ট্রাম্প কীভাবে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব করলেন
Published: 10th, October 2025 GMT
হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠক টেলিভিশনে সম্প্রচার হচ্ছিল। হঠাৎই সে বৈঠকের মাঝখানে ঢুকে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ কূটনীতিক। তিনি ট্রাম্পের হাতে একটি চিরকুট দিয়ে কানে কানে বলেন, শিগগিরই গাজা চুক্তি হতে যাচ্ছে। এটি ছিল ট্রাম্পের জন্য একটি নাটকীয় মুহূর্ত, যিনি কিনা জনসমক্ষে নিজেকে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী’ হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করেন।
কিছুক্ষণ পরই ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন, তাঁর প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নে একমত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল।
এ ঘটনা যখন ঘটল, তখন ওভাল অফিসে এএফপিসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকেরাও উপস্থিত ছিলেন। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁকে চাপ দেওয়া কিংবা আরব দেশগুলোর মন জয় করা—যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্পের বেশির ভাগ কূটনৈতিক প্রচেষ্টাই ছিল দৃশ্যপটের আড়ালে।
নেতানিয়াহুর ওপর চাপনোবেল শান্তি পুরস্কার জেতার আশা এবং নিজের কৃতিত্ব জোরদার করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এবার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের সামনে একেবারেই ভিন্নরূপে হাজির হন ট্রাম্প।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব উন্মোচন করতে নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। এ সময় তিনি প্রকাশ্যে নেতানিয়াহুকে পুরোপুরি সমর্থন দিচ্ছেন বলে দেখানোর চেষ্টা করেন। ট্রাম্প বলেন, হামাস যদি পরিকল্পনা মেনে না নেয় তবে ইসরায়েলকে তাদের কার্যসিদ্ধি করতে ও হামাসকে ধ্বংস করে দিতে পূর্ণ সমর্থন দেবেন। কিন্তু গোপনে ট্রাম্প আসলে নেতানিয়াহুকে চাপ দিয়ে আসছিলেন।
ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে একরকম ফাঁদে ফেলে ওভাল অফিস থেকে কাতারের নেতাদের কল করে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন। হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত এক ছবিতে দেখা যায়, নেতানিয়াহু টেলিফোনে কাতারের নেতাদের কাছে ক্ষমা চাইছেন। আর ট্রাম্প নিজেই টেলিফোন সেট ধরে বসে আছেন।প্রথমত, ট্রাম্প নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলি নেতাদের সামনে যে পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিলেন, তা এর আগের সপ্তাহেই আরব ও মুসলিম বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে বসে আলোচনার সময় প্রস্তুত করা হয়েছিল।
পরিকল্পনাটি নেতানিয়াহুর সামনে উপস্থাপন করার পর তিনি দেখলেন, এতে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, যা তিনি মেনে নেওয়ার পক্ষে নন। বিশেষ করে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেওয়া।
দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার খবরে গাজার বাসিন্দাদের উচ্ছ্বাস.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মধ্যরাতে শিক্ষার্থীকে মেসে ডেকে নিয়ে নির্যাতন, আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার
ঢাকার সাভারে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে মেসে ডেকে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একই বিভাগের আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে প্রশাসন। আজ বুধবার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ওহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
সাময়িক বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অন্তু দেওয়ান, তরিকুল ইসলাম; ২৮তম ব্যাচের মেহেদী হাসান, আসিফ রহমান (লাবিব); ৩২তম ব্যাচের আসাদুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম, নাঈম ও মেহেদী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যসচিব কনক চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি জানার পরপরই আইন বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে একটি ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের নিয়ে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে যে আটজন শিক্ষার্থীর নাম এসেছে, তাঁদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রক্টরিয়াল বডির তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। উভয় কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন শৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে সিন্ডিকেটে উত্থাপনের মাধ্যমে যাঁদের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিলবে, তাঁদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আট শিক্ষার্থীর নামে পৃথক সাময়িক বহিষ্কারাদেশে বলা হয়, ‘আপনার বিরুদ্ধে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা লঙ্ঘন করে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শের আলীকে (৩৩তম ব্যাচ, প্রথম সেমিস্টার) র্যাগিং ও নৃশংস নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক তদন্তে র্যাগিংয়ে আপনার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা পরিপন্থী। উক্ত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং পরবর্তী সময়ে সুষ্ঠু তদন্ত পরিচালনার স্বার্থে আপনাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো। এই আদেশ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। সাময়িক বহিষ্কারাদেশ চলাকালীন আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।’
গত সোমবার দিবাগত রাতে সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের নলাম এলাকার একটি মেসে ভুক্তভোগী শের আলীকে মেসে থেকে ডেকে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে সাময়িক বহিষ্কৃত আট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। আহত শের আলী রংপুরের পীরগঞ্জের মাহমুদপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি আশুলিয়ার একটি মেসে থাকেন।
এ ঘটনায় আজ বুধবার সকালে ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীর সহপাঠীরা। একপর্যায়ে বিক্ষোভে যোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা। দুপুরের দিকে গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (গকসু) প্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীর সহপাঠীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিকেলের দিকে অভিযুক্ত অন্তু দেওয়ানের পক্ষেও ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাঁরা অন্তুর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার অভিযোগ করেন। পরে বিকেল সোয়া চারটার দিকে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেন।
আরও পড়ুনমধ্যরাতে শিক্ষার্থীকে মেসে ডেকে নিয়ে নির্যাতন, প্রতিবাদে সহপাঠীদের অবস্থান২৫ নভেম্বর ২০২৫