মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তার প্রশাসন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) হোয়াইট হাউজে থ্যাঙ্কসগিভিং উপলক্ষে আয়োজিত টার্কি ক্ষমার অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান। খবর আনাদোলুর।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমি গত ৯ মাসে ৮টি যুদ্ধ শেষ করেছি এবং আমরা এখন সেই শেষ যুদ্ধটি নিয়ে কাজ করছি। এটি সহজ নয়, তবে আমার মনে হয় আমরা সফল হবো।”

আরো পড়ুন:

প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার সংশোধনকে স্বাগত জানালেন জেলেনস্কি

ইউক্রেন ও মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার দাবি যুক্তরাষ্ট্রের

ট্রাম্প বলেন, “আমরা একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। আমি ভেবেছিলাম এটি আরও দ্রুত শেষ হবে। আমরা ৮টি যুদ্ধ শেষ করেছি। ভেবেছিলাম এটি (ইউক্রেন যুদ্ধ) সহজ হবে, তবে আমরা এক বছরেরও কম সময়ে অগ্রগতি করছি।”

এর আগে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছিল, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ‘অসাধারণ অগ্রগতি’ করেছে। তবে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। অব্যাহত রাখতে হবে।  

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, “কিছু সূক্ষ্ম কিন্তু অপ্রতিরোধ্য নয়- এমন বিষয় এখনও বাকি, যা সমাধান করতে ইউক্রেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আরো আলোচনার প্রয়োজন।”

গত রবিবার জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিকভাবে দেওয়া ২৮ দফা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর উভয় পক্ষই ‘আপডেট ও পরিমার্জিত’ শান্তি কাঠামোর খসড়া প্রস্তুত করার ঘোষণা দেয়।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোমবার রাতে জানান, আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া পরিকল্পনায় এখন ‘দফা বা পয়েন্ট কম’ এবং এতে ‘অনেক সঠিক উপাদান’ রয়েছে।

মঙ্গলবার ইউক্রেনের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কাউন্সিলের সচিব রুস্তেম উমেরভ নিশ্চিত করেন যে, জেনেভা আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার মূল শর্তগুলো নিয়ে কিয়েভ ও ওয়াশিংটন ‘সাধারণ সমঝোতায়’ পৌঁছেছে। তিনি আরও জানান, চূড়ান্ত পদক্ষেপ সম্পন্ন করতে এবং ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তি করতে নভেম্বরের মধ্যে জেলেনস্কির যুক্তরাষ্ট্র সফরের আয়োজন করতে চায় কিয়েভ।

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে তিনি তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে আগামী সপ্তাহে মস্কোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ য ক তর ষ ট র ইউক র ন য ক তর ষ ট র র ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

এক বছরেও ১৭ আসামির হদিস পাচ্ছে না পুলিশ

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম ওরফে আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা মামলার ১৭ জন আসামির খোঁজ এক বছরেও পায়নি পুলিশ। তাঁরা পলাতক থাকায় শুরু করা যাচ্ছে না বিচার কার্যক্রম। এ ঘটনায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ নিহত ব্যক্তির পরিবার। আজ বুধবার আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে।

সাইফুল হত্যা মামলার দ্রুত বিচারের দাবিতে আজ সকালে আইনজীবী ভবনের সম্মুখে মানববন্ধন এবং বিকেলে স্মরণসভার আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি।

২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ১৭ জন এখনো পলাতক। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত মালামাল ক্রোকের আদেশ ও হুলিয়া জারি করেছেন। আসামিদের বিষয়ে প্রতিবেদন আসার পর মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়ে দায়রা জজ আদালতে বদলি হবে।মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, সরকারি কৌঁসুলি।

হত্যা মামলাটি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রয়েছে। আগামী ১ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ রয়েছে। জানতে চাইলে সরকারি কৌঁসুলি মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সাইফুল হত্যা মামলায় মোট ৩৯ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। এর মধ্যে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ১৭ জন এখনো পলাতক। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত মালামাল ক্রোকের আদেশ ও হুলিয়া জারি করেছেন। আসামিদের বিষয়ে প্রতিবেদন আসার পর মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়ে দায়রা জজ আদালতে বদলি হবে। সেখানে ৩৯ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হবে।

২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী-বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলায় চলতি বছরের ১ জুলাই পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, চিন্ময়ের উসকানি ও নির্দেশে আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছে। আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে আসামিরা পিটিয়ে হত্যা করেন। গত ২৫ আগস্ট আদালত চিন্ময়সহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। চিন্ময়ের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে হত্যা করা হয়। পরে চিন্ময়কে আইনজীবী সাইফুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বর্তমানে তিনিসহ আইনজীবী হত্যায় কারাগারে আটক রয়েছেন ২২ আসামি। শুভ কান্তি দাশ, সুকান্ত দত্ত, রিপন দাশ, পপি দাস, সকু দাস, শিবা দাস, দ্বীপ দাসসহ ১৭ আসামি পলাতক।

পলাতক ১৭ আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ তাঁদের পায়নি। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। এই মামলার বেশির ভাগ আসামি গ্রেপ্তার রয়েছেন।

চিন্ময় কৃষ্ণকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। চিন্ময়ের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে হত্যা করা হয়। পরে চিন্ময়কে আইনজীবী সাইফুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বর্তমানে তিনিসহ আইনজীবী হত্যায় কারাগারে আটক রয়েছেন ২২ আসামি। শুভ কান্তি দাশ, সুকান্ত দত্ত, রিপন দাশ, পপি দাস, সকু দাস, শিবা দাস, দ্বীপ দাসসহ ১৭ আসামি পলাতক।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, দেশব্যাপী আলোচিত এই মামলার ১৭ আসামি এক বছরেও গ্রেপ্তার না হওয়া দুঃখজনক।

এক বছরেও ছেলে হত্যার বিচার শুরু না হওয়ায় হতাশ নিহত সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হোক। তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেকে ফিরে পাব না, কিন্তু আসামিদের ফাঁসি যাতে হয়। মৃত্যুর আগে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে চাই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ