বিশ্ববাজারে আবার বাড়ছে সোনার দাম, ১১ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ
Published: 26th, November 2025 GMT
বিশ্ববাজারে সোনার ১১ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গতকাল মঙ্গলবার এক দিনেই সোনার দাম আউন্সপ্রতি প্রায় ৭২ ডলার বেড়েছে। গত এক মাসে সোনার দাম বেড়েছে ১২৮ ডলার ০৪ সেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে বাজারে এ আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে যে ফেড আবার নীতি সুদহার কমাবে। মূলত সেই আশাবাদ থেকেই সোনার দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, স্পট মার্কেটে সোনার দাম শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ১৬১ ডলার ১০ সেন্টে উঠেছে। গত ১৪ নভেম্বরের পর এটাই সোনার সর্বোচ্চ দর। তবে ডিসেম্বর মাসের জন্য সোনার আগাম দাম শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৪ হাজার ১৫৯ ডলারে নেমে এসেছে।
ব্রোকার প্রতিষ্ঠান ওএএনডিএর জ্যেষ্ঠ বাজারবিশ্লেষক কেলভিন ওয়ং বলেন, সোনার মূল্যবৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ হলো ফেডের সুদহার হ্রাসের প্রত্যাশা। শেষ দুই সপ্তাহে বাজারে এ প্রত্যাশা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় সোনার দাম আবার বাড়ছে।
ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার কমাবে কি না, তা নিয়ে বাজারের প্রত্যাশা কী, তা পরিমাপ করে থাকে সিএমই ফেডওয়াচ নামের এক সংস্থা। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে ফেডের সুদহার কমানোর সম্ভাবনা ৮১ শতাংশ, আগের সপ্তাহে সপ্তাহে যা ছিল ৪০ শতাংশ।
এদিকে ফেড গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার সোমবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি ভালো নয়। ফলে বাজারে চাঙাভাব আনতে, অর্থাৎ অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধি করতে ডিসেম্বর মাসে সুদহার আবার কমানোর প্রয়োজন হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিমঙ্গলবার প্রকাশিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রি প্রত্যাশার তুলনায় কম হারে বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া বছরে প্রডিউসার প্রাইস ইনডেক্স (পিপিআই) বা উৎপাদক মূল্যসূচক বৃদ্ধির হার আগের মাস আগস্টের মতোই। দুই মাসেই এই হার ছিল ২ দশমিক ৭ শতাংশ। ফেডের নীতিনির্ধারকেরা যে সম্প্রতি সুর কিছুটা নরম করেছেন, তার কারণ এই পরিসংখ্যান।
এদিকে বিশ্ববাজারে ডলারের দামও এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে আসে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ফেডের পরবর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে যিনি এগিয়ে আছেন, তিনি অতটা আগ্রাসী নীতি নেবেন না। অর্থাৎ নীতিসুদ হ্রাসের ক্ষেত্রে তিনি অতটা আগ্রাসী হবেন না। এতে অন্যান্য মুদ্রাধারীদের জন্য ডলারে সোনার দাম তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়ে উঠবে।
এদিকে ১০ বছর মেয়াদি মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সুদহার এক মাসের মধ্যে নিম্নমুখী অবস্থার কাছাকাছি আছে। সোমবারই বন্ডের সুদহার ওই পর্যায়ে নেমে আসে।
মঙ্গলবার মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, সুদের হার ব্যবস্থাপনায় ফেডের বর্তমান কাঠামো ঠিকঠাক কাজ করছে না। ফলে এ ব্যবস্থা আরও সহজ করা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের সাপ্তাহিক বেকারত্ব ভাতার জন্য আবেদনের তথ্য আজ বুধবার প্রকাশিত হবে। ফেডের অবস্থান তখন আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে।
সোনার সবচেয়ে বড় ক্রেতা হচ্ছে চীন। কিন্তু হংকং হয়ে অক্টোবর মাসে তারা যে নিট সোনা আমদানি করেছে, সেপ্টেম্বরের তুলনায় তা প্রায় ৬৪ শতাংশ কম।
অন্যান্য ধাতুর মধ্যে স্পট মার্কেটে রুপার দাম ১ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ৫১ ডলার ৮৭ সেন্টে পৌঁছেছে। প্লাটিনামের দাম শূন্য দশমিক ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৫০ ডলার ৪০ সেন্ট। সেই সঙ্গে প্যালাডিয়ামের দাম শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমে হয়েছে ১ হাজার ৩৯০ ডলার ৬৬ সেন্ট।
গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্যানুসারে, গত ছয় মাসে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছে আউন্সপ্রতি ৭৯৩ ডলার ৯৭ সেন্ট। এক বছরে বেড়েছে ১ হাজার ৪৫৪ ডলার ৭৮ সেন্ট। ৫ বছরে বেড়েছে ২ হাজার ৩০৮ ডলার ৬০ সেন্ট।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ম শ ন য দশম ক য ক তর ষ ট র র ব শ বব জ র ম বর ম স
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়তি, বিটকয়েনের দাম পড়তি
বিশ্ববাজারে গত কয়েক মাসে সোনার যেখানে বেড়েছে, সেখানে বিটকয়েনসহ বিভিন্ন ক্রিপ্টো মুদ্রার দাম কমেছে। এ বাজার এমনিতেই টালমাটাল। কিন্তু গত ছয় মাসে এ বাজারে যা হয়েছে, তাতে অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরাও ভিরমি খেয়ে গেছেন।
বাস্তবতা হলো গত ছয় মাসে ক্রিপ্টো মুদ্রার বাজার মূলধন এক ট্রিলিয়ন ডলার বা এক লাখ কোটি ডলার কমেছে। ফলে ক্রিপ্টো মুদ্রার যাঁরা সবচেয়ে অন্ধ ভক্ত, তাঁরাও হতচকিত হয়ে গেছেন। সেই সঙ্গে এই মুদ্রায় যাঁরা নতুন বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরাও সামনে এগোনোর ভরসা পাচ্ছেন না। খবর সিএনএন
ক্রিপ্টো–জগতের সবচেয়ে পরিচিত নাম হলো বিটকয়েন। জনপ্রিয়তার দিক থেকেও এটি শীর্ষে। কিন্তু অক্টোবর মাসের শুরু থেকে সেই বিটকয়েনের দামও নাটকীয়ভাবে কমছে। অক্টোবর মাসের শুরুতে বিটকয়েনের দাম ছিল রেকর্ড ১ লাখ ২৬ হাজার ডলার। সেই বিটকয়েনের দাম গত শুক্রবার, অর্থাৎ পশ্চিমা পৃথিবীর শেষ কর্মদিবসে ৮১ হাজার ডলারে নেমে আসে। সোমবার বাজার খোলার পর দাম কিছুটা বেড়ে ৮৮ হাজারে ডলারে ওঠে।
গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্যানুসারে, গত এক মাসে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৯০ ডলার বেড়েছে। ছয় মাসে বেড়েছে ৭৫৪ ডলার ৪৫ সেন্ট।
দেখা যাচ্ছে, ক্রিপ্টো মুদ্রার ইতিহাসে নভেম্বর সবচেয়ে খারাপ মাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এমনকি বাজারের এ দুর্দশার অবসান হয়েছে কি না, তা–ও পরিস্কার নয়। জার্মানির ডয়েচে ব্যাংকের বিশ্লেষকেরা বলছেন, পরের মাসে যে বিটকয়েনের বাজার সংশোধন হবে, তা–ও নিশ্চিত নয়। এত দিন তো ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়েগাকারীরা এ বাজারে অংশ নিতেন। ফলে তাঁদের ফাটকাবাজির কারণে বাজার পড়ে যেত বা উঠত। কিন্তু বাস্তবতা হলো এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিটকয়েন বা ক্রিপ্টো মুদ্রার লেনদেন আরও সহজ হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখন বাজারে বিনিয়োগ করছেন। বিটকয়েন বা ক্রিপ্টো মুদ্রার জন্য সুবিধাজনক নীতিও নেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও বিটকয়েনের বাজারে এ পতন অব্যাহত আছে।
গত কয়েক বছরের ক্রিপ্টো মুদ্রার বাজার অনেকটা শেয়ারবাজারের মতো আচরণ করেছে ঠিক, কিন্তু বর্তমানে পতনের মূল তার চেয়ে অনেক গভীরে। মূল কারণ হলো ক্রিপ্টোর বাজারে এখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আসছে। ফলে আগে ক্রিপ্টোর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যেমন আচরণ করতেন, এখন কিন্তু সে রকম হচ্ছে না।
সাম্প্রতিক সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে বিটকয়েনের পতন হয়েছে ৩০ শতাংশ। সেখানে মার্কিন শেয়ারবাজারের সূচক এসঅ্যান্ডপির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে সূচকের পতন হয়েছে ৩ শতাংশ। ক্রিপ্টো–জগতের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির হোতা স্যাম ব্যাংকম্যান ২০২২ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, চলতি নভেম্বর ক্রিপ্টোর জগতে এরপর সবচেয়ে খারাপ মাস হতে যাচ্ছে।
স্টক ও ক্রিপ্টো বাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দুটি কারণে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। প্রথমত, ফেডারেল রিজার্ভ আবার কবে নীতি সুদহার কমাবে, তা নিয়ে একধরনের উৎকণ্ঠা। দ্বিতীয়ত, এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজারে যে বুদ্বুদ সৃষ্টি হয়েছে, তা কত দিন স্থায়ী হবে, নাকি সেই বুদ্বুদ তাদের মুখের ওপর ফেটে যাবে।
স্টকের মতো ডিজিটাল সম্পদের সঙ্গেও ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহারের সম্পর্ক আছে। সুদহার বেশি থাকলে বিনিয়োগের খরচ বেড়ে যায় এবং তাতে বিনিয়োগকারীদের সক্ষমতা কমে যায়।
গত ১০ অক্টোবর থেকে হঠাৎ বাজার ধসের পর ক্রিপ্টো খাতের বিনিযোগকারীদের সামনে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ উসকে দিলে আতঙ্কে ব্যাপক বিক্রি শুরু হয়। এক দিনেই প্রায় ১৯ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বাজার মূলধন কমে যায়। অনেকেই মনে করেন, ক্রিপ্টো বাজার থেকে পুরোপুরি সরে যাওয়ার এটা যথেষ্ট বড় কারণ। ফলে বিটকয়েনসহ অন্য মুদ্রাগুলো এখন আরও বেশি অস্থির হয়ে পড়েছে।
এ ধসের কারণে অনেক বিনিয়োগকারী দ্রুত সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এতে একধরনের শৃঙ্খল প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়—বিটকয়েনের দাম যত কমে, বিনিয়োগকারীরা তত সেই চাপ সামলাতে তাঁদের সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য হন।
এবারের ক্রিপ্টোধসের আরেকটি কারণে আলাদা। সেটি হলো গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত স্পট বিটকয়েন তহবিলের মাধ্যমে বাজারে প্রবেশ করা কয়েক বিলিয়ন ডলারের নতুন মূলধন।
মূলধারার বিনিয়োগকারীরা লাভের আশায় ক্রিপ্টোতে ঢুকলেও তাঁরা প্রথমদিকের ক্রিপ্টো অনুসারীদের মতো এ মতাদর্শে অনুগত নন। প্রথম দিককার বিনিয়োগকারীরা দাম কমলে অনলাইন সম্প্রদায়ের উৎসাহে আরও ক্রিপ্টো কিনে থাকেন, কিন্তু নতুন বিনিয়োগকারীদের সেই মানসিকতা নেই।
ইন্টারঅ্যাকটিভ ব্রোকার্সের প্রধান কৌশলবিদ স্টিভ সসনিক বলেন, সংক্ষেপে বললে এখন বিটকয়েন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতেই। ফলে তাঁরা এটিকে আরেকটা জল্পনামূলক, ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ হিসেবেই দেখবেন।
সোনা ও ক্রিপ্টোবাজারে অনিশ্চয়তা বেড়ে গেলে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ ক্রিপ্টো ছেড়ে সোনার মতো নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তখন ক্রিপ্টোর দাম পড়ে যায় এবং সোনার দাম বেড়ে যায়। তবে বাজার যখন স্থিতিশীল থাকে, বিনিয়োগকারীরা লাভের আশায় আবার ক্রিপ্টো কেনেন, সোনার দাম তখন স্থিতিশীল হয় বা কিছুটা কমে। মাঝেমধ্যে উচ্চ মূলস্ফীতির সময় দুটিই বাড়তে পারে। কেননা কেউ তখন সোনায়, কেউ ‘ডিজিটাল সোনা’ হিসেবে বিটকয়েনে বিনিয়োগ করেন।