স্থাপনা পোড়ানোর দায় চাপানো হয় আন্দোলনকারীদের ওপর
Published: 9th, October 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এর দায় চাপানো হয় আন্দোলনকারীদের ওপর। বিষয়টি জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি আরও বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা মামলা করা হয় এবং ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে তখন ব্যাপক ধরপাকড় করা হয়।
গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৯তম সাক্ষী হিসেবে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ জবানবন্দি দেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন তিনি।
জবানবন্দিতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এ আন্দোলনের কারণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে বাধ্য হয়। ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্টের এক রায়ে কোটা পদ্ধতি আবার ফিরে আসে। এর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা মিছিল করেন। এরপর ১ জুলাই টানা আন্দোলন শুরু হয়।
জবানবন্দিতে আসিফ মাহমুদ এ আন্দোলনের বিভিন্ন দিনের বর্ণনা দেন। গত বছরের ১৯ জুলাইয়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সেদিন রাতে ঢাকার গুলশানের নিকেতন এলাকা থেকে তাঁকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। সেখানে (যেখানে বন্দী ছিলেন) তাঁকে আন্দোলন প্রত্যাহারে একটি ভিডিও বার্তা দিতে চাপ দেওয়া হয়। তিনি রাজি না হলে তাঁকে ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে ফেলা হয়। ৫ আগস্টের (২০২৪ সাল) পরবর্তী সময়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় আয়নাঘর পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন, এটি ছিল সেই জায়গা (যেখানে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল)।
‘হত্যা করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা’আসিফ মাহমুদ জবানবন্দিতে বলেন, গত বছরের ২৬ জুলাই গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আবু বাকের মজুমদার ও তাঁকে তুলে নেওয়া হয়। তাঁদের নেওয়া হয় ডিবি কার্যালয়। ২৭ জুলাই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে এবং ২৮ জুলাই সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকেও ডিবি কার্যালয়ে তুলে আনা হয়। তৎকালীন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মো.
জবানবন্দিতে আসিফ মাহমুদ বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশে তাঁদের তুলে আনার কথা বলেছিলেন ডিবির কর্মকর্তারা। আন্দোলন প্রত্যাহারে রাজি না হলে তাঁদের হত্যা করার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশ ছিল। ডিবি কর্মকর্তারা (হারুন ও হুমায়ুন) আরও বলেছিলেন, তাঁরা দয়া করে সমন্বয়কদের বাঁচিয়ে রেখেছেন।
ডিবি কার্যালয়ে বন্দী অবস্থায় আমরণ অনশন শুরু করলে এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১ আগস্ট তাঁদের (সমন্বয়কদের) মুক্তি দেওয়া হয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন আসিফ মাহমুদ।
‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি প্রসঙ্গেগত বছরের ৪ আগস্ট শাহবাগে সমাবেশ ছিল উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ জবানবন্দিতে বলেন, সেদিন সন্ধ্যায় শাহবাগে তাঁদের সমাবেশস্থলে পুলিশ গুলি চালায় এবং সেখানে কমপক্ষে চারজন নিহত ও অসংখ্য আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা আহত হন মর্মে খবর পান। সেদিন বিকেলে ৫ আগস্ট সারা দেশে বিক্ষোভ ও ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ কর্মসূচি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আওয়ামী লীগ (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও এর সহযোগী সংগঠন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে—এমন খবর তাঁরা জানতে পারেন। এ কারণে তিনি সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করে দুই ঘণ্টার মধ্যে কর্মসূচি পরিবর্তন করে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ৬ আগস্টের পরিবর্তে ৫ আগস্ট পালনের আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করেন।
৫ আগস্ট সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার ও মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিয়ে চানখাঁরপুল হয়ে শহীদ মিনারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, তাঁর সামনে পুলিশের গুলিতে দুই আন্দোলনকারী নিহত হন।
চানখাঁরপুলের মামলায় আসামি আটজন। তাঁদের মধ্যে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল পলাতক। আর শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক আরশাদ হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম গ্রেপ্তারের পর কারাগারে আছেন। তাঁদের গতকাল ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার বিচার হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
‘দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া প্রয়োজন’জবানবন্দি শেষে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় যে ধরনের হত্যাযজ্ঞ আওয়ামী লীগ চালিয়েছে, দল হিসেবে তাদের বিচার হওয়া প্রয়োজন। আওয়ামী লীগের সময়ের যাঁরা সুবিধাভোগী, তাঁরা নানাভাবে দলটিকে আবার পুনর্বাসন করার অপচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র করছেন। কিন্তু দেড় সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু এবং প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আহত হওয়ার পর বাংলাদেশের জনগণ কোনোভাবেই দলটিকে পুনর্বাসন করতে দেবে না।
আরেক প্রশ্নে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, যাঁরা গণহত্যার জন্য দায়ী এবং পলাতক আছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে। আইন অনুযায়ী এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বন্দিবিনিময়ের যে চুক্তি বাংলাদেশের আছে, সে চুক্তি অনুযায়ী পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমন বয়ক জ ল ই গণ ৫ আগস ট তৎক ল ন উপদ ষ ট র জন য সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
বিপিএল নিয়ে বিতর্ক কি এড়াতে পারবে আমিনুলের বোর্ড
বিসিবির নির্বাচন শেষ। আমিনুল ইসলামের নতুন পরিচালনা পর্ষদের সামনে শুরুতেই বড় চ্যালেঞ্জ বিপিএল। ডিসেম্বর–জানুয়ারিতে টুর্নামেন্ট আয়োজন নিয়ে তোড়জোড়ও শুরু হয়ে গেছে। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান আইএমজির সঙ্গে দ্রুতই চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে জানিয়েছে বিপিএলের নতুন গভর্নিং কাউন্সিল। এরপর শুরু হবে ফ্র্যাঞ্চাইজি বাছাই, প্লেয়ারস ড্রাফটসহ অন্যান্য কার্যক্রম।
ডিসেম্বরে বিপিএল শুরু করা মানে হাতে মাত্র দুই মাসের মতো সময়। একই রকম সময় নিয়ে বিপিএলের গত আসরও আয়োজন করতে হয়েছিল বিসিবিকে। কিন্তু তাড়াহুড়া করে সবকিছু করতে গিয়ে বিপিএল নিয়ে বেশ ঝামেলাই পোহাতে হয়েছিল ফারুক আহমেদের বোর্ডকে। পরে তো খেলোয়াড়দের পাওনা বকেয়া আর স্পট ফিক্সিং বিতর্কে টালমাটাল হয়ে ওঠে টুর্নামেন্টটাই। অভিযোগ ওঠে ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম না মানারও।
ফারুক আহমেদের মতো এবারও বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হয়ে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের প্রধান হয়েছেন আমিনুল, সদস্যসচিব হিসেবে আছেন বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান। তাঁদেরও অল্প সময়ের মধ্যেই টুর্নামেন্ট আয়োজনের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। বিপিএল নিয়ে এবারও তাই জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা থাকছে।
সর্বশেষ বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফরচুন বরিশাল