রথম আলোর কাছে এসেছে। ঘটনার সময় এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। অভিযুক্ত পরিবহনশ্রমিক নেতার নাম মাহফুজ আহমদ। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ট্রাক পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সাদাপাথর লুটপাট–কাণ্ডের পর সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কের উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে তল্লাশিচৌকি বসায় কোম্পানীগঞ্জ থানা–পুলিশ। ওই তল্লাশিচৌকিতে পাথর ও বালুবোঝাই যানবাহনগুলো থামিয়ে কাগজপত্র তল্লাশি করা হয়। বেলা সোয়া ১১টার দিকে ভোলাগঞ্জ থেকে সিলেটগামী একটি বালুবোঝাই ট্রাক আটক করে পুলিশ। এ সময় চালকের কাছে কাগজ চাওয়া হলে বৈধ কোনো কাগজ প্রদর্শন করতে পারেননি। এ সময় ট্রাকচালক মুঠোফোনের মাধ্যমে একজনকে ফোন করে বিষয়টি জানান। এর কিছু সময় পরই দুটি বাসে করে শতাধিক লোক তল্লাশিচৌকিতে আসেন। বাস থেকে নেমে তাঁরা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করেন। এর নেতৃত্ব দেন পরিবহনশ্রমিক নেতা মাহফুজ আহমদ। এ সময় পরিবহনশ্রমিকেরা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে রাস্তায় চলাচল করা যানবাহন থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ তোলেন। একপর্যায়ে আটক হওয়া বালুবোঝাই ট্রাক সেখান থেকে নিয়ে চলে যান।

এ সময় পরিবহনশ্রমিকদের ধারণ করা একটি ভিডিওতে মাহফুজকে বলতে শোনা যায়, ‘কোম্পানীগঞ্জের পুলিশ প্রতিদিন চাঁদাবাজি করে, শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রতিদিন চাঁদা দাবি করে, হয়রানি করে। এএসআই হামিদ ড্রাইভারের কাছে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছে।’ এ সময় মাহফুজ আহমদকে পুলিশ সদস্যদের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায়।

অন্য আরকেটি ভিডিওতে বাসে করে আসা লোকজনকে বালুবোঝাই ট্রাকের সামনে এসে থামতে দেখা যায়। এ সময় বাস থেকে নামা লোকজন লাঠি হাতে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে ঠেলে রাস্তার পাশে নামিয়ে দেন। ভিডিওতে মাহফুজ আহমদকেও এক পুলিশ সদস্যকে ঠেলে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। একপর্যায়ে বালুবোঝাই ট্রাকটিকে তল্লাশচৌকি থেকে নিয়ে যান পরিবহনশ্রমিকেরা।

পরিবহনশ্রমিক নেতা মাহফুজ আহমদ জানান, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে অংশ নিতে সিলেট থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে তিনটি বাসে করে যাচ্ছিলেন। এ সময় একজন ট্রাকচালক ফোন দিয়ে ট্রাক আটকের বিষয়টি জানান। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন পুলিশ তল্লাশচৌকিতে মাটি নিয়ে যাওয়া একটি ট্রাক আটক করে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা তাঁকে (মাহফুজ আহমদকে) ধাক্কা দেয়। এতে অন্য শ্রমিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে গেলে তিনি নিবৃত্ত করেন বলে দাবি করেন। কিন্তু এখন পুলিশ উল্টো অপপ্রচার চালাচ্ছে। মাহফুজ বলেন, পুলিশকে দিয়ে চাঁদাবাজি করানো হচ্ছে। টাকা দিলে বৈধ আর না দিলে অবৈধ বলে আটক করা হচ্ছে। সাদাপাথর লুটপাটের পেছনেও পুলিশ সদস্যরা জড়িত বলেও দাবি ওই শ্রমিকনেতার।

তল্লাশিচৌকিতে দায়িত্ব পালন করা কোম্পানীগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল হামিদ বলেন, চৌকিতে তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় বালুভর্তি একটি ট্রাক আটক করে বৈধ কাগজপত্র চাইলে ট্রাকচালক একজনকে ফোন দিয়েছিলেন। এর পরপরই পরিবহনশ্রমিক নেতা মাহফুজ দুটি বাসে করে আসা লোকজন নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে মব সৃষ্টি করে আটক করা ট্রাকটি নিয়ে চলে যান। বিষয়টি তিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অবহিত করেছেন।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি রতন শেখ প্রথম আলোকে বলেন, পরিবহনশ্রমিক নেতা মাহফুজ বাসবোঝাই মানুষ নিয়ে গিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে বালুবোঝাই একটি ট্রাক ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বরগুনায় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড
  • ‘ভুল করে’ ভারতে প্রবেশ দুই যুবকের, অতঃপর...
  • সিলেটে ‘মব’ সৃষ্টি করে বালুবোঝাই ট্রাক নিয়ে গেলেন পরিবহনশ্রমিক নেতা