ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা সফল হওয়া নিয়ে এখনো ‘আশা’ রয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস। তারা ইসরায়েলের সঙ্গে তালিকা বিনিময় করেছে। তালিকায় থাকা ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদের মুক্তি চায় তারা। বিনিময়ে তাদের কাছে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা নিয়ে ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। ইসরায়েল ও হামাস দুই পক্ষই ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ইতিবাচক সাড়া দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। গতকাল বুধবারও পরোক্ষ আলোচনা শুরু হওয়ার কথা।

আলোচনায় অগ্রগতি প্রসঙ্গে গতকাল হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাহের আল-নুনু শারম আল শেখ থেকে এএফপিকে বলেছেন, ‘মধ্যস্থতাকারীরা গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে যেকোনো ধরনের বাধা দূর করতে ব্যাপক চেষ্টা করছেন। সব পক্ষের মধ্যে আশাবাদী মনোভাব বিরাজ করছে।’ তিনি আরও বলেন, পরোক্ষ অস্ত্রবিরতির প্রথম ধাপে ইসায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের একটি তালিকা জমা দিয়েছে হামাস। বিনিময়ে হামাসের কাছে থাকা ৪৭ জন জিম্মিকে (জীবিত ও মৃত) মুক্তি দেওয়া হবে।

মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি বলেছেন, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জেরাড কুশনার এখন শারম আল শেখে অবস্থান করছেন। তাঁরা আসার পর থেকে তিনি যেসব খবর পেয়েছেন, তা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো গেলে তিনি ট্রাম্পকে মিসরে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন।

গত মঙ্গলবার ওভাল অফিসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, হামাস ও ইসরায়েল অস্ত্রবিরতিতে রাজি হলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা আছে।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল-থানি ও তুরস্কের গোয়েন্দাপ্রধান ইব্রাহিম কালিনের গতকালের আলোচনায় উপস্থিত থাকার কথা ছিল।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, শান্তিচুক্তি মেনে নিতে হামাসকে রাজি করাতে তুরস্ককে অনুরোধ করেছেন ট্রাম্প। ইসরায়েলকে শান্তির মূল বাধা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করা গুরুত্বপূর্ণ। শান্তির সব দায় শুধু হামাস ও ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপানো অন্যায্য ও অবাস্তব।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন। জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। তাঁদের মধ্যে ৪৭ জন এখনো জিম্মি। এর মধ্যে ২৫ জন আর বেঁচে নেই বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ওই দিন থেকেই গাজায় টানা নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৬৭ হাজার ১৭৩ জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে ২০ হাজার ১৭৯টি শিশু।

যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক প্যারিসে

রয়টার্স জানায়, গাজায় যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয়, আরব ও অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরা আজ প্যারিসে এক বৈঠকে মিলিত হবেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৈঠকে যোগ দেবেন।

বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে মিসরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনার সমান্তরালে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা–সংক্রান্ত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে। এ বৈঠকের উদ্দেশ্য হলো ওই পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে তা নির্ধারণ করা এবং প্রক্রিয়াটিতে বিভিন্ন দেশের যৌথ অঙ্গীকার মূল্যায়ন করা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে চাচাত ভাইকে হত্যার দায়ে ২ জনের মৃত্যুদণ্ড 

যশোরের ঝিকরগাছায় উপজেলায় চাচাত ভাইকে হত্যার দায়ে দুই ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মৃতুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক জুয়েল অধিকারী এ রায় ঘোষণা করেন।

আরো পড়ুন:

চট্টগ্রামে থানায় পুলিশ কর্মকর্তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার 

কুষ্টিয়ায় কৃষককে গুলি করে হত্যায় মামলা

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের ছোট পোদাউলিয়া গ্রামের দুই ভাই ওসমান ও আলী হোসেন। তারা মৃত ছবেদ আলী সরদারের ছেলে। একই সঙ্গে দণ্ডপ্রাপ্ত ওসমানের স্ত্রী খাদিজা খাতুনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত পিপি আজিজুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘হত্যা মামলায় দুই বছরের মাথায় রায় প্রদান নজিরবিহীন। সরকার পক্ষ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।’’ আসামি পক্ষ দাবি করেছে, তারা ন্যায় বিচার পাননি এবং উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

আদালত ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ছোট পোদাউলিয়া গ্রামের নুরুল হকের ছেলে কামরুল আমিনের সঙ্গে তার চাচাত ভাই ওসমান ও আলী হোসেনের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিজের জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণকে কেন্দ্র করে কামরুলের সঙ্গে ওসমান ও আলী হোসেনের বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে ওসমান ও আলী হোসেন বাড়ি থেকে ধারালো দা এনে কামরুল আমিনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে কামরুলের বড় ভাইয়ের স্ত্রী আনোয়ারা, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী পারভীন ও ভাইপো আতাউর রহমানও হামলার শিকার হন। চারজনকে কুপিয়ে জখম করে তারা পালিয়ে যায়। 

পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চারজনকেই যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে আনার পর কামরুলের মৃত্যু হয়। আহত তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় নিহত কামরুলের বাবা রুহুল আমিন সরদার তিনজনের বিরুদ্ধে ঝিকরগাছা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে ২০২৪ সালের ৩ জুলাই ঝিকরগাছা থানার উপ-পরিদর্শক বনি ইসরাইল আদালতে চার্জশিট জমা দেন।

ঢাকা/রিটন/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ