‘কোনোমতে জানটা নিয়া বের হইছি’
Published: 26th, November 2025 GMT
রাজধানীর কড়াইল বস্তির ক ব্লকে আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকানের মালপত্রের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ময়না বেগম। তাঁর চোখে অবিশ্বাস, মুখে অসহায় দীর্ঘশ্বাস।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কড়াইল বস্তিতে লাগা আগুনে শুধু ময়না বেগমের একটি দোকান নয়, তাঁর অনেক দিনের লড়াই, পরিশ্রম আর স্বপ্নকে ছাই করে দিয়েছে।
গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ফায়ার সার্ভিস মহাখালীর কড়াইলে বস্তিতে আগুন লাগার তথ্য জানায়। গতকাল রাত ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
কড়াইল বস্তির ক ব্লকে ময়না বেগমের একটি দোকান ছিল। যেখানে তিনি কাপড় সেলাইয়ের কাজ করতেন। পাশাপাশি পাইকারিতে টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জ থেকে তোয়ালে এনে গুলশান-বনানীতে বিক্রি করতেন।
এ দোকানই ছিল ময়না বেগমের সংসারের প্রধান ভরসা। দোকানটির পেছনে ছিল নিজেদের থাকার ঘর। ঘরে থাকতেন স্বামী, মেয়ে, মেয়ের জামাই ও নাতিকে নিয়ে।
দোতলায় ছাদে আরও দুটি ছোট কক্ষ ময়না বেগম করেছিলেন তাঁরই পরিশ্রমের অর্থে। আগুনে এগুলো সব পুড়ে গেছে।
ময়না বেগমের সঙ্গে কথা হয় আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। তিনি তখন তাঁর দোকানের পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের স্তূপ উল্টেপাল্টে দেখছিলেন, কোনো কাপড় কিংবা তোয়ালে ভালো আছে কি না।
আরও পড়ুন৫ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে কড়াইল বস্তির আগুন, বাসিন্দারা খোলা আকাশের নিচে১৩ ঘণ্টা আগেময়না বেগম প্রথম আলোকে বলেন, আগুনের সূত্রপাত তাঁর ঘর ও দোকানের চার থেকে পাঁচটা ঘরের পরেই ছিল। ঘরে তখন তিনি, মেয়ে, মেয়ের জামাই ও নাতি ছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন কাছাকাছি চলে আসে। গায়ে প্রচণ্ড তাপ লাগতে শুরু করে।
একপর্যায়ে বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়ায় ঘর অন্ধকার হয়ে যায় বলে জানান ময়না বেগম। তিনি বলেন, ‘তখন কোনোমতে জানটা নিয়া বের হইছি। আমি আমার সেলাই মেশিন সঙ্গে নিছি। মেয়েজামাই ফ্রিজটা মাথায় নিছে।’
আগুনে ময়না বেগমের সবকিছু শেষ হওয়ার ঘটনা গতকালই প্রথম নয়; ২০১৭ সালেও আগুনে সব হারিয়েছিলেন তিনি। ময়না বেগম বলেন, সেবারও দোকান, ঘর, মালপত্র—কিছুই বাঁচাতে পারেননি। কিন্তু হাল ছাড়েননি। ঋণ করে, ধারদেনা করে আবার সব শুরু করেছিলেন। তাঁর এখন দুই লাখ টাকার মতো ঋণ আছে।
ময়না বেগম জানান, তাঁর দোকানে আনা মালপত্রের প্রায় ৩০ হাজার টাকা বাকি ছিল। প্রতিদিন হিসাব করে এগোচ্ছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিলেন। কিন্তু গত রাতের আগুন তাঁকে আবার শূন্যে নামিয়ে দিল। আগুন নেভার পর এসে দেখেন দোকানে থাকা তোয়ালে, সেলাইয়ের মালপত্র, কাপড়, আলমারি, খাট, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র—সব পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে।
আরও পড়ুনফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আগুন নেভানোর চেষ্টায় স্থানীয়রাও, রয়েছে পানির সংকট১৫ ঘণ্টা আগেময়না বেগমের স্বামী মো.
রাসেলের কণ্ঠে তখন শুধুই হতাশা। তিনি মুঠোফোনে বলছিলেন, ‘অবস্থা আর কিছুই নাই স্যার…। সবই শেষ হয়ে গেছে। দোকানের সেলাই মেশিন আর ঘরের ফ্রিজ বাদে কিছুই বের করতে পারি নাই স্যার। …বাদবাকি সব পুড়ে শেষ।’
সকাল ১০টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকার যে অংশে আগুন লেগেছে, সেখানে উৎসুক মানুষের ভিড়। রাস্তায় পা ফেলার মতো জায়গা নেই। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা নিজেদের ঘরের পোড়া জিনিসপত্র সরিয়ে জায়গা পরিষ্কার করছেন।
গতকালের আগুনে কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকার কুমিল্লাপট্টি, বরিশালপট্টি ও ক ব্লকের ঘরবাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগুনে এই বস্তির হাজারখানেক ঘর পুড়ে গেছে।
আরও পড়ুনরাজধানীর কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ আগুন১৯ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব গম র স ম লপত র আগ ন ন গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
৬৪ জেলায় নতুন এসপিদের পদায়নের প্রজ্ঞাপন
দেশের ৬৪ জেলায় নতুন পুলিশ সুপারদের (এসপি) পদায়নের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আজ বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
বিস্তারিত আসছে...