ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানোর কথা বলেছে ইউক্রেন
Published: 26th, November 2025 GMT
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করা বিষয়ে একটি সম্মিলিত বোঝাপড়ায় পৌঁছানো গেছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন।
যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে কিয়েভের কাছে ২৮ দফার এক পরিকল্পনা উপস্থাপন করে। এ পরিকল্পনা নিয়ে সপ্তাহান্তে জেনেভায় আলোচনায় বসেন মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, উভয় পক্ষের বাড়তি পরামর্শের ভিত্তিতে মূল পরিকল্পনাটি আরও সূক্ষ্মভাবে সংশোধন করা হয়েছে।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি আমার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে মস্কোতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করার নির্দেশ দিয়েছি। একই সময় সেক্রেটারি অব দ্য আর্মি ড্যান ড্রিসকল ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।’
সেক্রেটারি অব দ্য আর্মি ড্যান ড্রিসকল এবং রুশ প্রতিনিধিরা গত সোম ও মঙ্গলবার আবুধাবিতে বৈঠক করেছেন।ড্রিসকল এ সপ্তাহেই কিয়েভ আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
এদিকে শান্তি পরিকল্পনার খসড়ায় যে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তা নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয়নি জানিয়ে ক্রেমলিন সতর্ক করে বলেছে, গত সপ্তাহের পরিকল্পনায় যে সংশোধনী আনা হচ্ছে, তা তারা মেনে না–ও নিতে পারে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সতর্ক করে বলেন, মস্কো যুক্তরাষ্ট্রের করা মূল শান্তি পরিকল্পনায় সমর্থন দিয়েছে। এখন যদি সেখানে মৌলিক পরিবর্তন আনা হয় তবে পরিস্থিতি ‘ভিত্তিগতভাবেই ভিন্ন’ হবে।
স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ক্রেমলিন নতুন পরিকল্পনার (সংশোধিত পরিকল্পনার) কোনো অনুলিপি পায়নি বলেও জানান লাভরভ। তিনি ইউরোপের বিরুদ্ধে মার্কিন শান্তি চেষ্টাকে দুর্বল করে দেওয়ার অভিযোগও করেছেন।
আরও পড়ুনইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে আবুধাবিতে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠক১২ ঘণ্টা আগেমার্কিন কর্মকর্তারা রাশিয়ার এসব উদ্বেগ নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি। সেক্রেটারি অব দ্য আর্মি ড্যান ড্রিসকল এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিরা গত সোম ও মঙ্গলবার আবুধাবিতে বৈঠক করেছেন।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যেসব বিষয়ে এখনো তীব্র বিরোধ রয়ে গেছে, সেগুলো নিয়ে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হয়নি। কিয়েভের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা—মতবিরোধের বিষয়গুলোর অন্যতম।
আমি মার্কিন পক্ষ ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আরও সক্রিয় সহযোগিতার অপেক্ষায় আছি। অনেক কিছু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করছে। কারণ, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়।ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টজেলেনস্কি গতকাল বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ‘সংবেদনশীল বিষয়গুলো’ নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। তাঁর প্রশাসনের লক্ষ্য, এ মাস শেষ হওয়ার আগেই ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বৈঠক আয়োজন করা। তিনি আরও বলেন, ‘আমি মার্কিন পক্ষ ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আরও সক্রিয় সহযোগিতার অপেক্ষায় আছি। অনেক কিছু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করছে। কারণ, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়।’
আরও পড়ুনযুদ্ধ বন্ধে সমঝোতায় পৌঁছাতে ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র২৪ নভেম্বর ২০২৫তবে ইউক্রেনের সঙ্গে ট্রাম্পের আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করেনি। ট্রাম্প অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও পুতিনের সঙ্গে শিগগিরই বৈঠক করতে আগ্রহী। কিন্তু শুধু তখনই বৈঠক করবেন, যখন এ যুদ্ধ সমাপ্তির চুক্তি চূড়ান্ত হবে বা চূড়ান্ত হওয়ার পর্যায়ে থাকবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইউক র ন র প র ন ড র সকল কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
এক বছরেও ১৭ আসামির হদিস পাচ্ছে না পুলিশ
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম ওরফে আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা মামলার ১৭ জন আসামির খোঁজ এক বছরেও পায়নি পুলিশ। তাঁরা পলাতক থাকায় শুরু করা যাচ্ছে না বিচার কার্যক্রম। এ ঘটনায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ নিহত ব্যক্তির পরিবার। আজ বুধবার আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে।
সাইফুল হত্যা মামলার দ্রুত বিচারের দাবিতে আজ সকালে আইনজীবী ভবনের সম্মুখে মানববন্ধন এবং বিকেলে স্মরণসভার আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি।
২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ১৭ জন এখনো পলাতক। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত মালামাল ক্রোকের আদেশ ও হুলিয়া জারি করেছেন। আসামিদের বিষয়ে প্রতিবেদন আসার পর মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়ে দায়রা জজ আদালতে বদলি হবে।মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, সরকারি কৌঁসুলি।হত্যা মামলাটি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রয়েছে। আগামী ১ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ রয়েছে। জানতে চাইলে সরকারি কৌঁসুলি মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সাইফুল হত্যা মামলায় মোট ৩৯ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। এর মধ্যে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ১৭ জন এখনো পলাতক। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত মালামাল ক্রোকের আদেশ ও হুলিয়া জারি করেছেন। আসামিদের বিষয়ে প্রতিবেদন আসার পর মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়ে দায়রা জজ আদালতে বদলি হবে। সেখানে ৩৯ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হবে।
২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী-বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলায় চলতি বছরের ১ জুলাই পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, চিন্ময়ের উসকানি ও নির্দেশে আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছে। আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে আসামিরা পিটিয়ে হত্যা করেন। গত ২৫ আগস্ট আদালত চিন্ময়সহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। চিন্ময়ের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে হত্যা করা হয়। পরে চিন্ময়কে আইনজীবী সাইফুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বর্তমানে তিনিসহ আইনজীবী হত্যায় কারাগারে আটক রয়েছেন ২২ আসামি। শুভ কান্তি দাশ, সুকান্ত দত্ত, রিপন দাশ, পপি দাস, সকু দাস, শিবা দাস, দ্বীপ দাসসহ ১৭ আসামি পলাতক।
পলাতক ১৭ আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ তাঁদের পায়নি। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। এই মামলার বেশির ভাগ আসামি গ্রেপ্তার রয়েছেন।
চিন্ময় কৃষ্ণকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। চিন্ময়ের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে হত্যা করা হয়। পরে চিন্ময়কে আইনজীবী সাইফুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বর্তমানে তিনিসহ আইনজীবী হত্যায় কারাগারে আটক রয়েছেন ২২ আসামি। শুভ কান্তি দাশ, সুকান্ত দত্ত, রিপন দাশ, পপি দাস, সকু দাস, শিবা দাস, দ্বীপ দাসসহ ১৭ আসামি পলাতক।চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, দেশব্যাপী আলোচিত এই মামলার ১৭ আসামি এক বছরেও গ্রেপ্তার না হওয়া দুঃখজনক।
এক বছরেও ছেলে হত্যার বিচার শুরু না হওয়ায় হতাশ নিহত সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হোক। তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেকে ফিরে পাব না, কিন্তু আসামিদের ফাঁসি যাতে হয়। মৃত্যুর আগে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে চাই।’