কলম্বো থেকে সেকেন্ড ক্লাস ট্রেনে চেপে মিরিসার দিকে রওনা হয়েছি। সকালের ট্রেনগুলোতে রিজার্ভেশনের ব্যবস্থা নেই। ট্রেনটা ফোর্ট স্টেশন থেকে ছেড়ে আসে। সেখান থেকেই কামরাগুলো একেবারে ঠাঁসা।

আমরা যখন মাউন্ট লাভিনিয়া স্টেশন থেকে উঠেছি, তখন কামরার ভেতরে দাঁড়ানোও দুষ্কর। তাই দরজার কাছের জায়গাটায় কিছুটা ফাঁকা পেয়ে সেখানেই বসে পড়লাম।

ট্রেনের খোলা দরজা দুই শিশুর দখলে। বছর আটেক হবে ওদের বয়স। ওদের ঠিক পেছনে আমি। আর তারপর মধ্যবয়সী একজন। বোধ করি ওদের বাবা।

ট্রেন দ্রুতই শহর ছেড়ে গ্রামের মধ্য দিয়ে ছুটে চলল। এক ধারে গ্রাম, শহরতলি; অন্য ধারে টানা বেলাভূমি। উজ্জ্বল দিনে নীল আকাশের শামিয়ানার নিচে উচ্ছল ঢেউগুলো আছড়ে পড়ছে বাদামি বালুর সৈকতে।

সমুদ্র দেখতে দেখতে ওই শিশুরা প্রায়ই দরজার হাতল ছেড়ে দিচ্ছিল, আর ওদের বাবা আমার মারফত ওদের সাবধান করে দিচ্ছিলেন বারবার। এই করতে করতেই আলাপ জমল।

জানতে চাইলাম, শ্রীলঙ্কার অভ্যুত্থানের পরের দিনগুলো কেমন কাটছে তাঁদের।

বললেন, রাজনীতিবিদেরা এখন আগের চেয়ে অনেক কম দুর্নীতিতে যুক্ত। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। দেশের নতুন নেতাদের ওপর আস্থা আছে জনগণের।

ট্রেন বা চলতি পথে এমন আর যাঁদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, তাঁদের অনেকেরই এমনটাই মত।

শ্রীলঙ্কার ২০২২ সালের গণ–অভ্যুত্থান বা ‘আর্গালিয়া’য় যুক্ত ছিলেন, এমন অনেকের সঙ্গেই কথা হলো এবারের সফরে। কেউ তরুণ, আবার কেউ অনেক বছর ধরে যুক্ত আছেন এ সংগ্রামের সঙ্গে। কেউ আছেন দায়িত্বশীল পদে। জানতে পারলাম, বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে তাঁদের মত।

২.

অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালে ক্ষমতায় এসেছে ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) নামে একটি জোট। এর মূলশক্তি বামপন্থী দল জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি)। তাদের নেতা শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে।

বামপন্থী দল জেভিপির সংগ্রামের ইতিহাস দীর্ঘ। একসময় শ্রেণিসংগ্রামের নামে তাদের হাতে সহিংসতার ইতিহাস যেমন আছে, তেমনি নানা সময় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকারও হয়েছে দলটি।

১৯৭১ ও ১৯৮৭-৮৯, দুই দফায় সশস্ত্র অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় দলটি। অন্তত ২০ হাজার কর্মীর মৃত্যু হয় এ সময়। অনেকের হিসাবে সেই সংখ্যা তার চেয়েও অনেক বেশি। গুম, হত্যাসহ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নানা নির্যাতনের শিকার হয় দলটি।

১৯৯৪ থেকে দলটি ভোটের রাজনীতিতে প্রবেশ করে। ২০১৪ সালে কট্টর বাম অবস্থান থেকে সরে এসে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জনকল্যাণমুখী রাজনীতির দিকে ঝোঁকে দলটি।

 সমাজতন্ত্র আর গণতন্ত্রের মিশেলে তৈরি রাজনৈতিক দর্শন সোশ্যাল–ডেমোক্র্যাট ধারার রাজনীতিকে আপন করেছে তাদের নতুন জোট এনপিপি।

পুরোনো কট্টর বাম ধারার ধারণা কিছুটা ঢাকতেই হয়তো এই জোটের আড়ালে এই নতুন ধ্যানধারণা নিয়ে সামনে এগিয়েছে দলটি। ফলও পেয়েছে হাতে হাতে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আর পার্লামেন্ট—দুই জায়াগাতেই বিপুল জয় পায় জোটটি।

আরও পড়ুনগণ–অভ্যুত্থানের শক্তির ক্ষমতার এক বছরে শ্রীলঙ্কা কী পেল০৯ অক্টোবর ২০২৫৩.

নির্বাচনে দলটির অন্যতম প্রচার ছিল দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ঘিরে। ২০২২ সালের গণ–অভ্যুত্থানে মাহিন্দা রাজাপক্ষে সরকারের পতন হলে ক্ষমতায় এসেছিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। কিন্তু সে সময়ও পুরোনো সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তে থেকে যায়; হাতবদল হয় কেবল।

জেভিপি ক্ষমতায় এসে সেই সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলতে পেরেছে বলে মনে করেন অনেকে। দলটি অভ্যুত্থানের বহু আগে থেকেই সুসংগঠিত এবং ক্যাডারভিত্তিক ছিল।

দলীয় কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলটি সততা এবং দলের প্রতি আনুগত্যকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে। তাই মাঠপর্যায় পর্যন্ত দলের নেতা–কর্মীদের দুর্নীতি
নিয়ে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি দলটিকে; বরং প্রেসিডেন্ট থেকে মন্ত্রী-এমপি পর্যন্ত সবাই তাঁদের বেতন একটি যৌথ তহবিলে জমা দিয়ে সেখান থেকে সবার প্রয়োজন অনুসারে বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন।

শ্রীলঙ্কার শিক্ষার হার এবং মান দুটিই আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন পেশায় দক্ষতার ক্ষেত্রেও বেশ এগিয়ে দেশটি। তার প্রমাণ মেলে বিদেশে শ্রমবাজারে তাদের হিস্যা দেখলে। যেখানে আমরা এখনো মূলত অদক্ষ শ্রমিকনির্ভর, শ্রীলঙ্কা সেখানে দক্ষ শ্রমিকের বাজারে একটি বড় অংশের জোগানদাতা।

ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে দল এবং দশের স্বার্থ বড় করে দেখার অনুকরণীয় নজির বলেই সামনে এসেছে এটি। 

কিন্তু আনুগত্যকে প্রাধান্য দেওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে দক্ষতায় ঘাটতি থেকে গেছে। আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার বেড়ে চলা প্রভাব শ্রীলঙ্কার একটি বড় সমস্যা। তারা ক্রমে অর্থনীতি ছাপিয়ে রাষ্ট্র শাসনের গভীরে তাদের প্রভাব বাড়াচ্ছে।

রাজাপক্ষে সরকার যে বিশাল ঋণের বোঝা দেশটির ওপর রেখে গেছে, সে কারণে বর্তমান সরকারের জন্য এ ধরনের সংস্থার সঙ্গে নতুন চুক্তি করা বেশ দুষ্কর। তার ওপর এ ধরনের জটিল ও কারিগরি দেনদরবারের উপযুক্ত ও দক্ষ জনবলের ঘাটতিও নতুন সরকারের জন্য একটি বড় সমস্যা।

৪.

গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য থেকে অনেক নতুন মুখও শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে উঠে এসেছে। তৈরি হয়েছে কিছু নতুন রাজনৈতিক দল। ভোটের রাজনীতিতে অবশ্য তারা খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি। তাই বিরোধী দলের জায়গা জুড়ে আছে পুরোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার দলগুলো।

অনেকেই অবশ্য এই দলগুলোকে ভারতের প্রক্সি হিসেবে দেখেন। তাই সরকারি দলও তাদের খুব একটা পাত্তা দেয় না। সে তুলনায় পার্লামেন্টে উপস্থিতি না থাকলেও মাঠের রাজনীতিতে অভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা দলগুলো এখনো গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি দলও তাই তাদের সমঝে চলে।

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সেখানে অত্যন্ত শক্তিশালী নারী কমিশন গঠিত হয়েছে সম্প্রতি। আইনগত দিক বিবেচনায় সে কমিশন মানবাধিকার কমিশনের চেয়েও শক্তিশালী।

কারণ, নারীর কল্যাণে নীতি প্রণয়নের পাশাপাশি অধিকারের যেকোনো ব্যত্যয় তদন্ত করা এবং কমিশনের আদর্শের প্রতিপালন নিশ্চিত করার ক্ষমতা আছে নারী কমিশনের; কিন্তু প্রয়োজনীয় বাজেট, অবকাঠমোসহ অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে কমিশনের সামনে। বিশেষত সমাজে প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক নানা রীতিনীতি আইনি কাঠামোর চেয়েও বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অনেক সময়।

আরও পড়ুনশ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশ: সংকটের মিল–অমিল০৯ মে ২০২৩৫.

বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের সঙ্গে ২০২২ সালের শ্রীলঙ্কার মিল অনেক। আবার কয়েকটি ব্যাপারে অমিলও চোখে পড়ার মতো।

যেমন শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ২০২২ সালে যে অবস্থায় পৌঁছেছিল, বাংলাদেশের অবস্থা তার চেয়ে বেশ ভালো ছিল ২০২৪ সালে। কিন্তু সেখান থেকেও শ্রীলঙ্কা অনেক দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

এর একটা বড় কারণ বোধ করি মানব উন্নয়ন সূচকে গোটা উপমহাদেশেই শ্রীলঙ্কার অনেকটা এগিয়ে থাকা; যেখানে দ্বীপরাষ্ট্রটির অবস্থান ৮৯ নম্বরে, সেখানে বাংলাদেশ আর ভারত দুই দেশই আছে ১৩০-এ।

শ্রীলঙ্কার শিক্ষার হার এবং মান দুটিই আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন পেশায় দক্ষতার ক্ষেত্রেও বেশ এগিয়ে দেশটি। তার প্রমাণ মেলে বিদেশে শ্রমবাজারে তাদের হিস্যা দেখলে। যেখানে আমরা এখনো মূলত অদক্ষ শ্রমিকনির্ভর, শ্রীলঙ্কা সেখানে দক্ষ শ্রমিকের বাজারে একটি বড় অংশের জোগানদাতা।

আবার বাংলাদেশে দুর্নীতির বিস্তার যেমন সর্বব্যাপী, শ্রীলঙ্কায় খোদ রাজাপক্ষের আমলেও তেমনটা হয়ে ওঠেনি। তা ছাড়া জনসংখ্যার দিক থেকেও দুই দেশের মধে৵ বিস্তর ফারাক।

শ্রীলঙ্কায় অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে বামপন্থার উত্থান ঘটেছে, অন্যদিকে এ দেশে আগের তুলনায় অবস্থান সংহত করেছেন ডানপন্থীরা। অন্যদিকে নানা কারণে ক্রমাগত দল ভাঙার ফলে বামপন্থীদের অবস্থা এখন বেশ সঙিন। গণ–অভ্যুত্থানের সময় এবং পরে অনেক সাবেক বাম রাজনৈতিক কর্মী সক্রিয় হলেও তাঁদের সংগঠিত করার উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়।

আরও পড়ুনশ্রীলঙ্কা যেভাবে উচ্চ সুদের ফাঁদে পড়েছে২৩ নভেম্বর ২০২৫৬.

দুই দেশের মিলের জায়গা অভ্যুত্থানের পরের রাজনৈতিক গতি–প্রকৃতিতেও। নতুন রাজনীতির স্বপ্ন দুই জায়গায়তেই ছিল। দুই জায়গাতেই অভ্যুত্থানের পরও পুরোনো লুটপাট ও দুর্নীতির ব্যবস্থা একইরকমভাবে জেঁকে বসেছে।

সময়ের হিসাবে দুই বছর এগিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পেরেছে। সেখানে যে দল ক্ষমতায় এসেছে, তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে পেরেছে এবং বাস্তবে তা নিয়ন্ত্রণ করে দেখিয়েছে। মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে। দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার পথে এটা স্পষ্টতই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বাংলাদেশেও নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। ধীরে ধীরে রাজনৈতিক দলগুলোর সমীকরণগুলো স্পষ্ট হচ্ছে, সামনে আসছে। শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা থেকে বোধ করি আমাদের দেশের সব কটি দলেরই শেখার আছে।

আরও পড়ুনগণ-অভ্যুত্থানের পরের শ্রীলঙ্কা থেকে যা শেখার আছে২৬ আগস্ট ২০২৪

শ্রীলঙ্কায় বর্তমানে ক্ষমতাসীন এনপিপি জোটের একটি বড় শক্তি হলো তারা নানা মত ও পথের মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে একটি উদার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সামনে আসতে পেরেছে।

শ্রীলঙ্কায় মানুষকে বিভক্ত করার অসিলার অভাব ছিল না। সিংহলি-তামিল বিরোধের রক্তাক্ত ইতিহাস খুব দূরের কথা নয়। সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীও সে দেশে নানা দর-কষাকষির অংশ।

তবু এই নানা পথের মানুষকে একজোট করে সেখানে নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে পেরেছেন রাজনীতিবিদেরা।

৭.

কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। দিন শেষে এক দল আরেক দলকে খারিজ করার রাজনীতি, ইসলাম ধর্মের মধ্যে ভিন্ন ভাবধারার মানুষকে আরও প্রান্তিক পর্যায়ে ঠেলে দেওয়ার চাল স্বল্প মেয়াদে দুটি ভোট বাড়ালেও বাড়াতে পারে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে দেশকে আরও বিভক্তই করবে।

আখেরে লাভ হবে গুটিকয়েকের। প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য রাজনীতিতে অন্যকে ঘায়েল করতে গেলে একসময় নিজেকেই ঘায়েল হতে হয়। আওয়ামী লীগকে দেখেও বোধ করি সে শিক্ষা নেওয়া যায়।

রাজনীতিবিদেরা নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি চালিয়ে যেতে থাকলে কিন্তু নেপালের দশা হতে আমাদের খুব বেশি সময় লাগবে না। সে দেশে এখন মানুষ কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।

এর কারণ এই নয় যে তাঁরা একেবারেই কিছু করে দেখাতে পারেননি। ২০০৮ সালে রাজতন্ত্রের অবসানের পর অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন নেপালে হয়েছে।

 কিন্তু সত্য–মিথ্যা মিলিয়ে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদেরাই এত প্রচার-অপপ্রচার চালিয়েছেন যে দিন শেষে তাঁদের সবার ঠাঁই হয়েছে নর্দমায়, অনেক ক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থেই।

তাই সাবধান হওয়ার এবং বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথ জনমুখী করার এখনই সময়।

মানজুর-আল-মতিন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

*মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ব দ র র র জন ত ত ২০২২ স ল ন র জন ত র জন ত ক ব মপন থ অবস থ ন ব ধ কর আম দ র র অন ক সমস য সরক র দলগ ল আরও প র অবস

এছাড়াও পড়ুন:

ঘরের মাঠে লেভারকুসেনে ধরাশায়ী ম্যানসিটি

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে দলে ব্যাপক রদবদলের মূল্য চুকাতে হলো ম্যানচেস্টার সিটিকে। ঘরের মাঠ এতিহাদ স্টেডিয়ামে বায়ার লেভারকুসেনের কাছে ২-০ গোলে হারল পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা।

গার্দিওলা শুরুতেই আরলিং হালান্ড, জিয়ানলুইজি দোন্নারুমা- এমন সব তারকাকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত উল্টো ফল বয়ে আনে। আলেহান্দ্রো গ্রিমালদো ও প্যাট্রিক শিকের গোলে জার্মান জায়ান্টরা তুলে নেয় স্মরণীয় জয়।

আরো পড়ুন:

নিউক্যাসলে ধরাশায়ী ম্যানসিটি

প্রিমিয়ার লিগে অঘটন চলছেই, এবার হারল ম্যানসিটি

এই হারের ফলে গ্রুপপর্বে সিটির অপরাজেয় যাত্রা থেমে গেল। সামনে অপেক্ষা করছে রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে কঠিন পরীক্ষা। শীর্ষ আটে উঠার পথ এখন আরও কঠিন।

হালান্ডকে দ্বিতীয়ার্ধে নামানো হলেও ততক্ষণে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। গত মাসেই পিএসজির কাছে ৭-২ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হওয়া লেভারকুসেন এবার ১২ জন খেলোয়াড়কে ছাড়াই মাঠে নেমে দুর্দান্ত লড়াই দেখাল।

গত শনিবার নিউক্যাসলের বিপক্ষে পরাজয়ের পর দলে পরিবর্তন এনে সঠিক সাড়া আশা করেছিলেন গার্দিওলা। সেই দলে একমাত্র নিকো গনসালেসই আগের ম্যাচ থেকে জায়গা ধরে রাখেন। ব্যস্ত সূচির কারণে রোটেশন ছিল বোধগম্য। তবে দ্বিতীয় সারির খেলোয়াড়দের এমন অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্স বিশেষ করে ওমর মারমুশ নির্ভর আক্রমণভাগ নিয়ে নতুন চিন্তা বাড়াবে।

শুরুতে একটি সুযোগ এসেছিল সিটির সামনে। কর্নার থেকে নাথান আকেঁর টোকা গোলমুখে গেলেও ব্রেন্টফোর্ডের সাবেক গোলরক্ষক মার্ক ফ্লেকেন তা ঠেকিয়ে দেন। বল দখলে আধিপত্য থাকলেও তীক্ষ্ণতা ছিল না। বেঞ্চ থেকে সব দেখছিলেন হালান্ড।

চাপ সামলেও পাল্টা আক্রমণে হুমকি তৈরি করছিল লেভারকুসেন। আর্নেস্ট পোকার জোরালো শটটি ব্লক করেন রায়ান এইট নুরি।

২৩ মিনিটে দুর্দান্ত এক আক্রমণ থেকে লিড নেয় লেভারকুসেন। ডান দিক থেকে ইব্রাহিম মাজার ক্রস কফানে পাস বাড়িয়ে দেন। আর সেখান থেকেই গ্রিমালদো লক্ষ্যভেদ করেন।

খেলায় ফেরার মতো তেজ সিটির দেখা যায়নি। প্রথমার্ধের শেষদিকে কিছুটা চাপ বাড়ালেও ফ্লেকেন অস্কার ববের নিচু বল ও তিজিয়ানি রেইজ্যান্ডার্সের লং রেঞ্জ শট; দুটোই দারুণভাবে রুখে দেন।

বিরতিতে ফিল ফোডেন, নিকো ও’রেইলি ও জেরেমি দোকুকে নামিয়ে তিন পরিবর্তন আনেন গার্দিওলা। কিন্তু খেলার গতি তাতে বদলায়নি। ৫৪ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে লেভারকুসেন। মাজার ক্রস ধরে দুর্দান্ত হেডে গোল করেন প্যাট্রিক শিক। আকেঁর আগেই পজিশন নেওয়ায় সিটির গোলরক্ষক জেমস ট্র্যাফোর্ডের কিছুই করার ছিল না।

এক ঘণ্টা পেরোতেই মাঠে নামানো হয় হালান্ডকে। ফোডেনের পাস ধরে এগিয়ে গেলেও ফ্লেকেন সামনে এগিয়ে এসে শট ঠেকিয়ে দেন। সিটি এরপর চাপ বাড়ালেও লেভারকুসেনের রক্ষণ দেয়ালে বিশেষ করে ইংল্যান্ডের সাবেক লিভারপুল ডিফেন্ডার জ্যারেল কুয়ানসাহ ছিলেন দুর্ভেদ্য।

শেষ দিকে হালান্ডের শট উড়ে যায়, রায়ান চেরকির ফ্রি-কিকও ফেরান ফ্লেকেন। আর কোনো গোল না হওয়ায় হতাশার রাতই কাটাতে হলো ম্যানচেস্টার সিটিকে। 

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ