হামাস কি অস্ত্র ছাড়তে রাজি হবে
Published: 10th, October 2025 GMT
যুদ্ধ থেমেছ, চুক্তি হচ্ছে; কিন্তু হামাস কি অস্ত্র সমর্পণ করবে? এই প্রশ্নটিই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপের বিষয়ে ইসরায়েল ও হামাস রাজি হয়েছে ঠিকই, তবে দুই পক্ষের বিরোধ রয়ে গেছে এখনো। এই বিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের কাছে থাকা অস্ত্রভান্ডার।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, গাজায় দুই বছরের যুদ্ধ শেষ করতে হলে হামাসকে সব অস্ত্র জমা দিতে হবে, ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে এবং সংগঠন হিসেবে নিজেদের ভেঙে দিতে হবে।
অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান হামাস প্রকাশ্যেই প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংস্থাটি গোপনে কিছু অস্ত্র সমর্পণের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ইসরায়েল-ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিউ লোভ্যাট বলেন, ‘আপনারা দেখে থাকবেন, অস্ত্র সমর্পণের বিষয়েই হামাসের অবস্থান সবচেয়ে বেশি বদলেছে।’
হিউ লোভ্যাট আল–জাজিরাকে আরও বলেন, ‘হামাসের কর্মকর্তারা গোপনে মধ্যস্থতাকারীদের বলেছেন যে তাঁরা কিছু আক্রমণাত্মক অস্ত্র ছাড়ার প্রক্রিয়ায় রাজি হতে পারেন।’
ইসরায়েলের দুই বছরের অভিযানে অর্ধ লক্ষাধিক ফিলিস্তিনির প্রাণহানির পর গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হয় গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস।
আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তাবিষয়ক আইনের আওতায় যুদ্ধকালীন সাধারণ নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্ত্র বহন করার এবং দখলদার শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার অধিকার আছে। তবু ইসরায়েল এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারির অবসানে শান্তি প্রক্রিয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে সেখানকার বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সশস্ত্র প্রতিরোধ থেকে সরে আসতে বলে থাকে।নাজুক যুদ্ধবিরতি
বিশ্লেষকেরা বলছেন, হামাসের অস্ত্রভান্ডার নিয়ে আলোচনায় মতৈক্য না হলে ভেঙে যেতে পারে যুদ্ধবিরতি এবং তাতে গাজায় আবার ইসরায়েলের জাতিগত নিধন অভিযানের শঙ্কা তৈরি হবে।
আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তাবিষয়ক আইনের আওতায় যুদ্ধকালীন সাধারণ নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্ত্র বহন করার এবং দখলদার শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার অধিকার আছে। তবু ইসরায়েল এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারির অবসানে শান্তি প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হিসেবে সেখানকার বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সশস্ত্র প্রতিরোধ থেকে সরে আসতে বলে থাকে। ১৯৯০-এর দশকে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলি নেতাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত অসলো শান্তিচুক্তির ভিত্তিও ছিল এটি।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) গবেষক আজমি কেশাওইয়ের মতে, ইসরায়েল সম্ভবত এবারও একই ধরনের দাবি করবে। তবে হামাস পুরোপুরি অস্ত্র সমর্পণ করবে বলে মনে হয় না।
তাঁর ধারণা, হামাস কেবল স্বল্প ও দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রসহ কিছু আক্রমণাত্মক অস্ত্র সমর্পণ করতে পারে।
হামাস কখনোই তাদের ছোট ও হালকা অস্ত্র ছাড়বে না বলেই মনে করেন গাজার বাসিন্দা ফিলিস্তিনের নাগরিক কেশাওই। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দশকের পর দশক ধরে যে সুড়ঙ্গগুলো তৈরি করা হয়েছে, তার জটিল নেটওয়ার্কের মানচিত্রও হস্তান্তর করবে না বলে মনে করেন তিনি।
কেশাউই আল–জাজিরাকে বলেন, ‘(হামাস) শুধু তখনই অস্ত্র (হালকা) ছাড়বে, যখন এসব অস্ত্রের আর কোনো প্রয়োজন থাকবে না। এর মানে, তারা কেবল এমন একটি ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের কাছে এগুলো হস্তান্তর করবে, যারা ইসরায়েলের দখল শেষ হওয়ার পর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নেবে।’
ইসরায়েল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে একমত হয়েছে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেওয়ার পর গাজাসংলগ্ন ইসরায়েলি সীমান্তে ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ৯ অক্টোবর, ২০২৫ ছবি: রয়টার্স.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সশস ত র ইসর য় ল দখলদ র ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
মধ্যরাতে শিক্ষার্থীকে মেসে ডেকে নিয়ে নির্যাতন, আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার
ঢাকার সাভারে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে মেসে ডেকে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একই বিভাগের আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে প্রশাসন। আজ বুধবার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ওহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
সাময়িক বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অন্তু দেওয়ান, তরিকুল ইসলাম; ২৮তম ব্যাচের মেহেদী হাসান, আসিফ রহমান (লাবিব); ৩২তম ব্যাচের আসাদুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম, নাঈম ও মেহেদী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যসচিব কনক চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি জানার পরপরই আইন বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে একটি ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের নিয়ে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে যে আটজন শিক্ষার্থীর নাম এসেছে, তাঁদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রক্টরিয়াল বডির তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। উভয় কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন শৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে সিন্ডিকেটে উত্থাপনের মাধ্যমে যাঁদের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিলবে, তাঁদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আট শিক্ষার্থীর নামে পৃথক সাময়িক বহিষ্কারাদেশে বলা হয়, ‘আপনার বিরুদ্ধে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা লঙ্ঘন করে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শের আলীকে (৩৩তম ব্যাচ, প্রথম সেমিস্টার) র্যাগিং ও নৃশংস নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক তদন্তে র্যাগিংয়ে আপনার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা পরিপন্থী। উক্ত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং পরবর্তী সময়ে সুষ্ঠু তদন্ত পরিচালনার স্বার্থে আপনাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো। এই আদেশ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। সাময়িক বহিষ্কারাদেশ চলাকালীন আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।’
গত সোমবার দিবাগত রাতে সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের নলাম এলাকার একটি মেসে ভুক্তভোগী শের আলীকে মেসে থেকে ডেকে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে সাময়িক বহিষ্কৃত আট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। আহত শের আলী রংপুরের পীরগঞ্জের মাহমুদপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি আশুলিয়ার একটি মেসে থাকেন।
এ ঘটনায় আজ বুধবার সকালে ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীর সহপাঠীরা। একপর্যায়ে বিক্ষোভে যোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা। দুপুরের দিকে গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (গকসু) প্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীর সহপাঠীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিকেলের দিকে অভিযুক্ত অন্তু দেওয়ানের পক্ষেও ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাঁরা অন্তুর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার অভিযোগ করেন। পরে বিকেল সোয়া চারটার দিকে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেন।
আরও পড়ুনমধ্যরাতে শিক্ষার্থীকে মেসে ডেকে নিয়ে নির্যাতন, প্রতিবাদে সহপাঠীদের অবস্থান২৫ নভেম্বর ২০২৫