যে বস্তুর সংস্পর্শে এলে দুই দিনের মধ্যে মৃত্যু হতে পারে
Published: 26th, November 2025 GMT
১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল চেরনোবিলে অবস্থিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। সে সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। বর্তমানের ইউক্রেনের অংশ চেরনোবিলের রিঅ্যাক্টর ফোরের নিচে থাকা জমাট বাঁধা বিশেষ এক বস্তু নিয়ে বিজ্ঞানীদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। এই বস্তুকে বলা হচ্ছে হাতির পা বা এলিফ্যান্টস ফুট। একসময় এই বস্তু থেকে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০ হাজার রঞ্জেন এক্স-রে নির্গত হতো। এই পরিমাণ এক্স-রে কয়েক মিনিটের মধ্যে মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। গলিত জ্বালানি ও ধ্বংসাবশেষ থেকে তৈরি এই বস্তুর ওজন প্রায় দুই টন। বস্তুটি এখনো বিপজ্জনকভাবে তেজস্ক্রিয়।
আপনি যদি এলিফ্যান্টস ফুটের কাছাকাছি মাত্র ৩০ সেকেন্ডের জন্য দাঁড়ান, তবে প্রথমে আপনি কিছুই অনুভব করবেন না। দুদিন পরেই আপনার মধ্যে তীব্র মাথা ঘোরা ও ক্লান্তি দেখা দেবে। বস্তুর কাছে দুই মিনিট থাকলে আপনার শরীরের কোষ ভেঙে যেতে শুরু করবে। চার মিনিট দাঁড়ালে বমি ও জ্বর শুরু হবে। আর যদি আপনি পাঁচ মিনিট দাঁড়ান তাহলে দ্রুত মৃত্যুর মুখে পতিত হবেন।
এলিফ্যান্টস ফুট ১৯৮৬ সালের চেরনোবিল পারমাণবিক বিপর্যয়ের ফলে তৈরি হওয়া জমাট বাঁধা একটি বস্তু। তখন একটি পরীক্ষার সময় রিঅ্যাক্টর নাম্বার ফোর বিস্ফোরিত হয়। তখন বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় উপাদান নির্গত হয়েছিল। বিস্ফোরণের ফলে ইউরেনিয়াম জ্বালানি গলে রিঅ্যাক্টরের কাঠামোগত স্তর ভেদ করে নিচে নেমে আসে। এই গলিত মিশ্রণ পারমাণবিক জ্বালানি, রিঅ্যাক্টরের আচ্ছাদন, কংক্রিট ও বালুর সমন্বয়ে গঠিত হয়। সবশেষে শীতল হয়ে জমে গিয়ে এক বীভৎস এক মিটার চওড়া কাঠামো তৈরি করে। সেখানকার কর্মীরা পরে এই জমাট বাঁধা কালো লাভা-সদৃশ বস্তুকে একটি হাতির কুঁচকানো পায়ের মতো দেখতে বলে বর্ণনা করেন।
দুর্ঘটনার পর ১৯৮৬ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত রিঅ্যাক্টরের নিচের বাষ্প করিডরে পৌঁছাতে সক্ষম হন কর্মীরা। বিভিন্ন যন্ত্রে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সীমার চেয়ে অনেক বেশি বিকিরণের মাত্রা রেকর্ড করা হয়। সরাসরি ভয়ংকর সেই বস্তুর কাছে যাওয়া যায়নি। দূর থেকে ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, এলিফ্যান্টস ফুট থেকে আয়নাইজিং বিকিরণ নির্গত হচ্ছে, যা কোষীয় স্তরে মানুষের টিস্যু ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। যখন প্রথম পরিমাপ করা হয়েছিল, তখন বস্তুটি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০ হাজার রঞ্জেন বিকিরণ নির্গত করত। এই পরিমাণ রঞ্জেন ৪ দশমিক ৫ মিলিয়নেরও বেশি বুকের এক্স-রের সমতুল্য। একজন মানুষকে হত্যা করার জন্য মোটামুটি এক হাজার রঞ্জেন প্রয়োজন। এটি সেই সীমার চেয়ে ১০ গুণ বেশি ছিল। ২০০১ সালে এলিফ্যান্টস ফুট থেকে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৮০০ রঞ্জেন পরিমাপ করা হয়। অনুমান করা হয়, বস্তুটি ১০ হাজার বছর ধরে বিপজ্জনকভাবে তেজস্ক্রিয় থাকবে। তাই অনেকেই এ বস্তুকে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক পারমাণবিক বর্জ্য হিসেবে উল্লেখ করেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য ন র গত বস ত র ই বস ত
এছাড়াও পড়ুন:
যে বস্তুর সংস্পর্শে এলে দুই দিনের মধ্যে মৃত্যু হতে পারে
১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল চেরনোবিলে অবস্থিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। সে সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। বর্তমানের ইউক্রেনের অংশ চেরনোবিলের রিঅ্যাক্টর ফোরের নিচে থাকা জমাট বাঁধা বিশেষ এক বস্তু নিয়ে বিজ্ঞানীদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। এই বস্তুকে বলা হচ্ছে হাতির পা বা এলিফ্যান্টস ফুট। একসময় এই বস্তু থেকে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০ হাজার রঞ্জেন এক্স-রে নির্গত হতো। এই পরিমাণ এক্স-রে কয়েক মিনিটের মধ্যে মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। গলিত জ্বালানি ও ধ্বংসাবশেষ থেকে তৈরি এই বস্তুর ওজন প্রায় দুই টন। বস্তুটি এখনো বিপজ্জনকভাবে তেজস্ক্রিয়।
আপনি যদি এলিফ্যান্টস ফুটের কাছাকাছি মাত্র ৩০ সেকেন্ডের জন্য দাঁড়ান, তবে প্রথমে আপনি কিছুই অনুভব করবেন না। দুদিন পরেই আপনার মধ্যে তীব্র মাথা ঘোরা ও ক্লান্তি দেখা দেবে। বস্তুর কাছে দুই মিনিট থাকলে আপনার শরীরের কোষ ভেঙে যেতে শুরু করবে। চার মিনিট দাঁড়ালে বমি ও জ্বর শুরু হবে। আর যদি আপনি পাঁচ মিনিট দাঁড়ান তাহলে দ্রুত মৃত্যুর মুখে পতিত হবেন।
এলিফ্যান্টস ফুট ১৯৮৬ সালের চেরনোবিল পারমাণবিক বিপর্যয়ের ফলে তৈরি হওয়া জমাট বাঁধা একটি বস্তু। তখন একটি পরীক্ষার সময় রিঅ্যাক্টর নাম্বার ফোর বিস্ফোরিত হয়। তখন বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় উপাদান নির্গত হয়েছিল। বিস্ফোরণের ফলে ইউরেনিয়াম জ্বালানি গলে রিঅ্যাক্টরের কাঠামোগত স্তর ভেদ করে নিচে নেমে আসে। এই গলিত মিশ্রণ পারমাণবিক জ্বালানি, রিঅ্যাক্টরের আচ্ছাদন, কংক্রিট ও বালুর সমন্বয়ে গঠিত হয়। সবশেষে শীতল হয়ে জমে গিয়ে এক বীভৎস এক মিটার চওড়া কাঠামো তৈরি করে। সেখানকার কর্মীরা পরে এই জমাট বাঁধা কালো লাভা-সদৃশ বস্তুকে একটি হাতির কুঁচকানো পায়ের মতো দেখতে বলে বর্ণনা করেন।
দুর্ঘটনার পর ১৯৮৬ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত রিঅ্যাক্টরের নিচের বাষ্প করিডরে পৌঁছাতে সক্ষম হন কর্মীরা। বিভিন্ন যন্ত্রে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সীমার চেয়ে অনেক বেশি বিকিরণের মাত্রা রেকর্ড করা হয়। সরাসরি ভয়ংকর সেই বস্তুর কাছে যাওয়া যায়নি। দূর থেকে ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, এলিফ্যান্টস ফুট থেকে আয়নাইজিং বিকিরণ নির্গত হচ্ছে, যা কোষীয় স্তরে মানুষের টিস্যু ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। যখন প্রথম পরিমাপ করা হয়েছিল, তখন বস্তুটি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০ হাজার রঞ্জেন বিকিরণ নির্গত করত। এই পরিমাণ রঞ্জেন ৪ দশমিক ৫ মিলিয়নেরও বেশি বুকের এক্স-রের সমতুল্য। একজন মানুষকে হত্যা করার জন্য মোটামুটি এক হাজার রঞ্জেন প্রয়োজন। এটি সেই সীমার চেয়ে ১০ গুণ বেশি ছিল। ২০০১ সালে এলিফ্যান্টস ফুট থেকে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৮০০ রঞ্জেন পরিমাপ করা হয়। অনুমান করা হয়, বস্তুটি ১০ হাজার বছর ধরে বিপজ্জনকভাবে তেজস্ক্রিয় থাকবে। তাই অনেকেই এ বস্তুকে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক পারমাণবিক বর্জ্য হিসেবে উল্লেখ করেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া