কেইন, এমবাপ্পে নাকি হলান্ড: এই মৌসুম কার
Published: 8th, October 2025 GMT
ভোরের সূর্য নাকি দিনের পূর্বাভাস দেয়। যদিও সেই পূর্বাভাস সব সময় ঠিক হয় না। রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে বিকেল গড়িয়ে নেমে আসতে পারে ঝুম বৃষ্টি। তার ওপর সাম্প্রতিক সময়ে আবহাওয়ার মেজাজও বেশ চঞ্চল—ক্ষণে রোদ, ক্ষণে মেঘ। ফলে ভোরের আলো দিন শেষে একই রকম উজ্জ্বল থাকে না সব সময়। ফুটবলেও গল্পটা প্রায় একই। মৌসুমের শুরুতে যে দল বা খেলোয়াড় ঝলমলে ছাপ রাখেন, শেষ পর্যন্ত সেই দ্যুতি টেকে না অনেক সময়।
এর পেছনে কারণও কম নয়—ছন্দ ধরে রাখা, চোট, দলীয় পারফরম্যান্স—সব মিলিয়ে অনেক কিছুই প্রভাব ফেলে। তবু একটা কথা ঠিক, শুরুটা পুরো মৌসুমের সুর ঠিক করে দেয়। শুরু থেকে ফর্ম ও ছন্দ ধরে রাখতে পারলে মৌসুমের শেষেও তা সাধারণত দারুণ ফল এনে দেয়।
সেই হিসেবে এ মৌসুমের শুরুতে আলো ছড়ানো খেলোয়াড়দের মধ্যে হ্যারি কেইন, কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আর্লিং হলান্ড এখনই দিচ্ছেন বড় কিছুর ইঙ্গিত। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে তিনজনই দুর্দান্ত, ম্যাচের পর ম্যাচে গোল করে চলেছেন তাঁরা।
আরও পড়ুনশীর্ষে ওঠা রিয়ালকে দুশ্চিন্তায় ফেললেন এমবাপ্পে০৫ অক্টোবর ২০২৫চলতি মৌসুমে হ্যারি কেইন রয়েছেন অবিশ্বাস্য ছন্দে। বুন্দেসলিগায় এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচে সব কটিতে জিতেছে বায়ার্ন মিউনিখ। দলটি গোল করেছে ২২টি, যার অর্ধেকই কেইনের (১১টি)। আরও ৩ গোলে তাঁর সহায়তা। এই ৬ ম্যাচে দুটি হ্যাটট্রিকও করেছেন তিনি। চ্যাম্পিয়নস লিগে দুই ম্যাচে কেইনের গোল ৪টি। জার্মান কাপ ও সুপার কাপ মিলিয়ে করেছেন আরও ৩টি।
সব মিলিয়ে কেইনের গোলসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ ম্যাচে ১৮। যেকোনো মানদণ্ডে এ পরিসংখ্যান মুগ্ধ করার মতো। এই ধারাবাহিকতা যদি মৌসুমজুড়ে ধরে রাখতে পারেন, কেইন শেষ করতে পারেন এক অসামান্য উচ্চতায়। সেই সাফল্য বায়ার্নের শিরোপা জয়ের পথেও রাখতে পারে বড় ভূমিকা, পূর্ণতা পেতে পারে তাঁর ব্যক্তিগত অর্জনের ঝুলিও।
দারুণ ছন্দে কেইন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ইন র
এছাড়াও পড়ুন:
ফার্গুসন-ওয়েঙ্গারের মতো কিংবদন্তিদের পেছনে ফেলে গার্দিওলার ইতিহাস
পেপ গার্দিওলা আবারও ইতিহাস লিখলেন। ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে ম্যানচেস্টার সিটির রোববার (০৫ অক্টোবর) রাতের জয় তাকে নিয়ে গেল এক নতুন উচ্চতায়, প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত ২৫০ জয় পাওয়া কোচ হিসেবে। মাত্র ৩৪৯ ম্যাচেই এই অসাধারণ মাইলফলকে পৌঁছে গেছেন স্প্যানিশ এই মাস্টারমাইন্ড।
এই যাত্রায় পেছনে ফেলেছেন ফুটবল ইতিহাসের দুই মহাতারকা- ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন (৪০৪ ম্যাচে ২৫০ জয়) এবং আর্সেনালের প্রাক্তন কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার (৪২৩ ম্যাচে ২৫০ জয়)।
আরো পড়ুন:
মাত্র ১৪ বছর বয়সেই সূর্যবংশীর ছক্কার বিশ্বরেকর্ড
বেথেলের ইতিহাস গড়া দিনে ইংল্যান্ডের দাপুটে জয়
রবিবারের ম্যাচে ব্রেন্টফোর্ডকে ১-০ গোলে হারায় সিটি, একমাত্র গোলটি করেন আরলিং হালান্ড এবং ম্যাচের প্রথমার্ধে নবম মিনিটে। এই জয়ের ফলে লিগ টেবিলে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
প্রিমিয়ার লিগে ২৫০ জয়ের মাইলফলক ছোঁয়া কোচের সংখ্যা কম নয়, কিন্তু গার্দিওলার মতো দ্রুত কেউ পারেননি। যেখানে ডেভিড ময়েসকে এই সংখ্যায় পৌঁছাতে লেগেছে ৬৪৫ ম্যাচ, সেখানে গার্দিওলা তা করেছেন প্রায় ৩০০ ম্যাচ কমে। এটি প্রমাণ করে কেন গার্দিওলার ফুটবল দর্শন, তার কৌশল আর শৃঙ্খলা আধুনিক ফুটবলের এক অনন্য পাঠ।
মৌসুমের শুরুটা তেমন সুখকর ছিল না ম্যানচেস্টার সিটির জন্য। টানা দুটি ম্যাচ হেরেছিল টটেনহ্যাম ও ব্রাইটনের বিপক্ষে। কিন্তু এরপর থেকেই যেন আবার পুরনো ছন্দে ফিরেছে ‘দ্য সিটিজেনস’। সবশেষ চারটি লিগ ম্যাচে অপরাজিত তারা, আর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা সাত ম্যাচে অজেয়।
এই ধারাবাহিক পারফরম্যান্সই গার্দিওলার দলের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে, এবং লিগ টেবিলেও তাদের অবস্থান দিন দিন মজবুত হচ্ছে।
তবে রবিবারের জয়েও দুশ্চিন্তা আছে একটা, রদ্রির ইনজুরি। ম্যাচের মাত্র ২০ মিনিটের মাথায় মাঠ ছাড়তে হয় স্প্যানিশ মিডফিল্ডারকে। যদিও তিনি হেঁটে মাঠ ছাড়েন। কিন্তু ব্যথায় তার মুখের অভিব্যক্তি বলছিল ভিন্ন কথা। গার্দিওলার দলে রদ্রির ভূমিকা অপরিসীম, ফলে তার অনুপস্থিতি সিটির জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে।
নরওয়ের গোলমেশিন হালান্ড যেন আবার আগুনে ফর্মে ফিরেছেন। নতুন মৌসুমে এখন পর্যন্ত সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মাত্র ৯ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ১২। তবে নিজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স সত্ত্বেও হালান্ড জানিয়েছেন, ইউরোপের শীর্ষ গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে হ্যারি কেইন ও কিলিয়ান এমবাপ্পের চাপ তিনি টের পাচ্ছেন। “চাপ সবসময় থাকে,” বলেছেন হালান্ড, “কিন্তু আমি সেটাকেই প্রেরণা হিসেবে নিচ্ছি।”
গার্দিওলার এই ২৫০তম জয় তাই শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি এক যুগান্তকারী অধ্যায়। যেখানে ফুটবল কৌশল, দৃঢ়তা আর নেতৃত্ব মিলেমিশে তৈরি করেছে এক নতুন ইতিহাস। যা আগামী প্রজন্মের কোচদের জন্য হবে এক অনুপ্রেরণার পাঠ।
ঢাকা/আমিনুল