ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) দায়ের করা একটি অভিযোগে তাঁকে ‘গণহত্যায় জড়িত থাকার’ বিষয়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজায় বোমাবর্ষণে ইসরায়েলকে সমর্থন করায় রোমের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়।

গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সংস্থা আরএআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেলোনি একথা জানান। আইসিসিতে ইতালি সরকারকে অভিযুক্ত করার বিষয়ে এটাই প্রথম কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য। অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে আইসিসি এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলেনি। 

মেলোনি আরও জানান, আইসিসিতে ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইদো ক্রোসেত্তো ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানির ‘সমালোচনা’ করা হয়েছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি মনে করছেন, অভিযোগে দেশটির অস্ত্র ও মহাকাশ সংস্থা ‘লিওনার্দোর’ প্রধান রবার্তো সিঙ্গোলানির নামও থাকতে পারে।

আরও পড়ুনআইসিসির পরোয়ানা নিয়ে নেতানিয়াহুর ক্ষোভ, ইহুদিবিদ্বেষী বললেন বাইডেনও২২ নভেম্বর ২০২৪গত ১ অক্টোবর এ অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগপত্রে প্রায় ৫০ জন আইনের অধ্যাপক, আইনজীবী, জনগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ প্রায় ৫০ জন সই করেন। এএফপি জানিয়েছে, তাঁরা মেলোনি ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছেন।

টেলিভিশনে সম্প্রচার করা সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে মেলোনি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে, পৃথিবীতে বা ইতিহাসে এ ধরণের অভিযোগের আর কোনো নজির আছে।’

গত ১ অক্টোবর এ অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগপত্রে প্রায় ৫০ জন আইনের অধ্যাপক, আইনজীবী, জনগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ প্রায় ৫০ জন সই করেন। এএফপি জানিয়েছে, তাঁরা মেলোনি ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছেন।

ইতালির নেতাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি সরকারকে সমর্থন করার মধ্য দিয়ে, বিশেষ করে মারাত্মক অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে, ইতালির সরকার গাজায় চলমান গণহত্যা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত অত্যন্ত গুরুতর যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।’

এএফপির প্রতিবেদনের তথ্য, ফিলিস্তিনের একটি অধিকার সংগঠন জর্জিয়া মেলোনির বিরুদ্ধে অভিযোগটি করেছে। সংগঠনটি আন্তর্জাতিক আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন ইতালির প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘জাতিগত নিধনের’ অভিযোগে আনুষ্ঠানিক তদন্ত চালানোর সম্ভাবনা মূল্যায়ন করা হয়।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তারের ভয়েই কি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পথে ফ্রান্সের আকাশসীমা এড়িয়ে গেলেন নেতানিয়াহু২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গত মাসে জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি জানায়, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী জাতিগত নিধন (জেনোসাইড) চালাচ্ছে। এর আগে মানবাধিকার, গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক আইনের বিশেষজ্ঞরাও একই ধরনের মতামত দিয়েছেন।

গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আইসিসি এরইমধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এর মধ্যে দুর্ভিক্ষ তৈরি, হত্যা ও মারাত্মক দমনপীড়নের অভিযোগ রয়েছে।

তবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে ‘জাতিগত নিধনের’ অভিযোগ আনা হয়নি। আইসিসি হামাসের নেতাদের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। যদিও অভিযোগে নাম থাকা হামাসের সেসব নেতাদের সবাই পরবর্তীতে গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুননেতানিয়াহু যুদ্ধাপরাধী, নিউইয়র্ক এলে তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে নির্দেশ দেবেন জোহরান১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুননেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যথেষ্ট নয়, তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত: খামেনি২৫ নভেম্বর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র য় ৫০ জন মন ত র ইসর য অপর ধ আইস স

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার দুই ব্যাংক লকার থেকে ৯ কেজি ৭০৭ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার

দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী পুনঃযাচাইয়ের অংশ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের নামে থাকা দুটি ব্যাংকের তিনটি লকার খুলে ৯ কেজি ৭০৭ গ্রাম (৮৩২ ভরি) স্বর্ণ উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুদক প্রধান কার্যালয়ে নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

আরো পড়ুন:

হাসিনাকে ফেরাতে আগের চিঠির উত্তর পাইনি, এবার পাব: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

শেখ হাসিনা, রেহানা, টিউলিপসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে রায় ১ ডিসেম্বর

দুদক জানায়, দুদকের উপ-পরিচালক (বিশেষ অনু. ও তদন্ত-১) মো. মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত অনুসন্ধান দল ২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে লকার খোলার অনুমতির আবেদন করেন। আদালত একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বাংলাদেশ ব্যাংকের বুলিয়ন শাখার একজন স্বর্ণ বিশেষজ্ঞ, এনবিআরের একজন কর গোয়েন্দা ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইসি) মনোনীত দুই কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে লকার খোলার নির্দেশ প্রদান করেন।

পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) পূবালী ব্যাংক পিএলসির মতিঝিল কর্পোরেট শাখা ও অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির প্রিন্সিপাল শাখায় থাকা মোট তিনটি লকার খোলা হয়। এর মধ্যে পূবালী ব্যাংকের লকার নম্বর ১২৮-গ্রাহক শেখ হাসিনার নামে- থেকে একটি খালি ছোট পাটের ব্যাগ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে, গ্রাহক শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের লকার (নম্বর ৭৫১/বড়/১৯৬) থেকে আনুমানিক ৪ হাজার ৯২৩ দশমিক ৬০ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়। একই ব্যাংকের গ্রাহক শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সিদ্দিকীর নামে থাকা লকার (নম্বর ৭৫৩/বড়/২০০) থেকে পাওয়া যায় ৪ হাজার ৭৮৩ দশমিক ৫৬ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার।

দুদক জানায়, উদ্ধারকৃত স্বর্ণালঙ্কারসমূহ লকারে সংরক্ষিত বর্ণনা ও লিখিত চিরকুট অনুযায়ী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের— শেখ রেহানা সিদ্দিকী, সাইমা ওয়াজেদ পুতুল, সজীব ওয়াজেদ জয় ও ববি-হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাথমিক ইনভেন্টরি তালিকা প্রস্তুতের পর সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপকদের জিম্মায় মালামাল হস্তান্তর করা হয়েছে।

দুদক বলেছে, ইনভেন্টরি তালিকা পর্যালোচনা, মালিকানা সুনির্দিষ্টকরণ ও স্বর্ণকারের মাধ্যমে স্বর্ণের মূল্য নির্ধারণ শেষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মালিকানা ও আইনগত দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করা হবে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ