দৌলতপুর প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে জনবল সংকট, ভোগান্তিতে খামারিরা
Published: 8th, October 2025 GMT
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ও পশু হাসপাতাল চরম জনবল সংকটে ভুগছে। দীর্ঘদিনের এ সংকট এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ফলে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার খামারি ও কয়েক লাখ কৃষক নানা ধরনের বিপাকে পড়েছেন।
অন্যদিকে, মাসখানেক আগে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বদলির পর পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে উঠেছে।
আরো পড়ুন:
গবাদিপশুর ক্ষুরা রোগ: প্রতিকার ও প্রতিরোধই সর্বোত্তম পন্থা
মৌলভীবাজারে মুরগির বাচ্চার মড়ক, খামারিরা দিশেহারা
প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এই কার্যালয়ে ১১টি পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র একজন ড্রেসার ও একজন উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (প্রাণিস্বাস্থ্য)। বাকি নয়টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। তার মধ্যেও বর্তমানে উপ-সহকারী কর্মকর্তা অসুস্থতাজনিত কারনে ছুটিতে থাকায় কার্যত পুরো অফিস অচল হয়ে পড়েছে।
মাসখানেক আগে দৌলতপুরের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বদলি হলে তার জায়গায় পার্শ্ববর্তী মিরপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে একযোগে দুটি উপজেলার দায়িত্ব পালন করায় তিনি দৌলতপুরে নিয়মিত উপস্থিত হতে পারছেন না। ফলে খামারিরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
প্রায় ৮ লাখ মানুষের বসবাসের এই বৃহৎ উপজেলায় রয়েছে সাড়ে ৩ লাখের বেশি গবাদি পশু ও প্রায় ১ কোটি হাঁস-মুরগি। এখানকার মানুষের জীবিকা মূলত কৃষি ও পশুপালনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় পশুরা সময়মতো চিকিৎসা পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেক খামারি গ্রাম্য পশুচিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন, যা প্রাণীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর এলাকার খামারি নাইম ইসলাম জানান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে জনবল নেই বললেই চলে। এখন তো স্থায়ী ডাক্তারই নেই। ডাকলেও আসেন না, আর এলে টাকা চাওয়া হয়। তাই বাধ্য হয়েই গ্রামের চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হচ্ছি।
একই অভিযোগ করেন স্থানীয় পশুপালক দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, “তিনদিন ধরে আমার দুটি গরু অসুস্থ। হাসপাতালে কোনো ডাক্তার না থাকায় গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছেই যেতে হচ্ছে। এতে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে গরুর মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।”
তবে দৌলতপুর উপজেলায় বর্তমানে প্রকল্প ভিত্তিক আরো পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে চারজন কর্মরত আছেন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পে এবং একজন উন্নত জাতের ঘাস চাষ প্রকল্পে। তাদের চলতি বছরের শেষ দিকে ও ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে চাকরির মেয়াদ শেষ হবে।
মিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও দৌলতপুরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, “দৌলতপুরে মাত্র দুজন স্থায়ী জনবল রয়েছে। প্রকল্প ভিত্তিক আরো পাঁচজন কাজ করছেন। তবে স্থায়ী জনবল না থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা নিয়মিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে যাচ্ছি।”
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আল মামুন হোসেন মন্ডল বলেন, “জেলার প্রায় সব উপজেলাতেই জনবল সংকট রয়েছে। তবে দৌলতপুরের পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক। সেখানে বর্তমানে কোনো স্থায়ী ডাক্তার বা সার্জন নেই। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। আশা করি, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প দ লতপ র র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে ৫০টি মিডিয়া থাকলে ৪০টিতেই প্রভাব খাটাচ্ছে বিএনপি: সারজিস
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘এখন দেশে ৫০টি মিডিয়া থাকলে ৪০টিতেই প্রভাব খাটাচ্ছে বিএনপি।’
এনসিপির নেতার নামে নতুন টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন প্রসঙ্গে মঙ্গলবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। রাত পৌনে নয়টার দিকে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় এনসিপির জেলা সমন্বয় সভা শেষে সারজিস আলম সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘কোনো একটা টেলিভিশনের অনুমোদন হয়েছে, আমরা যেটা জেনেছি সেখানে এনসিপির একজন আছেন। কিন্তু একজন দিয়ে তো টেলিভিশনের অনুমোদন পাওয়া যায় না। আমরা যেটা শুনেছি সেখানে বিএনপির লোকজনও আছেন, জামায়াতের ও স্বতন্ত্র লোকও আছেন। কেন শুধু এনসিপিকে ফোকাসড করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘আমরা চাই মিডিয়া প্রফেশনাল জায়গায় থাকুক। আপনারা (সাংবাদিকেরা) যে কথাটা বলতে চান, যে সত্যটা প্রকাশ করতে চান, তা করেন। কোনো একটা রাজনৈতিক দল যত বড়ই হোক বা ছোটই হোক, খারাপ হলে সেটা বলবেন, ভালো হলেও সেটা বলবেন।’
‘সেফ এক্সিট’ প্রসঙ্গে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যাপ্রায় ২৫ মিনিটের বক্তব্যে সারজিস আলম নওগাঁয় দেওয়া ‘মৃত্যু ছাড়া কিছু উপদেষ্টার সেফ এক্সিট নেই’ বক্তব্যেরও ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘এক মিনিটের একটি বক্তব্যকে তিনটি শব্দে প্রকাশ করলে শুনতে একটু দুর্ধর্ষ লাগে। আমরা মনে করি, উপদেষ্টারা যে দায়িত্ব পেয়েছেন, সেটা সৌভাগ্যক্রমে। আমরা তাঁদের বলতে চাই, এত রাজনৈতিক চাপ, মানুষের প্রত্যাশা—এগুলো বাদ, কোনোভাবে নির্বাচনটা দিয়ে চলে যান, তাহলে যাওয়ার পরে তাঁদের যে আশা ছিল, শান্তি পাবেন, সে শান্তিটা পাবেন না। কারণ, এটা ইতিহাসের এত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, এ অধ্যায় যখনই আসবে, তখনই তিনি আলোচিত হবেন।’
আওয়ামী লীগের ফিরে আসা প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, ‘যে যেভাবেই বলুক না কেন, দেশ বা দেশের বাইরে বৈঠক হোক না কেন, আওয়ামী লীগের ফিরে আসার সুযোগ নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে দলীয় প্রতীক নিয়েও কথা বলেন সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘শাপলা প্রতীক না দেওয়াটা আমরা মানব না। শাপলা পেয়েই এনসিপি নির্বাচন করবে।’
সমন্বয় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন, কেন্দ্রীয় সদস্য আসিফ মোস্তফা জামাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান সমন্বয়কারী আলাউল হক।