গত বিপিএলে ওঠা ফিক্সিংয়ের অভিযোগ তদন্ত করে এতে ১৮–২০ জনের মতো ব্যক্তির জড়িত থাকার ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে তিন সদস্যের স্বাধীন তদন্ত কমিটি। সংখ্যাটা খেলোয়াড়, কোচ, ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্মকর্তা এবং টুর্নামেন্টের সঙ্গে অন্যভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মিলিয়ে।

বিসিবিকে দেওয়া প্রাথমিক প্রতিবেদনে তাঁদের নাম আছে, থাকবে এ মাসেই দিতে যাওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনেও। কমিটির সুপারিশ মেনে এই ব্যক্তিদের আসন্ন দ্বাদশ বিপিএলের বাইরে রাখার চিন্তা করছে বিসিবির বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল।

আগামী ডিসেম্বর–জানুয়ারি মিলিয়ে হবে বিপিএলের পরবর্তী আসর। ১৯ ডিসেম্বর টুর্নামেন্ট শুরু হয়ে ফাইনাল হতে পারে ১৬ জানুয়ারি। প্লেয়ার্স ড্রাফট হয়ে যাওয়ার কথা ১০ নভেম্বরের মধ্যেই। নির্বাচক কমিটি এরই মধ্যে গত বিপিএল ও গতকাল শেষ হওয়া এনসিএল টি–টোয়েন্টির পারফরম্যান্স ধরে ড্রাফটের তালিকা প্রস্তত করতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুনপাঁচ বিপিএলের ১৪০ ঘটনায় সন্দেহ১২ মে ২০২৫

বিপিএলসংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একটি সূত্র গতকাল প্রথম আলোকে জানিয়েছে, টুর্নামেন্টকে কলুষ ও বিতর্কমুক্ত রাখতে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে নাম আসা খেলোয়াড়–কর্মকর্তাদের দলের সঙ্গে না রাখার জন্য নতুন ও পুরোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিদের অলিখিত শর্ত দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেহেতু তদন্ত কমিটির রিপোর্টটি এখনো প্রকাশ করা হয়নি, আমরাও নামগুলো এখন আনুষ্ঠানিকভাবে বলব না। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের অনানুষ্ঠানিকভাবে বলা হবে যেন এসব খেলোয়াড়, কর্মকর্তাদের দল ও টিম ম্যানেজমেন্টে না রাখে। বিতর্কিত ব্যক্তিদের বিপিএলে রাখা হবে না।’ অবশ্য বিতর্কিত খেলোয়াড়দের ড্রাফটেই না রাখার চিন্তা করছে বিসিবি।

আরও পড়ুনবিপিএলে এক ম্যাচ হারতে ৪০০ কোটি টাকার প্রস্তাব বেটিং চক্রের১৮ আগস্ট ২০২৫

ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে বিতর্ক এড়াতে এর বাইরে আরও কিছু অবশ্য পালনীয় শর্ত রাখার চিন্তাভাবনা আছে। যার একটি, প্রতি মৌসুমে ৩ কোটি টাকা করে পরবর্তী পাঁচ মৌসুমের জন্য ১৫ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হবে গভর্নিং কাউন্সিলকে। তবে সব ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান পেলে এই টাকার অঙ্ক কিছুটা কমে আসতে পারে। এ ছাড়া খেলোয়াড়দের টাকাও গভর্নিং কাউন্সিলের কাছে অগ্রিম জমা দেওয়ার শর্ত থাকতে পারে।

এবারের বিপিএলে কি খেলবে বরিশাল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ র য ঞ চ ইজ কর মকর ত ব তর ক ব প এল তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত খুলনা: ১৬ মাসে ট্রিপল-ডাবলসহ ৪৮ খুন

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী গত ১৬ মাসে খুলনায় ট্রিপল ও ডাবলসহ ৪৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে সন্ত্রাসীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ, মাদক ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে হত্যাকাণ্ড হয়েছে ২০টি। চলতি নভেম্বর মাসেই সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে। রবিবার (৩০ নভেম্বর) খুলনার আদালত পাড়ায় প্রকাশ্যে দুইজনকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একইদিন রাতে নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকায় আরো এক যুবককে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।

একের পর এক হত্যাকাণ্ডে ভয় আর আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে খুলনা। দিন-দুপুরে আদালত এলাকার মতো জনবহুল জায়গায় হত্যাকাণ্ড স্থানীয় বাসিন্দাদের আরো উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

আরো পড়ুন:

আলোচিত রায়হান হত্যার রায় ৭ জানুয়ারি

খলাপাড়ার গণহত্যা দিবস: স্বাধীনতার প্রান্তে শহীদ হন ১০৬ জন

পুলিশের তথ্য বলছে, গত ১৬ নভেম্বর দুপুরে নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনারের কালভার্ট এলাকায় বাড়ির মধ্যে নানি মহিতুন্নেসা (৫৫), তার নাতি মুস্তাকিম (৮) এবং নাতনি ফাতিহাকে (৬) হত্যা করা হয়। ওই রাতেই করিমনগরে নিজ বাড়ির ভেতর আলাউদ্দিন মৃধা নামের এক যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। গত ২৭ নভেম্বর রাতে খালিশপুর ফেয়ার ক্লিনিকের সামনে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় যুবক ইমানকে। 

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) কর্মচারী মো. মহসিন শেখ লিটুর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। ২৮ অক্টোবর ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে মহানগরীর দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা খুঠিরঘাট এলাকার ওই বাড়িতে গুলিবর্ষণ হয়। তবে, কেউ আহত হননি।

গত ৯ অক্টোবর সকালে খালিশপুর হাউজিং বাজার এলাকায় সবুজ খান (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে খুলনার রূপসা উপজেলায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইমরান হোসেন মানিক (৩৪) নামে এক যুবক নিহত হন।

সে সময় রূপসা থানার ডিউটি অফিসার জনি আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “রাতে মানিক একটি ভ্যানযোগে ইলাপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় কয়েকজন সন্ত্রাসী তার গতিরোধ করেন। তারা মানিককে লক্ষ্য করে পরপর দুইটি গুলি ছোড়েন। একটি গুলি মানিকের মাথায় লাগে। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।”

এর আগে, ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা মহানগরীর রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে প্রকাশ্যে এক যুবককে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। ওই যুবকের নাম নিক। তিনি নগরীর কালীবাড়ী এলাকার মন্টু দাশের ছেলে।

একের পর হত্যাকাণ্ডে উদ্বিগ্ন নাগরিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। ধারাবাহিক হত্যা ও সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে খুলনা মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন হচ্ছে। এছাড়া, আইনশৃখলা পরিস্থিতি অবনতির প্রতিবাদে গত শনিবার নগরীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন আইন অধিকার বাস্তবায়ন ফোরাম। তার একদিন পরেই রবিবার দুটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটল। এর আগে, খুলনার আদালত চত্বর থেকে ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করেছিল পুলিশ। গত ২০ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে বস্তুটি পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে চরমপন্থিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল খুলনা। নতুন শতাব্দির শুরুতেও তা বহাল ছিল। বোমা মেরে অথবা গুলি করে মানুষ হত্যা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়। চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারান সাংবাদিকসহ অসংখ্য মানুষ। পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকার দক্ষিণাঞ্চলে সন্ত্রাস দমনে র‌্যাব গঠন করে। যৌথবাহিনীর সমন্বয়ে শুরু হয় অপারেশন ক্লিনহাট, অপারেশন স্পাইডার ওয়েব। এসব অপারেশন অধিকাংশ চরমপন্থি সন্ত্রাসী নিহত ও অনেকে গ্রেপ্তার হন। ধীরে ধীরে শান্তি ফিরে আসে খুলনায়। খুলনার আইনশৃখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আবারো বিশেষ অভিযান শুরুর দাবি জানিয়েছেন নাগরিক নেতারা।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, “একের পর এক হত্যাকাণ্ড সবাইকে আতঙ্কিত করে তুলছে। এ থেকে খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিত্র স্পষ্ট হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের দমনে পুলিশ প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে।” 

খুলনায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি বিশেষ করে গতকাল রবিবার আদালত অঙ্গনে দিনে দুপুরে লোমহর্ষক জোড়া খুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু এবং সদস্য সচিব শেখ নুরুল হাসান রুবা। আদালত অঙ্গনে নিরাপত্তা জোরদারসহ খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে পুলিশ প্রশাসন এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আরো কঠোর ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, “বেশিরভাগ হত্যার কারণ উদ্ঘাটন করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। রবিবার দুপুরে দুই হত্যার সঙ্গে জড়িতরাও দ্রুত গ্রেপ্তার হবেন।”

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংকট ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ
  • বয়স, শিক্ষাদীক্ষা, অর্থ-সম্পদে স্বামীর চেয়ে এগিয়ে সামান্থা?
  • জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত: মামুনুল হক
  • খালেদা জিয়া গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কেন্দ্রীয় জায়গায় আছেন: জোনায়েদ সাকি
  • মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত খুলনা: ১৬ মাসে ট্রিপল-ডাবলসহ ৪৮ খুন
  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন ছুটি স্থগিত